1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১০ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :

ডা. মোজাহিদুল হকের ধারাবাহিক গল্প ২৮

ডা. মোজাহিদুল হক
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০২২

জীবনের গল্প

পর্ব – ২৮

সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত এল, রাত ক্রমে নিশুত। শব্দ কমে এল, তন্দ্রা নামছে জাদুর শহর ঢকায়, বেরিয়ে পড়লো নৈশপ্রহরী, হুইসিল বাজিয়ে টহল দিচ্ছে থেকে থেকে, রাত্রির নির্জনতা ছিঁড়ে হঠাৎ হঠাৎ ডেকে ওঠে কুকুরের পাল, কোথায় কোন ফ্ল্যাটে বাচ্চা কেঁদে উঠল। ঝপ করে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি অন্ধকারেই চোখ খুললাম। বেশ কয়েক সেকেন্ড পর বুঝতে পারলাম একটা মৃদু বাজনার ঝঙ্কার হচ্ছে,মথিত করছে নিবিড় রাত্রিকে। রাতবাতির নীলছে আলোয় ভরে আছে নিশীথকক্ষ। পাখার হাওয়া ঘরময় চরকি খেয়ে মরছে। ক্যালেন্ডার ছপ ছপ শব্দ তুলছে দেয়ালে। রাত্রি এখন বড় শুন্য, অতি বিশাল। শুন্যতাকে আরো শুন্য লাগছে গানের সেতারের মীড় টানার শব্দে।

সে ঝঙ্কারে যন্ত্রণায় কেঁপে কেঁপে উঠছে বাড়ীটা। আমিও। খানিক পরে চোখ মুখে পাশে ফিরলাম। ফিরেই চমকালাম। অহনা জেগে আছে। অহনা নিষ্পলক তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

আমার চোখ পড়তেই জড়িয়ে ধরলো আমাকে। মাথার চুলে কাটছে বিনুনি। ঘুম পাড়াতে চাইছে হয়তো আমাকে। হাসলো আমার দিকে তাকিয়ে, ঘুম আসছে না গো। তখনি মুষলধারায় বৃষ্টি নামলো। প্রকান্ড দানার ভারে থরথর করে কাঁপছিল আশ পাশ।

ভোর থেকে বন্ধ হয়ে গেল ঘরের পাখাটা।আমি জড়সড় হয়ে শুয়েছি বলে হয়তো অহনাই বন্ধ করে দিয়েছে।  অহনা অফিস যাবে বলে তৈরী হচ্ছে। শয়ন কক্ষের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। রাতের বৃষ্টির রেশ রয়ে গেছে। ভাঙ্গা চোরা গর্তে রাস্তার খানাখন্দে জমে আছে ঘোলাটে জল। ছেঁড়াখোঁড়া মেঘে ভরে আছে আকাশ। সূর্যতেও কেমন ভেজা ভেজা ভাব। সিক্ত গাছপালা একটা গন্ধ ছড়িয়ে দিয়েছে বাতাসে।

তৈরী হতে হতেই বেশ কবার সামনে দিয়ে  চক্কর কেটে গেল অহনা। একা বাসায় আজকাল কেমন বদলে যায় অহনা। অতি সামান্য সামান্য কথাতে বড্ড বেশী হাসে। ঈষৎ রুক্ষ মুখশ্রীতে চকিতে নেমে আসে কমনীয়তার ঢল। অহনার আপাত চঞ্চল চোখ ভরে ওঠে অচেনা লাবণ্যে। সেই ক্ষনে বিচিত্র এক সিরসিরানি ছড়িয়ে পড়ে আমার শরীরে। সঙ্গে এক চোরা ত্রাস ও।

অহনা অফিসের জন্য বেরিয়ে যাচ্ছে। ধীর পায়ে চলে যাচ্ছে অহনা। অপসৃয়মান অহনাকে ফিরে ডাকতে তীব্র বাসনা জাগছিল আমার। ক্ষনিকের বাসনা দমিয়ে ডোর লক করে ফিরে এলাম। বিছানায় গা এলিয়ে ভাবছি নিজের জীবন নিয়ে। এই টানাপোড়েন আর কদ্দিন? কোন দিনই কি কোন একমুখী চিন্তায় থিতু হতে পারব না আমি?  ইদানীং নিজের আদর্শ গুলোকে মনে হয় নীরস উচ্ছাশা। আর স্বপ্ন গুলো তো সব বল্গা ঘোড়া যার পিঠে সওয়ার হওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। ডাক্তারী আর অহনাকে নিয়ে এক মসৃণ ভোঁতা জীবনের জন্য মানসিক ভাবে নিজেকে তৈরী করছি আজকাল। মাঝে মাঝে মনে হয় শুধু এক সাঁকোর উপর দাঁড়িয়ে আছি, যার দুইপ্রান্তই ডুবে আছে জলে। অথৈ জলে।

আমার নিয়তি খন্ডাবে কে??

জগৎ সংসারে সব কে?  আর সব কেন ‘র উত্তর মেলা ভার। কিছু কিছু ‘কেন’ নিজে নিজেই হাত পা ধড় মুন্ডু গজিয়ে বিরাট আকার ধারণ করে। কিছু ‘কেন’র জন্ম হয় সমাজ সংসারে মানুষের নিত্যনতুন চাহিদায়। আবার অজস্র ‘কেন’ শুরু থেকেই মোড়া থাকে কুয়াশার আবরণে, শেষে ও তাই। তত্ত্ব কথা নিয়ে ভাবতে চাইনা আমি, তবু ভাবনা গুলো এসে পড়ে। আসতেই থাকে। অবিরল ঢেউয়ের মতো। সামুদ্রিক ফেনা হয়ে প্রশ্নেরা বুকে ছড়িয়ে থাকে।কত রকম যে ভাবনার আনাগোনা তখন। না চাইলেও মাথায় ঝাঁক ঝাঁক ছবির ভিড়। সরিয়ে দিলেও ফিরে ফিরে আসে। অহনার সাথে পরিচয়ের সেই ক্ষণ, প্রথম দর্শনেই ভালো লেগে যাওয়া, প্রথম মেসেজ বিনিময়, প্রথম স্পর্শ, প্রথম চুমু……। চমৎকার কথা বলে, প্রান খুলে হাসতে পারে, গলা ছেড়ে রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে ওঠে -এমন মেয়ের প্রেমে না পড়ে উপায় আছে?  আমার তো তখন মনে হত দুনিয়ার সেরা হিরেটি আমার হাতের মুঠোয়। তাই তো বেঁধে নিয়েছি সাত পাক, পাছে মহা মূল্যবান রত্নটি খোয়া যায় সেই আশঙ্কায়।

দুপুরে একা ঘরে শুয়ে ঘুম এলোনা আমার। একা একা বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। সূর্য তার সব উত্তাপ উজাড় করে দিচ্ছে। রোদের ঝাঁঝ আজ যেন বড় বেশি।পেছনের এই টানা বারান্দার একেবারে মুখোমুখি মেহগনির বাগান। এত উত্তাপের মাঝে ও মাঝে মাঝেই আঁজলা ভরা ঠান্ডা বাতাস পাঠিয়ে দিচ্ছে এদিকে। বড় ভাল লাগছিল দাঁড়িয়ে থাকতে। সিগারেট ধরালাম একটা।পোড়া তামাকের মেজাজী আমেজ ছাড়া আমার শরীরে থেকে ভীষণ চেনা একটা নারী গন্ধ এসে লাগছিল আমার নাকে। অহনার শরীরের গন্ধ। আমার বুক ধড়ফড় করে উঠল। পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজনকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকলে নিজেকে যে কী সুখী মনে হয়। কী পরিপূর্ণ। সত্যিকারের ভালোবাসা কখনোই ফুরিয়ে যায় না। ভালবাসা, সুখ, তৃপ্তি সবই ফিরে ফিরে আসে নতুনভাবে। কখনও তা উদ্দাম, উচ্ছল, আবার কখনও গাঢ় গভীর তন্ময়তায় আচ্ছন্ন।

আনমনে ভাবছি তমালের কথা। তমাল অহনার একমাত্র ভাই। গত বছর কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষকে গোপনে বিয়ে করেছে। গত মাস অব্দি কেউ জানতে পারেনি কিছুই। বিয়েটা খুব ক্যালকুলেশন করে করেনি তমাল। আসলে এই বয়সে আর প্রেম, ভালোবাসা তারপর বিয়েতে সবাই কি আর মেথডিকাল হতে পারে?  গত একবছরে রয়ে সয়ে চুপচাপ সংসার করে গেছে তমাল। গত মাসে অহনা একদিন চপল স্বরে বলল,-এই জানো একটা কান্ড হয়েছে।

-কী রকম?

– তমাল বিয়ে করে ফেলেছে। আরো আগে, আর আজকে ওর বউ তমালের শ্বশুর বাড়ি থেকে পালিয়েছে। এতোদিন কেউ জানত না। গাধাটা কিভাবে যে কি করবে?

আমি স্মিত মুখে অহনার দিকে চেয়ে রইলাম। হাসি হাসি মুখে কথা বললেও চোরা একটা আশংকা এবং উদ্বেগ অহনার মুখে ফুটে উঠেছে। অহনার কাছে তমাল ভাই কম সন্তান বেশী। সন্তানের মতোই আগলায় ভাইকে।

গত কয়েকদিন আগে অহনা একটা গনগনে আঁচ নিয়ে বাসায় ফিরল। খানিক চুপ মেরে বসে রইলো।গত কয়েকদিনের উচ্ছ্বাস ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেল যেন। আমি সামনে যেতেই করুন চোখে তাকাল। মৃদু স্বরে বলল, -তমালের শ্বশুর তমালের বউকে তাদের বাড়ী নিয়ে আটকে দিয়েছে। বেচারা তমালের তো চিন্তায় চিন্তায় কপালে পার্মানেন্ট ভাঁজ পড়ে গেল।

-আরে দুর, বিয়ে একবছর আগে করেছে, সংসার করেছে। বাড়ীতে হয়তো পরে জানিয়েছে। চিন্তা করোনা তো, চলে আসবে।

– তমাল খুব নার্ভাস হয়ে আছে। আর অস্বস্তিতেও।

আমি জানি অস্বচ্ছন্দ পরিস্থিতি মানেই তো এক ধরনের মানসিক চাপ। সে চাপ সইতে পারবে তো তমাল??  অথচ আমার সাথে তমাল যখন ওর বউকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল ওই মেয়ে তখন কী কথার ফুলঝুরি ছিটিয়ে ছিলো। আসলেই মানুষ বদলায়। দিনে দিনে।  মাসে মাসে।  বছরে  বছরে।

বদলাবেই যদি তাহলে কি দরকার ছিল পড়ি কি মরি করে বিয়ে করার?  আচ্ছা তমালের বউ যদি ফেরত আসে তাদের সম্পর্ক টা  আগের মতো থাকবে তো?  কিংবা ভালোবাসার স্পৃহা টা থাকবে তো আগের জায়গায়?  না,আমি বলছি আফটার এফেক্ট এর কথা।হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাস কিংবা রেসপেক্ট। বিয়ের পর স্বামীর বাড়ী থেকে নিয়ে নিজ মেয়েকে বাড়ীতে আটকে রাখা পিতা মাতার শিক্ষাদীক্ষা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। মেয়ে স্বামীর সংসারে ফেরত এলে জামাইয়ের কাছে তাদের সম্মান এবং মর্যাদার জায়গাটা চিরকালের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। ধরে নিলাম বাবা মা হয়তো সে মেয়েকে  আরো আর্থিক স্বচ্ছল কিংবা আরো উচ্চ বিদ্যায় শিক্ষিত ঘরে বিয়ে দিলেন। কিন্তু গ্যারান্টি কি দিতে পারবেন, সে সংসারে পাঁক ঘাঁটা হবে না কিংবা খোঁটা শুনতে হবে না, তাদের মেয়েকে ভেঙে যাওয়া সংসার নিয়ে । একটা অন্তঃদহন নিয়ে মুখ গুঁজে বেঁচে থাকবে মেয়েটা ।

তমালের সাথে ওর বউয়ের যদি ডিভোর্স হয় তাহলে এটা এমন এক ডিভোর্স হবে, যে ডিভোর্সের এমন কোন কারণ ছিলনা যেখানে অন্য লাখ লাখ ডিভোর্সের হাজার হাজার কারণ থাকে। জাস্ট বাবা মায়ের আত্মবিলাসিতা’র বলি হয়ে দুজন মানুষ দুদিকে চলে যাবে সারাজীবনের জন্য। নিজের অজান্তেই উনারা ব্যক্তিগত সেটিসফেকশনের জন্য হত্যা করবেন দুটি মন। জীবন তো নদীর মতো। বয়ে চলছে। ধাক্কা খেয়ে হয়তো কোনও একটা বাঁক নেয়। আবার চলে। বিয়ে নাকি জন্ম -জন্মান্তরের বাঁধন?  মিথ্যে। সব ভাঁওতা। ভাবের ঘরে চুরি। মনকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা। বন্ধন কোথাও কোনওদিন তৈরী হয়না। কারুর সঙ্গেই হয় না। যা হয় সবটাই একধরনের মায়া। জীবনের মুখ কখন যে কোথায় কিভাবে বদলে যায়। মায়া উধাও তো সব উধাও। আসলে ভালোবাসা ব্যাপারটাই বড় গোলমেলে। সে এমনই এক বায়বীয় বস্তু কখন আছে, কখন নেই, কোথায় কী ভাবে নিঃসাড়ে সরে যাবে, বুঝে ওঠাই দুষ্কর।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews