উকিল মুন্সীর গান গেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন বারি সিদ্দিকী এবং কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের নাটক ও চলচ্চিত্রের গান গুলো অধিকাংশ উকিল মুন্সীর গানে মানুষের মনের ভেতর জায়গা করে নিয়েছেন।
উকিল মুন্সী মুলত একজন বাঙালি বাউল সাধক। তার গুরু ছিলেন আরেক বাউল সাধক রশিদ উদ্দিন। তার অসংখ্য গানের মধ্যের আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানি রে, সোনা বন্ধুয়া রে এতো দুঃখ দিলে তুই আমারে উল্লেখযোগ্য।
উকিল মুন্সী ১১ জুন ১৮৮৫ সালে নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুড়ির নূরপুর বোয়ালীগ্রামে একটি ধনাঢ্য মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম আব্দুল হক আকন্দ। তার পিতার নাম গোলাম রসুল আকন্দ ও মাতা উকিলেন্নেসা। শৈশবে তিনি ঘেটুগানে যোগ দেন। পরে গজল ও পরিণত বয়স থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বাউল সাধনায় লিপ্ত থাকেন। তার গজল গানের সূত্রপাত হয় তরুণ বয়সে। তার চাচা কাজী আলিম উদ্দিনের বাড়ি মোহনগঞ্জ থানার জালালপুর গ্রামে বেড়াতে যান। সেখানে ধনু নদী পারের এক গ্রামের লবু হোসেনের মেয়ে হামিদা খাতুনের প্রেমে পড়ে যান তিনি। এই প্রেম নিয়ে তিনি লিখেন “উকিলের মনচোর” নামক একটি গান। তার চাচা এই প্রেমের কথা জানার পর হামিদার বাবা সাধারণ কৃষক হওয়ায় তাকে পরিবার থেকে বাঁধা দেন। তিনি বাড়ি ছেড়ে শ্যামপুর, গাগলাজোর, জৈনপুরে ঘুরে বেড়ান। ১৯১৫ সালে জালালপুর গ্রাম থেকে কয়েক মাইল দূরে মোহনগঞ্জের বরান্তর গ্রামের এক মসজিদে ইমামতি ও আরবি পড়ানোর কাজে নিযুক্ত হন। এই সময়ে ইমামতির পাশাপাশি গজল লিখতেন এবং রাত জেগে তা গাইতেন। এতে বিরক্ত হয়ে এক ব্যক্তি পুলিশের কাছে নালিশ করে। পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যেতে আসলে উকিল পুলিশ নিয়ে গান ধরেন। সে গানে পুলিশ তার নিজের ভিতরে লুকোনো কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় এবং পরে কয়েকটি পালাগানের মঞ্চে উকিলের গান শুনে পুলিশ উকিলের মুরিদ হয় যায়। ১৯১৬ সালে হামিদা খাতুনের আগ্রহে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এক পুত্র, সাত্তার মুন্সী।
১৯৭৮ সালের মাঝামাঝিতে উকিল মুন্সীর স্ত্রী হামিদা খাতুন এবং এর কয়েক মাস পর ছেলে সাত্তার মুন্সী মৃত্যুবরণ করেন। সে বছরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাউল সাধক উকিল মুন্সী ১২ ডিসেম্বর ১৯৭৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন । নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের জৈনপুরে বেতাই নদীর পারে চিরনিদ্রায় শায়িত হন উকিল মুন্সি।
তার অনেক গান বাংলা চলচ্চিত্রে সংযোজন হয়েছে। ১৯৯৯ সালে কথাসাহিত্যিক ও চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রে বারী সিদ্দীকীর কণ্ঠে ব্যবহার করেন উকিলের গান। বিংশ শতাব্দীর গ্রামীণ বাংলার জীবনকে নিয়ে রচিত হুমায়ুন আহমেদের বহুকেন্দ্রিকা উপন্যাস মধ্যাহ্ন-এর অন্যতম চরিত্র উকিল মুন্সী। লোকশিল্পী মমতাজ তার সুললিত কন্ঠে ” সুজন বন্ধু রে আরে ও বন্ধু, কোন বা দেশে থাকো, এই দাসীরে কান্দাইয়া রে, কোন দাসীর মন রাখো সুজন বন্ধুরে ” এই গানটি গেয়ে জনপ্রিয় করে তোলেন।