বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি ও গৃহগণনা গত রাত ১২ টা থেকে শুরু হয়েছে। শুরুতেই ভাসমান মানুষদের গণনা করা হয়।
সারাদেশে একযোগে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ জন গণনাকারী ট্যাবের (কম্পিউটার) সাহায্যে সাত দিন ধরে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে এ শুমারি পরিচালনা করবেন। এতে প্রতিটি ব্যক্তিকে ৩৫টি তথ্য দিতে হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন বলেন, “মঙ্গলবার রাত শুন্য সময় থেকে দেশের প্রায় ২০ হাজার স্পট থেকে ভাসমান ও ছিন্নমুল মানুষ গণনার মাধ্যমে শুরু হচ্ছে ষষ্ঠ জনশুমারি। বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ভাসমান মানুষ গণনা করা হবে।” এরপর বুধবার সকাল ৮টা থেকে শুমারির মূল কাজ শুরু হয়ে আগামী ২১ জুন এ শুমারি শেষ হবে।
ডিজিটাল এ শুমারিতে প্রায় ৪ লাখ ট্যাব ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এবারের শুমারিতে ৬৩ হাজার ৫৪৮জন সুপারভাইজার, ৩ হাজার ৭৭৯ জন আইটি সুপারভাইজার, তিন হাজার ৭৭৯ জন জোনাল অফিসার, ১৬৩ জন জেলা শুমারি সমন্বয়কারী এবং ১২ জন বিভাগীয় শুমারি সমন্বয়কারীর মাধ্যমে শুমারিটি সম্পন্ন করা হবে।
জনশুমারি আগে আদমশুমারি নামে পরিচিত ছিল। সর্বশেষ পঞ্চম শুমারি হয়েছিল ২০১১ সালে। প্রতি ১০ বছর অন্তর এ শুমারি হওয়ার কথা থাকলেও মহামারীর কারণে গত বছর তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
এবারের শুমারিতে ব্যবহৃত ট্যাবগুলোতে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবি ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক দিলদার বলেন, একজন গণনাকারী প্রতিটি খানার তথ্য নিয়ে তার ট্যাবে থাকা প্রশ্নপত্র পূরণ করবেন। প্রতিটি প্রশ্নপত্র পূরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেডের ডাটা সেন্টারে জমা হবে। সেখান থেকে পরিসংখ্যান ব্যুরোর ডাটা সেন্টারে জমা হবে।
এবারের শুমারিতে একজন মানুষের কাছ থেকে মোট ৩৫ ধরনের তথ্য নেওয়া হচ্ছে। কোনও পরিবারের সদস্য বিদেশে থাকলে তাকেও গণনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আবার যেসব বিদেশি বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, তাকেও গণনা করা হবে।
এর মাধ্যমে প্রবাসীদের সঠিক সংখ্যা এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের সংখ্যা জানা যাবে বলে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে।
দিলদার হোসেন বলেন, এবারের শুমারিতে দেশের প্রতিটি খানা ও খানার সদস্যদের গণনা করে মোট জনসংখ্যা ও দেশের সব বসতঘর বা বাসগৃহের সংখ্যা নিরূপণ করা হবে।
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ প্রকল্পের আওতায় গৃহের সংখ্যা ও ধরন, বাসস্থানের মালিকানা, খাবার পানির প্রধান উৎস, টয়লেটের সুবিধা, বিদ্যুৎ সুবিধা, রান্নার জ্বালানির প্রধান উৎস এসব তথ্যও সংগ্রহ করা হবে।
জনমিতির পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক তথ্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, বৈদেশিক রেমিট্যান্স, খানা সদস্যদের বয়স, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্ম, প্রতিবন্ধিতা, শিক্ষা, কর্ম, প্রশিক্ষণ, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার, ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, জাতীয়তা, নিজ জেলা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
দেশের সব নাগরিককে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক দিলদার বলেন, এসব তথ্য গোপন রাখা হবে; কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে তথ্যগুলো যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, “দেশের সকল মানুষ ও অঞ্চলভিত্তিক সুষম উন্নয়নের জন্য সঠিক তথ্যের প্রয়োজন। এ শুমারির মাধ্যমে দেশে কোন অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও মানব উন্নয়নের কী অবস্থা তা বের হয়ে আসবে। পরবর্তীতে সরকার সেই রূপরেখা ধরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।”
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মো. তাজুল ইসলামসহ আরও অনেকে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট