লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম সুন্দ্রাহবি। সেই গ্রামের এক যুবক রোবট তৈরী করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার তৈরীকৃত রোবট হোটেল ও রেস্টুরেন্টে হোটেল বয় হিসেবে কাজ করবে। রোবট নিয়ে বহুল আলোচিত ভারতীয় হিন্দি ছবি চিট্টির নামানুসারে তিনি তার আবিস্কারকৃত রোবটটির নাম দিয়েছেন ”চিট্টি”। আহসান হাবিব নামের ওই যুবক কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম সুন্দ্রাহবি গ্রামের মৃত মজু মিয়ার ছেলে । তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার সরকারী করিম উদ্দিন পাবলিক কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী।
হাবিবের পরিবার ও এলাকাবাসি জানায়, উপজেলার তুষভান্ডার রমনীমোহন মেমোরিয়াল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় পড়াকালীন সময়ে ২০১৭ সালে স্কুল পর্যায়ে বিজ্ঞান মেলায় রোবট তৈরী তৈরী করে জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেন হাবিব। তখন থেকেই রোবট তৈরী করার নেশা পেয়ে বসে তাকে।২০১৭ সালে তার বাবা মনজু মিয়া মারা যান। বাবা মারা যাবার পর আর্থিক অনটনের কারনে দুই বছর বন্ধ থাকে তার রোবটের কাজ। দরিদ্র ঘরের সন্তান হাবিব হাল ছাড়েননি।সকাল থেকে রাত পযন্ত সারাদিন টিউশনি করে সংসার ও তার লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করেন। টানাটানির মধ্যে কিছু সঞ্চয় ও ধার-দেনা করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে তিনি এই রোবট তৈরী করেছেন। ইউটিউব দেখে ২বছরের চেষ্টায় ১লাখ টাকা ব্যয়ে তিনি রোবটটি তৈরী করেছেন। হাবিবের রোবট সাবলীল ভাষায় কথা বলতে পারে। কমান্ড অনুযায়ী সামনে পিছনে চলাচল ও হ্যান্ড শেক করতে পারে। ট্রেতে পানি বা হালকা ওজনের জিনিস নিয়ে নির্বেগ্নে হাঁটতে পারে তার আবিস্কৃত চিট্টি। হাবিবের রোবট দেখতে দূরদুরান্ত থেকে লোকজন তার বাড়িতে আসছেন।
হাবিবের মা- খালেদা খাতুন বলেন,ছেলেটা আমার খুব মেধাবী।সে ছোট থেকে হাইস্কুলে বিজ্ঞান মেলায় অংশ নেয়।স্কুলের স্যারদের সহযোগিতায় সে উপজেলা ও জেলায় প্রথম হয়।এরপর সে আরো বেশী করে ঝুকে পড়ে রোবক বানানোর দিকে।এরমধ্যে ২০১৭সালের শেষের দিকে ওর বাবা মারা যান।সংসারে হাল ধরার মতো কেউ নেই। তখন সে থমকে যায়। দুই বছর এগুলো বানানো থেকে সরে গিয়েছিল। অভাবের সংসারে সে শুরু করে টিউশনি।সকাল থেকে রাত পযন্ত টিউশনি করে আবারো শুরু করে রোবট তৈরীর কাজ।রোবট তৈরী করতে টাকার প্রয়োজন।আমার ভাইদের বলে ৪০ হাজার টাকা হাবিবের হাতে তুলে দেই।এরপর সে রোবট তৈরী করে।আমার ছেলেটাকে সরকার অথবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহযোগিতা করলে ছেলেটি আরো অনেককিছু বানাতে পারবে।
তার চাচা সাজু মিয়া বলেন, গ্রামের সবার কাছে হাবিবের মেধার প্রশংসার কথা শুনে আমরা সকলে খুব খুশি। দোয়া করি সে ভবিষ্যৎ এ আরো ভাল কিছু করবে।প্রতিবেশি মজনু মিয়া বলেন, দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া হাবিবের এ কাজে গ্রামের সবাই আমরা ধন্য। সে আমাদের গ্রামের গর্ব। তার এ কাজে আমাদের গ্রামের সুনাম ও সম্মান বাড়বে বলে মনে করি। সেই সাথে হাবিবের এ কাজে সবার সহযোগিতা কামনা করছি। রোবটটি তুষভান্ডার বাজারের ভোজন বিলাস হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট এর জন্য তৈরী করা হয়েছে। যা আগামী সপ্তাহেই উক্ত হোটেলে রোবটটি ডেলিভারী করা হবে বলে জানান হাবিব। রোবটটি দেখতে প্রতিদিন উৎসুক মানুষজন ভীর করছেন তার বাড়িতে ।
রোবট নির্মাতা আহসান হাবীব জানান, আমি স্কুলের বিজ্ঞান মেলায় প্রথম আপডেট কিছু করার লক্ষ্যে রোবট বানাই। এবং সে মেলায় আমি জেলার চ্যাম্পিয়ন হই। মুলত ইউটিউব দেখেই এ কাজে আমি আগ্রহী হই। সে আরো বলেন এ কাজে আমি আমার মা,বড়ভাই, চাচা সবার আন্তরিক সহযোগিতা সব সময় পেয়েছি। আমার এ কাজে আমাকে সবসময় সহযোগিতা করেছে আমার বন্ধু। ভবিষ্যৎতে হাবিব আরো নতুন কিছু বানাতে চায়, সে জন্য সে সবার সহযোগিতা কামনা করে দোয়া চেয়েছেন।
তুষভান্ডার বাজারের ভোজন বিলাস হাইওয়ে হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্টের মালিক নিজাম উদ্দিন বলেন,দোকানে রাখার জন্য রোবটটি বানাতে বলেছি।তাকে কিছু টাকাও দিয়েছি।রোবটটির কাজ শেষের দিকে । রোবটটি হোটেল বয় হিসেবে কাজ করবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ সুবিধা নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামের যুবক আহসান হাবিব রোবট আবিস্কার করেছেন। বিষয়টি আশাব্যঞ্চক। আগামী প্রজন্ম দেশকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।আহসান হাবিবকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হবে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট