বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য রাশিয়া দায়ী নয় বলে দাবি করেছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মন্টিটস্কি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়ের ৭৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক নিবন্ধে তিনি এ দাবি করেন।
নিবন্ধে রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, ‘ইউরোপীয় রাজনীতিকরা বিশ্বে আসন্ন দুর্ভিক্ষের প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং এর জন্য ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে দায়ী করছেন। আমি আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, খাদ্যপণ্যের বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি তাদের গত দুই বছরের অব্যাহত প্রবণতার ফল।
বিশেষ করে কৃষিপণ্যের বাজারে সংকট উন্নত দেশগুলোর সামষ্টিক অর্থনীতি, জ্বালানি, জলবায়ু ও খাদ্যনীতির ধারাবাহিক ভুল ও বিভ্রান্তিকর হিসাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ’
রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মন্টিটস্কির মতে, কভিড-১৯ মহামারি এবং সরবরাহ ও বণ্টন ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি পণ্য পরিবহন ও বীমার হার বৃদ্ধিও পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক জবরদস্তি বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের বাজারের বিদ্যমান নেতিবাচক প্রবণতাকে আরো বৃদ্ধি করছে। মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ ও লজিস্টিক অসুবিধা কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসহ সব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছে।
রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মন্টিটস্কি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তত্কালীন ফ্যাসিবাদী জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের দুঃসাহসী যুদ্ধের কথা স্মরণ করেন। ওই যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের দুই কোটি ৭০ লাখ লোক নিহত হয়েছিল। তাই ৯ মে সোভিয়েতের যুদ্ধবিজয় একদিকে গর্বের, অন্যদিকে বেদনার। ওই দিন ইউরোপীয়রা নির্ভয়ে আকাশের দিকে তাকাতে পেরেছিল।
রুশ রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, ইউরোপ সেগুলো ভুলে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছে। পশ্চিমের বেশ কিছু রাজনীতিক সেই যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নেননি। নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে তাঁরা অতীতের বিভিন্ন ঘটনার নানা ছদ্ম বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া শুরু করেছেন।
ইউক্রেনের নাৎসিপন্থী আজভ ব্যাটালিয়ানকে ইঙ্গিত করে রুশ রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, ইউরোপের অনেক দেশে আবারও যে নাৎসিদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে তার বড় উদাহরণ ইউক্রেন। নাৎসিবিরোধী যুদ্ধের স্মৃতিসৌধগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নীরব সম্মতিতে ধ্বংস করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত মন্টিটস্কি লিখেছেন, ৩০ বছর ধরে রাশিয়া ধৈর্য নিয়ে ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য ন্যাটোর নেতৃস্থানীয় দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা করছে। এর বিপরীতে রাশিয়া মিথ্যাচার, ধোঁকা ও অপপ্রচারের শিকার হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিবাদ সত্ত্বেও উত্তর আটলান্টিক জোটের পরিধি ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে রাশিয়া দুই পক্ষের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্তে আসার প্রস্তাব দিলেও ন্যাটো তাতে সাড়া দেয়নি। এর অর্থ ন্যাটোর অন্য পরিকল্পনা ছিল।
রুশ রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, পরমাণু অস্ত্র সক্ষমতার অর্জন করতে পারে বলে কিয়েভ ঘোষণা দিয়েছে। ন্যাটো জোট রাশিয়ার সীমানার কাছে সক্রিয় সামরিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। ১৯৪১ সালের মতো যুদ্ধ রাশিয়ার সীমান্তের কাছে চলে আসছিল। এটি রাশিয়ার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট