1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১১:৩১ পূর্বাহ্ন

ডা. মোজাহিদুল হক এর ধারাবাহিক গল্প ৪০

সাহিত্য ডেস্ক
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০২২

জীবনের গল্প

-ডা.মোজাহিদুল হক

পর্ব-৪০

মুম্বাইয়ে থাকার সময় সুনীতা প্রায়ই বলত পড়া শুনার জগতে নিজেকে স্বেচ্ছাবন্দি করে আমি নাকি গোটা সাইবেরিয়া বুকের মধ্যে পুষে রেখেছি । আমার হৃদয় নাকি বড় বেশী শীতল । ও বলত মেয়েরা নাকি পুরুষের হৃদয়ের চনমনে উত্তাপ চায় ,হিম শীতল বরফ নয় । কি করে কি জানি আমার সাইবেরিয়া ঢুকিয়ে রাখা বুকে কি করে সাহারার উঞ্চতা খুঁজে পেল অহনা । নাকি অনেক বেশী সরল , সাহসী , সুন্দর ,অনেক বেশি প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা অহনা নিজেই আমার বুকের বরফ গলিয়ে উঞ্চ প্রেমিক পুরুষ তৈরী করতে চাইছে ? প্রেমের নামে আমাকে ঠকালো তো কেউ কেউ ।কেউ দেখালো নিষ্ঠুরতা । এমন অনেক নিষ্ঠুরতা থাকে যার বিরুদ্ধে চিৎকার করা যায় না , দেয়ালে মাথা ঠোকা যায় না , কেবল একটা শীতল বন্ধ জানালার ধারে বসে , অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে , বুক চেরা কষ্ট নিয়ে জেগে থাকতে হয় সারারাত । কেন ঠকিয়েছে সবাই উঞ্চ প্রেমিক হতে পারিনি বলে ?

আমার ইচ্ছা অনিচ্ছা গুলো এতই সুক্ষ্ম যে নিকটতম সম্পর্কের মানুষজনও তার হদিস পায় না । যখন পায় তখন অজান্তেই ওই মানুষগুলোর ইচ্ছা অনিচ্ছার শিকারে পরিণত হয়ে গেছি আমি । এতোকাল পর সেটা ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করেছে বলেই হয়তো আমার নাড়ির সন্ধান পেয়ে গেছে অহনা । হয়তো আমার বিষন্ন মুখটাই অহনাকে আকৃষ্ট করেছিল বেশি । কিংবা হয়তো আমার অতীত যন্ত্রনাই পথ করে দিয়েছিল মসৃণ প্রেমের ।হয়তো কেন ? নিশ্চয়ই তাই । নিজের মনে অহনার প্রেমে পড়ার যুক্তিগুলো সাজাতে পেরে আজকাল তৃপ্তি পাই আমি । আমার প্রতিটি পছন্দ অপছন্দ প্রায় মুখস্থ অহনার । এইযে আমি সারাক্ষণ বই মুখে করে বসে থাকি , বাড়িতে মোটা মোটা বইয়ের গাদা তাও কেবল সময় পেলেই বই কিনছি তাতেও অহনার প্রচ্ছন্ন সাপোর্ট। এইতো ক’দিন আগেই সামনের ঘরের বুকসেলফে বইয়ের জায়গা হলোনা বলে নিজেই আমাকে সাথে নিয়ে নতুন সেলফ্ নিয়ে এলো ।

বাইরে এখন হিমঋতু নিঝুম । গাঢ় আকাশে জেগে উঠেছে কোটি কোটি নক্ষত্র । ঝিক ঝিক হাসছে । পৃথিবীর পানে তাকিয়ে এক ভরভরন্ত চাঁদ । চরাচরে অপরুপ জ্যোৎস্নার মায়া । মেহগনি কাঁঠালের পাতায় রুপোলি আবেশ । অহনাদের বাড়ীর পাশে একটা ছোট নদী আছে । নদীর চেহারা নিতান্তই সাদামাটা । কোথায় এর উৎস কে জানে ? শীর্ণ এক নদী বয়ে যাচ্ছে তির তির । স্থানীয় লোকজন এর নাম দিয়েছে হিসনা । আপাত চোখে হিসনার জলের রং সত্যিই কুচকুচে কালো, তবে জলের কাছাকাছি গেলে বোঝা যায় জল কালো নয় , নীচের কালো মাটির জন্যই কালো দেখায় । একেই বুঝি বলে কাকচক্ষু জল ! এর ধারেই প্রতি বছর সাধূ সংঘ হয় । এবারও হবে । লালন সঙ্গীতের মূর্ছনায় রাতের নিস্তব্দতা ভেঙে খান খান হয় । কয়েকদিন কেমন ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুম হচ্ছে আমার । অহনা শিশুর মতো জড়িয়ে শুয়ে আছে । কোন কারণ ছাড়াই ঘুম ভেঙে যাচ্ছে । বাইরে সরসর শব্দ । ইউক্যালিপটাসের পাতায় বাতাস কাটছে । একটা রাতচরা পাখির ডাক ভেসে এল । কর্কশ শব্দ । আরও কীসের যেন একটা আওয়াজ শোনা যায় ।ক্ষীণ ,কিন্তু তীক্ষ্ন । একটু কেঁপে ওঠে অহনা ,আরো জড়িয়ে ঘুমায় । আমার ওপর হাত পা ছড়িয়ে ।

মেঝে থেকে কনকনে ঠান্ডা উঠছে ,দেওয়াল ফুঁড়ে হিম দাঁত বসাচ্ছে শরীরে ,দরজা জানালার ফাঁকফোকর গলে ধারালো ছুরি চালাচ্ছে শীতল বাতাস । ঘরের ভেতর অন্ধকার যেন অন্ধকার নয় , মাঝ সমুদ্রের গাঢ় নীল শান্ত জল । কমপিটা টেনে জড়িয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছি , সময়ের সাথে ভালোবাসার কোন সম্পর্ক নেই । সময় যত বাড়ে ভালোবাসা তত গভীর হয় ।অহনা আবার পাশ ফিরলো । নাগরিক নিয়ম ভেঙে এ বাড়ির গায়ে এক ফালি জমি কী করে যেন ফাঁকা পড়ে আছে এখনো । গাছ অগাছায় ভরাট । রাতে মেহগনির ফাঁক গলে মিহি সরের মতো জোৎস্না লুটোপুটি খায় ওখানে আর দিনে মেহগনির কান্ড বেয়ে দুটো কাঠবেড়ালী ছুটেছুটি করে ক্রমাগত । সন্ধ্যায় চেম্বারে এক দম্পতি এলো ,এদের শারীরিক সমস্যা থেকে মানসিক সমস্যা বেশী । স্বামী স্ত্রী আমাকে দেখাতে এলেন নাকি ঝগড়া করতে এলেন বুঝছিলাম না । স্ত্রীর অভিযোগ পুরুষটা যৌনতা ছাড়া কিছু বুঝেনা ,ওতে ভদ্রলোক আরো ক্ষিপ্ত হয়ে চেচাচ্চে আর ইংরেজীতে কট কট করছে মেরিড লাইফ ইজ নাথিং বাট সেক্স । ইচ্ছে করলো ব্যাটাকে কষে একটা চড় দেই । বের করে দিলাম চেম্বার থেকে । মানুষের চাহিদা যদি শুধুই যৌনতা হয় ,তাহলে তো কুকুর বেড়ালের সঙে তার কোন ও তফাত থাকে না । খিদে জাগল ,কী অতৃপ্তি এলো অমনি ইয়ে শুরু করলে কি হয় ? মানুষের বেলায় মনেরও একটা বড় ভূমিকা আছে ।আগে হৃদয় ,তারপর শরীর । যার কাছে ফিজিক্যাল আর্জই সব সে তো জন্তুর শামিল ।

সম্পর্ক জিনিসটা বড় অদ্ভুদ । সম্পর্ক তো এমনি গাঢ় হয় না , তাকে ক্রমাগত লালন পালন করতে হয় । জ্বাল দিতে হয় ।তবেই না সম্পর্ক গাঢ় হয় । শীত শীত করছিল ।শাল গায়ে জড়িয়ে চোখ রেখেছি জানালায় ।ঘন খয়েরি কাচের ওপারে মরে এসেছে দিন ,ঘর বাড়ী মাঠ ঘাট সবই কেমন আবছা এখন । কাচের ভেতর দিয়ে শেষ বিকেলের আলো কী ভীষণ ম্রিয়মাণ লাগে ।আকাশটাকে মনে হয় মেঘলা মেঘলা । মস্তিষ্কের কোষে পাক খাচ্ছে তাল বেতাল চিন্তা । আজকাল টের পাই ,একটা হালকা বিষন্নতা যেন আমাকে জড়িয়ে থাকে দিনভর । হেমন্তের বিকেলের কুয়াশার মতো ।অথচ আমার তো এমন হওয়ার কথা নয় । যা যা একজন মানুষের মনে সুখের বোধ সঞ্চারিত হয় ,সবই তো আমার করায়ত্ত্ব । দায়িত্ববান স্ত্রী , সাজানো গুছানো ঘর , টিভি ফ্রিজ , মাইক্রোওয়েভ ,কী নেই আমার ! শরীর স্বাস্থ্যও রীতিমতো ভাল । মধ্য বয়সি দুঃখবিলাসী নিঃসঙ্গ মানুষ আমাকে বলা যাবে না । বিষন্নতার এক জটিল আবর্তে যেন আমি ঢুকে পড়েছি , বেরুনোর পথ পাচ্ছি না ।

চেম্বার থেকে বেরোতে বেরোতে সাড়ে ন’টা বেজে গেল ।বেশ ঠান্ডা পড়ছে আজ । রাস্তাঘাট রীতিমতো নির্জন । এ সময়ে ঢাকা শহরটাকে কেমন অচেনা অচেনা লাগে । অন্তত আমার লাগছিল । আজ । এই মুহুর্তে । একা একা বলেই কি লাগছে এরকম ? ইদানিং হাসপাতালে কাচের দরজা ঠেলে অন্দরে পা রাখলেই শরীর জুড়ে একটা অস্বস্তিকর শিহরন বয়ে যায় ।কেমন একটা মৃত্যুর গন্ধ যেন ছড়িয়ে থাকে ।নাকি এ গন্ধ জীবনের ? প্রাণবায়ুর ? হাসপাতালের ওই বিটকেল ভাব থেকে বাইরের এই হিম বাতাস আর কোলাহল ঢের ভালো । অহনা অফিস থেকে বেরুলো লাঞ্চ আওয়ারে । এসে হাসি হাসি মুখ করে বললো ছুটি নিয়ে নিলাম । চলো এখন বেরুলে হয়তো আড়াইটার বাসটা ধরতে পারব । অহনা স্বস্তির শ্বাস ফেলল । সদ্য ফোটা জুঁই ফুলের মতো সজীব দেখাচ্ছে অহনাকে । গাড়ীর নরম সিটে শরীর ছেড়ে দিল অহনা । এ.সি র হিমে জুড়িয়ে দিচ্ছে শ্রান্তি । সাঁই সাঁই করে ছুটছে বাস । অহনাদের বাড়ী আমার কাছে এক মায়াজাল । যে কয়দিন থাকি বিচিত্র এক ভালবাসার মায়াজালে আটকে থাকি ।ফিরে আসার পরও কয়েকদিন নিজেকে সে জালে আটকে থাকতে দেখি । বিচিত্র এক দোলাচলে দোলে আমার মন ।কখনও এপারে কখনও ও পারে ।

সিরাজগঞ্জের দিকে ছুটছে গাড়ী । তেমন একটা জোরে নয় ,কত হবে গতি সত্তর ? কি জানি ? হাইওয়ের ওপর বাজার বসেছে ।একখানা ফাঁকা লরী কে অতিক্রম করে গেল আমাদের বাস । মেসেঞ্জারে আকরাম ভাই মেসেস পাঠিয়েছে ,আমাদের গণজাগরণ মঞ্চের সহযোদ্ধা আজহার ভাই আর নেই । অহনাকে মেসেজটা দেখাতেই ওর চোখ ছলছল ।এমন একটা টাটকা প্রাণের চকিত মৃত্যু আমাদের স্নায়ুকে যেন অবশ করে দিয়ে গেল ।ভাবতেই পারছিনা কিছুদিন আগেই আজহার ভাইয়ের সাথে আড্ডা হল ,সে আর বেঁচে নেই ।একটা মাত্র মূহুর্তের টোকায় আজহার ভাইয়ের চির বিদায়। জীবন কি এতই অনিত্য ? মৃত্যু কি এমনই নিষ্ঠুর ?

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews