রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ।
গত ৯ মার্চ ঢাকার আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও আদাবর থানার পরিদর্শক মো. ফারুক মোল্লা এ অভিযোগপত্র জমা দাখিল করেন। শুক্রবার (১১ মার্চ) সংশ্লিষ্ট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) শরিফুল ইসলাম বিষয়টি জানিয়েছেন।
অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন মাইন্ড এইড হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহামুদ, ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদ আমিন ও ফাতেমা খাতুন, হাসপাতালের সমন্বয়ক রেদোয়ান সাব্বির, হাসপাতালের কর্মচারী মাসুদ খান, জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম কুমার পাল, লিটন আহম্মেদ, সাইফুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ আল মামুন।
২০২০ সালের ১০ নভেম্বর আদাবর থানায় আনিসুল করিম শিপনের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফাইজুদ্দিন আহম্মেদ বাদী হয়ে ১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে আনিসুল হকের বাবা বলেন, ‘আমার ছেলে মাে. আনিসুল করিম ৩১ তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের একজন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার। আমার ছেলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) হিসেবে কর্মরত ছিল। গত ৩/৪ দিন যাবৎ হঠাৎ করে চুপচাপ হয়ে যায়। পরিবারের সকলের মতামত অনুযায়ী আমার ছেলেকে চিকিৎসা করানাের জন্য ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর প্রথমে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে নিয়ে যাই।
এজাহারে আনিসুল হকের বাবা আরো বলেন, আরাে উন্নত চিকিৎসার জন্য একই দিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে নিয়ে যাই। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আরিফ মাহমুদ জয়, রেদোয়ান সাব্বির ও ডা. নুসরাত ফারজানা আমার ছেলে মাে. আনিসুল করিমকে হাসপাতালে ভর্তির প্রক্রিয়া করতে থাকেন। ওই সময় আমার ছেলে হাসপাতালের সকল স্টাফদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করে। হাসপাতালের নীচতলায় একটি রুমে বসে হালকা খাবার খায়।
এজাহারে তিনি বলেন, খাবার খাওয়ার পর আমার ছেলে আনিসুল করিম ওয়াশরুমে যেতে চায়। বেলা পৌনে ১২ টার দিকে আরিফ মাহমুদ জয় আমার ছেলেকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে হাসপাতালের দোতলায় নিয়ে যায়। এ সময় আমার মেয়ে উম্মে সালমা আমার ছেলের সঙ্গে যেতে চাইলে আসামী আরিফ মাহমুদ জয় ও রেদোয়ান সাব্বির বাধা দেয় এবং কলাপসিবল গেট আটকে দেয়। তখন আমি, আমার ছেলে রেজাউল করিম ও মেয়ে ডা. উম্মে সালমা (সাথী) নীচতলায় ভর্তি প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত ছিলাম।
আনিসুল হকের বাবা বলেন, এরপর এজাহারে উল্লেখিতসহ আরাে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন আমার ছেলে মাে. আনিসুল করিমকে চিকিৎসার নামে দোতলার একটি অবজারভেশন রুমে (বিশেষভাবে তৈরী কক্ষ) নিয়ে যায়। ওই আসামিরা আমার ছেলেকে চিকিৎসা করার অজুহাতে অবজারভেশন রুমে মারতে মারতে ঢুকায়। তাকে ওই রুমের ফ্লোরে জোরপূর্বক উপুড় করে শুইয়ে ৩/৪ জন হাটু দিয়ে পিঠের ওপর চেপে বসে। কয়েকজন আমার ছেলেকে পিঠ মােড়া করে ওড়না দিয়ে আমার ছেলের দুই হাত বাঁধে। কয়েকজন আসামি কনুই দিয়ে আমার ছেলের ঘাড়ের পেছনে ও মাথায় আঘাত করে। একজন মাথার ওপর চেপে বসে। এরপর আসামিরা সবাই মিলে আমার ছেলের পিঠ-ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্নস্থানে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মেরে আঘাত করে।
এজাহারে আনিসুল হকের বাবা বলেন, বেলা ১২টার দিকে আমার ছেলে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। হাসপাতালে স্থাপিত সিসিটিভি-এর ভিডিও ফুটেজে তা দেখা যায়। নিস্তেজ হওয়ার পর আসামি আরিফ মাহমুদ জয় নিচে এসে আমাদেরকে ইশারায় ওপরে যাওয়ার জন্য ডাক দেয়। আমি আমার ছেলে ও মেয়েসহ অবজারভেশন রুমে গিয়ে আমার ছেলেকে ফ্লোরে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পাই। অতঃপর জরুরী ভিত্তিতে আমার ছেলেকে একটি প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্সে করে জাতীয় হৃদরােগ ইন্সটিটিউট নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা করে আমার ছেলেকে মৃত ঘোষণা করেন। ’
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট