1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৭ অপরাহ্ন

ডা. মোজাহিদুল হকের ধারাবাহিক গল্প ২৯

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২২

জীবনের গল্প

পর্ব-২৯

নিস্তরঙ্গ পুকুরে এক কুচি ঢিল পড়লেও তরঙ্গ ওঠে বৈকী। তবে সেই তরঙ্গের স্থায়িত্ব আর কতটুকু?  দশ সেকেন্ড, বিশ সেকেন্ড বড় জোর এক মিনিট! এ তরঙ্গ বড় মৃদু, শক্তিহীন। দূর্বল বৃত্তাকার ঢেউ হয়তো এক সময়ে কাঁপতে কাঁপতে পাড়ে এসে পৌছায়, কিন্তু তখন তার অস্তিত্বই অনুভব করা কঠিন। স্থির পুকুরের দিকে তাকিয়ে কে তখন বলবে, একটু আগে ঢিল পড়েছিল এখানে?

আমার জীবনে কিছু কিছু মানুষের আগমন অনেক টা এই গোত্রের তরঙ্গের মতো। কিছু সময় পর মিইয়ে গেছে আপনা আপনি। পাড় পর্যন্ত সে তরঙ্গ নিজের অস্তিত্বই জানান দিতে পারে নি। কোন ও অভিঘাতই সৃষ্টি করতে পারেনি সে সম্পর্ক গুলো।

নদীর এক জলে কি দ্বিতীয়বার স্নান করতে পারে মানুষ??  না পারে না আমিও পারিনি। নদীর জলের মতো জীবন ও তো বহমান।  মানুষ কত কিছুই তো অ্যাচিভ করে। আর অ্যাচিভ শব্দটা ঘন্টা ধ্বনির মতো বেজে উঠে বুকে। এ জীবনে আমি কি অ্যাচিভ করেছি?  সংসার? স্বাচ্ছন্দ্য??  নিরাপত্তা???  নাকি একটু একটু করে কেবল একা হয়েছি?  এক ভাঙ্গা ভাঙ্গা নিঃসঙ্গতা?  কী??  তুচ্ছ কত ঘটনা নিয়ে কত জনার সাথে সম্পর্ক ঢিলে হয়ে যায়। কিছু কিছু সম্পর্কে অদৃশ্য ঘুনপোকারা এসে বাসা বাঁধে। সমস্ত টান, সমস্ত ভালোবাসা, মন কেমন করা সব নিরর্থক হয়ে যায়। নাকি থেকেই যায়?  ছেঁড়া ছেঁড়া স্মৃতি হয়ে।নাকি সম্পর্ক গুলো জোড়া লাগলেও কোথায় যেন সরু ফাঁক রয়ে যায়??  কোন টা??

এই যে আমি মাঝে মাঝে লেখালেখি করি, নিজের নিঃসঙ্গতা কে গোপন করি -আসলে সবার সব ক্ষমতা থাকেনা, আবার প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু ক্ষমতা থাকে। গুন থাকে। সেই গুনটার বিকাশ ঘটতে না দেয়ার মানে হল নিজের জীবনকে নিজেই অপমান করা। এ এক ধরনের আত্মহত্যা।

আমি বরাবরই সুখী বা অসুখী কোনওটাই ছিলাম না। মাটিতে জল যেভাবে গড়ায় সেভাবেই আমার জীবনটা গড়িয়ে গেছে। সাংসারিক জীবনের ঘানি টেনে। অন্যের বোঝা বয়ে বেড়িয়েছি কেবল। আরো গভীর ভাবে বলতে গেলে কাক হয়ে কোকিল ছানা বড় করেছি, যারা কখনো আমার ছিলই না। এই জীবনের প্রবাহ কখন কোন মুখী হবে এই বিষয়ে আমার কোন ভূমিকাই কখনো যেন ছিল না। এই বোধহীন অচৈতন্য স্তরে থাকার বোধটুকু ও বুঝি ছিলনা আমার। সমস্ত চিন্তা শক্তি বুঝি ভোঁতা মেরে গেছিল।

মনের ভেতর কুয়ো তৈরী করে সে কুয়োতে ডুবে বসে ছিলাম যেন। আজ এতকাল পরে এক ঝলক রোদ্দুরের ঝলক নিয়ে সে এল। যে অমানিশায় ডুবতে ডুবতে আমি বড্ড অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছিলাম। সে সময়টাকে পার করার মাধ্যম হয়ে এলো সে। এ কোন সাময়িক নেশা নয়, নয় ক্ষনিক উত্তেজনা, এ শুধু হৃদয়ে তরঙ্গ তুলবে না ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ তুলে পাড় ভাঙ্গবে অবিরত আমার হৃদয়ের।

কেউ কেউ কত তুচ্ছ ঘটনায় চট করে সংসার ভাঙ্গে, আবার কেউ কেউ ফাঁকফোকর গুলো রিপু করে চালিয়ে নেয় খুব সযতনে।

সংসারের ভিত্তি হলো বিশ্বাস। স্বামী স্ত্রী র সম্পর্ক হলো ভরসা। খারাপ লাগা,! ভালো লাগা,! ক্রোধ! অপমানবোধের একটু লাগাম টেনে ধরে দুজনে দুজনার প্রতি সম্মানবোধটা একটু বাড়িয়ে দিলেই কেল্লাফতে।

বিশ্বাস, বিশ্বাস ভাঙ্গা, সন্দেহ এসব বড় আজব শব্দ। সবই মানুষের মনগড়া,কিন্তু রকমফের আছে। মানুষ, গাছপালা, পশুপাখি, জীবজন্তু এদের মতো বিশ্বাসের ও একটা শরীর থাকে। আমাদেরই তৈরী করা, তবু আছে। তার লয় ক্ষয় আছে, ভাঙ্গন আছে, মৃত্যু ও আছে। কিন্তু সন্দেহ হলো অশরীরী। ধোঁয়ার মতো। কুয়াশার মতো। এ এমন ধোঁয়া যা চোখে দেখা যায় না অথচ চোখের মনিতে লেগে থাকে। ওই ধোঁয়া চোখে তাকালে সব কিছু আবছা। একে মারা যায়না, কাটা যায়না, উপড়ানোও যায়না। সন্দেহের জন্য কোন উপকরণ লাগে না। আমাদেরই দূর্বলতার ছিদ্র দিয়ে সন্দেহ মনের ভেতর ঢুকে পড়ে। চারপাশের জগত থেকে উপকরণ খুঁজে নিয়ে আমরা সেটাকে মিলাই। একটা না মিললে আরেকটা উপকরণ খুঁজি, সেটা না মিললে আরেকটা। যে আমাকে কখনো বিশ্বাস করেনি তার বিশ্বাস ভাঙ্গার প্রশ্ন কেন উদ্ভব হবে আমি বুঝি না।

কত কত বছর এক সঙ্গে ঘর করার পর ও পারস্পরিক সম্পর্কে কেন এত বিতৃষ্ণা জমে??  তাহলে সম্পর্ক কথাটার অর্থ কী?  শিকড়বিহীন হয়ে শুধু ডালপালা ফুলপাতা মেলে দাঁড়িয়ে থাকা??  অথবা দড়ির উপর হাঁটা??  ব্যালান্স করতে করতে??  সার্কাসের খেলার মতন?? আচ্ছা জীবন কি সত্য মিথ্যার মাঝখানে ভেসে ভেসে চলা?  এই যেমন আলো ছায়ায় ঠাহর করে পথ চলে মানুষ?  সংসারের রাস্তায় ও তো সে আবছায়ারই রেশ। এটাই বোধহয় নিয়তি, নিয়তির এই অমোঘ নিয়মকে টান মেরে ছিড়ে ফেলার ক্ষমতা ক’জনারই আছে। এই যে মধ্যবিত্তের জীবন, চাওয়া পাওয়ার বিশাল ফারাক, অর্থের টানাপোড়েনে যাঁতা কলে পিষ্ট চাহিদা। আচ্ছা মধ্যবিত্ত মানুষের কান্না লুকানোর কি কোন জায়গা আছে?  নিকষ কালো অন্ধকারের মতো মধ্যবিত্ত মানুষের স্বপ্ন গুলো ও ক্রমশ ফিকে হয়ে আসে।

মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা নিজস্ব ছন্দ আছে, সে পরিবারের প্রতিটা ভোরেরই একটা আলাদা সৌরভ আছে। এ যেন এক অন্য জীবন, অন্য বেঁচে থাকা।

ইদানিং সে জীবনে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে, করোনা। তার জেরে লক ডাউন। কমতে শুরু করেছে ব্যাংকে জমা খরচের হিসেব-নিকেশ।হিসেব-নিকেশই এদের বেঁচে থাকার রসদ।

এই লক ডাউনে মধ্যবিত্তের হাপিত্যেশ সবচেয়ে বেশী। এরা অফিস, পাড়ার আড্ডায়, চায়ের দোকানের গপ্পে সবচেয়ে বেশী যেটা করে গুজব, গপ্পো, বধূনিন্দা, পুত্রনিন্দা আর হিসেব নিকেশ কে কত কামালো। নিন্দেই এদের প্রাণশক্তি। ইদানিং এদের মধ্যেই বেশী চঞ্চলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কোয়ারান্টাইন ভেঙ্গে তাই এরা বেরিয়ে পড়ছে দলে দলে,আড্ডা দিতে না পারলে এদের পেট ফেঁপে ওঠে, অম্বল হয়ে যায়।

আমিও মধ্যবিত্ত তবে একটু ভিন্ন গোত্রের। আমার আবার এসব একদমই পছন্দ নয়। আমি কোয়ারান্টাইন এ থেকে বারান্দা দিয়ে দেখি ঝগড়ুটে শালিক,, উড়ন্ত কীটপতঙ্গ, নিদ্রিত কুকুর….। গোলাপী ডানার ওপর কালো ছিটছিট প্রজাপতি, দেখে দারুণ বিমোহিত হই। আমি কখনোই হিসেব-নিকেশের ধার দিয়েও যাইনা। আমার জীবন হাসপাতাল থেকে ফিরেই সেই খাওয়া, খবরের কাগজ মুখস্থ করা, দু’একটা বইপত্র উল্টানো, একটু টিভি খোলা, স্নান, খাওয়া, বিশ্রাম বিশ্রাম…..  আর অনন্ত বসে থাকা।

এলোমেলো ভাবনার মাঝে চোখ দুটো জড়িয়ে আসে মাঝে মাঝে। আর ছেঁড়া ছেঁড়া একটা স্বপ্ন ভেসে আসে। আমাদের গাঁয়ের বাড়ীর কুয়োর পাশে একটা গাছে একটা দোলনা ঝোলানো সেখানে চোখ বুজে দোল খাচ্ছি আমি, ঝির ঝির বাতাস আর কুয়োর জলে পাতা ঝরার শব্দ, গাছেদের পাতার ফোঁকর গলে আলোছায়ার মাখামাখি। চোখ মেললেই সে দৃশ্য হাওয়া। হৃদয়ের অতল কুয়োয় ঢেউ কাঁপে তিরতির। কেন যে কাঁপে?  মায়ায়?  এই অনুভূতিটাকে আজকাল পড়ে উঠতে পারি না আমি।

বারান্দায় এসে ঝলক দেখে নেই আকাশ, টুকরো টুকরো মেঘ, মগজে টুকরো টুকরো কথা, টুকরো টুকরো স্মৃতি।

ভালোবাসার রঙ কী??  আমি জানি না। লোকে বলে কষ্টের রঙ নীল। আমার কেন জানি মনে হয় না। কষ্টের কোন রঙ হয়না। রঙ হয় ভালোবাসার। রঙধনুর মতো সাত রঙ। তারও বেশী। হাজার রঙে রাঙ্গানো। ভালোবাসার প্রকার ভেদে রঙের ও তারতম্য হয়। এই যে সে যখন  কাছে যখন থাকে তখন মন শ্বেতশুভ্র রঙের মাতামাতি থাকে আবার একটু আড়াল হলেই ধূসর রঙের আনাগোনা । মাঝরাতে ঘুম জড়ানো চোখে তার আবছা মুখটা দেখে হৃদয় পুলকিত হয় গোলাপী রঙের মতো। আবার ঘুমের ঘোরে তার কপালে চুমু খাওয়ার পর মনে হয় জীবনটায় কেবল উজ্জ্বল কটকটে হলুদের ছড়াছড়ি। এত রঙ ভালোবাসার? তার চোখের চেয়ে উজ্জ্বল কোন রঙ আজকাল আমার চোখেই পড়ে না। সে খুব ভালোবেসে যখন জড়িয়ে ধরে তখন মনে হয় চারদিকে কেবল আকাশী নীলের ছড়াছড়ি। মনের আকাশ তখন বেগুনী, নীল, আসমানী, সবুজ, হলুদ,কমলা, লাল রঙের ছড়াছড়ি। সে অভিমান করলে কখনো আমার চারপাশে কেবল কালো রঙের ওড়াওড়ি।সকালে ঘুম ভেঙ্গে  তার হাসি মাখা  মুখটা দেখে মনে হয় আমার মনের  আকাশ আজ বুঝি সোনালী চকচকে। সোনাঝরা বিকেলের মত মাধূর্য ময়।

সে আমার নীল টুনি, পার্পল সানবার্ড। নীল টুনির মতো সারাক্ষণ কেবল মনের ভেতর ডাকতে থাকে হুইউ-ই…চি হি হি… হুইচো…… ইচিউট। সে বলে আমি তার ময়না পাখি। কথা বলা ময়না পাখি। তার আর আমার কথোপকথন যেন এক একটি পূর্ণাঙ্গ পান্ডুলিপি কোন প্রাচীন কবির। সে বাবুই পাখির মতো বুনে চলেছ সুক্ষ্ম ঘর আমার। সারাক্ষণ গাঙচিলের মতো ডাণা মেলে উড়ে চলেছ আমার মনের আকাশে। সে আমার লক্ষ্মী পেঁচা।কখনো কখনো পানকৌড়ির মতো ভেসে বেড়ায় হৃদয় নদীর জলে। খুনসুটি করে যখন তখন মনে হয়ে সে বুনোহংসী।

হাত ধরে যখন হেঁটে বেড়ায় তখন মনে হয় সে পেখম মেলা ময়ূর। সে আমার ময়ূরকণ্ঠী।

সাত সকালে স্নান সেরে যখন আমার সামনে এসে দাঁড়ায় তখন মনে হয় সে শীতের সকালের শিউলী ফুল। সে নিজেই জানেনা তার শরীরে কেমন অদ্ভুদ হাস্নাহেনার সুঘ্রান। সাধে কি আমি মাতাল হই। গোলাপে আমার এলার্জী তাই কখনো গোলাপের মতো লাগে না তাকে। সে আমার ছোট বেলীফুল।  শাড়ীতে তাকে দারুন লাগে। ছোট কালো টিপে তাকে দারুন মানায়।  হালকা রঙের লিপস্টিকে তাকে ফুটিয়ে তোলে আরো বেশী। দু’নয়নে যখন কাজল পরে তাকে চপল হরিণীর মতো লাগে। সে ছুটে বেড়ায় আমার হৃদয়ের এপাশ ওপাশ। সে বিনে  একাকী আমি  একাকীত্বের চাদর জড়িয়ে গুটিসুটি শুয়ে থাকি আমাদের আটপৌড়ে বিছানায়।আজকাল সময় কে বড্ড গালাগাল দিতে ইচ্ছে করে ।বদ্ধ ঘরে বদ্ধ সময়ে দিব্যি তারে নিয়ে সময় কেটে যায়।

আর সে ছাড়া আমার সময়গুলো কাটতেই চায় না আজকাল। বড্ড থমকে যায় সে ছাড়া আমার সময়ের কাঁটা।

সে তো জানে না সে হীন বিষন্নতা আমায় কুরেকুরে খায়। বড্ড জ্বালায়। সে হীন আমি যেন নাব্যতা হারানো করতোয়া, ইছামতি,গুমানী,গোমতি, আত্রাই, ভদ্রাবতী,গোহালা, বড়াল, নন্দকুজা, গাড়াদহ, কাঁকন,কানেশ্বরী,সরস্বতী,বাঙ্গাল,মুক্তাহার,ঝবঝবিয়া কিংবা ফুলজোড় এর মত মৃতপ্রায়। এই জৈষ্ঠ্যে কলকলিয়ে আবার আমায় করালগ্রাসী কর হে রমণী। ভাসিয়ে নিয়ে যাও আমায় সর্বগ্রাসী হয়ে। পাড় ভাঙ্গ আমার হৃদয়ের।  অজানা জীবাণুর সর্বগ্রাসী প্রলয়ের পর আমি তাকে নিয়ে গড়ব নতুন এক পৃথিবী ।

এমন এক বিপর্যের জন্য আদৌও প্রস্তুত ছিল কি বিশ্ব?  নাহ্ সত্যিই ছিলনা। ধীরেধীরে সব মিইয়ে আসছে। আলো। শব্দ। মানুষ। ব্যস্ততা। কলরব। হাসপাতালে, নাসিং হোমে ডাক্তার-নার্স আর রোগীদের আনাগোনা। সব। হঠাৎ যেন পৃথিবীর বয়স বেড়ে গেল। টের পাচ্ছি একটা বিপর্যয় আসছে। ভয়ঙ্কর। দীর্ঘস্থায়ী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews