1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ০৭:৫৬ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
সোনাতলায় অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি পরিবারকে শিল্পপতি রিপনের আর্থিক অনুদান প্রদান মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে ১৬ ‍দিন পর আন্দোলন স্থগিত করল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ত্রিশাল উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগ জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে মার্কিন ভেটো পর্নগ্রাফি মামলার পলাতক আসামি গ্রেপ্তার সোনাতলায় বিএনপি নেতাকর্মিদের মাঝে শিল্পপতি রিপনের ঈদ উপহার বিতরণ সংবিধানের নির্দেশনা ও মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগের শিক্ষাই সেনাবাহিনীর চেতনার উৎস : সেনাপ্রধান জীবিত সেলিমকে জুলাই আন্দোলনে ‘শহীদ’ দেখিয়ে হত্যা মামলা! সোনাতলায় শিল্পপতি রিপন’র সৌজন্যে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান’র ৪৪তম শাহাদৎ বার্ষিকী পালিত বিক্রমপুর জাদুঘরের প্রতিষ্ঠার এক যুগ পূর্তি

ডা. মোজাহিদুল হক এর ধারাবাহিক গল্প ৪১

সাহিত্য ডেস্ক
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৭ মে, ২০২২

জীবনের গল্প

-ডা.মোজাহিদুল হক

পর্ব-৪১

পশ্চিমের জানালার পেলমেট থেকে ঝোলা ভারী পর্দা দুটোর গায়ে ,বন্ধ কাচের শার্সিতে প্রভাতী আলোর আভাস । মন কেমন করা স্মৃতির মতো ।মনোরম কিন্তু বিষন্ন । অহনা অফিস চলে গেছে । গোটা বাড়ীটা নিঝুম । আজ দু’দিন শীতটা বেশ ঝাঁকিয়ে পড়ছে । হিম বাতাস ঢুকবে বলেই হয়তো অহনা ব্যালকনির দরজা লাগিয়ে দিয়ে গেছে । তাতে ঘরটা আরো বেশী নিঝুম লাগছে । চর্তুদিক চাপা বলেই হয়তো ঘরটায় আলো কম । আধো আলো আধো ছায়া ঘরময় । আবছা আলো , দেয়ালের ছবি , নীল পর্দা সব মিলিয়ে পুরো দৃশ্যটার একটা আলাদা আকর্ষণ আছে । দেয়ালে ঝোলানো শাড়ী পরা অহনার ছবিটা রোজ ঘুম ভাঙলে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকি । জীবনের সব রুপ রস বর্ণ গন্ধে ভরা ,একটা সম্পূর্ণ নারীর ছবি । আয়েস করে একটা সিগারেট ধরিয়েছি । আআহ। ধোঁয়াগুলো মাথায় ঢুকে কারুকার্য শুরু করে দিয়েছে । ক্রমে মাথার ভেতরটা কি আশ্চর্য রকমের হালকা । রোজ রোজ লোকের দাম্পত্য কলহের গল্প শুনছি । দেখে শুনে আমার কেন জানি মনে হয় , রোমিও জুলিয়েটের বিয়ে হলেও শেষ পর্যন্ত কলহ হতো । দেখা যেতো জুলিয়েট কৌটো ছুঁড়ছে , বাসন ভাঙছে ; রোমিও রাগে গরগর করতে করতে হিংস্র নেকড়ের মতো গোটা বাড়ি দাপাচ্ছে । আর শহরের লোক তালি দিয়ে মজা দেখছে । হায়রে প্রেম ।

বারান্দায় এক চিলতে সূর্যের আলো টেরচাভাবে এসে পড়েছে ,আলোটুকু ছাড়া বারান্দার আর কিছুই স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নয় । রোজই দেখছি বারান্দায় কিছুক্ষণ ওই আলোটা থাকে তারপর উধাও হয়ে যায় । ওটা মনে হয় আমার ভাগের আলো । পৃথিবীতে সবার ভাগেই বোধ হয় ওরকম পৃথক পৃথক আলোর টুকরা থাকে । বাদবাকি সবটাই স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার । ওই আলোটুকুর জন্যই তো বেঁচে থাকে মানুষ ।তাহলে অহনার আলোটুকু কী ও অফিস যাবার সময় নিয়ে যায় ? ওর অফিসের জানালা দিয়ে সে আলো ওর ভাগেরটা দিয়ে যায় ? অহনাকে একদিন জিজ্ঞেস করতে হবে । অহনা হয়তো সে আলোর কথা জানেই না । সবাইকে সব জানতেই হবে তার কোন মানে নেই । কয়েকদিন ধরে মন খারাপ । কিছু পরকীয়ার গল্প , কিছু মন ভাঙার গল্প শুনছি । কিছু পুরুষ আছে বউকে মানুষ বলেই গণ্য করেনা । তাদের শুধু শো-কেসে রাখার জন্য একটা বউয়ের দরকার হয় । দরকার মত চাবি খুলে তাক থেকে নামিয়ে আদর -ফাদর করে আবার তাকে তুলে রাখবে । আর তারা ঘরে না থাকলে পুতুল তাক থেকে নেমে তাদের ঘরদোর সামলাবে । কি আজব মেন্টালিটি মাইরি । আবার বউ গুলোও কেমন দম দেয়া ঘড়ির মতো । আসল ব্যাপারটা হলো ফিলিংস । অনুভূতি । তুমি কিভাবে তোমার চারদিক দেখবে ,সে দেখার রঙ কিরকম , রুপ কিরকম , সবটাই তোমার নিজের ব্যাপার । তুমি কেন আরেক জনের ইচ্ছা অনিচ্ছার বলি হবে ?

কোন ঘটনাটা যে আকস্মিক ,সেটার বোধ হয় সঠিক সংজ্ঞা হয়না । ইমোশনাল হয়ে কোন সম্পর্কে জড়ানোটাও কোন কাজের কথা হয় না । দীর্ঘদিনের অনভ্যাস নিকটতম সম্পর্কেও মরচে ধরিয়ে দেয় । জানুয়ারি শেষের দিকে । অতিথি শিল্পীর ভূমিকায় শীত এখন ঢাকায় তার স্বল্পকালীন দাপট দেখাচ্ছে ।অহনাদের বাড়ীর সবাই বেশ শীত কাতুরে তবে আমার শীতবোধ একটু কম । সারা বছরই আমার ফ্রিজের পানি খেতে হয় । রাস্তায় নামতেই মনটা ভালো হয়ে গেল । চমৎকার এক ঝকঝকে দিন ফুটে আছে বাইরে । শীতের রোদের রঙ এত নরম ,এত সোনালী হয় ! এ রকম দিনে মন খারাপ করে থাকাই যায় না । সূর্য হেলে পড়েছে । প্রথম বিকালের সাদাটে সূর্য । ক্রমশ তাপ ফুরিয়ে আসছে । তবু শেষবারের মত ভাস্বর । আমার মুখে সেই পড়ন্ত বেলার রোদ । উল্টোদিকের ফুটপাতে ভিখারি পরিবারের শিশুরা উদ্দাম ছোটাছুটি করছে । রাস্তায় অবিশ্রান্ত পথচারীদের আসা যাওয়া । আসাদগেট নিজস্ব নিয়মে শব্দময় । শীতের সেলের বাজার গমগম করছে দুদিকের ফুটপাতে । যার সাথেই দেখা হচ্ছে বলছে -ইউ আর লুকিং সিক । টেক সাম রেস্ট ।

আমার বিশ্রাম ? আমার বিশ্রাম কোথায় ? বিশ্রাম ,অবসর শব্দ গুলো কবেই তো মুছে গেছে আমার অভিধান থেকে । সেই গোয়ালপট্রির চেম্বার দিয়ে শুরু ছাব্বিশ বছর বয়সে । তারপর আর কোনদিন দাঁড়াবার সময় পেলাম কোথায় ? আমি কোনদিনই স্রোতের মানুষ হতে চাইনি । স্রোতের মানুষ ভাসতে ভাসতে চড়ায় আটকে গেলে আটকেই থাকে । স্রোতের সঙ্গে নয় আমি চেয়েছি আমি যেদিকে যাব স্রোতকেও নিয়ে যাব সেদিকে । হায় রে মানুষের স্পর্ধা !

যতই এগিয়ে যেতে চাইছি লোক পেছনে টেনে ধরছে । কোন মানুষই শুধু স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকতে পারেনা । নিজের মত করে আরেকবার জীবনটাকে গড়ে তুলতে চাওয়া অন্যায় ? অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে সারা জীবন আপস করে চলতে হলে তার পরিণতি কি হয় আমি জানি । দু’ বছর আগে আমাকে সর্বশান্ত আর নিঃস্ব করে দিয়েছিল একদল মানুষ ,তাদের লোভ লালসা চাপিয়ে দিয়ে আমাকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছিল । আমি তো সেই পুরনো দুঃখ আঁকড়ে ধরে বসে থাকিনি । একটাই তো মানুষের জীবন । সেটাও যদি অন্যের অপরাধের বিচার করতে গিয়ে , প্রতিশোধ নিতে গিয়ে শেষ করে ফেলি তবে আমার রইলো কি ? সুক্ষ্ম সর্ষে দানার মত কষ্ট বুকে নিয়ে ফিরছি ,চলছি আর বেঁচে আছি । কি ভয়ানক এক অন্তর্দাহের পাহাড় বুকে নিয়ে আমি চলছি সে কেবল আমি জানি । প্রতিটি মানুষই কোন এক নির্দ্দিষ্ট বিন্দুতে এসে নিজের কাছেই অসহায় ।জীবন তো একটাই । সেই জীবন কে কত ভাবেই না ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে মানুষ । জীবনের মানে খুঁজছে । নিজেদের মতো করে । জীবনে যাদের কেই বেশী প্রায়রিটি দিয়েছি তারাই ঠকিয়েছে আমাকে । এখন যারা ঠকাচ্ছে তাদের ও প্রাওরিটি দিয়েছি । আমার ঠকা অবশ্য এমন নতুন কিছু নয় । ওরা আমায় ঠকাচ্ছে না বরং নিজেরাই ঠকছে ।

এ জগতে সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে সততার সাথে কাজ করা । চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু পারছি কি ? লোক টেনে হিচড়ে অসততার পঙ্কিল পথে ঠেলে দিতে চাইছে । টিকে থাকতে পারছি কই ? অহনা আসতে এখনো ঘন্টা দেড়েক বাকি । ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম । দাঁড়িয়ে আছি দাঁড়িয়েই  আছি । পৃথিবী শীতল হচ্ছে ক্রমশ । বায়ুমন্ডলে পাতলা কুয়াশার পর্দা । কম্পাউন্ডের বাইরে অত্যুজ্জ্বল রাস্তার বাতি , দুর থেকে তাও যেন ধোঁয়া ধোঁয়া । অহনা সত্যিই বড় সাদা মনের মানুষ । মালিন্যহীন । সংকীর্ণতাবিহীন । এ বয়সে একটা নিজের ঘর নিজের গাড়ী নেই বলে কোন আপসোস নেই বরং পাঁচ জনের কাছে নিজের স্বামীর কথা গর্ব করে বলতে ও ছাড়ে না । চিত্ত বিক্ষেপ ঘটলে মানুষ অনেক সাধারণ জিনিসও ভুলে যায় । রবিনের শ্রাবণে যাওয়ার কথা ছিল আমি ভুলেই বসে আছি ।

সকালে খবরের কাগজ দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভয়ঙ্কর বীভৎস এক খবর । মীম নামের ছোট এক কিশোরী টি এস সি শহীদ মিনারের আশে পাশে ফুল বিক্রি করতো । ওইতো কয়েকদিন আগেও অহনা আমি স্বপন ভাইয়ের দোকানে বসে অপেক্ষা করছি আকরাম ভাইয়ের জন্য ,মেয়েটা এসে বলল মামা একটা ফুল দেই ? সেদিন নেইনি ফুল , বলেছি আজকে নিব না রে । একটা হাসি দিয়ে আস্তে আস্তে চলে গিয়েছিল মীম ।আজ নাকি শহীদ মিনারের পেছনে তার বিবস্ত্র লাশ পাওয়া গেছে ! মেয়েটার মুখটা ভেবে প্রচন্ড বিমর্ষ বোধ করছি । গভীর রাতে পুলিশ তার দেহ উদ্ধার করেছে । আর কত ? আলজাজিরা একটা ডকুমেন্টরী করেছে সেনা প্রধান আর তার ভাইদের নিয়ে সেটা নিয়ে দেশজুড়ে কানাকানি চলছে । পক্ষে বিপক্ষে সোস্যাল মিডিয়ায় গমগম করছে মতামত ।আমার কোন মন্তব্য নেই ,কারণ বিষয় গুলো এমন নয় যে হুট করে কিছু ঘটেছে । এগুলো তো ওপেন সিক্রেট ,এ তো নতুন বোতলে পুরাতন মদ বিক্রির মতো , মাল ও আগের কোম্পানিও আগের কেবল বোতলটা নতুন । গ্রামের চায়ের দোকানের কালু চাচা কিংবা জসিমুদ্দিরা আল জাজিরার চেয়ে বেশি জানে ।গত বারো বছরে এর চেয়ে চটকদার আরো অনেক গল্প লোক জানে । সবচেয়ে বড় গল্প তো তাহাজ্জুদের পরে ভোট ।

কত রকমের অসংগতি ! মানুষের জীবনের গল্প গুলো কত অদ্ভূত ধরনের ।বেশ অভিজাত ঘরের একজন রোগী আসলেন , ভদ্রমহিলা এক সময় লেখালেখি করতেন ।সন্তান সন্ততি না হওয়ায় বেশ আগেই ভদ্রমহিলার সাথে স্বামীর ডিভোর্স হয়ে যায় । ভদ্রমহিলার বয়স পঁয়শট্রি ।নিজের বোনের ছেলেকে একরকম নিজের সন্তানের মতই মানুষ করেছেন । এখন ছেলে চাকরী করছে আলাদা থাকতে হচ্ছে। ভদ্রমহিলা একাকীত্বের হতাশায় এলোমেলো আচরণ করছেন । কার্ডিয়াক কিছু কম্প্লিকেশন আছে তাই স্বজনরা নিয়ে এসেছেন । উনার গল্প শুনছি ,বেশ মায়া অনুভব করছি ।একাকীত্ব আসলেই মানুষকে কুরে কুরে খায় ।মস্তিষ্কে চিন্তার জট পাকিয়ে যায় হয়তো ।ভদ্রমহিলার স্মৃতিতে আচ্ছন্নতা ,চারপাশের আলোতে ও হয়তো ।উনি বললেন উনার মাথা জুড়ে দাপাদাপি করে নিঃশব্দ শব্দরা ।ভদ্রমহিলা চলে গেলেন । আমি ঝিম ধরে বসে আছি ।এই মুহূর্তে এই মুহূর্তটি ছাড়া আর কিছু নেই ।স্মৃতি নেই , আলো কিংবা অন্ধকার ও নেই । ভবিষ্যৎ ও নেই । কিংবা সমস্তই আছে শরীরের সংস্পর্শে ।অনুভূতির ভিতরে ।এখনও যারা জীবিত কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো কেউ কেউ মৃত হয়ে যাবে । কেউ কেউ হয়তো নিশ্চিত সংবাদও হবে ,হয়তো নয় । মীমের মৃত্যুর মতোই হয়তো কোন মূল্য থাকবে না কোন কোন মৃত্যু।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews