নির্বাচন কমিশনার পদে সার্চ কমিটিতে (অনুসন্ধান কমিটি) প্রস্তাবিত ৩২২ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, সাবেক বিচারপতি, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিত্বসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গত শনিবার বলেছিলেন, অনুসন্ধান কমিটির কাছে ৩২৯ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে গতকাল প্রকাশিত নামের তালিকায় ৩২২ জনের নাম পাওয়া যায়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দ্রুত কাজ করতে গিয়ে কিছু নাম একাধিকবার এসেছে। কারো করো নাম বাদও পড়েছে। এ কারণে তালিকায় কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। এ ছাড়া কারো কারো নামের বানান ও পদবি ভুল এসেছে। তালিকায় সাংবাদিক আবু সাইদ খান, শিক্ষাবিদ নাজমা শাহীন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদসহ বেশ কয়েকজনের নাম একাধিকবার এসেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আজিম স্বাক্ষরিত তালিকা গতকাল সোমবার রাত ৮টার দিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
প্রস্তাবিত তালিকায় নাম থাকা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধূরী বলেন, ‘এসব নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। আমরা তো সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ছিলাম। এখন এগুলোর মধ্যে না গিয়ে নতুন সৎ, দায়িত্বশীল ও সাহসী মানুষদের যাওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। আমরা তো দায়িত্ব পালন করেছি। ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমার এখন কিছু বলার নেই। যাঁরা নাম প্রস্তাব করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ। এখন সার্চ কমিটির বিষয়। ’
গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি পর্যায়ে নাম দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল অনুসন্ধান কমিটি। এরপর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দিয়ে নাম দেওয়ার অনুরোধ করেছিল কমিটি। গত শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই নাম নেওয়া হয়।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তিন উপদেষ্টা : সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তিন উপদেষ্টাও এই তালিকায় রয়েছেন। এঁরা হলেন গীতিআরা সাফিয়া, রাশেদা কে. চৌধূরী ও সুফিয়া রহমান।
বিচারপতি ও বিচারক পেশার মানুষের মধ্যে রয়েছেন সাবেক দুই প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেন ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এ ছাড়া রয়েছেন সাবেক ১৪ বিচারপতি। তাঁরা হলেন এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী, আবদুল ওয়াহাব মিয়া, মনসুরুল হক চৌধুরী, মো. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ, আবু বকর, আবু বকর সিদ্দিকী, নাজমুন আরা সুলতানা, বোরহান উদ্দিন, মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, মুসা খালেদ ও কৃষ্ণা দেবনাথ। রয়েছেন সাবেক বিচারক। তাঁরা হলেন জেলা ও দায়রা জজ রাশিদা সুলতানা, ফরিদ আহমদ, মো. গাজী রহমান, মো. ফখরুদ্দিন, মো. শামসুল হক প্রমুখ।
শিক্ষাবিদ তালিকায় ৫১ শিক্ষাবিদ রয়েছেন। তাঁরা হলেন এম শামীম জেড বসুনিয়া, আবদুল মান্নান চৌধুরী, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, আবদুল মান্নান, এ কে এম মোস্তাফা জামান, জাকিয়া পারভীন, আবু সালেহ মাহফুজুল বারী, আবদুল আউয়াল বিশ্বাস, এ এ মামুন, কাজী খসরুল আলম কুদ্দুসী, গোলাম রহমান, নাজমা শাহীন, কামাল উদ্দীন, নিজামুল হক ভূঁইয়া, মিজানুর রহমান, রহমত উল্লাহ, সাইদুজ্জামান, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সরকার আলী আক্কাস, হারুন অর রশিদ, জহুরুল আলম, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, এ কে এম সাইদুল হক চৌধুরী, নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ, মঞ্জুরুল আলম, এমদাদুল হক চৌধুরী, মো. আফজাল, জহুরুল আলম, শমসের আলী, আনোয়ারা বেগম, আব্দুল্লাহ আল মারুফ, জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, তাসনিম সিদ্দীকী, নজরুল ইসলাম আল মারূফ আল মাদানী, মেঘনা গুহ ঠাকুরতা, সুলতান মাহমুদ, আবুল কাশেম ফজলুল হক, এস এম আনোয়ারা বেগম, নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, ফরিদা আবিদ খানম, আবদুল আউয়াল, মজনু, নাসিরন আহমেদ, সাদেকা হালিম, এস এম আনোয়ারা বেগম, শাইখুল হাদীছ আল্লামা কাযী মঈনুদ্দিন আশরাফি, আবদুল লতিফ মাসুম, লিনজে রিভেরো প্রমুখ।
তালিকায় অন্তত ১০০ আমলা : তালিকায় অন্তত ১০০ সাবেক আমলার নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজন সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ শফিউল আলম ও মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভুঁইঞা। রয়েছেন সাবেক তিন মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ আবদুল করিম ও নজিবুর রহমান। এ ছাড়া অন্তত ১৪ সাবেক সিনিয়র সচিব রয়েছেন। তাঁরা হলেন মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, মো. মুহিবুল হক, হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, জাফর আহমেদ খান, মো. সিরাজুল ইসলাম, মো. শহীদুজ্জামান, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান, মেজবাহুল আলম, আখতারী মমতাজ, আবদুস সামাদ, কাজী রওশন আক্তার, কাজী হাবিবুল আউয়াল ও আনিসুর রহমান।
তালিকায় অন্তত ৩৫ জন সচিবের নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে আছেন নাজিম উদ্দীন চৌধুরী, ফয়জুর রহমান চৌধুরী, আবদুল মজিদ, মুসফিকা ইকফাত, মো. আবদুল মান্নান, মোহাম্মদ জাকারিয়া, হেলাল উদ্দিন আহমেদ, শ্যামল কান্তি ঘোষ, রওনক মাহমুদ, মো. হুমায়ূন খালিদ, মো. ইদ্রিস মিয়া, মো. কামাল উদ্দিন তালুকদার, মিহির কান্তি মজুমদার, মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, মো. কুদ্দুস খান, আনোয়ারুল ইসলাম শিকদার, মো. আনসার আলী খান, আবু আলম শহীদ খান, মোস্তাফিজুর রহমান, মোস্তফা কামাল, মো. শাহজাহান আলী মোল্লা, মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ, তারিক উল ইসলাম, জিল্লার রহমান, মিকাইল শিপার, কামরুন নাহার, অপরূপ চৌধুরী, এ এল এম আবদুর রহমান, আসক মাধব রায়, আবদুল মালেক মিয়া, আবদুল মালেক, মো. নুরুল ইসলাম, খন্দকার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, উজ্জল বিকাশ দত্ত, অশোক কুমার বিশ্বাস, ইকরাম আহমেদ ও মোহাম্মদ সাদিক।
এ ছাড়া তালিকায় প্রায় অর্ধশত সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন।
সাবেক ইসি কর্মকর্তা : সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, অতিরিক্ত সচিব বেগম জেসমিন টুলি ও মো. আবুল কাশেম।
সাংবাদিক : প্রস্তাবিত তালিকায় সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন অজয় দাস গুপ্ত, ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও আবু সাঈদ খান।
রাষ্ট্রদূত : তালিকায় আছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম এ হান্নান ও হুমায়ুন কবির।
সেনা কর্মকর্তা : সার্চ কমিটিতে সশস্ত্র বাহিনীর ২৭ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন—সেনাবাহিনীর সাবেক দুই প্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়া ও লে. জেনারেল (অব.) হারুনুর রশীদ। অবশ্য তালিকায় হারুনুর রশীদের পদবি মেজর জেনারেল বলা আছে। রয়েছে বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) ফখরুল আজমের নামও। এ ছাড়া রয়েছেন এয়ার কমান্ডার (অব.) ইসফাক ইসলাম চৌধুরী, এয়ার কমোডর (অব.) শফিক এলাহী, জেনারেল (অব.) জামিল ডি আহসান বীরপ্রতীক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাইদুর রহমান খান, সেলিম মাহমুদ চৌধুরী, আহসান হাবীব খান, রেফায়েত উল্লাহ, আব্দুল আল-আযাহার, আব্দুস সোবহান সাদেক ও মাহমুদুল হক, মেজর জেনারেল (অব.) আবু নাসের মো. ইলিয়াস, আ ন ম মুনীরুজ্জামান, সালেহউজ্জামান, আবু নাছের মো. ইলিয়াস, আবদুর বারী, মউনুল ইসলাম, মাসুদ রেজওয়ান, আলী সিকদার, রফিকুল ইসলাম ও সাখাওয়াত হোসেন, লে. জে. (অব.) শফিকুর রহমান, কাজী সাজ্জাদ আলী জহির ও জাফরউল্লাহ সিদ্দিক।
পুলিশের দুই আইজিপিসহ আটজন : কমিটির কাছে আসা ৩২২ নামের তালিকায় পুলিশের সাবেক দুই মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) আটজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম আছে। এঁরা হলেন হাসান মাহমুদ খন্দকার ও শহীদুল হক। এ ছাড়া রয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহার, মীর শহীদুল ইসলাম, মো. মোখলেছুর রহমান, মাহবুব হোসেন ও মীর শহীদুল ইসলাম, সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মঞ্জুর কাদের খান। তালিকার ২৯০ ক্রমিকে সাবেক আইজিপি হিসেবে মো. হাবিবুর রহমানের নাম আছে। তবে পুলিশের ওয়েবসাইটে এ নামে কোনো সাবেক আইজিপির তথ্য পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, বিবি রাসেল, প্রবাসী আশরাফ আলী, কবি ফিরোজা আক্তার, মহাখালী দারুল উলুম হোসাইনিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. নজরুল ইসলাম আল মারূফ আল মাদানী, যাত্রাবাড়ী মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হাসানসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের নাম রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির সঙ্গে আট সাংবাদিকের বৈঠক রয়েছে। তাঁরা হলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, দৈনিক নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল কবির, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সম্পাদক ইনাম আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল ও শওকত মাহমুদ, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী ও চ্যানেল আইয়ের বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট