রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতি হত্যা মামলার আসামি সুমন শিকদার ওরফে মুসাকে ওমান থেকে দেশে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ পুলিশের তিন সদস্যের একটি দল গত রবিবার ওমান পৌঁছেছে। মুসা সেখানে ইন্টারপোলের হাতে আটক আছেন।
মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) এবং পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি ডেস্কের সূত্রে জানা গেছে, ওমানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই।
তাই ইন্টারপোলের নিয়ম মেনে দুই দেশের পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সমন্বয়ে মুসাকে হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার মুসাকে নিয়ে পুলিশের প্রতিনিধিদলটির দেশে ফেরার সম্ভাবনা আছে।
আলোচিত এই মামলায় আরো ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। তাঁদের মধ্যে নাসিরউদ্দিন মানিক নামের এক আসামি ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এঁদের নিয়ে ডিবি ও র্যাবের হাতে মোট গ্রেপ্তার হয়েছেন ১২ আসামি। আগে মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ নামের আরেক আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল।
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম বলেন, ওমানে মুসাকে আটকের পর দুই দেশের এনসিবির মাধ্যমে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
ডিবির সূত্র জানায়, গত ৩০ মে পুলিশ সদর দপ্তর ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহিদুর রহমান, এডিসি রফিকুল ইসলাম ও পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখার সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দীনকে ওমান যাওয়ার অনুমতি দেয়। গত রবিবার তাঁরা ওমানের রাজধানী মাসকাটে পৌঁছান। তাঁরা সেখানে এই আসামি হাতে পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মপ্রক্রিয়া শেষ করছেন।
সূত্র জানায়, কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর ওই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে মুসার নাম আসে। একসময় মিরপুরকেন্দ্রিক সন্ত্রাসী মুসা অপরাধজগতের পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ-প্রকাশের অনুগত বলে পরিচিত। বিদেশে থাকা আরেক সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের কথা শোনা যায়। মুসার বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় ১০টি এবং মতিঝিল থানায় একটি মামলা আছে। হত্যা, অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজির আইনে এসব মামলা করা হয়।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, টিপু হত্যার পরিকল্পনা সাজিয়ে ঘটনার আগে ১২ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই শহরে চলে যান মুসা। সেখান থেকে যান ওমানে। মতিঝিল-শাহজাহানপুরের স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগী পরিবারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য পায় ডিবি পুলিশ। একই তথ্য পেয়েছে র্যাবও। তথ্য নিশ্চিত হয়ে গত ৯ মে ডিবি পুলিশ সদর দপ্তরকে তা অবহিত করে চিঠি দেয়। চিঠিতে তাঁকে গ্রেপ্তারে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। ১০ মে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা ওমানের এনসিবিকে মুসার তথ্য দিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তারের অনুরোধ করে। ১৭ মে ওমানের এনসিবি মুসাকে আটকের তথ্য জানায়। এরপর মুসাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইন্টারপোলের নিয়ম আনুযায়ী, তথ্য-প্রমাণে নিশ্চিত হলে জোড়া খুনের মামলায় মুসাকে বাংলাদেশ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
পুলিশ সূত্র জানায়, মুসার পাসপোর্টের নাম সুমন শিকদার। তাঁর বাবার নাম আবু সাঈদ শিকদার। মা জরিনা আক্তার। স্ত্রী নাসিমা আক্তার। চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার পরাইখারা কইখাইন গ্রামে তাঁর বাড়ি।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট