সুদ কইলাম সুদঐ বৌ,
এইডা এবার বাড়ীওয়ালীর বাড়ীর ভাড়ার মাইদ্যমে দেও আর নিজের বাড়ীর ব্যাংকের ঋণের সুদঐ দেও।আদনান হুজুরের ওয়াজ হুনো বৌ।কইলো করবীর সোয়ামী গোলাপ মিয়া।
করবীঃ হায় হায় কি হুনাইলেন এইডা, আমরা থাহুম কই তাইলে? ভাড়া বাড়ীততো ভাড়া দেই সুদ দেই না।
কত কষ্ট করে এক টুকরো জমি কিনেছে গোলাপ মিয়া, সেখানে বানাতে চায় একটি বাড়ী, মধ্যম আয়ের চাকুরীজীবী সে, কিছু টাকা জমিয়েছে, সব কাগজপত্র দেখে ব্যাংকের ম্যানেজার বলে লোন পাবে তারা। বাঁধ সাধে তার বউ করবীর ধর্মীয় অনুভূতি যাকে সে গভীরভাবে ভালবাসে। আজ পেয়ে গেল আদনান হুজুরের ওয়াজ, শুনিয়ে দিল বউকে।তবুও তার মন মানে না।
গোলাপ মিয়াঃ আরে বউ তোমারে সব বাইঙ্গা কন লাগে, সোজা কতা বুজবার পারো না।
করবীঃ না না সুদ মায়ের লগে জিনা, ব্যাংকর ম্যানেজাররে
কন বাড়ী লাগবো না আমগোর।
গোলাপ মিয়াঃ আরে বউ সুযোগ কি সবসময় আহে? তুমি বুজো কতা। আমরা বাড়ী কিনলে কি দিমু
ব্যাংক ঋণ = বাড়ীর দাম + সুদ, কতা ঠিক কইলাম কিনা বুজছ?
করবীঃ হ তাই তো কিন্তু সুদ মায়ের লগে জিনা না না।
গোলাপ মিয়াঃ আমরা বাড়ী কিনলে ডাইরেক্ট সুদের লগে আমরা জড়িত অই, এইডা তো বুজলা ঠিক আছে?
করবীঃ হ হ ঠিক আছে। কিন্তু মায়ের লগে জিনা না না বাব্বাহ কবীরা গুণাহ।
গোলাপ মিয়াঃ এইবার হুনো আমরা যে ভাড়া দেই, হেইডা দিয়ে বাড়ী ওয়ালা কি করে? হের বাড়ীর ব্যাংকের ঋণ দেয় না?
করবীঃ হ কতাতো ঠিক। বাড়ীওয়ালী আফায় তো কইলো গত মাসেও তার ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার তারিখের আগে আগে ভাড়া দিয়া দিতে।
গোলাপ মিয়াঃ বাড়ীওয়ালার বাড়ীর ব্যাংকের ঋণ = বাড়ীর দাম + সুদ= বাড়ীর ভাড়ার টাকা দিয়া মাসে মাসে কিস্তিতে পরিশোধ,
আমরা এই সুদের লগে ইনডাইরেক্ট জড়িত। কতা কি ঠিক না কি বেঠিক?
করবীর চোখ কপালে, সুন্দর মুখে চিকন ঘাম, টেনশনগ্রস্ত অসহায় অবস্হা।কত চেষ্টা করে সে আল্লাহর হেফজ আমানে থাকার, শেষমেষ এই আকাম তারে দিয়াই হইলো। জোরে জোরে পড়ে নেয়ঃ আস্তাগফিরুল্লাহ…. কয়েকবার।
করবী আমতা আমতা করে অসহায় ভাবে বলেঃ কতা তো মিছা না। এহন উফায়, তারপরও ডানা কাটা পাখি উড়ার শেষ চেষ্টা করে বলে, আল্লাহয় দেখবো আমি তো ডাইরেক্ট জড়িত না।
গোলাপ মিয়াঃ ঘুয়ের মাঝখানে ফাঁড়া দেওয়া আর ঘুয়ের এক সাইডে ফাঁড়া দেওয়া একই কতা, দুইটাই জিনা, কবীরা গুণাহ।
করবীঃ তবুও আমার মন মানে না চাঁপা পারুলের বাফ! আমি চাই না ডাইরেক্ট গুণাহ করতে, অজান্তে অইছে আল্লায় মাফ করবো। তাছাড়া দুনিয়ায় গরবাড়ী দরকার কি? তিনবার কুলহু আল্লাহ ফরলে হাহ হা কি হইবো জানেন?
করবীঃ এর লাইগ্গা কই, কালাম হাদিস পড়েন, বেহেশতে বাড়ী অইয়া যাইবো, বেহেশতে দালান কোঠা।
গোলাপ মিয়াঃ হেই বাড়ীতে আমরা তো আর এহন থাকতাম পারতাম না, বেহেশতে গেলে আমার হুর পরীরাসহ নয়তো থাকবো, তখন হুররারে সময় দিয়া তোমার লাইগা সময় থাকলে তো?
করবীঃ কি যা তা কন? বেহেশতে আমি হমু অত্যন্ত সুন্দর আমনের হুর লাগবো না কইলাম, আমার বেহেশতের ঘরে কোন হুর ঢুকবার ফারবো না কইলাম। আমি কবরে গেলে ঐ ঝাঁটাটা দিয়া দিয়েন লাশের লগে, ফিডাইয়া সোজা কইরা ফালামু না হুরফুর করফুর। সখ কতো তানি হুর বেডিরে আমার গরে ডুকাইবো, খবরদার কইলাম চাঁপা পারুলের বাফ! এ চিন্তা মাতাত তুন জাইরা ফালান।তয় মায়ের লগে জিনা করা যাইবো না সুদ নিয়া এইডা গুণাহে কবীরা।
গোলাপ মিয়াঃ আইচ্ছা গেল বছর জমির কাইজ্জায় যহন মামলা অইলো পুলিশ আইলো তহন কিয়ের লাইগ্গা পুলিশরে ঘুস দিলেন গো বিবিজান? হেইডাও তো কবীরা গুণাহ।
করবী লজ্জা পেয়ে গোলাপের গায়ে আলতো ছোঁয়া দিয়ে বলেঃ
আরে হেইডা প্রয়োজন আছিল, ইসলাম প্রয়োজন অস্বীকার করে না।
যদিও গোলাপ মিয়ার কাছে সব কেমন আউলা ঝাউলা লাগে,
আরে ভাই গরীব সামনে যাইতে লাগলেই কত ফ্যাকরা দিয়া আঁটকান, সুদ ব্যবস্হা কি আমি বানাইছি না এর থাইক্যা বাইর হইতে পারমু, খামাখা আমরার সব সুখচিন্তায় আগুন জ্বালানি, আমরা তো কারো ক্ষতি করতাছি না, যেইডাতে আমগো বালা অয়, পরিশ্রম কইরা একটু ভাল থাকনের চেষ্টা।তবুও করবী বেশ ধার্মিক, সে ভালবাসে করবীরে, কি সুন্দর দুইটা পরীর লাহান
ফুটফুইট্যা সুন্দর, ফুলের লাহান কোমল মাইয়া দিছে তারে- তারার কতা সে বাফ অইয়া না ভাবলে কে ভাববো? কেমনে বুজায় করবীরে?
তাই কইলো
মাতা ঠান্ডা কইরা গোলাপ মিয়াঃ দুই রাকাত নফল ফইরা তুমি আল্লাহরে কও, করবীর চোখ পাকানো দেখে বললো না না আমিও কমুনে – এইডা আমাগো চাঁপা ও পারুলের ও আমরার ভবিষ্যতের লাইগ্যা প্রয়োজন। বাড়ীওয়ালার বাড়ীর ভাড়া দিয়া গোণাহগার অওয়ার চাইতে আমরা নিজের বাড়ীর ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ কইরা গুণাহগার অই কি কও?
করবী মুখ ও মাথা নাড়তে নাড়তে হুমমম কতা কইলাম মন্দের বালা কইছেন আমনে। করবী কেমনে বুঝায় গোলাপ মিয়ারে মানা করতে তারও কলিজা পুড়ে। কিন্তু কি করবো তারা গরীব মানুষ পদে পদে ধর্ম আঁটকায়, একটা বাড়ী অইলো মন্দ অয় না আবার আল্লাহয় না নারাজ অয়? আইচ্ছা আল্লাহ সাব আমনের আর কাম নাই, বিশ্ব ব্রম্মান্ডের যত গন্ডগোল, ঝামেলা মিটানি বাদ দিয়া
এই ব্যাংকের ঋণের সুদের লগে মায়ের লগে জিনা না বানাইলে আমনের অইতো না, হেইজে খবরে প্রত্যেক দিন দেহায় মাইনষের দুনিয়ার কষ্ট, গন্ডগোল, যুদ্ধ, গোলাগুলি হেইডা বাদ দিয়া আমনে খালি সুদ জিনা, কোন মাইয়া প্রেম করলো, কোন বেডা কোন বেডীর লগে ঘুমাইলো এডি লইয়া ফইরা রইছেন। গটনা কি? আমরা আগে বারুম কেমনে? আমনের কোন টেলিফোনও নাই যে আমি একবার কতা কমু? গোলাপ মিয়ারে কি বুজামু আমার মাজে মাজে মাতা আউলাইয়া যায়। যাক বহুত কিছু মনের কষ্টে বইল্লা ফেইলছি, ছরি, মাফ কইরা দিয়েন, আমরা ইচ্ছা কইরা করি নাই প্রয়োজনে বাড়ী বানানোর লাইগ্যা ব্যাংক ঋণ লইতাছি কইলাম, আমনে আল্লাহ সাব মাইন্ড কইরেন না, আমনে মহান, আমরারে মাফ কইরা দিয়েন, গোলাফ মিয়া কইলাম মানুষটা বড় বালা, তার উপর গোস্বা কইরেন না। আমরা তো কারো ক্ষতি করি নাই।আবার আমনের গোস্বারেও ডর করে।হুমমম কি যে করি। তওবা করলাম এই একটা বাড়ী বানাইয়াা মাতা গোঁজনের ঠাঁই কইরা আর আমি কইলাম তাইনরে ব্যাংক থাইক্যা ঋণ লইতে কমু না।
তয় বিফদে ফরলে আমনে দেইখেন, কত বালা আছিল দুনিয়ার লাগি ফেরেশ্তা দিয়া যদি একটা ব্যাংক চালাইতেন। আইচ্ছা যাক, থোবাস, কত কিছু কইয়া ফালাইলাম, কারেই বা কই, আফনে অন্তর্যামী মনের খবর দিলের খবর আফনেও তো সবাইর আগে জানেন।
গোলাপ মিয়াঃ কি গো কতা কওনা কা? নাড়া দেয় করবীকে গোলাপ মিয়া।
করবী নমাজ ফইরা কমু। আফনেও আহেন।
নামাজ শেষে করবী বলেঃ তয় ম্যানেজাররে কন আমরা লোন নিমু আর বাড়ী বানামু।
গোলাপ মিয়াঃ বউ তোমারে থ্যাঙ্কু, একটু করবীকে জড়িয়ে ধরে চুইট বউ আমার, দাঁড়াও ম্যানেজার এহুনি জানাই।
করবী ও গোলাপ মিয়ার খুশী দেখে তাদের পাঁচ ও তিন বছরের কন্যা চাঁপা ও পারুল জানতে চায়ঃ কি হইছে মা, বাবা, তোমরা কেন খুশী হইছো, আমার মতো পাশ করছো?
গোলাপ ও করবী দুজনে এক পলক পরম বিশ্বস্ততা নিয়ে একে অপরের দিকে তাকায়, গোলাপের গান গাইতে মন চায়,
তুমি যেখানে আমি সেখানে সেকী জানো না
একী বাঁধনে বাঁধা দুজনে ছেড়ে যাবো না…….
তারপর করবী চাঁপাকে এবং গোলাপ মিয়া পারুলকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করে, করবী বলেঃ হ্যাঁ গো আম্মা আইজ আমরাও বাড়ীর ব্যাংক ঋণ পরীক্ষায় পাশ দিছি, অহন আমরা সুন্দর একটা বাড়ী বানামু।ঐহানে আমনেরার দুইজনের দুইডা আলাদা রুম থাকবো।খুশী তো।
চাঁপাঃ এমন পরীক্ষার কথা আমার টিচার তো বলেনি, কোন ক্লাসে মা এ পরীক্ষা?
গোলাপ মিয়াঃ এইডা জীবন পরীক্ষাগো মা, জীবনে সামনে যাওনের, মাথা গোঁজার ঠাঁই ফাওনের পরীক্ষা, আমনে বড় অইলে বুঝবেন।
চলো বউ খুশীর সময় তোমরারে লইয়া বাইরে ঘুইরা আসি।
গোলাপ মিয়া তার পরিবারের খুশীতে, করবীর খুশীতে নিজেকে
এভাবেই পরিপূর্ণ করে রাখে, করবী তৈরী হয়ে আসে বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে যাবার জন্য।
গোলাপ মিয়াঃ বউ তোমারে কইলাম সুন্দর লাগতাছে।
করবী লজ্জা পেয়ে আপনি যে কি কন না চাঁপা পারুলের বাফ।
বাড়ী বানানোর স্বপ্নে বিভোর হয়ে তারা খুঁজে একে অপরের মাঝে নীড়ের ঠিকানা। তাইতো দুজন দুই মেয়েকে কোলে নিয়ে হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলে করবী ও গোলাপ মিয়ার মতো অগণিত খেটে খাওয়া মানুষ। পূরণ হোক সব বাঁধা ডিঙ্গিয়ে এদের একটি স্হায়ী নীড়ের স্বপ্ন। এগিয়ে যাক তারা।মানুষের কল্যাণেই পরম করুণাময়ের কাছে আশীষ বারিধারার বর্ষণের আকুল প্রার্থনা।