1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫২ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :

নারী ও মানুষঃ সমাপ্তি ঘটুক নারীর প্রতি পক্ষপাত, নির্যাতন ও বৈষম্যের

শামসুন নাহার
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ, ২০২২
ছবি- সংগৃহীত

সবাইকে আন্তর্জাতিক নারীদিবসের শুভেচ্ছা।২০২২ সালের নারীরা অকুতোভয়। কন্যা,জায়া,জননী হবার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জল, স্হল আর মহাকাশ সর্বত্র নারীর বলিষ্ঠ, সুশিক্ষিত, বুদ্ধিদীপ্ত,যোগ্য,আত্মবিশ্বাসী পদচারণা। এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশী নারীগণ অনেক দূর, রেখেছে সফলতার স্বাক্ষর, সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে নারী এগিয়ে যাক বহুদূর, জয় করুক অজেয়।তবে মনে রাখতে হবে স্বাধীনতা মানে
স্বেচ্ছাচারিতা নয়। তবুও থেমে নেই নারীর প্রতি পক্ষপাত ( bias), লিঙ্গভিত্তিক শোষণ, যৌন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং বৈষম্যেমূলক নিপীড়ণ। নারীও মানুষ।
হাজার বছরের নারীদের অবরোধবাসিনী করে রাখার ভয়াভহ ইতিহাস,কুৎসিত সব প্রয়াসকে পদদলিত করে, পরিবার, সমাজ, ধর্ম,বর্ণের লৌহশৃংখল ভেংগে আজ আমরা নারীরা মুক্ত, স্বাধীন,সম্মানজনক জীবনের মজবুত ভীত তৈরী করেছি।
নারীমুক্তির, প্রগতির এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে, নারী পুরুষ নির্বিশেষে পারস্পরিক সম্মানবোধের, সহাবস্থানের এক নির্ভয়, নিরাপদ সমাজব্যবস্হা তৈরী করার দৃঢ় প্রত্যয়ে আমরা আমাদের অবস্হান থেকে বিরামহীন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, আমাদের সন্তানদের মানবিক বিকাশের জন্য, সুশিক্ষা দিচ্ছি যেন নারীর প্রতি তাদের সম্মানবোধ তৈরী হয়। নারীকে তারা যেন যৌন পণ্য না মনে করে, মানুষ মনে করে।
আমরা সৌভাগ্যবান তাই কানাডার মত দেশের সমমর্যাদাসম্পন্ন হবার অধিকার ভোগ করতে পারছি, আমাদের কন্যা সন্তানরা এখানে নিরাপদে, সুস্হ মানসিকতা, যাবতীয় নাগরিক সুবিধা, মুক্ত স্বাধীন চিন্তাশক্তি নিয়ে বড় হচ্ছে। ভীষন কষ্ট হয় বাংলাদেশ এবং কানাডা সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় নারীর প্রতি, নারী শিশুর প্রতি সহিংসতা, ধর্মের নামে, পরিবারের সম্মানের নামে, সামাজিক রীতিনীতির নামে নারী নির্যাতনের বিভৎসতা দেখে। তবে কানাডায় নারীর প্রতি পক্ষপাত, নির্যাতন এবং বৈষম্যের পরিমান পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের তুলনায় অনেক কম।
যদিও কানাডায় নারীও শিশুর প্রতি সহিংসতা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম তবে এখানেও প্রতি ছয়দিনে একজন নারী তার পার্টনার দ্বারা সহিংসতার শিকার হন, রয়েছে কোথাও কোথাও লিঙ্গভিত্তিক বেতন বৈষম্যও, তবে সান্ত্বনার জায়গা হচ্ছে তাদের এ বিষয়গুলোতে জবাবদিহিতা বা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রগুলো বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশী সক্রিয়, তারা প্রতিদিন চেষ্টা করে যাচ্ছে কিভাবে এর চেয়ে ভাল করা যায়। বাংলাদেশেও জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার কাঠামো রয়েছে। তবে সেই কাঠামো কেন সব সময় সক্রিয় নয় তার কারণ জেনে তা নিরসন প্রয়োজন।
বাংলাদেশে আরো একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো সাধারণ মানুষের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকা, কোথায় যেতে হবে, কার সাথে কথা বলতে হবে এ বিষয়গুলো সাধারণ মানুষ জানেনা।এ অবস্হা নিরসনকল্পে জীবন প্রয়োজনীয়তা (Life Essentials) নামে একটি পাঠ্যক্রম চালু করে প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাচ্চাদের পাঠের অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন যেন আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম বিভ্রান্ত না হয়। ছেলেদের জন্য কৃষি বিজ্ঞান এবং মেয়েদের জন্য গার্হস্হ্য বিজ্ঞান না হয়ে বরং এ দুটি মিলে একটি পাঠ্যক্রম চালু করে ছেলে মেয়ে সবাইকে একরকম পাঠ দিয়ে সমতা বা পারস্পরিক শ্রদ্ধা আনয়নের চেষ্টা করা যায়। পাশাপাশি নারীর প্রতি কৌতুহল, অশ্রদ্ধা, কিভাবে নারীর সাথে আচরণ করতে হবে এনিয়ে ও স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সেমিনার, রচনা প্রতিযোগিতা হওয়া প্রয়োজন যেন মানুষ নারীর সাথে সম্পর্ককে পারস্পরিক শ্রদ্ধার, সমতার, সমান অধিকারের, সমান দায়িত্ব বন্টনের এমন শিক্ষা নিয়ে বড় হতে পারে, ছোটবেলা থেকে শিখতে শুরু করে নারী মা, বোন, সহকর্মী, জীবনসঙ্গী, বন্ধু এবং সর্বোপরি নারীও পুরুষের মতই মানুষ।
সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা যা কেবল সমাজের পুরুষের মাঝেই নয়, অনেকাংশেই নারীর মাঝেও প্রোথিত “পুরুষ শ্রেষ্ঠ” ধারণা – এজন্য তার বদ আচরণ নারীকে এবং পরিবারের দুর্বল পুরুষকে মেনে নিতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বিকৃত, নিকৃষ্ট, বর্বর ও জঘণ্য রূপ হলো ধর্ষণ যা বিঘ্নিত করে নারী ও পুরুষের সম্পর্কের ভারসাম্য, নারীর অধিকারকে, মানসিকতাকে পদদলিত করে লিঙ্গ আস্ফালন দ্বারা, ক্ষেত্রবিশেষে দুর্বল বা কম বয়সী শিশু পুরুষরাও তাদের চেয়ে বয়সে বড় ও তাদের উপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা রাখেন এমন পুরুষ কর্তৃক শারীরিকভাবে ধর্ষণের শিকার হয়ে মানসিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হন।পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার এমন আগ্রাসনের অনেক কারণের মধ্যেএকটি হলো ধর্মগ্রন্হ দিয়ে নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্ব প্রদান। পুরুষতান্ত্রিক চিন্তার আদলেই গড়ে উঠেছে রাজনৈতিক ও সমাজ কাঠামো যেখানে নারী বার বার মানুষ হওয়া সত্ত্বেও ব্যাপক দমন ও নির্যাতনের শিকার।সেজন্যই মহিয়সী বেগম রোকেয়া তার মতিচুর প্রবন্ধে বলেন,
“যেখানে ধর্মের বন্ধন অতিশয় দৃঢ়
সেখানে নারীর প্রতি অত্যাচার অধিক”।
নারী দিবস মানে কেবল বেগুনি রং এর শাড়ি পরা নয়। বরং ১৯১৭ সালের ৮ই মার্চে রাশিয়ায় নারীরা তাদের স্বাধীনতার জন্য যে বিপ্লব করেছিল তার সাথে সংহতি প্রকাশ করা আর আমরা বাংলাদেশের নারীরা কতটুকু স্বাধীনভাবে আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্বগুলো পালন করতে পারছি সে সত্য উপলব্ধি করা।বেগুনী রং কে সূর্যের অতিবেগুণী রশ্মির ন্যায় নারীর শক্তির প্রতীক হিসেবে যেন চারিদিকে এর
আলোক ছড়িয়ে পরে সমাজের নারী, পুরুষসহ সব মানুষ ভারসাম্যের সৌন্দর্য্য ছডায় সে সত্য উপলব্ধি করা।
সবাইকে নারী দিবসে মানুষ হবার ও নারীকে মানুষ ভাবার প্রারম্ভ করবার শুভেচ্ছা। পৃথিবীর ৫০% নারী, এক পক্ষকে অবমূল্যায়ন করে কখনও এ সমাজে ভারসাম্য আসবে না। তাই নারী ও পুরুষ তথা এ সমাজের সব মানুষের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, বৈষম্য নিরসন করে চলুন একটি ভারসাম্যমূলক সমাজ গড়ি, যেখানে নারী ও স্বাধীন, পুরুষও স্বাধীন, আর সব মানুষও স্বাধীন, কেউ কারো দাস নয়, বরং একে অপরের উপর পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে এবং যথাযোগ্য সম্মানজনক চুক্তির ভিত্তিতে একে অপরের উপর নির্ভরশীল।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২ এ স্বাধীন বাংলাদেশে নারীরা যেন অর্জন করে স্বাধীনভাবে অকুতোভয় হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা, যেন নিষ্ঠার সাথে পালন করে তার প্রতিটি দায়িত্ব- এই কামনা করছি। সমাপ্তি হোক নারীর উপর সব পক্ষপাতমূলক বৈষম্যের, শোষণ ও নির্যাতনের সব অপচেষ্টার।আমরা নারীরা এগিয়ে যাবো, আমরা পারিবারিক ও সামাজিক বলয়ে ভারসাম্য আনয়ন করবো পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগীতার শর্তে এ হোক আমাদের অঙ্গীকার।
আমাদের দেখে নারীজাগরণের যাত্রায় এগিয়ে আসবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের আরো হাজারো অধিকারবঞ্চিত নারী। আমরা তাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তায় জ্বালাবার চেষ্টা করছি আমাদের জ্ঞানালোর মশাল, নারীমুক্তির তথা মানবমুক্তির ও প্রগতির দিকে বাড়ানো আছে আমাদের আজকের থেকে ভাল সমাজ ব্যবস্হা গড়ার অঙ্গীকারাবদ্ধ সহযোগিতার হাত।সে হাত ধরে নারী ও পুরুষ সহ সব মানুষ এগিয়ে যাবে, জয় করবে মহাবিশ্বের সব অজেয়, আন্তর্জাতিক নারীদিবসে এই প্রার্থণা করি, পরম করুণাময় আমাদের সহায় হউন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews