1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১২ অপরাহ্ন

বিশেষ শিশুও মানুষ

শামসুন নাহার
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০২২
বিশেষ শিশুর নিজেকে মারা ( Self Hitting) আচরণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল-
বিশেষ শিশুদের মধ্যে প্রায়ই নিজেকে মারা বা বাবা মাকে বা ছোট ভাই বোনকে মারা বা অন্যদের মারার প্রবণতা দেখা যায়। এ আচরণ সহ্য করা বাবা মায়ের জন্য ও তার আশে পাশের মানুষের জন্য অনেক কঠিন। অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চা অন্যদের মারছে না কিন্তু মারছে তার নিজেকে। বিশেষ শিশুরা যখন এমন মারামারি করে তারা লক্ষ্য করে না কোথায় মারছে? দেখা যাবে বাচ্চাটি মারছে তার মাথায়, চোখে, বা কখনও দেয়ালে মাথা দিয়ে আঘাত করছে- এটা খুবই বিপদজনক। বিশেষ শিশুর মা বাবা বা কেয়ারিং পার্সন হিসেবে আমরা কি করতে পারি? কেন করছে বাচ্চা এমন? সমাধানই বা কি?
এ অবস্হার ভেতর দিয়ে আমরা গেছি, আমাদের ছেলে ইসমাইলের মারামারি করার আচরণ দেখা দেয় যখন ওর বয়স ছয় বছর এবং সামারার ইসমাইলের ছোট বোনের জন্মের পর।
যদিও ইসমাইলের একজন বড় বোন আছে, তার সাথে ইসমাইলের বেশ ভাল বন্ধুত্ব – এমন কি হরি হর আত্মাও বলা যায়। ওর বড় বোন সাদিকাকে দেখলেই ইসমাইলের চোখে মুখে খুশীর ঝিলিক খেলে যায়, সাদিকাও ভাই অন্তপ্রাণ, কাঁধে কোলে পিঠে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ভাইকে। কিন্তু ইসমাইলের মারামারি আচরণ যেন এই প্রিয় বোনকেও নিস্তার দিচ্ছে না। স্কুল থেকে ফোন আসে, We need to talk.
স্কুলের প্রিন্সিপাল বললেন, ইসমাইল তার Educational Assistant এর গলায় চেপে ধরেছে। কি সব্বোনেশে কথা? মা হয়ে এ কথা শুনতে যে কি কষ্ট তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। আমি আর কি বলবো, কখনও কখনও অবস্হা এমন হয় আমার মাথা কি বলবে বলবে চিন্তা করে। জিজ্ঞেস করলাম, My sincere apologies, may I know why he did this? ( আমার পেট থেকে এই অটি বাবু ইসমাইল বেরিয়েছে, সরি তো আমাকে বলতেই হবে – কিন্তু এতে আমি ভদ্র মা জানান দেয়া হলেও আমার বাচ্চার এক ছটাকও লাভ হবে না সে আমি জানি)। আমি বললাম, I wanna say sorry to his EA. Is she a trained one to work with special child?
আব আয়া উট পাহাড় কি নিচে? ইসমাইলের Learning Coordinator এবার আমতা আমতা করে বললেন, No, she is not. His regular EA is absent.
তখন ইসমাইল একটি নরমাল স্কুলে যাচ্ছিল, ওকে একজন সার্বক্ষণিক EA দিত স্কুল থেকে।
পরিস্হিতি স্কুলের Negotiation এর অনুকূলে আনতে Principal এবার বললেন, Our facility is not enough to support him.
(আমি মনে মনে বললাম, না ক তুই আমি হুনতাছি, আমি কইয়া কইয়া কাহিল, এইবার তুই ক।)
তারপর সে বললো, It’s better for him to go to other schools where facilities are more to support him.
Until then he may come to school for two days for the classes he may like.
আমি আবুল কানাডার education system সম্পর্কে কি জানি? বাংলাদেশের গাঁও গেরামের মাইয়া কি করি এখন। দেশে দেখছি সমস্যা হলেই মা খালারা ফ্যাঁতফ্যাঁত করে সুর করে কাঁদে, মন চাইলো আমিও একটু সুর করে কাঁদি, অ প্রিন্সিপাল এইডা কি শোনাইলেন, আল্লাহ গো……যদিও এর কিছুই আমি করিনি। বললাম, You are teachers, you have experience and expertise, I don’t. Whatever you think best for him.
তারপর ইসমাইলকে নিয়ে বাসায় চলে এলাম।
তখন উইক এন্ডে Behaviour therapist বাসায় আসেন থেরাপীর উদ্দেশ্যে। তারও Special need বাচ্চা আছে, তাই আমার সাথে একটা দুটো সুখদুঃখের কথা হয় ( যদিও আমার চেহারায় এমনি এক দুঃখসুখের ভাব আছে, road to palace যে কারো সাথেই সখ্যতা জমতে আমার বেশীক্ষণ লাগে না যদি অপর পক্ষ ভদ্র ও সম্মান দিয়ে কথা বলতে জানে এবং কথা বলতে চায়, পিরিতি ছাড়া সব বিষয়ে আলাপ জমে উঠে তাড়াতাড়ি কারণ আমি পরীক্ষায় ০২ পেলেও মনোযোগ দিয়ে শুনি কথা, প্রসঙ্গ শুরু হয় হয়তো একটা বল নিয়ে কিন্তু দেখা গেল বলকে কত দিকে লাথি মেরে, সারা পৃথিবীর নেতাদের দিয়ে একটা প্রীতি ম্যাচ খেলিয়ে আলোচনার হ্যাপি এন্ড করে আমরা আলোচনা শেষ করছি খিলখিল করে – বড়ই বাজে স্বভাব, প্রসঙ্গ স্হির থাকা জরুরী। যাউক গা – ফিরে আসি বিশেষ শিশুর মারামারি প্রসঙ্গে)। Behaviour therapist স্কুলের গড়বড় ঘুটালা এবং আমার পুত্রধনের hitting adventure এর Sad conclusion result শুনে বললেন, Nope, you need to be strong and stand up for him, education is his birth right। Write to school board.
শুনে আমি পেলাম সাহস, এমনিই আমি খুঁজছিলাম রাস্তা কি করি,কি করি। এখন পেলাম দিক নির্দেশনা। মনে হলো- একে তো নাচুইনন্যা বুড়ি তার উপর ঢোলের বাড়ি, বুড়ী কি আর থামে? সাথে সাথে ইমেইল করলাম স্কুল বোর্ডকে। তারপর আমরা, স্কুল বোর্ড কর্তৃপক্ষ এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ মিলে মিটিং হয় কি করা যায়, তখন পূর্ব সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়, ইসমাইল পাঁচদিন সপ্তাহে হাফ ডে স্কুল করার অনুমতি পায়। আমি তাদের সার্ভিসে সন্তুষ্ট হতে পারি না। খারাপও লাগে, প্রিন্সিপাল বলেন, To avoid distractions, he needs to use the other door not the main door. আমি জানতে চাই কেন?
তারপর তিনি বলেন, It may help him to stay calm.
আমি বললাম, he loves people, please help him to be in people. তারপর তিনি সম্মত হন, বলেন, ok, you will walk with him to his class room and pick him from there. আমি সম্মত হই।
আমি ভাবলাম এখানেই আমার থামলে চলবে না – I need to walk more miles for my sunny Ismaeel. লাগিয়ে দিলাম internet surfing এর বিদ্যা কাজে, খোঁজ নিতে লাগলাম কোথায় ভাল সাপোর্ট পাওয়া যায় এমন hitting tendency কমানোর জন্য, লেগে গেলাম ভূত থেকে ভূতের সন্ধানে।আমার সামনে খুললো অনেক গুলো রাস্তা, কয়েকজন স্পেশালিস্টের নাম, অটিজম সাপোর্টেড প্রোগ্রামের নামও স্কুলের নাম, অটিজম সাস্কাটুনের এক্সপার্টের পরামর্শ। সব দরজায় খটখটানো শুরু করলাম, যোগাযোগ করলাম অনেকের সাথে, ব্যবহার করলাম কত ঔষধ- সাময়িক সহযোগিতা হয় তবে কোন স্হায়ী সমাধান পাই না। স্কুল বোর্ডের সাথে, প্রিন্সিপালের সাথে ক্রমাগত ইমেইলে সাক্ষাতে আলোচনা করতে থাকি, একদিন সাহস করে
স্কুলের প্রিন্সিপালকে বলেও ফেলি, why don’t you tell the school board that you don’t have enough support to support my son? এবার কথায় চিড়ে ভিজে। তিনি লিখেন স্কুল বোর্ডের কাছে, আমাদের ইসমাইল এবার Special Need Program এ সুযোগ পায় ফুলটাইম স্কুল করার। এই প্রোগ্রামে যাবার পর ইসমাইলের aggressive hitting attitude
অনেক কমে আসে।
আমাদের সাথে পরিচয় হয় অটিজম উইনার পৃথ্বী খানের শ্রদ্ধেয় বাবা বাদল খান আংকেল, অটিজম কনসালটেন্ট জাহাঙ্গীর হোসেন ও তার স্ত্রী ফ্লোরা আপার, শাহমিকা আগুনের সাথে। সবার পরামর্শ আমরা এক এক করে চেষ্টা করি। সবার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।ইসমাইলের জন্য বেশী কাজ করেছে বাদল খান আংকেলের কিছু কৌশল, অটিজম কনসালটেন্ট জাহাঙ্গীর হোসেনের কিছু ঔষধ ও ফ্লোরা আপার উপদেশ, শাহমিকা আগুনের উপদেশ আমরা বেশীদিন ফলো করতে পারিনি কারণ ঐ ঔষধ আমরা সাস্কাটুনে পাচ্ছিলাম না। উনিও একজন সফল অটিজম কনসালটেন্ট এবং এর পাশাপাশি উনি বাবামাকে মানসিকভাবে সুস্হ ও শক্তিশালী করতে বেশ উল্লেখযোগ্য উপায়ে সাহায্য করেন।
এত বড় করে এ situation বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হলো এ বাচ্চাগুলোর ভেতর আর সবার মতো অনেক কিছু করতে না পারার কারণে এক রকমের anxiety তৈরী হয় যা তারা প্রকাশ করতে পারে না তারা এর প্রকাশ ঘটায় অনেক সময় aggressive hitting tendency দিয়ে। এই মাত্রা অনেক বেশী হয় যখন বাচ্চাটির delayed speech (দেরিতে কথা বলা) বা non- verbal (খুব অল্প কথা বা একেবারেই কথা বলার ক্ষমতা না থাকা) সমস্যা থাকে।এক্ষেত্রে আমি ইসমাইলের আওয়াজ হই
যেহেতু আমি দেখি ওর ভেতর স্কুল যাবার এক অদম্য আকাংখা কাজ করে, এ উদ্দেশ্য সাধিত হয় না বলে ও অন্যভাবে এই aggressive hitting behaviour দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করে।
তারা তখন মনোযোগ পাবার জন্য এমন কিছু কাজ করে যেন তাদের দিকে আমরা মনোযোগ দেই।কিন্তু এটাতো সঠিক ব্যবহার নয়। এটা কিভাবে কমানো যায়? কারণও কিন্তু কেবল একটি নয়।
বাচ্চা দেখা গেলো হাত কামড়ানো বা সেল্ফ হিটিং করছে, কখনও ওর হাত পা ওয়ালে বাড়ি দিচ্ছে,
কি করবো আমরা? এ আচরণ সহ্য করা কঠিন, এতে মারাত্মক আঘাত পাবার সম্ভাবনা আছে।
এমন আচরণ আমি অনেক দেখেছি আমার ছেলের মাঝে, এক জায়গায় বলে এটা sensory problem. আমার ছেলেও মাঝে মাঝে করে। ওর হাতে এমন একটা কিছু কষ্ট অনুভব করে যার থেকে ওর মনে হয় কামড় দিলে ওর ভালো লাগবে। ওর কষ্টটা কিন্তু ও বলতে পারছে না। এক রকমের থেরাপী গ্লাভস পাওয়া যায় যা বাচ্চার
হাতে লাগালে এ যন্ত্রনা ওর কমবে। আমিও করোনার সময় ঐ গ্লাভস সম্পর্কে জানতে পারি কিন্তু এখনও সংগ্রহ কিভাবে ও কোথা থেকে করবো তা জানি না। ঘরে গ্লাভস থাকলে আপনি ওর হাতদুটোতে একটু ভেসলিন বা তেল ম্যাসাজ করে দু তিন জোড়া গ্লাভস পরিয়ে দেখতে পারেন এতে ও আরাম পাবে এবং হাতে ওর কষ্টটা কমবে। আমি এটা করি।
তাহলে দেখা গেল আমার ছেলের ক্ষেত্রে,
ওর aggressive hitting behaviour বা throwing stuffs বা
Self hitting কমাতে কাজ করেছে অনেক গুলো জিনিস। একটু সাজিয়ে লিখি,
১. Close observation and finding the reasons why is he doing this ( ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ এবং কারণ অনুসন্ধান করা কেন সে এমন করছে?)
২. After finding reasons, investigating possible solution ( কারণ খুঁজে পাবার পর এবার সম্ভাব্য সমাধান সন্ধান করা)
৩. Investing enough quantity and quality of time to apply the best possible solution that work for the child ( বাচ্চার জন্য সবচে ভাল সম্ভাব্য সমাধানটি কাজে লাগানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ও গুণগত সময় ব্যয় করা)
এবার আমার ১,২,৩ এ আমরা কি পেয়েছি কি করেছি তা বলি,
১. কারণঃ
১) ইসমাইল সামারার সাথে তার মা বাবা ও বোনকে ভাগ করতে চায়নি।
২) ইসমাইল non verbal নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না।
৩) ইসমাইল মনোযোগ চায় inappropriate behaviour বা aggressive behaviour বা hitting attitude দিয়ে।
৪) ইসমাইলের বয়সী বাচ্চাদের তুলনায় ও পিছিয়ে। যেমন ও লক্ষ্য করে অন্য বাচ্চারা রাস্তায় সাইকেল চালায় কিন্তু ও করতে পারছে না।
৫) ইসমাইলের কৌতুহলের বহিঃপ্রকাশ আর পাঁচ দশজনের মতো নয়।
৬) ইসমাইলের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ও নরমাল বাচ্চাদের থেকে আলাদা।
৭) কোন কোন সময় ইসমাইলের ধৈর্য্য নরমাল বাচ্চার চেয়ে বেশী আবার কখনও অনেক কম।
৮) ইসমাইল ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না।
৯) ইসমাইল কখনও কখনও সম্মান পেতে চায়, চায় ওর কাজ গুলো মনোযোগ পাক, প্রশংসা পাক।
১০) আমাদের দ্বিচারিতায় ইসমাইল বিভ্রান্ত হয়, ও ভুল করলে ওকে বলি সরি বলতে কিন্তু আমরা ভুল করলে ওকে সবসময় সরি বলি না তো? এ থেকে ওর মনে বিদ্রোহ আসে, বহিঃপ্রকাশ ঘটে self hitting দিয়ে।
১১. এক সাথে সাত আট ধাপের কাজের আদেশ করা ওর লেভেল কতটুকু তা না বুঝা?
১২. দোষ না করলেও দোষ চাপানো ইসমাইলকে কষ্ট দেয়।
১৩. ইসমাইলের পছন্দের গুরুত্ব না দেয়া।
১৪. ইসমাইলকে অনেক সময় কাজে অংশগ্রহণ করতে না দেয়া।
১৫. ইসমাইলের mood না বুঝা, শরীর হয়তো খারাপ সেটা বুঝতে দেরী হওয়া, mood না বুঝে ওকে প্রতিদিনের রুটিনমাফিক খাবার ও কাজ করতে দেয়া।
২. সম্ভাব্য সমাধান অন্বেষণঃ
আমি চিন্তা করতে থাকি এর মধ্যে কয়টি আমরা নিজেরা সমাধান করতে পারবো এবং কয়টিতে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও medical intervention লাগবে।দেখলাম বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের
১)চিন্তা পরিবর্তন করা প্রয়োজন
২) চাহিদার সীমিতকরণ করা প্রয়োজন
৩) লক্ষ্য নির্ধারণ ও তাতে মনোযোগ নিবিষ্টকরণ প্রয়োজন
৪) বাচ্চাকে সময় দেয়া ও লক্ষ্য গুলো কাজে পরিণত করার জন্য বাচ্চার সাথে একসাথে কাজ করা প্রয়োজন।
তারপর আমরা সেভাবে কাজে লেগে গেলাম, বিশেষজ্ঞগণের পরামর্শও শুনলাম, সেগুলোও কাজে লাগালাম।
শাহমিকা আগুন তার একটা আর্টিকেলে লিখেছেন, মাতৃত্বকে নিজের প্রফেশন ভাবুন, আমি সাত ঘাটের পানি খেয়ে দেখলাম, এ কথা সত্য, আমার বাচ্চার জন্য আমাকে চেষ্টা করতে হবে।আমি আমার ফুলটাইম জব আর চেষ্টা করলাম না, বাচ্চাকে বেশী সময় দেবার পাশাপাশি কি করা যায় আমার যতটুকু যোগ্যতা আছে তা দিয়ে তেমন কিছু খুঁজে নিলাম। মনের ভালো লাগার জন্য লেখালেখি শুরু করলাম।
বাদল খান আংকেল বললেন, বাচ্চাকে সময় দিতে হবে। তবে এরা এক পা সামনে যায় তো তিন পা পেছায়। hitting tendency কমাতে উনি পরামর্শ দিলেন, নিউটনের তৃতীয় সূত্রের ব্যবহার, একটা মারবে তো একটা মাইর খাবে।এ পদ্ধতি ইসমাইলের ক্ষেত্রে মাইর দেয়ার চেয়ে মাইরের ভয় দেখানো কাজ করেছে বেশী।তবে এক্ষেত্রে মা বাবাকে কঠিন সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় কারণ তার উদ্দেশ্য মাইর দেয়া নয় মাইর থামানো, তাই খুব যত্নবান হতে হবে, মনে রাখি আমরা এটা ট্রিটমেন্ট পানিশমেন্ট নয়।
সাইক্রিয়াটিস্টের ADHDনিয়ন্ত্রণ ঔষধ আমাদের তেমন সহযোগিতা করেনি, একদিক থামাত তো আরো দশটা লাইড এফেক্ট দেখা দেয়। তাই আমরা সেটা বন্ধ করি।
অটিজম কনসালটেন্ট জাহাঙ্গীর হোসেন এর ঔষধ অনেকখানি ওর অস্হিরতা কমায় কিন্তু ইসমাইল ঔষধ আর খেতে চায় না, আমরা কসরত করেও ওকে এই মেডিসিন খাওয়াতে পারি না। উনার স্ত্রী ফ্লোরা আপার ম্যাসাজ থেরাপী অনেক কাজে দেয়, সেটা করতে থাকি নিয়মিত।
৩. সম্ভাব্য সমাধানের প্রয়োগঃ
১) ইসমাইলকে সামারার চেয়ে বেশী প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে এটা বুঝিয়ে ইসমাইলের মনস্তত্ত্বকে আমরা ছোঁয়ার চেষ্টা করি, সামারার ডায়পার আনা, জামা আনা এসব কাজে ইসমাইলকে দায়িত্ব দেই, এভাবে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরী ও উন্নত করার চেষ্টা করি।বুঝাতে কিছুটা সক্ষম হই সামারা বন্ধু প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। ধীরে ধীরে ও সামারার প্রতি কিছুটা সফট হতে শুরু করে, আমিও ওকে একপাশে কোলে নেই তো সামারাকে আরেক পাশে, এখন মাঝে মাঝে ওরা এক সাথে খেলা করে। hitting tendency কমতে থাকে।তারপরও close observation এ রাখতে হয়।
২) ইসমাইলের প্রয়োজনে ইসমাইল আমাকে হাতে ধরে টেনে নিয়ে যায়, পয়েন্টিং করে, আমি সাহায্য করি ওর চাহিদা মত কাজটা করে দিতে।স্কুল থেকে picture Exchange Communication ( PEC) ব্যবহার করা শেখানো হচ্ছে।এটা আয়ত্ত্ব করতে পারলে হয়তো এ ওর anxiety সমস্যা কমবে, সাথে কমবে hitting.
৩) কৌতুহল, আনন্দের বিহবলতা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন, এটা মানব মস্তিষ্কের গোপন অজানা রহস্য, কিছু সময় বুঝি তখন শেখানোর চেষ্টা করি ওর মনকে অন্যদিকে ঘুমিয়ে দেই, ও নাড়ছে টিভি, আমি দিলাম bubble game বা musical game.
৪) সাইকেল চালানো ও অনেকটুকু শিখে গেছে, এতে occupational therapist আমাদের সাহায্য করছেন।
৫) ধৈর্য্য বাড়ানোর জন্য একদম right away সব হাজির করি না, যেমনঃ ও ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না। রুটিন থাকলেও আমি এদিক সেদিক করি সময়ের, দেখাই বানাচ্ছি, তুমিও সাহায্য কর।
ও তখন প্লেট নিয়ে দাঁড়ায়, খাবার রেডী হলে টেবিলে নিয়ে আসে, এখন বুঝতে পারে দেরী হলে রাগ করতে হয় না, অপেক্ষা করতে হয়।
৬) ওর পছন্দকে গুরুত্ব দেই, ভাল কিছু করলে উৎসাহ দেই, ওর পছন্দের ট্রিট দেই, আদর করি।
৭)ওকে সহজ কাজের বা এক ধাপের আদেশ দেবার চেষ্টা করি।
৮) আগে বুঝার চেষ্টা করি ও কি ভুল বা দোষ করেছে কি না। নয়তো বলি না এটা ইসমাইল করেছে। এতে ওর self respect আহত হয়, ও কষ্ট পায়।
৯) ওকে সরি বলা শুরু করি যদি আমার ভুল হয় এতে ও সম্মানিত বোধ করে, খুব সুন্দর করে হাসে।দেখতে খুব ভাল লাগে।
১০) ওর mood বুঝার চেষ্টা করি, সব কাজে ওকে অংশগ্রহণ করতে দেই যা ওর দ্বারা করা সম্ভব।শরীর খারাপ কিনা পরীক্ষা করি নিয়মিত।
উপরিউক্ত চিন্তার পরিবর্তন, ওর hitting tendency কমানোর লক্ষ্যে ওর সাথে থাকা, পাশে থাকা, মনোযোগ দেয়া, যথাসময়ে সাহায্য করা, ওর সমস্যা বুঝার চেষ্টা করা, ফুলটাইম স্কুলে পাঠানো, ম্যাসাজ দিয়ে গ্লাভস পরানো প্রতিটি পদক্ষেপ আমাদের বেশ সাহায্য করেছে। ইসমাইল প্রায় ৭০% জয় করেছে hitting tendency এবং ৫০% self hitting. অটিস্টিক হলেও এ বাচ্চাগুলোর ও আর বাকী সবার মতো একটু পিছিয়ে থাকলেও সব অনুভব ও চিন্তা আছে। প্রয়োজন যত্ন নেয়া। যত্নে এরাও মানব সম্পদ হতে পারে, পারে জয় করতে ওদের কঠিন বৈরী আচরণ self hitting বা hitting tendency. আমি ইসমাইলকে প্রতিদিন হাজারবার বলি, you can do it, বিশ্বাস করি ও পারবে একদিন স্বাভাবিকভাবে চলতে। আমি বুঝাই ওর বোন যা পারে ও তা অবশ্যই করতে পারবে। আমি আশাবাদী। ভাল করুক, মঙ্গল আলোয় উদ্ভাসিত হোক বিশেষ সহ এ জগতের সব শিশু। পরম করুণাময় তাদের সহায় হোন।
(লেখক- শামসুন নাহার, কানাডা প্রবাসী)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews