বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রদানের সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। গত ২২ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম সভায় এ প্রতিশ্রুতি মিলেছে। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন মঙ্গলবার এ তথ্য জানায়।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ সার্বিক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক অ্যারেঞ্জমেন্টের (টিফা) আওতায় এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়।
সভায় বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং এ ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা, পণ্য ও সেবা সংক্রান্ত বাণিজ্য, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে সমীক্ষা করার বিষয়ে অস্ট্রেলিয়া আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট শীর্ষ বাণিজ্যিক সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ বৃদ্ধি উৎসাহিত করার বিষয়েও জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ সম্মত হয়।
অস্ট্রেলিয়ার উৎপাদনকারী এবং বাংলাদেশের প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানকে কিভাবে গ্লোবাল ভ্যালু চেইনে আরো ভালোভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে এ সময় আলোচনা করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার কাঁচামাল যেমন- তুলা, উল, চামড়া ব্যবহার করে বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদন করে তা তৃতীয় দেশের বাজারে এবং অস্ট্রেলিয়ার বাজারে বাইব্যাক ব্যবস্থার মাধ্যমে রপ্তানির সুযোগ পরীক্ষা করার ব্যাপারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। উভয় দেশ অস্ট্রেলিয়া থেকে এলএনজি রপ্তানির জন্য সব পন্থার ওপর আলোচনা করার ব্যাপারে সম্মত হয়।
এ সময় অস্ট্রেলিয়ার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে, বিশেষ করে অবকাঠামোতে বিনিয়োগের বিষয়ে উৎসাহিত করা হয়। অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের অবকাঠামো, জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা অনুসন্ধানে আগ্রহী।
এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এ ক্ষেত্রে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় সহযোগিতা এবং দেশের শিক্ষা প্রোফাইল উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের অধিকসংখ্যক ছাত্রকে অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রদানের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। অস্ট্রেলিয়া ফিউমিগেশন অ্যাক্রিডিটেশন স্কিমের আওতায় সে দেশের বাজারের চাহিদার মানদণ্ডের বিষয়ে বাংলাদেশের উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের প্রশিক্ষণ প্রদানে আগ্রহ প্রকাশ করে।
জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী একটি ভিডিও বার্তা প্রদান করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া অংশীদার হিসেবে নতুন পর্যায়ে অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ, মূল্যবোধ, জনগণের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ এবং ক্রমবর্ধমানভাবে বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টতার গতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেন সে দেশের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য দপ্তরের উত্তর ও দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রথম সহকারী সচিব গ্যারি কাওয়ান। সভার প্রথমে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য দপ্তরের অ্যাসোসিয়েট সেক্রেটারি টিম ইয়ান। অস্ট্রেলিয়াস্থ বাংলাদেশের হাইকমিশনার সুফিউর রহমান এবং বাংলাদেশস্থ অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরিমি ব্রুয়ার আলোচনায় অংশ নেন। উভয় দেশের ৩০ জনের বেশি প্রতিনিধি এ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠক শেষে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য দপ্তর আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজ এবং অস্ট্রেলিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনার আয়োজিত নৈশভোজে দুই দেশের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা ২০২৩ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট