ফারাক্কার ২২ কিলোমিটার উজানে গঙ্গার পাগলা কালী মন্দিরের পাশে এক উত্তাল নদীর জন্ম। গঙ্গার এই সন্তান জন্মে এক সন্ন্যাসীর আস্তানা ভেঙ্গে যায়। সন্ন্যাসী তাঁর ধ্যান মন্দির ভাঙ্গার অপরাধে নদীকে অভিশাপ দেন এই বলে, ‘তোর আগা এবং গোঁড়ায় দিলাম পাগলাবেড়ি।’ সেই পাগলাবেড়ি পরানো নদীর নাম পাগলা।
ভারতের মালদা শহরের পাশে জন্ম নেয়া নদী চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের নামোচকপাড়া মৌজা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। একসময়ের উত্তাল গঙ্গা তার এই সন্তানের জন্মকে উৎসর্গ করে মালদাকে করেছে সুমিষ্ট মাটির ময়দা। এখানে উৎপন্ন হয় পৃথিবীর সবচে উৎকৃষ্টমানের আম। পাগলা নদীর জলের সাথে আমের রয়েছে সুগভীর যোগসূত্র।
ভারতের ২৭ আর আমাদের দেশে ৪৩ কিলোমিটার নিয়ে পাগলার প্রবাহ ৭০ কিলোমিটার। বিনোদপুর, শ্যামপুর, কানসাট ও দুর্লভপুর হয়ে পদ্মার এই পাগলীবেটি তত্তিপুর এসে মরা পদ্মার সাথে মিলিত হয়েছে। এই মিলিত স্রোত ছত্রজিতপুর ও ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে চাপাই নবাবগঞ্জ সদরে এসেছে, এখানেই পাগলা মহানন্দায় মোহনা পেয়েছে।
ঋষি জাহ্নুমুনির আশ্রম এই নদীর তীরেই অবস্থিত। তত্তিপুরে মাঘি পূর্ণিমায় গঙ্গাস্নান মুখরিত হয় পুরো জনপদ। রামচন্দ্রপুরে ব্রিটিশরা নীলকুঠি বানিয়েছিল এই নদীর প্রবাহের সুবিধা নিয়ে। পদ্মার প্রায় ঘোলাটে জলের সাথে এই জলের কিছুটা ফারাক আছে। আপাত স্বচ্ছ এই জলে মাছের চলাচল দেখা যায় খুব সহজেই। তবে দেখার জন্য মাছ এখন আর নেই বললেই চলে। নদীর প্রবাহ থেমে যেতে যেতে মাছেরা হারিয়ে গেছে অন্য জলের দিকে।
বরেন্দ্রভুমির মরুময়তা নিয়ে চিন্তিত প্রকৃতিপ্রেমিকেরা পাগলাসহ অন্য মৃতপ্রায় নদীর খননে সোচ্চার হয়েছিলেন, তাঁদের সম্মিলিত দাবীর প্রতি সম্মান রেখে সরকার পাগলা নদী খননের উদ্যোগ নেয়। কোমা থেকে ফিরে আসে পাগলা। এখন এই নদীর প্রবাহ দেখে কে বলবে এই নদী একসময় মরেই গিয়েছিল। আমরা হত্যা করার পাশাপাশি বাঁচিয়ে তোলার দাবীদারও হতে পারছি পাগলা নদী এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য। এমন উদার ও প্রকৃতিবান্ধব কাজ সারাদেশে সম্প্রসারিত হলে আমাদের আগামী আরও সহজ আরও ক্লেশহীন হবে। পাগলা এক জীবন্ত মডেল যেখানে নদীর পুনর্জন্ম হয়েছে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট