পাতাল রেল প্রকল্প ঢাকা নগরীর আর্থ-সামাজিক-পরিকল্পনাগত বিবেচনায় ব্যয়বহুল, উচ্চাভিলাষী ও অপরিণামদর্শী বলে মন্তব্য করেছেন নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও পরিবহন পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
আজ শুক্রবার সকাল ১১টায় অনলাইনে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) আয়োজিত “ঢাকায় পাতাল রেল প্রকল্পঃ টেকসই পরিবহন পরিকল্পনার প্রাসঙ্গিকতায় উপযোগিতা বিশ্লেষণ” শীর্ষক নগর সংলাপে নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও পরিবহন পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এমন মত দেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঢাকা মহানগরীর অন্যতম সমস্যা যানজট সমাধানের লক্ষ্যে বিগত দিনগুলোতে পরিবহন পরিকল্পনা ও নগর পরিকল্পনার নানাবিধ উদ্যোগ এবং বিভিন্ন সড়ক ও অবকাঠামোগত প্রকল্প নেওয়া হলেও এর সুফল তেমন একটা দৃশ্যমান হচ্ছে না। ঢাকার টেকসই যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলবার লক্ষ্যে ২০০৫ সালে ঢাকা কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করা হয় যার আলোকে মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটি প্রকল্পসমূহ ঢাকা নগরীতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
পরবর্তীতে এই পরিকল্পনার পরিমার্জন করে সংশোধিত ঢাকা কৌশলগত পরিকল্পনা ২০১৬ সালে প্রস্তুত করা হয় যার আলোকে সরকার মেট্রোরেলের নতুন রুট তৈরিসহ অন্যান্য উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি), সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি)’র প্রস্তাবনার বাইরে ঢাকার যানজট সমাধান করবার লক্ষ্যে সরকার ‘ঢাকা পাতালরেল (সাবওয়ে) প্রকল্প’ নেবার উদ্যোগ গ্রহণ করতে আগ্রহী যার আলোকে সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা চলছে।
তারা বলেন, ‘ঢাকা পাতালরেল (সাবওয়ে) প্রকল্প’ নগরের টেকসই পরিবহন পরিকল্পনার প্রাসঙ্গিকতায় কতটুকু উপযোগী এবং পরিবহন পরিকল্পনা ও নগর পরিকল্পনায় এই প্রকল্পের সামগ্রিক অর্থনৈতিক-সামাজিক-ভৌত-পরিকল্পনাগত-পরিবেশগত প্রভাব বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও সাবওয়ে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে এই বিষয়গুলোর অধিকাংশকেই সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনটি মূলত কারিগরী প্রতিবেদন এবং এখানে কিছু অর্থনৈতিক উপাত্ত উপস্থাপন করা হলেও প্রকল্পের সামগ্রিক প্রভাবজনিত বিষয়গুলো অনুপস্থিত থাকায় এই অর্থনৈতিক উপাত্তগুলো প্রকল্পের আয়-ব্যয়-সুবিধার প্রকৃত চিত্র উপস্থাপন করতে পারেনি। এই প্রকল্পের পরিকল্পনাগত প্রভাব বিশ্লেষণ ও সামগ্রিক ঢাকা শহরের অন্যান্য পরিকল্পনার সাথে তার সমন্বয় কিভাবে হবে সেই বিষয়গুলো অনুপস্থিত।
বক্তরা বলেন, বায়ু-ধুলা-শব্দ দূষণের কারণে পরিবেশগতভাবে নাজুক ঢাকা শহরে এই ধরনের প্রকল্পের কারণে জনস্বাস্থ্যগত প্রভাব কি হতে পারে, এই ধরনের আলোচনা এই সম্ভাব্যতা যাচাই এ অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। ঢাকার প্রভাববলয় এলাকার অন্যান্য অঞ্চলগুলোর সাথে দ্রুত ও সহজসাধ্য যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সাবওয়ের বিকল্প হিসেবে অন্যান্য যেসব সমাধান বিবেচনা করা যেতে পারে এবং সেগুলোর আয়-ব্যয়-সুবিধার কোনো তথ্য-উপাত্ত-বিশ্লেষণ না থাকাতে এই সম্ভাব্যতা দলিল তার কার্যকারিতা, গ্রহণযোগ্যতা ও উপযোগিতা হারিয়েছে। এই সম্ভাব্যতা যাচাই প্রক্রিয়ায় অংশীজন সভা যেগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে সেগুলোর প্রক্রিয়া ও উদ্দ্যেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সামগ্রিকভাবে নগরের বিদ্যমান পরিবহন পরিকল্পনা ও নগর পরিকল্পনার অন্যান্য দলিলের সাথে সাবওয়ে পরিকল্পনার মৌলিক দূরত্ব ও এই পরিকল্পনা করা ও অন্যান্য নগর কর্তৃপক্ষসমূহের সাথে যথাযথ ও বিশদ আলোচনার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, সার্বিক বিবেচনায় পাতাল রেল প্রকল্পের মতো ব্যয়নির্ভর, ঝুঁকিপূর্ণ ও উচ্চাভিলাষী প্রস্তাবনা নিয়ে পরিকল্পনা কবার জন্য ঢাকা নগরী এখন প্রস্তুত নয়। বরং ঢাকার যানজট সমস্যা নিরসনসহ টেকসই পরিবহন পরিকল্পনা গড়ে তোলবার জন্য কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি), সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি), ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) এ প্রস্তাবনাগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া করা দরকার।
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) আয়োজিত নগর সংলাপের মূল প্রবন্ধে আইপিডি’র পক্ষ থেকে ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড.আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্পের অংশ হিসেবে কয়েকটি রুটে সাবওয়ে করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই প্রস্তাবনার অর্থনৈতিক ও পরিকল্পনাগত বিশদ বিশ্লেষণ ও অংশীজন আলোচনা সেভাবে করা হয়নি। এর বাইরে গিয়ে ঢাকা শহরের কেন্দ্রীয় এলাকা ও আঞ্চলিক এলাকাসমূহের সাথে যোগাযোগ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিস্তৃত সাবওয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার যে প্রকল্প নিতে যাচ্ছে সরকার, তা ঢাকাসহ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও পরিকল্পনাগত বিশ্লেষণে অপরিণামদর্শী।
তিনি আরো বলেন, সাবওয়ের মতো গণপরিবহনব্যবস্থা টেকসই হবার জন্য আমাদের নগর ও আঞ্চলিক এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত জনসংখ্যা বিদ্যমান থাকলেও আমাদের মাথাপিছু আয় ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিবেচনায় এই প্রকল্পের অতি উচ্চ বিনিয়োগ ব্যয় ও পরিচালন ব্যয় এর কারণে এই প্রকল্প আমাদের ঢাকা শহরের জন্য বাস্তবসম্মত নয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নগর পরিকল্পনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সাবওয়ে উচ্চ আয়ের দেশগুলোর সীমিত সংখ্যক কিছু শহরে নির্মিত হলে ও সাবওয়ে নির্মাণ অতি ব্যয়বহুল প্রকল্প। ফলে বিশ্বের অতি ধনী দেশগুলোও এখন নতুন করে নগরের বিস্তৃত নেটওয়ার্কজুড়ে সাবওয়ে নির্মাণের মতো উচ্চাভিলাষী প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে না। সেখানে বাংলাদেশ যদি ও মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হবার যাত্রাপথে আছে, আমাদের মাথাপিছু আয় উন্নত দেশের তুলনায় এখনও অতি অল্প। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় যেখানে প্রায় ২ হাজার ডলার, সেখানে আমেরিকার ৭০ হাজার (বাংলাদেশের ৩৫ গুণ), সিংগাপুর ৬৫ হাজার (৩৩ গুণ), জার্মানি ৫০ হাজার (২৫ গুণ), ইংল্যান্ড ৪৫ হাজার (২৩ গুণ), জাপান ৪০ হাজার ডলার (বাংলাদেশের ২০ গুণ)। ফলে সাবওয়ে নির্মাণের মতো অর্থনৈতিক শক্তি আমাদের নেই বললেই চলে।
অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান আরো বলেন, সাধারণত এক কিলোমিটার সাবওয়ে লাইন নির্মাণে অন্তত ৩০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে নির্মিত সিঙ্গাপুর, হংকংয়ের মতো দেশ ও প্রশাসনিক অঞ্চলগুলোতে পাতাল রেলের নির্মাণ ব্যয় আরো বেশি। সিঙ্গাপুরের ডাউনটাউন এমআরটি লাইন (পুরোটাই পাতালপথে) নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হয়েছে ৪৯৩ মিলিয়ন ডলার। আর হংকংয়ের শা তিন সেন্ট্রাল লিংক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হয়েছে ৫৮৬ মিলিয়ন ডলার। ঢাকার সাবওয়ের প্রাথমিকভাবে প্রতি কিলোমিটার খরচ ধরা হয়েছে ২৭৫ মিলিয়ন ডলার।
আইপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, বৈশ্বিক বিবেচনায় সাবওয়ে নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং প্রকল্পের শুরুতে প্রাক্কলিত ব্যয় বাস্তবায়নের সময় অনেক বেড়ে যেতে পারে। ফলে অনেক দেশ ও শহর এ ধরনের ব্যয়বহুল প্রকল্প থেকে সরে আসছে। বাংলাদেশের অতীত অভিজ্ঞতায় আমরা জানি সাবওয়ে নির্মাণে আমাদের প্রাক্কলিত ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বাস্তবায়নকালে। ফলে প্রকল্পের ধারণাপত্র ও সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে যে ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধার কথা উপস্থাপন করা হয়, সে ধরনের বাস্তবতা ভবিষ্যতে পরিলক্ষিত হবে না।
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) এর পরিচালক ও শেলটেক কনসালটেন্টস লিমিটেড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, সাবওয়ের মতো উচ্চ ব্যয়নির্ভর প্রকল্প আমাদের নগর ব্যবস্থাপনায় কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে না। এর পরিবর্তে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি ঢাকার আশপাশে পরিকল্পিত টাউনশিপ গড়ে তোলবার মাধ্যমে ঢাকার ওপর চাপ কমানোর তাগিদ দেন তিনি। একই সাথে মানসম্মত বাস সার্ভিস গড়ে তোলার মাধ্যমে ঢাকার সাথে আঞ্চলিক যোগাযোগ টেকসই ও কার্যকর করবার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, সমগ্র দেশের উন্নয়ন বাজেটের তুলনায় অতি ব্যয়বহুল এই প্রকল্প দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। ঢাকার পরিবহন পরিকল্পনা ও নগর পরিকল্পনার মূল দলিলগুলোতে পাতাল রেলের প্রস্তাবনা না থাকবার পরেও কিভাবে এই প্রকল্প এর সম্ভাব্যতা যাচাই এ বিশাল পরিমাণ ব্যয় করা হয়, সেই প্রশ্ন উত্থাপন করেন তিনি।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক, ড. এস এম সালেহউদ্দিন বলেন, আমাদের শহর এর মানুষ, অর্থনীতি, সমাজ-সংস্কৃতির সাথে পাতাল রেল প্রকল্প মানানসই নয় এবং একইসাথে এর সামগ্রিক ব্যয় অতি উচ্চ। সাবওয়ে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই এর জন্য ৩২০ কোটি টাকা অপচয় না করে ঢাকা শহরে এই টাকা দিয়ে হাজারখানেক মানসম্মত বাস নামালেও ঢাকার ট্রাফিক সমস্যার সমাধানে কার্যকর হত। পাশাপাশি বাস রুট রেশনালাইজেশন উদ্যোগ সমগ্র ঢাকা শহরে দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি।
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) এর উপদেষ্টা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, সাবওয়ে প্রকল্পের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে পেশাজীবী সত্যতা ও সততার নির্মোহ প্রকাশ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন, প্রকল্পকে অনুমোদন দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই তৈরি করা হয়। সাবওয়ে প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক বিদেশি পরামর্শকদের বাংলাদেশ ও ঢাকা মহানগরীর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বাস্তবতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনার অভাব রয়েছে। পাতাল রেল প্রকল্প বা এই ধরনের অতি ব্যয়নির্ভর অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগের বদলে দেশের জেলা শহরগুলোর উন্নয়নে ব্যয় করা হলে ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থার উপর চাপ কমে যাবে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) এর প্রকল্প পরিচালক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) পরিচালক পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঢাকার কেন্দ্রীয় অঞ্চল পাতাল রেল নির্মাণের জন্য উপযুক্ত হলে ও ঢাকার আশপাশের অন্যান্য অঞ্চল এর ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য সাবওয়ে নির্মাণের জন্য যথাযথ নয়। ফলে ঢাকার আশেপাশে পাতাল রেলের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে ব্যয় হবে তুলনামূলক অনেক বেশি। ঢাকার পরিবহন পরিকল্পনা ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় প্রস্তাবিত রিং রোড, রেডিয়াল রোড, বৃত্তাকার রেলপথ প্রভৃতি উদ্যোগ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকার টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সম্পাদক মো. মারুফ হোসেন বলেন, এই ধরনের প্রকল্প শুধু ঢাকা শহর নয়, সমগ্র বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যতে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। পাশাপাশি ঢাকার পরিবহন পরিকল্পনার দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন সংস্থাকে সমন্বয় না করতে পারলে এবং কোনো একটি সুনির্দিষ্ট সংস্থাকে এর অভিভাবকত্ব না দিতে পারলে এই ধরনের সমন্বয়হীন উদ্যোগ ও জনগণের করের অর্থের অপচয় চলতেই থাকবে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও নগর পরিকল্পনাবিদ, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ট্রান্সপোর্ট প্রফেশনালস (বিআইটিপি) এর সাধারণ সম্পাদক মো. মইনুল ইসলাম বলেন, ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি), কমিউটার রেল এর উন্নয়ন এর মাধ্যমে ঢাকার উপর পরিকল্পিত উপায়ে চাপ কমানো সম্ভব। পাশাপাশি সড়ক-রেল-জলপথের মাল্টিমোডাল ইন্টিগ্রেশন এর মাধ্যমে ঢাকার টেকসই সড়ক যোগাযোগ তৈরি করা সম্ভব।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর রেজা বলেন, পাতাল রেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে পরিবেশগত প্রভাবের যথাযথ আলোচনা অনুপস্থিত। এই ধরনের নির্মাণযজ্ঞে ঢাকার পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উপর কেমন প্রভাব পড়বে তার বিশ্লেষণ করেই এই প্রকল্পের সার্বিক উপযোগিতা নির্ণয় করা যেতে পারে, শুধুমাত্র অর্থনৈতিক আলোচনা দিয়ে এই ধরনের প্রকল্পকে অনুমোদন দিলে দীর্ঘমেয়াদী বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
ঢাকার ট্রাফিক সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) এর দেওয়া পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, সাবওয়ে প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে যোগাযোগ ও পরিবহন পরিকল্পনার অন্যান্য সমাধান যেমন কমিউটার ট্রেন, লাইট রেল ট্রানজিট (এলআরটি), বিআরটি, মানসম্মত বাস সার্ভিস প্রভৃতি তুলনামূলকভাবে ব্যয় সাশ্রয়ী উদ্যোগকে আন্তরিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া দরকার, যা আমাদের আর্থ-সামাজিক-পরিকল্পনাগত বিবেচনায় ব্যয় সাশ্রয়ী ও সহজে বাস্তবায়নযোগ্য। উচ্চ ব্যয় সম্পন্ন পরিবহন ও যোগাযোগ প্রকল্প গ্রহণের আগে গণশুনানির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মতামত নেবার উপর গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দেয় আইপিডি।
ঢাকার ট্রাফিক ও পরিবহন পরিকল্পনায় যতগুলো সম্ভাব্য প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে, সেগুলো যদি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলেও ঢাকার যানজট নিরসন করা যাবে না। যদি না সারাদেশের আঞ্চলিক উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ঢাকামুখী জনস্রোত না কমানো যায়। ঢাকাতে যে কোনো বড় অবকাঠামো নির্মাণের সম্ভাবনা ব্যয়সমূহের নির্মোহ বিশ্লেষণ করেই ঢাকার ট্রাফিক সমস্যা নিরসনে প্রকল্প প্রণয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণের পরামর্শ দেয় ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট