নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে প্রস্তাবিত তিন শতাধিক নামের তালিকা কাটছাঁট করে ২০ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে। এই তালিকা থেকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম সুপারিশ করবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন কমিটি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিইসি ও ইসি পদে নিয়োগে কয়েকটি মানদণ্ড তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে অবস্থান, বিচারিক অভিজ্ঞতাসহ বেশ কিছু বিষয়।২০ জনের বিষয়ে এসব মানদণ্ড যাচাই-বাছাই করা হবে।
গতকাল শনিবার সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুসন্ধান কমিটির পঞ্চম বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয়ক ও সংস্কার) মো. সামসুল আরেফিন বলেন, আজ রবিবার কমিটি আবারও বৈঠকে বসছে।
জানা গেছে, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে অনুসন্ধান কমিটি ১০ জনের চূড়ান্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির হাতে জমা দেবে। ফলে আজ থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের হাতে চার দিন সময় আছে।
আপিল বিভাগের বিচাপতি ও অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে গতকাল সকাল সোয়া ১১টার দিকে পঞ্চম বৈঠকে বসে অনুসন্ধান কমিটি। বৈঠক চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) সামসুল আরেফিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈঠকে আইনে প্রদত্ত বর্ণিত যোগ্যতা অনুসারে যাচাই শেষে প্রস্তাবিত নাম থেকে ২০ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আরো দু-একটি বৈঠক করে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হবে। ’
১০ জনের তালিকা প্রকাশ করা হবে কি না, জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আরো দু-একটি বৈঠকের পর বিস্তারিত জানা যাবে। ’ এর বাইরে আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি।
অনুসন্ধান কমিটি এরই মধ্যে নিজেরা চার দফা বৈঠক করেছে। বিশিষ্টজনদের নিয়েও বসেছে চারবার। এর মধ্যে কমিটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির কাছ থেকে তিন শতাধিক নামের প্রস্তাব পায়। এখন ১০ জনের সুপারিশ চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
অনুসন্ধান কমিটি নামের তালিকা জমা দিলে সেখান থেকে অনধিক পাঁচজনকে বেছে নেবেন রাষ্ট্রপতি। তাঁদের মধ্যে একজন হবেন সিইসি, বাকিরা নির্বাচন কমিশনার। আর তাঁদের ওপরই থাকবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ভার।
যেসব মানদণ্ড দেখা হবে : সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যাঁরা সিইসি ও ইসি হবেন, তাঁদের একটি মানদণ্ড তৈরি করা হয়েছে। কাটছাঁট করা তালিকায় থাকা ২০ জনের বিষয়ে এসব মানদণ্ড যাচাই করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে—যিনি সিইসি বা ইসি পদে নিয়োগ পাবেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে অবস্থান না থাকলে ২০ জনের তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ পড়বে। এ ছাড়া মানদণ্ডে রয়েছে—বিভিন্ন বাহিনী, মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানোর মতো অভিজ্ঞতা রয়েছে কি না। বিভিন্ন বাহিনী সম্পর্কে ধারণা কেমন, বিচারিক অভিজ্ঞতা আছে কি না—এসব দেখা হবে। নিরপেক্ষতা, সততা ও ব্যক্তিত্বের বিষয়টিও থাকবে বিবেচনায়।
সূত্র জানায়, ২০ জনের বিষয়ে এই মানদণ্ড যাচাই ও তদন্ত শেষে ১০ জনের তালিকা করা হবে। তাঁদের বিষয়ে অনুসন্ধান কমিটির আজকের বৈঠকে আলোচনা হবে। আগামী ২২ বা ২৩ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ১০ জনের তালিকা তৈরি হবে। ২৩ অথবা ২৪ ফেব্রুয়ারি সিইসি ও ইসিদের নাম দেশের মানুষ জানতে পারবে।
ব্যাপক আলোচনার মধ্যে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন’ গত ২৭ জানুয়ারি সংসদে পাস হয়। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট