বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে প্রতিদিন। নিম্নবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্তও প্রতিদিনের ব্যয় নির্বাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় সাশ্রয়ী মূল্যে কয়েকটি নির্দিষ্ট পণ্য কিনতে মানুষ ভিড় করছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) খোলা ট্রাকের সামনে। সাম্প্রতিক সময়ে এই ভিড় পথচলতি মানুষেরও নজর কাড়ছে। পণ্য পেতে হুড়াহুড়ি, কাড়াকাড়ির ঘটনাও ঘটছে।
গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশে ৪৫০টি ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় ছিল ১০৩টি ট্রাক। রাজধানীতে বেশ কয়েকটি ট্রাক ঘুরে দেখা গেছে, অন্তত চারটি পণ্য বাজারের চেয়ে বেশ কম দামে পাওয়া যাচ্ছে এখানে। পণ্যগুলো হলো তেল, ডাল, চিনি ও পেঁয়াজ। টিসিবির সর্বনিম্ন পরিমাণ ধরে হিসাব করে দেখা গেছে, একজন ক্রেতা এই চারটি পণ্য বাজারের চেয়ে ২৯০ টাকা সাশ্রয়ে কিনতে পারছেন।
খুচরা বাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে দুই লিটারের বোতল ৩৩০ টাকা। টিসিবির ট্রাকে তা পাওয়া যাচ্ছে ২২০ টাকায়। দুই লিটারে ১১০ টাকা সাশ্রয় হওয়ায় টিসিবির ট্রাকে তেলের চাহিদা বেশি। তবে তেলের সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে আরেকটি পণ্য কিনতে হয়। গতকাল তেলের সঙ্গে পেঁয়াজ কেনা বাধ্যতামূলক করেছিল টিসিবি।
একইভাবে খুচরা বাজারে দুই কেজি মসুর ডালের দাম ২০০ টাকা। আর টিসিবির ট্রাকে তা ১৩০ টাকায় পাওয়া যায়। ফলে ডালের চাহিদাও টিসিবির ট্রাকে বেশি। খুচরা বাজারে দুই কেজি চিনির দাম ১৬০ টাকা। টিসিবি তা বিক্রি করছে ১১০ টাকায়। টিসিবির সব পণ্য সর্বনিম্ন দুই কেজি কিনতে হচ্ছে।
খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৫০ টাকা। টিসিবির ট্রাকে তা ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে গতকাল টিসিবির বেশির ভাগ ট্রাকে তিন কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে ক্রেতাদের। তাতে একজন গ্রাহকের সাশ্রয় হয়েছে ৬০ টাকা। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ ছিল, বেশির ভাগ ট্রাকের পেঁয়াজই ছিল নিম্নমানের।
এই হিসাবে দেখা যায়, টিসিবি থেকে কেউ যদি দুই কেজি করে তেল, ডাল, চিনি এবং তিন কেজি পেঁয়াজ কেনেন, তাতে তাঁর খরচ হচ্ছে ৫৫০ টাকা। খুচরা বাজার থেকে একই পরিমাণ পণ্য কিনতে লাগছে ৮৪০ টাকা। ফলে একজন ক্রেতার সাশ্রয় হচ্ছে ২৯০ টাকা।
তবে কয়েক জায়গায় কিছু অভিযোগও পাওয়া গেছে। বলা হচ্ছে, স্থানীয় দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত লোক লাইনে দাঁড় করিয়ে টিসিবির পণ্য কেনাচ্ছেন। এতে অনেক সাধারণ ক্রেতা বঞ্চিত হচ্ছেন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও তাঁরা পণ্য পাচ্ছেন না। টিসিবির ট্রাক আসার পর হুড়াহুড়ির যে দৃশ্য সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, তার পেছনেও এই কারণটি মুখ্য বলে অনেকে বলছেন।
গতকাল সকাল ১১টায় মোহাম্মাদপুর শিয়া মসজিদের পাশে ট্রাকের সামনে দীর্ঘ দুই লাইনে নারী-পুরুষকে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে দেখা যায়। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নারী ক্রেতা বলেন, আমার স্বামী বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ, বাসাভাড়া ও সংসার খরচ চলে না। টানাটানির সংসার। তাই কিছু খরচ বাঁচাতে সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। ’
টিসিবি সূত্রে জানা যায়, খোলা ট্রাকে পণ্য বিক্রি গত বছরের তুলনায় আড়াই গুণ বাড়িয়েছে তারা। তাদের মজুদ ও সরবরাহ ভালো আছে। পণ্যের মানও ভালো। দাম কম হওয়ায় মানুষের আগ্রহও বেশি। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহে প্রতিদিন পণ্য বিক্রি করে টিসিবি।
আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ট্রাকের মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রি হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ভোক্তার চাহিদা বাড়ায় পরিকল্পনা বদল করছে টিসিবি। সে অনুযায়ী, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট