নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, সৎ-নিষ্ঠাবানদের নাম প্রস্তাবে অনুসন্ধান কমিটিকে পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। সেই সঙ্গে তারা দাবি জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ও বিভিন্ন ব্যক্তির প্রস্তাবিত নাম প্রকাশের পাশাপাশি কমিটির মনোনীত ১০ জনের নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ করার। দলীয় সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী ব্যক্তির নাম প্রস্তাব না করার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
নতুন নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের বাছাইয়ে আমন্ত্রিত শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী, অধিকার কর্মীদের কাছ থেকে এ পরামর্শ ও দাবি এসেছে।
আজ শনিবার সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে বেলা সোয়া ১১টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দুই দফা মোট ২৫ জনকে নিয়ে বৈঠকে বসে অনুসন্ধান কমিটি।
প্রথম বৈঠকে অংশ নেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, ফিদা এম কামাল, সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব আলী ইমাম মজুমদার, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মুনসুরুল হক চৌধুরী, রোকনুদ্দিন মাহমুদ, এম কে রহমান, ড. শাহদীন মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ড. মাকসুদ কামাল, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মাহফুজা খানম, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ ও ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান।
বেলা সোয়া ১১টায় শুরু হয়ে প্রথম বৈঠকটি চলে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এরপর বেলা পৌনে ১টা থেকে আড়াইটা পর্যটন্ত দ্বিতীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে যোগ দেন দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জাফরুল্লাহ চৌধুরী, দৈনিক জাগরণের সম্পাদক আবেদ খান, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, একাত্তর টেলিভিশনের মোজাম্মেল হক বাবু, দৈনিক ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, এনটিভির বার্তা সম্পাদক জহিরুল আলম ও সাংবাদিক স্বদেশ রায়।
অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে ছিলেন কমিটির সদস্য বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মাহফুজা খানম সাংবাদিকদের বলেন, এই অনুসন্ধান কমিটি যে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে তাদের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট হতে হবে, তিনি যেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ হন। আমলা বা যেকোনো পেশা থেকে তিনি বা তাদের নাম আসতে পারে। যে পেশা থেকেই আসেন না কেন, তাদের স্বচ্ছ ব্যক্তি চরিত্র ও সততা থাকতে হবে। অর্থের মোহ যেন তাদের না থাকে। এ অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে তাতে দেশের গণতন্ত্র সৃদৃঢ় হবে বলে মনে করেন তিনি।
সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘কোনো দলীয় সরকারের সময় (বর্তমান সরকার হোক বা আগের দলীয় সরকার হোক) বিশেষভাবে সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি যাতে নির্বাচন কমিশনে স্থান না পায়। এ দাবি আমি জানিয়েছি এবং অনেকেই এ দাবি সমর্থন করেছেন। ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘যারা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পাবে তারা যেন আগের কোনো সরকারের আমলে বিশেষ সুবিধাভোগী না হন। ’
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে, চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়ার মাধ্যমে, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের মাধ্যমে কোনো কোনো সরকার তার বিশ্বস্ত লোকদের সুবিধা দিয়ে থাকে। এই ধরনের লোক যেন নির্বাচন কমিশনে না আসেন। অনেকে অবসরে যাওয়ার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন সরাসরি। তারা যেন না আসেন। যাদের সাথে সরকারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক আছে তারা যেন না আসেন। ’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন সবার কাছে ‘গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন কমিশন গঠনে ব্যক্তি বাছা্য়ের ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কমিটিকে বিষয়টি মাথায় রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন।
দুই দফায় বৈঠকের পর বিকেলে মন্ত্রীপরিষদসচিব আনোয়ারুল ইসলাম অনুসন্ধান কমিটির পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন সাংবাদিকদের কাছে।
তিনি বলেন, প্রায় তিন ঘণ্টায় দুটি বৈঠক। তারা (বিশিষ্টজনেরা) বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সবারই বক্তব্য হচ্ছে, এমন একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করা যা সবার আস্থাভাজন হয়, ভালো একটা নির্বাচনের ব্যবস্থার জন্য তারা (নির্বাচন কমিশন) যেন পদক্ষেপ নিতে পারেন। এটাই ছিল তাদের মূল বক্তব্য। এ ছাড়া আরো কিছু বিভিন্ন সুপারিশ, প্রস্তাবনা তারা দিয়েছেন, কমিটি সেগুলো নোট করেছে।
অনুসন্ধান কমিটি রবিবার বিকেলে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে আরো একটি বৈঠক করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই মিটিংয়ের পরে সুপারিশগুলো নিয়ে বসে কমিটি পরবর্তী কর্মপদ্ধতি ঠিক করবে। আপনারা হয়তো এরই মধ্যে জেনে ফেলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ১৩৬ জনের, পেশাজীবীদের কাছ থেকে ৪০ জনের, ব্যক্তিগতভাবে ৩৪ জনের এবং ইমেইলসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ৯৯ জনের নামের প্রস্তাব পেয়েছি। এই নামগুলো নিয়ে কমিটি বসবে। বসে কিভাবে বাছাই করা যায় সেটা চিন্তাভাবনা করবে। ’
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট