বিজিবি সদর দপ্তর পিলখানা হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিল, লিভ টু আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছে। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের প্রত্যাশা চলতি বছরেই মামলাটির আপিল শুনানি শুরু হবে।
এক যুগেরও বেশি সময় আগের ওই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার এখনো বিচারিক আদালতে চলছে। সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে মামলাটি। রাষ্ট্রপক্ষের এক হাজার ২৬৪ জন সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে ২০০ জনের।
পিলখানায় অর্ধশতাধিক সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ড মামলার ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিন থেকে ১০ বছরের সাজা হয় ২২৮ জনের।
আসামিদের মধ্যে দুই শতাধিক আসামির পক্ষে এ পর্যন্ত ৮২টি আপিল এবং ১০২ জনের লিভ টু আপিল করা হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়ে যাঁরা খালাস পেয়েছেন এবং মৃত্যুদণ্ডাদেশের পরিবর্তে যাঁদের যাবজ্জীবন হয়েছে, এ রকম প্রায় ১০০ আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড চেয়ে ৩১টি লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। সব মিলিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত দুই পক্ষের ৮২টি আপিল ও ১৩৩টি লিভ টু আপিল করা হয়েছে।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আসামিদের আপিল সম্পন্ন হলেও তারা এখনো আপিলের সারসংক্ষেপ দেয়নি। ফলে বলা যাচ্ছে না আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত। আসামিপক্ষ আপিলের সারসংক্ষেপ দিলেই শুনানি শুরুর সম্ভাবনা তৈরি হবে। ’
আর আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আদালত লিভ টু আপিল গ্রহণ করলে তবেই আপিলের সারসংক্ষেপ দেওয়া হবে। আর আপিলের সারসংক্ষেপ তো শুধু আসামিপক্ষ দেবে না, রাষ্ট্রপক্ষকেও দিতে হবে। ’
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিজিবির সদর দপ্তরে জোয়ানদের হাতে নিহত হন। ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা। ওই ঘটনায় বেসামরিক ব্যক্তিসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান। ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে বিদ্রোহ। সেই প্রেক্ষাপটে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নাম পরে বদলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়।
বিডিআর বিদ্রোহের ৫৭টি মামলার বিচার বাহিনীর নিজস্ব আদালতে শেষ হয়। সেখানে ছয় হাজার জোয়ানের কারাদণ্ড হয়। বিদ্রোহের বিচারের পর পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের মামলার বিচার শুরু হয় সাধারণ আদালতে। ঢাকার জজ আদালত ২০১৩ সালে দেওয়া রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। এ ছাড়া ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
পরে এই মামলার ডেথ রেফারেন্স, আপিল শুনানি শেষে ২০১৭ সালের নভেম্বরে রায় দেন হাইকোর্ট। সেখানে বলা হয়, ওই ঘটনা ছিল রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক-সামাজিক নিরাপত্তায় বিঘ্ন সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র। শুধু তা-ই নয়, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একটি দক্ষ, প্রশিক্ষিত বাহিনীকে ধ্বংসেরও চেষ্টা।
হাইকোর্টের রায়ের তিন বছর পর ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলেও ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি তোলার খরচ, অনুলিপি পাওয়ার প্রক্রিয়া, আপিলের পেপারবুক তৈরি, আদালতে সেই পেপারবুক রাখার স্থান, চূড়ান্ত বিচারের সময়সহ বিচারিক প্রক্রিয়ার নানা কারণে আপিল শুনানি শুরু হতে দেরি হচ্ছে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট রুলস অনুযায়ী তারিখ নির্ধারণের জন্য আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করতে পারে রাষ্ট্রপক্ষ। বেঞ্চ নির্ধারণ করা হলে সেই আবেদনটি করা হবে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট