শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার মালাকোচা পাহাড়ি জনপদে বন্যহাতি হত্যা মামলার আরও দুই আসামিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আসামিরা হলেন- শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়নের মালাকোচা গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মো. আমির উদ্দিন (৫২) ও মো. আব্দুর রহমানের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (৩৫)।
এর আগে হাতি হত্যা মামলার অন্য দুই আসামি সমেজ উদ্দিন (৪৪) ও মো. শাহজালাল মিয়াকেও (৪১) আদালত কারাগারে পাঠান। এ নিয়ে বন্যহাতি হত্যায় বনবিভাগের দায়ের করা জেলার প্রথম মামলায় ৪ আসামির সবাই এখন কারাগারে অন্তরীন হলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে বন মামলার পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, হাতি হত্যা মামলার আসামি আমির উদ্দিন ও আশরাফুল ১৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। বন আদালতের বিচারক শেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরীফুল ইসলাম খান তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে বিকেলে তাদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
তিনি আরও জানান, হাতি হত্যা মামলার অন্য দুই আসামি সমেজ উদ্দিন ও শাহজালাল গত ২ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত তাদেরও জামিন নামঞ্জুর করে তাদেরা জেলা কারাগারে পাঠিয়েছেন। তারাও এখন জেলা কারাগারে আটক রয়েছেন।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৯ নবেম্বর ২০২১ তারিখে শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ের ববালিজুড়ি রেঞ্জের আওতাধীন মালাকোচা এলাকার সোনাঝুড়ি টিলায় বনবিভাগের জমিতে অবৈধভাবে সবজির আবাদ করছিলেন স্থানীয় কৃষকরা। সেই জমিতে জিআই তার দিয়ে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়। রাতে হাতির দল খাবার সন্ধানে আসলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একটি বন্যহাতি মারা যায়। এ ঘটনায় বনবিভাগের বালিজুড়ি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে শ্রীবরদী থানায় প্রথমে একটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেন। পরে প্রাথমিক ময়নাতদন্তে জিআই তারে জড়িয়ে বিদ্যুতায়নের ফলে হাতির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হলে বনবিভাগের পক্ষ থেকে হাতি হত্যার মামলা দায়ের করা হয়।
বালিজুড়ি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে গত বছরের ১১ নভেম্বর বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর তফসিল ১ এর বিধি লঙ্ঘন করায় ৩৬ ধারায় ৪ জনের নামে বনবিভাগের পক্ষ থেকে বন আদালতে ৪ জনকে আসামি করে হাতি হত্যার মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করলে নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজির না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে আসামিরা স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পন করেন। জেলায় বন্যহাতি হত্যার ঘটনায় এটিই প্রথম মামলা বলে জানিয়েছেন বালিজুড়ি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম।
উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত শেরপুর সীমান্তের পাহাড়ি জনপদে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্বে ৩০টি বন্যহাতি মারা গেছে বলে বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে। যেসব বন্যহাতি মারা গেছে, তাদের বেশিরভাগই হয় গুলিবিদ্ধ হয়ে, নয়তো ধারাল অস্ত্রের আঘাতে কিংবা বিদ্যুতের পাতা ফাঁদে মারা পড়েছে। অসুস্থতা এবং খাদ্যে বিষক্রিয়াতেও মারা গেছে কিছু হাতি। ক্ষেতের কীটনাশকযুক্ত আধপাকা ধান, ইউরিয়া কিংবা কাঁঠাল খেয়ে বদহজমের কারণে হাতি মৃত্যুর ঘটনাও উঠে এসেছে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট