1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ১০:১৫ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
পলাশবাড়ীতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, সেনা হস্তক্ষেপে যাত্রীদের অর্থ ফেরত পায়ের ব্যথা যেসব রোগের লক্ষণ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর হরমুজ প্রণালী: ইরানের এক অদৃশ্য কিন্তু কার্যকর অস্ত্র ঈদের দীর্ঘ ছুটি শেষে আগামীকাল রবিবার অফিস খুলছে সোনাতলায় অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি পরিবারকে শিল্পপতি রিপনের আর্থিক অনুদান প্রদান মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে ১৬ ‍দিন পর আন্দোলন স্থগিত করল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ত্রিশাল উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগ জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে মার্কিন ভেটো

ডা. মোজাহিদুল হক এর ধারাবাহিক গল্প ৪২

সাহিত্য ডেস্ক
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০২২

জীবনের গল্প

-ডা.মোজাহিদুল হক

পর্ব-৪২

শহরের ত্বকে শেষ বিকালের নরম আলো । এ আলোয় যত না আবেশ ,বুঝি বা ততটাই বিষাদ । আলোটুকু মুখে মেখে চারুকলার গেটে এসে দাঁড়িয়ে আছি । চোখ চালিয়ে দেখছি নানান নাটকের পোস্টার , কত রকমের প্রতিবাদী পোস্টার ,ব্যানার । বাঁয়ে পুরনো বিল্ডিং এর দিকে খানিকটা বাতাস ভাসিয়ে দিলাম । বিল্ডিংটা টের পেল কি দীর্ঘশ্বাসটা ? সুর্য এখনো ডোবেনি পুরোপুরি , বাতি গুলো কেমন ফ্যাটফ্যাট করছে । তবে পরিবেশ টা বেশ । এই শহর কী দ্রুত বদলে যাচ্ছে । পায়ের তলায় শুকনো পাতা ভাঙছে মড়মড়। শুকনো পাতারাও কি বুঝল কিছু ? দুর , আমি নিজেই তো একটা শুকনো পাতা । জীবনের গাছ থেকে খসে পড়িনি ,এই যা । জীবনই যার দীর্ঘশ্বাসের খবর রাখে না ওই পুরনো বিল্ডিং কিংবা ঝরা পাতারা তার সমব্যথী হবে কেন ?  রোজ কত কিছু বদলে যাচ্ছে কেবল আমারই কোন বদল ঘটল না । একটা দম দেয়া ঘড়ির মধ্যে জীবনটা আটকে রইলো । চার পাশে কত রঙের খেলা ! একদিন অহনা বলেছিল ,জীবন তার নিজের পথেই চলে , শূন্যতা আপনাআপনি ভরাট হয়ে যায় । অহনা কি করে জানবে ,ভরাট তো হয় তবে চিহ্নটুকু তো মোছে না । পুরনো মূল্যবোধ আঁকড়ে থাকা এই আমি ক্রমশ বাতিলের তালিকায় চলে যাচ্ছি ।আজকাল মূল্যবোধ নাকি চলে না টাকাই সব । হাটতে হাটতেই কাটাবন মোড় পার হচ্ছি ।আকরাম ভাইয়ের অফিসে যাব ।

বাইরে একটা ফুরিয়ে আসা বিকেল । ম্লান সন্ধ্যা নামছে মন্থর পায়ে । মাঘ মাস শেষ হয়ে এল । বাতাসে বাষ্প নেই তেমন , এখনও হাওয়া কেমন শুকনো শুকনো । মানুষ খুব অসহায় বোধ করলে কোনও একটা আশ্রয় খোঁজে । দেহের ধকল ,শরীরপাত , এগুলো তাও দেখা যায় কিন্তু মনের ক্রমশ ক্ষয়ে যাওয়া কে দেখে ? সেদিন একজন বললো স্যার একটা গাড়ী কিনে ফেলুন । গাড়ী এ জনমে আর হয়তো হবেনা । আসলে কেনাটা বড় কথা নয় মেনটেইন করাটাই ঝামেলার । ড্রাইভারকেই তো খাইয়ে পরিয়ে পঁচিশ ত্রিশ দিতে হবে ,তারপর গ্যারেজ ভাড়া , গাড়ীর মেনটেইনেন্স , চোখ বন্ধ করে সত্তর আশি হাজার লাগবে ।তাও স্রেফ চেম্বারে আসা যাওয়ার জন্য । ছুটির দিনে বউ নিয়ে প্রমোদভ্রমনে যাব ,এমন শৌভাগ্য করে তো আসিনি আমি । মানুষের রোগ ছুটির দিনে একটু বেশীই মনে হয় বেড়ে যায় । কোথাও ঘুরতে যাব অম্নি চেম্বারে রোগী এসে বসে থাকবে ।বন্ধুরা শহরের উপকন্ঠে জায়গা জমি কিনছে । ভবিষ্যৎ গোছাচ্ছে আর আমি বর্তমান গোছাতেই কুল কিনারা পাচ্ছি না । আমারও ইদানিং সাধ হয় নদীর ধারে একটা বাড়ী হবে আমার । সূর্য যখন ডুবে তখন নদী কেমন লাল হয়ে যায় , ছাদে বসে সে লালে ডুবে থাকবে আমার চোখ ,আর সারাদিন জলের ছলাতছল শব্দ …, । নিরালায় , নির্জনে । দীর্ঘ ম্যারাথন দৌড়ের পর যেমন একটা বিরামভূমিতে পৌঁছাতে সাধ যায় মানুষের ,মাঝে মাঝে আমার দুচোখে ভাসে এক প্রশান্ত ছবি ।

গত সন্ধ্যায় এক ভদ্রমহিলা চেম্বারে আসলেন । মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজিজ নিয়ে । ভদ্রমহিলার ডিপ্রেশনের কারন বের করতে চাইছিলাম । উনার বয়স আটত্রিশ । ভদ্রমহিলা যা বললেন তা পঁচে গলে যাওয়া সমাজের একটা স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি । ডাক্তার আমাদের সমাজ এখনও একা একটা মেয়েকে সুস্থভাবে বাঁচতে দেয় না । বাঁচতে যে সত্যি দেয়না তা আমি জানি । ভদ্রমহিলা বলেই যাচ্ছেন , হাজবেন্ড মারা যাওয়ার পর থেকেই ঘাড়ের কাছে বিন বিন করছে অজস্র হিতাকাঙ্খীর দল । আহা ,তোমার কি কষ্ট ! আহা , তোমার কথা ভেবে আমার রাতে ঘুম হয়না ! আহা ,চলো কোথাও বেড়িয়ে আসি রাত দুপুরে বাসার দরজায় টোকা পড়তে শুরু করল । সারারাত মেয়েকে জড়িয়ে কাঁটা হয়ে থাকতাম । শেষে বাসা পাল্টালাম । চলে এলাম  এই এলাকায় । শেয়াল কুকুরের উৎপাত হয়তো নেই তবে চিল শকুন উড়ছে প্রচুর । যখন তখন ডানা মেলে অফিসের বস নেমে আসছেন গায়ের কাছে ,ফিস ফিস করছেন । ষাট বছরের বুড়ো পাখিটা স্নেহ দেখানোর ছল করে টুকটাক ছুঁয়ে নিচ্ছে । তা উনি না হয় অনাত্মীয় আটত্রিশ বছরের আধাবেওয়ারিশ বিধবাকে নিয়ে এরা তো একটু ঘাঁটাঘাঁটি করতে চাইবেই । কিন্তু নিজের আত্মীয়রা ! হঠাৎ হঠাৎ সন্ধ্যে বেলায় চলে আসছেন কেউ কেউ । বাসায় হাত -পা ছড়িয়ে বসে যাচ্ছেন । শতবার শোনা পারিবারিক ঘোঁট হাজার বার করে শুনিয়ে সময় পার করছেন । তারপর একসময় ঘড়ি দেখে বলছেন , এতোরাতে একা একা ফেরাটা কি উচিত হবে ? বরং আজ থেকেই যাই ! ভদ্রমহিলা কাঁদছেন ,আমি হতভম্বের মতো প্রেসক্রিপশন ফাইল নিয়ে বসে আছি ।কি লিখব ঔষধ ? প্রেসক্রিপশনের পাতাটা শূন্য পড়ে থাকে । হায়রে মানুষ !

আকাশে এখন অনেক তারা । চাঁদ ওঠেনি বলে তারারা যেন আরও বেশি চমক মারছে ।একটা সিগারেট ধরিয়ে বাইরে এসে দাঁড়িয়েছি । অনেক রকম এতাল বেতাল চিন্তা ঘুরছে মাথায় ।বাসার পাশে একটা বড় সড় মেহগনি গাছ দাঁড়িয়ে আছে । ভীষণ ঘণ পাতা গাছটার । পাশেই পাঁচিল । নির্জনতাই নির্জনতা ওখানে । আমাদের গ্রামের বাড়ীর সামনে একটা বেশ বড় পুকুর আছে । ছোট বেলায় গ্রামের বাড়ীতে মন খারাপ হলে পুকুরের জলে নিজের মুখের ছায়া দেখতাম বসে বসে । কত দিন দেখা হয়না সে মুখ ! মাথাটা ধরে গেছে । একটু কফি খেলে মন্দ হতোনা । অহনা ঘুমিয়ে পড়েছে । রাতে বিছানায় শুয়ে বুকে অভিনব এক বোধ চারিয়ে যাচ্ছিল । কষ্ট নয় ,আনন্দ ও নয়,এ তার থেকেও গহীন অনুভূতি । যেন আমার শৈশব কৈশোর ফিরে আসছে আবার । যেন পুকুরের জলে পা ডুবিয়ে নিজের মুখের ছায়া দেখছি আমি । আমার ঘুম ভাঙার একটা নির্দিষ্ট সময় আছে । শয্যাত্যাগের পর নিদ্রার রেশ কাটাই মিনিট পাঁচ সাত । ইদানিং শরীরের মধ্যপ্রদেশে চর্বি জমতে শুরু করেছে , কিছুদিন ধরে ভোরে উঠে হাঁটার কথা ভাবছি । হয়ে উঠছেনা । গড়িমসি । আজ অহনা এখনো আসেনি । আধ ঘন্টার মধ্যেই পৌছাতে হবে চেম্বারে । বাইরে এক মনোরম সন্ধ্যে । দিনের তাপ মরে শিরশিরে বাতাস বইছে । কাঁপছে গাছের পাতারা ।বাসা থেকে চেম্বার একটু দুর তো আছেই , তার ওপর ট্রাফিক জ্যাম ।

দুপুরে অহনা চলে যাওয়ার পর নিজের ঘরে এসে শুয়েছি , চোখ বুজেছি ওমনি কত যে টুকরো টুকরো স্মৃতির ভিড় ! আসছে যাচ্ছে ,আসছে ,যাচ্ছে ।জীবন একটা রাসায়নিক বিক্রিয়া ।এক জায়গা থেকে শুরু হয় , একটা পয়েন্টে গিয়ে তার সমাপ্তি ঘটে । কত কত স্মৃতি । কলকাতার স্মৃতি , মুম্বাইয়ের স্মৃতি , কত স্থানের কত দেশের স্মৃতি । স্মৃতির জট  মস্তিষ্কের পরতে পরতে । দুপুরে লাঞ্চ সেরে অহনা যাবার পর ধুন্ধুমার জ্বর এলো ,চোখ বুজলেই জ্বলুনি হচ্ছে । অহনা যখন এলো তখন জ্বর ছিলনা । ব্যালকনির দরজা খোলা হু হু করে বাতাস শরীর কাঁপিয়ে দিচ্ছে । উঠে বন্ধ করব সে শক্তিটুকুও অবশিষ্ট নেই । হায় কপাল ! গা টা গুলোচ্ছে ,মাথাটাও বড্ড যন্ত্রণা হচ্ছে । জাপান থেকে ডা. শরীফ ফোন করলো । নানান কথা হলো । নিজের পিএইচডির টপিক নিয়ে অনেকক্ষণ কথা হলো । দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে কথা বললেন । জাপানের স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বললেন । দেশ নিয়ে ভাবনার কথা বললেন । দিনাজপুরের পার্বতীপুর্রের এক শিশুর কথা বললেন যাকে চার বছর বয়সে ধর্ষন করেছিল কিছু পাষন্ড । তার যৌনিপথ ব্লেড দিয়ে চিরে বড় করে রেপ করেছিল পাষন্ডরা ।এখন তার বয়স নয় বছর। শারীরিক প্রচুর সমস্যা নিয়ে বেঁচে আছে মেয়েটা । তার পাশে দাঁড়ানো নিয়ে কথা হলো । লাইন কেটে দেয়ার পর মনে হল উনাকে আমার একটা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা শেয়ার করা হয়নি । রাস্তাঘাটে ভবঘুরে পাগলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে । অনাদর অবহেলায় বিনা চিকিৎসায় ঝরে পড়ছে হাজারও সম্ভাবনাময় জনশক্তি । এদের সঠিক চিকিৎসা ও পুর্ণবাসন নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করতে চাই আমি । চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে এদের প্রশিক্ষিত করতে পারলে দেশ এগুবে । জানি না পারব কিনা তবে কাজটা আমি করতে চাই । মৃত্যুর আগে পাঁচজন মানুষকে সেবা দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে দেশের জনশক্তিতে যোগ করে যেতে পারলেই আমি তৃপ্ত হতাম ।

উত্তরের জানালায় এক ফালি রোদ । কোত্থেকে যে এল আজ । দুপুর গড়ানো অব্দি তো একটা আবছায়া ভাব থাকে পশ্চিমমুখো এ ঘরটায় । আজ যেন আলো-আঁধারীটা নেই । চিলতে রৌদ্দুরই কি শুষে নিচ্ছে আবছায়া ?দেয়ালে ঝুলানো অহনার ছবি । আলো পড়ে রঙিন ছবি কেমন বিবর্ণ যেন ঝাপসা ঝাপসা ।হঠাৎ আব্বার মুখটা খুব মনে পড়ছে ।আব্বা মারা যাওয়ার আগে একদিন বিকালে কেন জানি বলেছিলেন ,একটা কথা বলি শোন , যতদিন বাঁচবি ততদিন সৎপথে টাকা রোজগার করবি । কালো পথে যা টাকা আসে তা অশান্তি বয়ে নিয়ে আসে । যতদিন বাঁচবি ততদিন অনেক মানুষের সংস্পর্শে আসবি । তাদের কারও কারও সঙ্গে তোর অনেকরকম সম্পর্ক তৈরী হবে ।কিন্তু নিঃশ্বার্থ হয়ে তোর সুখ চিন্তা করবে এমন মানুষ তাদের মধ্যে খুব কমই পাবি । আবার অনেকের জীবনে এমন মানুষ আসেই না । চোখ খুলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম । জানালার বাইরে তাকালাম ।সন্ধ্যে হয়ে গেছে চেম্বারে যাওয়া দরকার । এক অদ্ভুদ খারাপ লাগা থেকে কিছুতেই মুক্ত হতে পারছি না । এতো খারাপ কেন লাগছে ? জীবন কি ফুরিয়ে যাচ্ছে ? জীবন আর কত বড় ? কেবলই কি কিছু মাসের যোগফল ?

কিছু কিছু মানুষ হঠাৎ চমকে দেয়ার অপরিসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় । অহনা সে সমস্ত মানুষদের একজন ।কাল পহেলা ফাল্গুন । সকালে ঘুম থেকে ওঠার আগেই অহনা অফিসে চলে গেল । সাড়ে ন’টায় ঘুম ভাঙলো । বিছানায় এপাশ ওপাশ করে নামতে যাব ওমনি দেখি একটা চিরকুট

– তুমি গ্রীষ্মের প্রখর রোদে হঠাৎ ভেসে আসা মৃদু বাতাস    ; তুমি বর্ষার মুষল ধারে বৃষ্টি পরার শব্দ

শরতের সাদা মেঘ , নীল আকাশের স্বচ্ছতা তুমি;

তুমি হেমন্তের মুগ্ধতা শিউলী ফুলের ঘ্রাণে ;

শীতের রোদে শিশির ভেজা ঘাস তুমি ; তুমি বসন্ত ।

চিরকুটের নীচে দু’জনের  জন্য ম্যাচিং করা শাড়ী আর পাঞ্জাবী । তক্ষুনি মনে হল বসন্ত এসে গেছে । শুভ পহেলা ফাল্গুন প্রিয় , শুভ পহেলা বসন্ত প্রিয় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews