বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) উত্তরাধিকারসহ পারিবারিক সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে । সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল অবদান নারীসমাজের হলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও উত্তরাধিকারসহ পারিবারিক সম্পদ ও সম্পত্তিতে সমান অধিকার পাওয়া থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। যা নারীর মানবাধিকার ও সংবিধানের লঙ্ঘন।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়।
বিএনপিএসের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএনপিএসের উপপরিচালক শাহনাজ সুমী।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভানেত্রী মাখদুমা নার্গিস রত্না, স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রগ্রাম কো-অর্ডিনেটর অর্পিতা দাস, এডাবের সমাপিকা হালদার।
সভাপতির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর বলেন, ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক কর্তৃক গৃহীত বৈষম্যমূলক ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইনের বলে নারীদের অধিকারবঞ্চিত করা হচ্ছে। এই আইন সংস্কারসহ সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপিএসসহ বিভিন্ন নারীসংগঠন আইন কমিশনের কাছে স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। তিনি নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নতুন আইন প্রণয়ন এবং পারিবারিক সম্পত্তিতে প্রচলিত ধর্মভিত্তিক আইন পরিবর্তনের দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে শাহনাজ সুমী বলেন, দেশের সব নাগরিকের অধিকার রক্ষা এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে বাংলাদেশের সব আইনই প্রণীত হয়েছে, সংবিধানের আলোকে ইউরোপীয় সিভিল আইনের আদলে। শুধু নারী অধিকার খর্বকারী এই পারিবারিক আইনটিই প্রণীত হয়েছে ধর্মীয় বিধানকে অবলম্বন করে। একটি স্বাধীন দেশে এমন দ্বৈতব্যবস্থা চলতে পারে না। নারীর উত্তরাধিকার নির্ধারণের এই বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে শুধু যে নারীর মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারই লজ্জিত হয় তা নয়, বরং এর মাধ্যমে জনগণের অভিপ্রায়ের পরম ‘প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন’ ৭ হিসেবে সংবিধানের প্রাধান্যও হয়।
মহিলা পরিষদের মাখনুমা নার্গিস রত্না বলেন, দেশে নারীর মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য অনেক আইন আছে, তবে উত্তরাধিকার আইনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যা সংবিধানের সম-অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে।
তিনি বলেন, সিভিল আইন, ফৌজদারি আইন প্রভৃতি ধর্ম দ্বারা পরিচালিত নয়। কিন্তু পারিবারিক আইনগুলো ধর্ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এ জন্য পারিবারিক বৈষম্যমূলক আইনগুলোর আমূল সংস্কার করে অভিন্ন পরিবারিক আইন প্রচলন করতে হবে।
উন্নয়ন কর্মকর্তা রঞ্জন কর্মকার বলেন, উত্তরাধিকারে সমান অধিকার না থাকায় নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে বাধা হয়ে আছে। একই সঙ্গে তা নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়াচ্ছে। এই অধিকার না থাকায় জীবনভর নারীদের পরজীবী হিসেবে গণ্য করা হয়। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট