ভারতের কর্নাটকে রাজ্য সরকার বা ভারত সরকার হিজাব নিয়ে কোন আইন করেনি এটা সকলের জানা। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের নিজস্ব ড্রেসকোড দিয়ে দিয়েছে। সেই ড্রেসকোড অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা ক্লাশে আসবে। ড্রেসকোড ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও আছে। মাদ্রাসায় জোব্বা টুপি পড়ে যেতে হয়। সেখানে কেউ জিন্স বা টি শার্ট পড়ে গেলে নিশ্চয়ই তাদের ক্লাশে ঢুকতে দেয়া হবে না। তেমনি কর্নাটকের কলেজের নিজস্ব একটা ড্রেসকোড রয়েছে। শিক্ষার্থী যদি ড্রেসকোড অমান্য করে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারে। জয়শ্রীরাম স্লোগান দেয়া গেরুয়া উত্তরীয় পরা যুবকদের ঐ তরুণীকে কলেজে ঢুকতে না দেয়া কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। কর্ণাটকের ঐ কলেজের সামনে বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী মুসকান খান হিজাব পরায় কলেজে ঢুকতে বাধা দিয়েছে গেরুয়া বাহিনী। জয় শ্রীরাম শ্লোগানের বিপরীতে মুসকান আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমাদের উপমহাদেশে এই ধ্বনি একদিকে জয়শ্রীরাম ধ্বনি এবং তার বিপরীতে তরুণীর আল্লাহু আকবর ধ্বনি ব্যবহার দুটোই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরীর উপলক্ষ হিসেবে কাজ করতে পারে।
মুসকানের পক্ষ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আল্লাহু আকবর পোস্ট ছেয়ে গেলো। ভারতের সমস্যা ভারতের আদালত দেখছে, তাদের রায় এখনও আসেনি। তার আগেই আমরা জয়শ্রীরাম বনাম আল্লাহু আকবর মিডিয়া দাঙ্গায় মেতে গেলাম। এ যেন
আগুনে ঘি ঢালার মত অবস্থা হলো। যার উত্তাপ এসে লাগছে বাংলাদেশেও।
ইন্টারনেটে মুসকান খানেরও রাজনৈতিক উগ্রবাদীতার সাথে সম্পর্ক আছে বলে অনেক পোস্ট দেখা যাচ্ছে। তাই তিনি ব্যক্তিগতভাবে কতটা ধর্মীয় অনুভূতি সম্পন্ন ও শান্তিপ্রিয় মানুষ সেটাও বিবেচনার দাবী রাখে অবশ্যই।
হুজুগে নেচে যাচ্ছি আমরা বাংলাদেশেও। কিন্তু বিষয়টির গভীরে যাওয়ার চেষ্টাটি কেউ করছে না। ঘটনার গভীরে যাওয়ার কথা বললে উল্টা তাকে নাস্তিক উপাধি দেয়া হচ্ছে। এই উপমহাদেশে ক্ষমতার পালাবদল হয় ধর্মকে পুজি করেই। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে রাজনীতির মধ্যে ধর্মকে সংযুক্ত করার যে ট্রেডিশন এখনও বলবত রেখে শাসন করে যাচ্ছে শাসকরা। মাঝে মাঝেই সাম্প্রদায়িক উত্তাপ ছড়িয়ে শাসকগোষ্ঠী তাদের সিংহাসনকে শক্ত পোক্ত করে নেন। এই সমীকরণটা সাধারণ মানুষের মাথায় কোনভাবেই ঢুকানো যাচ্ছে না। ধর্মভীরু বাঙ্গালী মুসলমানরা থেকে থেকে ধর্মান্ধ হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। হামলা করছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর। বাঙ্গালী মুসলমানদের আল্লাহু আকবর যদি হিজাব বাঁচানোর জন্য না হয়ে মানুষ বাঁচানোর জন্য হতো। সেটােই হতো সবচেয়ে মঙ্গলময়।
সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ উষ্কানীতে এমন ঘটনা ঘটে চলেছে এই উপমহাদেশে। মুসকানকে গেরুয়া বাহিনী হিজাব পড়ে যাওয়ায় উত্তাক্ত করেছে। ঠিক এমনই ঘটনা ২০১৩ সালে ঢাকার মতিঝিলে হেফজতের কর্মীরা সাংবাদিক নাদিরাকে শারিরীকভাবে নির্যাতন করেছিল। ওপারে গেরুয়া এবং এপারে হেফাজত একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। দুইটি ঘটনাই কিন্তু নারী নির্যাতনের মধ্যে পড়ে। কিন্তু নারী নির্যাতনে জন্য কেউ বিচার দাবি করছে না। সবাই অন্ধ হয় আছে আল্লাহু আকবর এবং জয় শ্রীরাম শ্লোগান নিয়ে। এরকম হুজগ থেকেই বিভৎস রক্তপাতের ঘটনা ইতিপূর্বে বহুবার হয়েছে।
প্রগতিশীল সচেতন মহলকে এই সময় ব্যাপক ভূমিকা নিতে হবে। তা না হলে অনিবার্য সংহাতের সৃষ্টি করতে পারে এই উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক দলগুলি। যারা সাম্প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। আমরাও হুজুগে মেতে যেন তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়িকে শক্ত পোক্ত করে না দেই।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে কথার সাথে যদি মিলিয়ে নেই বাংলার মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই আমরা বাঙালী।
জয় হোক মানবতার।