1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় আগ্রাসন

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

ন্যাটো জোটভুক্ত দেশ হুমকি ধামকি ও জাতিসংঘের ‘মিনতি’ উপেক্ষা করে প্রতিবেশি ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছে শক্তি-সামর্থ্য-আকার সব বিচারে বহু এগিয়ে থাকা রাশিয়া। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ইউক্রেনের বিভিন্ন বড় শহরে একযোগে চালানো সেই হামলা থেকে রক্ষা পায়নি রাজধানী কিয়েভও।

ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় পক্ষের দাবি অনুসারে ইতিমধ্যে শতাধিক প্রাণহানি ঘটে গেছে। প্রাণভয়ে ঘরবাড়ি ছাড়ছে দেশটির হামলা কবলিত এলাকার মানুষ।

গত কয়েক মাসের প্রস্তুতির ফল হিসেবে ইউক্রেনকে তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলার কাজ আগেই শেষ করেছিল রাশিয়া। দেশটিকে ঘিরে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন করেছিল তারা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এত বড় আকারে সামরিক অভিযান তথা সেনা সমাবেশের ঘটনা এটাই প্রথম। আর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বোমা পড়ার ঘটনাও এটাই প্রথম।

গত সোমবার রাতে পূর্ব ইউক্রেনে ‘শান্তিরক্ষায়’ রুশ সেনা পাঠানোর করার প্রাথমিক নির্দেশ দেন ভ্লাদিমির পুতিন। মাঝখানের দুদিন কেটে গেছে ধোঁয়াশায়। বিভিন্ন সূত্র ইউক্রেনের সীমান্ত অঞ্চলে রুশ সেনাদের উপস্থিতির কথা জানালেও মস্কো বা কিয়েভ কারো পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য মেলেনি। চূড়ান্ত খবরটি পাওয়া যায় গতকাল বৃহস্পতিবার। ততক্ষণে বিমান বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়ে যায়।

মস্কো সময় গতকাল ভোর ৫টার দিকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ অন্তত সাতটি বড় শহরে হামলা করে রাশিয়া। প্রথম হামলাটি হয় রাজধানী কিয়েভেই। ইউক্রেনে হামলার শুরুতে রুশ বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান ও দূরপাল্লার গোলা ব্যবহার করে। কিয়েভে টানা বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। রাশিয়ার সীমান্তসংলগ্ন খারকিভ শহরে হামলায় দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করে রুশ বাহিনী।

স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ৭টার দিকে রুশ পদাতিক বাহিনী ঢুকে পড়ে ইউক্রেনে। রুশ বাহিনী উত্তরের বেলারুশ থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে ইউক্রেনে প্রবেশ করে। রুশ বাহিনীর বিশাল এই বহরে নানা ধরনের সমরাস্ত্র দেখা যায়। দক্ষিণের ক্রিমিয়া ও পূর্বের দনবাস অঞ্চল দিয়েও রুশ বাহিনী ইউক্রেনে প্রবেশ করেছে বলে জানায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।

এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশে সামরিক আইন জারি করেছেন। প্রত্যেক নাগরিককে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

হতাহতের সংখ্যার ব্যাপারে কিয়েভের দাবি, ইউক্রেনে ১০ বেসামরিক ব্যক্তিসহ কমপক্ষে ৬৮ জন নিহত হয়েছে। আর রুশ সেনা নিহতের সংখ্যা ৫০।

এছাড়া ইউক্রেনের পক্ষ থেকে রাশিয়ার ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করা হলেও মস্কো তা অস্বীকার করেছে।
আর রাশিয়া দাবি করেছে, ইউক্রেনের ৭০টি সামরিক অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে ১১টি বিমানঘাঁটিও আছে।

রুশ হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রাণভয়ে কিয়েভ ছেড়ে যাচ্ছে বাসিন্দারা। গতকাল ভোর থেকেই রাজধানী কিয়েভের সড়কগুলোতে বিপুলসংখ্যক গাড়ি দেখা যায়, মেট্রো স্টেশনগুলোয় বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। অর্থ সংগ্রহের জন্য ক্যাশ মেশিনগুলোর সামনে দেখা যায় মানুষের লম্বা সারি।

ইউক্রেনের অভিযোগ, গত বুধবার তারা ব্যাপক সাইবার হামলারও শিকার হয়। আর এই হামলা হচ্ছে ইউক্রেন সরকারের ভাষায় ‘সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রায়’। সেদিন বিকেলে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি ব্যাংক এবং সরকারি বিভাগের ওয়েবসাইট অচল হয়ে যায়।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তীব্র লড়াইয়ের পর রাশিয়ার সেনারা চেরনোবিল পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র দখল করে নিয়েছে। প্রেসিডেন্টের দপ্তরের প্রধানের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেন, ‘রুশদের কাণ্ডজ্ঞানহীন হামলার পর এই কেন্দ্রটি আর নিরাপদ আছে কিনা তা বলা অসম্ভব। এটি এখন ইউরোপের নিরাপত্তার প্রতি সবচেয়ে বড় হুমকিগুলোর একটি। ’

ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে বিশ্বনেতাদের পক্ষ থেকে আসছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, যুদ্ধ ঠেকাতে এতদিন জোরালো দূতিয়ালি করা ফ্রান্সও কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাখোঁ বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার এ হামলা ‘ইউরোপের ইতিহাসে বাঁকবদল’ করার মত ঘটনা। অন্যান্য পশ্চিমা দেশের ফ্রান্সও রাশিয়ার হামলার ‘যথোপযুক্ত’ অবরোধ আরোপ করবে বলে মন্তব্য করেন ম্যাখোঁ।

ইউরোপের প্রায় সব দেশই রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আর সতর্ক পর্যবেক্ষণের কথা বলেছে চীন। জাপানসহ এশিয়ার যেসব দেশ মার্কিন মিত্র হিসেবে পরিচিত, বিরূপ প্রতিক্রিয়া এসেছে তাদের দিক থেকেও। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রুশ দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেছে ইউক্রেনীয়সহ অন্য দেশের সাধারণ নাগরিকরাও।

ন্যাটো বলেছে, তারা মিত্র দেশগুলোর জন্য প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা সক্রিয় করেছে। তবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ইউক্রেনে ন্যাটো সেনা পাঠানোর কোন পরিকল্পনা নেই।

জি-৭ নেতারা এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে বলেছেন, পুতিন আছেন ‘ইতিহাসের ভুল প্রান্তে’। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘এ সংকটটি বিধিভিত্তিক আন্তর্জাতিক বিন্যাসের প্রতি এক গুরুতর হুমকি, যার তাৎপর্য ইউরোপের সীমা ছাড়িয়েও অনুভূত হবে। ’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বলেছেন, ইইউ রাশিয়ার ওপর তার এ যাবতকালের সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেবে। ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থার (ওএসসিই) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পোল্যান্ডের বিগনিউ রাউ বলেছেন, এ হামলা হচ্ছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। কাউন্সিল অব ইউরোপ বলেছে, তারা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিবেচনা করছে।

ইউক্রেনে হামলা শুরুর কিছুক্ষণ আগে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এ ভাষণেই তিনি ইউক্রেনে অভিযান চালানোর চূড়ান্ত অনুমোদনের ঘোষণা দেন। পুতিন বলেন, ‘আমি বিশেষ সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ’

ভাষণে পুতিন বলেন, ইউক্রেন দখল করে নেওয়ার অভিপ্রায় মস্কোর নেই। তিনি রক্তপাত এড়াতে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে মোতায়েন ইউক্রেনের সেনাদের অস্ত্র সমর্পণ করে বাড়ি ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দনবাস অঞ্চলে (লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক যার অংশ) নিপীড়ন ও গণহত্যার শিকার জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া।

পশ্চিমাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে পুতিন বলেন, যারা ‘ইউক্রেনকে জিম্মি’ হিসেবে ব্যবহার করেছে, তাদের কাছ থেকে অবশ্যই নিজেকে রক্ষা করবে রাশিয়া। পুতিনের ভাষণের পাশাপাশি তার দপ্তর ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যতদিন প্রয়োজন মনে করবে, ততদিন ইউক্রেনে যুদ্ধ চালানো হবে।

ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, পূর্ব ইউক্রেন পরিস্থিতির ওপরে তৈরি করা প্রতিবেদনের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। শুধু রুশ দাপ্তরিক সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য প্রকাশ করা যাবে।

গত বছরের শেষ দিক থেকে ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন শুরু করে রাশিয়া। ইউক্রেনে শিগগির হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, পশ্চিমাদের এমন অভিযোগ এতদিন জোরালোভাবে অস্বীকার করে এলেও শেষমেষ হামলা করল ক্রেমলিন। হামলার আগ পর্যন্ত পশ্চিমাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে রাশিয়া। রুশ পক্ষের দাবি ছিল, ইউক্রেন কখনোই মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনে (ন্যাটো) যোগ দিতে পারবে না।

রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি আর কোনো দেশকেই জোটে টেনে নিজেদের পরিধি বাড়াতে পারবে না ন্যাটো। নিজের ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য’ রাশিয়ার সাম্প্রতিক এসব আনুষ্ঠানিক দাবি পশ্চিমারা মেনে নেয়নি। এ পরিস্থিতিতে কাজে দেয়নি শেষ মুহূর্তে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর জোরদার দূতিয়ালিও।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews