1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:২৪ অপরাহ্ন

রক্তঝরা একাত্তর – ৭ ও ৮ মার্চ

ডা. মোজাহিদুল হক
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০২২
১৯৭১ সালের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামনের ভাষণ
দিনটি কেমন ছিল সাতই মার্চ ১৯৭১ সালে । সেদিন ঢাকা সহ সারাদেশের মানুষ উত্তেজনায় , আগ্রহে , উৎকন্ঠায় ,আশঙ্কায় টগবগ করেছে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনে ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) কর্মীরা ডামি রাইফেল নিয়ে কুচকাওয়াজ শুরু করেছিল । কমিউনিস্ট সমন্বয় কমিটি এক অগ্নিঝরা প্রচারপত্রে ঘোষনা করে যে ,আঘাত হানো । সশস্ত্র বিপ্লব শুরু করো । জনতার স্বাধীন পূর্ব বাংলা কায়েম কর । পূর্ব বাংলার মাটি আজ রক্ত চায় । পূর্ব বাংলার কোটি কোটি মানুষ আজ স্বাধীনতার জন্য উন্মাদ হইয়া উঠিয়াছে । গত তেইশ বছর ধরিয়া পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার জনতার রক্ত চুষিয়া খাইয়াছে । কৃষক গ্রামে গেরিলা যুদ্ধ শুরু কর । শাসক গোষ্ঠীর হাত হইতে ক্ষমতা ছিনাইয়া লও । গ্রাম বাংলায় স্বাধীনতার পতাকা উড়াইয়া দাও । মুক্ত এলাকা গঠন কর ।
(সুত্র : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিল পত্র , দ্বিতীয় খন্ড পৃ:৬৯৬ )
এদিন ন্যাপ (ওয়ালী )- এর পূর্ব পাকিস্তান শাখা তাদের দলীয় ফোরামে রাজনৈতিক প্রস্তাব হিসাবে ‘ পৃথক রাষ্ট্র ‘ গঠনের প্রস্তাব গ্রহন করে ।
(সুত্র : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিল পত্র , দ্বিতীয় খন্ড পৃ:১৯৭)
৭ই মার্চ সকাল থেকেই মানুষ রেসকোর্স ময়দানমুখী হতে শুরু করে । মানুষ আসতে থাকে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকেও । এদের প্রায় অনেকের হাতে ছিল স্বাধীন বাংলার পতাকা । সেদিন রেসকোর্স মাঠে লোক সমাগম হয়েছিল প্রায় তিরিশ লাখের মতো । চব্বিশ ঘন্টার হাঁটা পথ পেরিয়ে ঘোড়াশাল থেকেও বিরাট মিছিল এসেছিল গামছায় চিঁড়ে – গুড় বেঁধে । অন্ধ মানুষ , বহু মহিলা আর ছাত্রীরা মিছিল করে মাঠে গিয়েছিল ভাষণ শুনতে ।
(সুত্র – একাত্তরের দিনগুলি – জাহানারা ইমাম )
রেডিওতে বেলা দুইটা দশ মিনিট থেকে তিনটা বিশ মিনিট পর্যন্ত দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করা হতে থাকে । এই পর্যায়ে শেষ গানটি ছিল আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি । এর পরপরই ঢাকা বেতার হঠাৎ স্তব্দ হয়ে যায় । শেষ মুহুর্তে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সরাসরি প্রচার করতে না দেয়ায় ঢাকা বেতারের কর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে বেরিয়ে আসে এবং জনতার সাথে রেসকোর্সের সমাবেশে যোগ দেয়
(সুত্র : বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস – ড. মোহাম্মদ হাননান , পৃ . ৬২১ )
নির্ধারিত সময়ের একটু পরেই বঙ্গবন্ধু সমাবেশ স্থলে পৌছান । আকাশে তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ও বিমান উড়ছিল । মঞ্চে ওঠার সময় তাঁকে অত্যন্ত দৃঢ়চিত্ত এবং গম্ভীর দেখাচ্ছিল । মঞ্চে উঠেই তিনি সরাসরি মাইক্রোফোনের কাছে চলে যান । এরপরই তিনি শুরু করেন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ তেজোদীপ্ত ভাষণ ।
( সুত্র : ১৯৭১ উত্তাল মার্চের দিনগুলি – মো. মোজাম্মেল হক পৃ. ৪৫ )
সাতই মার্চের ঘোষণার পরদিন আটই মার্চ থেকে গোটা পূর্ব পাকিস্তানে এক অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় । সরকারী বেসরকারী সব ভবনে , অফিস আদালতে , শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে , ব্যবসা -বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয় । যানবাহনেও ছোট ছোট কালো পতাকা লাগানো হয় । এদিনেই পাল্টে যায় এদেশের চিত্র । টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি নির্দেশ পালনে জনগণ প্রচন্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে । আটই মার্চ সকাল সাড়ে আটটায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রেডিওতে প্রচার করে সমগ্র বাঙ্গালী জাতি বঙ্গবন্ধুর এই তেজোদীপ্ত , স্পষ্ট , দৃঢ় ও পথ নির্দেশক বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে ।
আটই মার্চ পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে শুধু “ছাত্রলীগ” করা হয় । ছাত্রলীগের এ সভায় জেলা থেকে প্রাথমিক শাখা পর্যন্ত ‘স্বাধীন বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদ ‘ গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয় । এছাড়াও এ সভায় পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন ও প্রদর্শন , জাতীয় সংগীত বাজানো এবং সিনেমা হলে উর্দূ ছায়াছবির প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়া হয় ।ছাত্রলীগ সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ এবং ভিপি আ.স.ম আব্দুর রব ও জিএস আব্দুল কুদ্দুস মাখন এদিন এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন , বর্তমান আন্দোলনকে ‘স্বাধীনতা আন্দোলন ‘ ঘোষণা করে স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান রেসকোর্সের ঐতিহাসিক জনসভায় যে কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন ,আমরা তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য এদেশের সংগ্রামী জনতার প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি ।
আটই মার্চ ১৯৭১ লে. জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খানের পরিবর্তে তার জায়গায় পূর্ব পাকিস্থানের উপ- সামরিক শাসন কর্তা লে. জেনারেল টিক্কা খানকে গভর্নর হিসাবে নিয়োগ দেয় । তাকে শপথ দানে অস্বীকৃতি জানান ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews