সেন্টমার্টিন ভ্রমন
প্রথমদিন-
তিন তারিখ অফিস থেকে বলে একটু আগেভাগেই বেড়িয়ে পড়লাম, কারণ লাগেজ গোছানো বাকি। আর কিছু জিনিসপত্র কেনা বাকি ছিলো। (জিনিসপত্র বলতে কিছু খাবার-দাবার… যেমন চকলেট-বিস্কিট-চিপস্)। এগুলো সেন্টমার্টিনের বাইরে থেকে যায় বলে দাম বেশখানিকটা বেশি। এগুলো কিনে বাসায় ফিরে দ্রুত লাগেজ গোছানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার পক্ষে দ্রুত লাগেজ গোছানো আর কচ্ছপকে দ্রুত কাজ করতে বলা প্রায় একই। প্রত্যেকবারই এমন হয় যে আমি একসপ্তাহ আগে থেকে লিস্ট বানিয়ে প্রায় দুই-তিনদিন লাগিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেখব প্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্র ফেলে রেখে এসেছি। এবার যেন সেটা না হয়, তার জোর চেষ্টা থাকলো।
আমাদের বাস রাত আটটায়, নটরডেম কলেজের সামনে থেকে। আর তিনতারিখ হচ্ছে বৃহস্পতিবার। ফলে আমি-আরিফ দুজনেই ডিসিশান নিলাম বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে যেভাবেই হোক বাসা থেকে বের হবোই হবো। কারণ আমাদের অতীত ইতিহাস ভয়াবহ। একবার বাস ছেড়ে দিয়েছিলো। অনেক কষ্টে সুপারভাইজারকে ফোন করে বাস থামিয়ে বেশখানিকটা দূরে গিয়ে বাসে উঠেছিলাম। আর দু’বার প্লেন আর ট্রেন দেরিতে ছেড়েছিলো বলে আমরা রওনা করতে পেরেছিলাম। এই একাধিক অতীত ইতিহাসের কারণে বাসের সময়ের প্রায় আড়াই ঘন্টা আগে আমরা রওনা করে দিলাম। এবং প্রকৃতির অবশ্যম্ভাবি নিয়ম অনুসারে আমরা প্রায় দেড় ঘন্টা আগে বাস কাউন্টারে পৌঁছে গেলাম। আমরা পৌঁছে দেখি বর্ষা-রনিও চলে এসেছে।
বিকেলের নাস্তার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। বাসে উঠলে তো সেই রাতের খাবারের ব্রেক। আরিফ আশেপাশে রেঁস্তোরা খুঁজতে শুরু করলো। কিন্তু কিছুই পাওয়া যাচ্ছিলো না। অগত্যা আমি শিবলীকে ফোন দিলাম। ওর বাসা ঐ এরিয়াতেই। শিবলীর বাতলানো রেঁস্তোরায় খেতে গেলো আরিফ-রনি-অর্জন-অরিত্র। আমি আর বর্ষা রয়ে গেলাম ব্যাগপত্র পাহারায়। ওরা সেই যে গেলো আর তো ফেরার নাম নেই। আমাদের বাসের জন্যে যখন ডাকাডাকি শুরু করেছে তখন আরিফকে ফোন দিলাম। কারণ আমি কোচ নম্বর জানিনা (বরাবরের মতোই

)। আরিফ বলল এটা আমাদের বাস নয়। কিন্তু সময় তো সেইম!! কথা বলতে বলতেই ওরা পৌঁছলো। আমি টিকেট চেক করতে বললাম। দেখা গেলো আমাদের বাসই!
দৌড়তে দৌড়তে বাসে উঠে দেখা গেলো আমরাই প্রথম যাত্রী! আমাদের এমন তাড়িয়ে নিয়ে বাসে উঠানোর কোন কারণই খুঁজে পেলাম না। যাহোক বাসে উঠে ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে বসে কিছুক্ষণ ফটোসেশন চলতে থাকল। এরই মধ্যে অন্যরা বাসে উঠতে শুরু করেছে। যারা উঠছেন তারা গ্রুপে সেন্টমার্টিন বেড়াতে যাচ্ছেন সেটা বুঝতে পারছিলাম। দুটো এমন ব্যাচেলর গ্রুপ উঠল বাসে। খুব সম্ভবতঃ অফিস কলিগ ওরা। আর দু’জন উঠলেন। সুপারভাইজার সিট গুনে বাস ছেড়ে দিলো।
রাতের ঢাকা দেখতে দেখতে ট্যুরের উত্তেজনা চেপে বাসা প্রায় উড়িয়ে নিতে থাকলো আমাদের কাঙ্খিত গন্তব্যে। যে দুটো গ্রুপ বাসে উঠেছিলো ওরা খুব মজা করতে করতে যাচ্ছিলো। ট্যুর লিটারালি শুরু হয়ে গেছে বিশ্বাস হচ্ছিলোনা! বাসে উঠেই আমার-অর্জন-অরিত্রের ঘুমিয়ে যাওয়া স্বভাব। বাসের ওদের গান-আর গল্পের আওয়াজে এবার আর সেটা হবার জো দেখছিলামনা। অরিত্র এরই মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমার শুরুর দিকে খারাপ লাগছিলোনা। ওদের আনন্দ নিজের মধ্যে নিয়ে নিচ্ছিলাম। কিন্তু ব্রেকের পরেও তাদের এই আনন্দ-উত্তেজনা না কমে বরং ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছিলো। রাত্রি তখন দুটো। কিন্তু তাদের উত্তেজনার কোন কমতি নেই। ফলে সুপারভাইজারকে ডেকে একটু উচ্চস্বরেই বললাম ওদেরকে থামতে, কারণ এটা পাবলিক বাস, অন্যদের সুবিধা-অসুবিধাও তাদের মাথায় থাকা উচিত।
বাস একটু নিরব হলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
ঘুম ভাঙলো সকাল সাতটায়। জানালার বাইরে তখন আগুন লেগেছে যেন! এমন ভোর আর কখনও দেখেছি বলে মনে পড়লোনা! তাড়াতাড়ি অর্জন-অরিত্রকে জাগালাম। আমরা তখন প্রায় টেকনাফের কাছাকাছি।