1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৮ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :

ধানমণ্ডি আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষক অবাঞ্ছিত

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ৩ জুন, ২০২২

রাজধানীর ধানমণ্ডি আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন আহম্মেদ এবং দুই শিক্ষক তৌফিক আজিজ চৌধুরী ও তরুণ কুমার গাঙ্গুলীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা। একই সঙ্গে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলেজের ক্লাসসহ সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীরা। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা জানান, কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন আহম্মেদ ২০১৭ সালের মার্চ মাসে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান।

অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম, অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। অধ্যক্ষ ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক তৌফিক আজিজ চৌধুরী, বাংলা বিভাগের শিক্ষক তরুণ কুমার গাঙ্গুলী, গণিত বিভাগের শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামানসহ আরো কয়েকজন শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে তাদের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের মতো পরিচালনা করেছেন। ওই শিক্ষকরা অধিকাংশ সময় শ্রেণিকক্ষে সময় না দিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে বিভিন্ন অবৈধ বা অনৈতিক কাজ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেন ও তা সম্পাদন করে থাকে। তারা বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের ডেকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা, ভর্ৎসনা করা, কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া, চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার হুমকি দিয়ে প্রতিষ্ঠানে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন আহম্মেদ এবং দুই শিক্ষক তৌফিক আজিজ চৌধুরী ও তরুণ কুমার গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের ও প্রতিষ্ঠানটিতে নানা আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে। কিছুদিন আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তে এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে।

শিক্ষকরা আরো বলেন, অধ্যক্ষ কলেজে যোগদানের প্রথম বছরেই তার অনৈতিক কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ এনে চারজন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করেছেন, একাধিক কর্মচারীকে চাপ প্রয়োগে চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন এবং আরো অনেক শিক্ষক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুতির হুমকি দিচ্ছেন। আগে তিনি যেসব কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন, প্রতিটি কলেজেই দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের কারণে তিনি অভিযুক্ত ও তিরস্কৃত হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ডক্টরেট ডিগ্রির সার্টিফিকেট ক্রয় করে তা কলেজে জমা দিয়ে উচ্চপদে পদোন্নতি ও বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন অধ্যক্ষ। তার সব অপকর্মের সহযোগী শিক্ষক তৌফিক আজিজ চৌধুরী ২০১৩ সালে সাচিবিক বিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। নিয়োগের সময় না দেখালেও পরবর্তী সময়ে তিনি ‘উলানিয়া মোজাফফর খান ডিগ্রি কলেজ, মেহেন্দীগঞ্জ’ থেকে ১৪ বছর চার মাসের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছেন।

পরবর্তী সময়ে জানা যায়, একই সময়ে আলৌকিকভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর ও ‘উলানিয়া মোজাফফর খান ডিগ্রি কলেজ’-এ তিনি চাকরি করেছেন। গভর্নিং-বডির কিছু সদস্যের যোগসাজশে চাকরির আগে অভিজ্ঞতা ও প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে প্রথমে সহকারী অধ্যাপক ও আবার তিন বছরের ব্যবধানে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। তিনি বর্তমান অধ্যক্ষের যোগদানের পর থেকে অবৈধ পন্থায় গভর্নিং-বডির ‘শিক্ষক প্রতিনিধি’ সদস্য হিসেবে যোগ দিয়ে সব রকমের দুর্নীতি ও অনিয়মগুলো আড়াল করায় সহযোগিতা করেছেন।

প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনিয়ম তুলে ধরে শিক্ষকরা বলেন, শিক্ষার্থীদের লেনদেনের জন্য প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলেও ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহারে অধ্যক্ষ সাহেবের ও তার সহযোগীদের বেশ অনীহা দেখা যায়। ইদানীং শিক্ষার্থীদের থেকে প্রতিষ্ঠানের পাওনা অধ্যক্ষ সাহেবের মালিকানাধীন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আদায় করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০২২ খ্রিস্টাব্দের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময় ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করা হয়।আর্থিক অনিয়মের খাতগুলো তুলে ধরেন শিক্ষকরা। সেগুলো হলো- নতুন ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের পোশাক বাণিজ্য, এইচএসসি পরীক্ষার মডেল টেস্ট, বোর্ড ব্যাবহারিক পরীক্ষা, উন্নয়নের নামে কলেজ স্থায়ী ফান্ড ভোগ, কলেজ হোস্টেলের টাকা আত্মসাৎ, শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্য, অভ্যন্তরীণ ও বাইরের পরীক্ষার খরচ, রিটেক পরীক্ষা, জরিমানা, পুনঃভর্তি ইত্যাদি।

শিক্ষকরা জানান, একাদশ শ্রেণির নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় বাধ্যতামূলকভাবে বিনা রসিদে নগদ টাকার বিনিময়ে কলেজের ‘ইউনিফর্মের কাপড় ও জুতা’ দেওয়া হয়। নিম্নমানের কাপড় ও জুতার কারণে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে এগুলোর বিষয়ে প্রায়ই অভিযোগ করে। এ খাত থেকে বছরে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা অর্জিত হয়, যা অধ্যক্ষসহ তৌফিক আজিজ চৌধুরী, তরুণ কুমার গাঙ্গুলী, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ভাগ-বাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করেন আর সাধারণ শিক্ষকদের সারা বছর শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কাছ থেকে অভিযোগ শুনে সহ্য করতে হয়।
প্রত্যেক বছর বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দেওয়ার সময় শিক্ষার্থীপ্রতি ২০০ টাকা করে অনৈতিকভাবে কোনো রসিদ ছাড়া আদায় করা হয়। বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিক ব্যাবহারিক পরীক্ষার সময় নিজ কলেজ ও বহিরাগত কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘ভালো নম্বর পাইয়ে দেওয়ার’ কথা বলে শিক্ষার্থীপ্রতি যথাক্রমে ২ হাজার ৩০০ টাকা ও এক হাজার ৬০০ টাকা করে নেন। এ রকম অনৈতিকভাবে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে সহায়তা করাতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোবাশ্বের হোসেন ও জীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান সাইফুলকে বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে অধ্যক্ষ তার সুনজরে থাকা শিক্ষকদের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দিয়ে টাকা আদায় করেছেন।

২০২১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ব্যাবহারিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের টাকা গ্রহণের সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডে বিষয়টি জানাজানি হলে চাপের মুখে টাকা ফেরত দিতে হয়েছিল। তরুণ কুমার গাঙ্গুলী, তৌফিক আজিজ চৌধুরী, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কলেজের ফান্ড ব্যবহার করে নির্মাণ বা সম্প্রসারণ করা হোস্টেলের ছাত্রদের কাছ থেকে আদায়কৃত সব অর্থ কলেজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে নিজেরা আত্মসাৎ করেন। কলেজের হোস্টেলের আয়-ব্যয়ের কোনো স্বচ্ছ হিসাব নাই। শিক্ষার্থীরাও সেখানে বিভিন্ন অভাব-অভিযোগে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করেন। শিক্ষকরা জানান, এসব বিষয় তারা গভর্নিং বডির সদস্যদের জানালেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেন না।

সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন আহম্মেদ, শিক্ষক তৌফিক আজিজ চৌধুরী, শিক্ষক তরুণ কুমার গাঙ্গুলীকে কলেজে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন শিক্ষকরা এবং গভর্নিং বডি তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews