রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে আন্তর্জাতিক উদরাময় কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত প্রচুর রোগী আসছে। রোগীর চাপ থাকায় মূল হাসপাতাল ভবনে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। তাই হাসপাতাল চত্বরে একটি তাঁবু টানিয়ে অস্থায়ীভাবে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। গতকাল বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের ভিড়।
হাসপাতালের মূল ভবন বা অস্থায়ী তাঁবুতে কোনো শয্যা খালি নেই। রোগীদের চিকিৎসা দিতে ব্যস্ত চিকিৎসক-নার্সরা। রোগীর চাপ থাকায় আরেকটি তাঁবু টানিয়ে অস্থায়ী শেড নির্মাণের কাজ চলছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত অন্তত ৩০ জন করে নতুন রোগী আসছে। গত সাত দিনে ভর্তি হয়েছে আট হাজার ৫২ জন।
চিকিৎসকরা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ডায়রিয়ার প্রকোপ আগেভাগে শুরু হয়েছে। আবার এবার রোগীর সংখ্যাও অনেক বেশি।
আইসিডিডিআরবি সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর দুবার দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যায়। এ সময় রোগীর চাপ থাকে। প্রথমবার বর্ষা শুরুর আগে এপ্রিলের শুরুতে, দ্বিতীয়বার শীত মৌসুম শুরু আগে অক্টোবর থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যায়। এবার অনেকটা আগেই ব্যাপক হারে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। মার্চের মধ্যভাগ থেকে হাসপাতালে রোগী আসতে শুরু করেছে। ১৬ মার্চ আইসিডিডিআরবিতে এক হাজার ৫৭ জন রোগী ভর্তি হয়। এর আগে ২০১৮ সালের এপ্রিলে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে এক দিনে সর্বোচ্চ এক হাজার ৫৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল।
এবার মার্চের মধ্যভাগ থেকে প্রতিদিনই আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত ১৬ মার্চ ভর্তি হয় এক হাজার ৫৭, ১৭ মার্চ এক হাজার ১৪১, ১৮ মার্চ এক হাজার ৭৪, ১৯ মার্চ এক হাজার ৩৫, ২০ মার্চ এক হাজার ১৫৭, ২১ মার্চ এক হাজার ২১৬ এবং ২২ মার্চ এক হাজার ২৭২ জন। এই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিনই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী, ভর্তি হতে আসা রোগী এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে যায়, রাজধানী, আশপাশের এলাকা ও জেলাগুলো থেকে বেশির ভাগ রোগী আইসিডিডিআরবিতে আসছে। জেলার হাসপাতালে ভর্তির পর অনেক রোগীকে চিকিৎসকরা আইসিডিডিআরবিতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্যে নানা বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশু রয়েছে।
একাধিক চিকিৎসক বলেন, ভর্তি সব রোগীর ক্ষেত্রে একটি বিষয় দেখা যাচ্ছে, আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিশূন্যতা দেখা দিচ্ছে। এটি অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু ব্যতিক্রম।
রাজধানীর উত্তরা থেকে দুই বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আছেন নাজমা বেগম। ২২ মার্চ তিনি ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করান। ছেলে সুস্থও হয়েছিল। রাতে বাসায় নেওয়ার পর আবার ডায়রিয়া শুরু হলে গতকাল ফের হাসপাতালে ভর্তি করেন।
গতকাল ভর্তি হয়েছেন রাজধানীর দয়াগঞ্জের আবদুল কুদ্দুস (৬৫), গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকার মকুসেদুল (৫৫)। ভর্তি হতে এসেছেন নারায়ণগঞ্জের মিনতী রানী (৪৫) ও নরসিংদীর পাঁচদোনার আহাদুল ইসলাম। আহাদুল জানান, হাসপাতালে গেলে তারা আইসিডিডিআরবিতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।
গতকাল দুপুরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ভর্তির জন্য অপেক্ষারত রোগী ও স্বজনদের ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। বেশির ভাগ রোগীই গুরুতর অসুস্থ। রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডায়রিয়া শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে আক্রান্তরা। হাঁটাচলার শক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলে।
এবার আগাম ডায়রিয়া শুরুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আইসিডিডিআরবির পরিচালক ডা. বাহারুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ নিয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না। বিষয়টি জানতে গবেষণার প্রয়োজন আছে। রোগতত্ত্ববিষয়ক আচরণের পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তন নানা কারণে হয়, গবেষণায় সেটি বেরিয়ে আসবে। এবারের পরিবর্তন কভিডের কারণে হলো কি না, সেটি গবেষণা করে দেখতে হবে। ’
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট