পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার কয়েকশ গাছ কেটে সামাজিক বন উজাড় করার অভিযোগ উঠেছে চিড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য বজলুর রহমান নান্নুর বিরুদ্ধে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও গ্রামবাসীরা জানান, তিনি (সাবেক ইউপি সদস্য নান্নু) গত কয়েক দিনে চিড়াপাড়া ইউনিয়নের সুমিদপুর, নীলতি গ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বিক্রি করেছেন চাম্বল, মেহেগনি, সেরেজসহ কয়েক প্রকার গাছ। এগুলো দাম কয়েক লাখ টাকা। গাছগুলো কেটে ফেলার কারণে সামাজিক বনটি মৃতপ্রায়।
একসাথে এতোগুলো কাছ কেটে ফেলায় অবাক হয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
এ বিষয়ে চিড়াপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, বজলুর রহমান নান্নু গেলো কয়েক দিনে কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছে বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ বিক্রি করেছেন কয়েক লাখ টাকার। এখনো বিক্রি করা হচ্ছে। এলাকার সবাই বিষয়টি জানে। আমরা শুনেছি তার বাগান থেকে সে গাছ বিক্রি করছে।
এদিকে কেবল সামাজিক বন থেকেই নয়, কাটা হয়েছে রাস্তার পাশে বেশ কয়েকটি গাছ। হঠাৎ এতোগুলো গাছ একসাথে কাটায় সবার মনেই একটা প্রশ্ন জাগছে, বিষয়টি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ঘটছে তো? এর ফলে পরিবেশের বিপর্যয় হবে নয় তো? কারণ সমাজে প্রচলিত আছে একটি গাছ কাটলে দুটি লাগাতে হবে।
সাবেক ইউপি সদস্য নান্নু গাছ কাটার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, বাগানের গাছগুলো কেটে একটি সুপারির বাগান তৈরি করা হবে এবং যতগুলো গাছ কাটা হয়েছে সবই আমার নিজস্ব কেনা জমির। আর সবাই বলে আমি কয়েক লাখ টাকা গাছ বিক্রি করেছি। আসলে এই তথ্য সঠিক নয়, আমি মাত্র এক লাখ টাকার মতো গাছ বিক্রি করছি।
গাছ কাটার ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর বা বন বিভাগের পারমিশন (ছাড়পত্র) নেওয়া হয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমার বাগান আমার গাছ, আমি কাটবো তাতে কারো পারমিট নেওয়ার কিছু নেই।
তবে জেলা বনবিভাগের কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, কোনো ব্যক্তি যদি সামাজিক বন থেকে বড় বা স্থায়ী কোনো গাছ কাটতে চায়, অবশ্যই তাকে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। না হলে বনজদ্রব্য চলাচল (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০১১ আইনের ১৪ নম্বর ধারা ভঙ্গ হবে এবং ওই ব্যক্তি ধারা মোতাবেক শাস্তি পাবেন। তিনি আরো জানান, কাউখালীর বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। সরেজমিনে তদন্তে সতত্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি ব্যক্তি মালিকানায় লাগানো গাছ কাটতে অনুমতির বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন আইন ২০২২’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অর্থাৎ, বাড়িতে লাগানো স্থায়ী গাছ, কিংবা বাগানে লাগানো গাছ কাটতে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠকে খসড়া আইনটি অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
এ বিষয়ে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদা খাতুন রেখা জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরাও জানতে পেরেছি ব্যক্তি মালিকানায় লাগানো গাছ কাটতে অনুমতির বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন আইন ২০২২’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তবে সেটি স্থানীয় সরকার বাস্তবায়নে এখনো কোনো নোটিশ বা মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়া যায়নি। পেলে এবস বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট