1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০১ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :

ডা. মোজাহিদুল হকের ধারাবাহিক গল্প ৪৭

সাহিত্য ডেস্ক
  • প্রকাশিত: সোমবার, ২০ জুন, ২০২২

জীবনের গল্প

-ডা. মোজাহিদুল হক

 

ওয়ারড্রবের ওপর মাল্টি প্লাগের লালচে আলোয় ঘরটা হালকা আলোময় হয়ে আছে । তাতে বরং ভালোই হয়েছে , পুরোপুরি ঘর অন্ধকার করলে আমার ঘুম হয়না। মনে হয় কবরে শুয়ে আছি।

আবছা আলোয় অহনাকে ভালো ঠাহর হচ্ছিল না। অহনার চোখ বন্ধ। সমান বিরতিতে উঠানামা করছে বুক। তীক্ষ্ণ নাক। চিবুকের কাছটা সামান্য ছুঁচোলো। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে ঘুমন্ত অহনা কে দেখছি। ঘুমন্ত মানুষকে কী যে অসহায় দেখায়। নির্জীব! প্রতিরোধ হীন!

সন্তর্পনে নেমে এলাম বিছানা থেকে। এই গরমেও কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে অহনা। জ্বর করেনি তো?  আলতো হাত ছোঁয়ালাম অহনার কপালে। না ঠান্ডা।

রাত গাঢ় হচ্ছিল। গ্রামের কোলাহল এখন পুরোপুরি ঝিমিয়ে এসেছে। হঠাৎ হঠাৎ রাস্তার পাশে গত তিনদিনের জমে থাকা জলে গ্যাঙর গ্যাঙ ব্যঙ ডাকছে সমস্বরে , তাদের তীক্ষ্ম আর্তনাদ পলকের জন্য ছিঁড়ে দিচ্ছে স্তব্ধতাকে। রাতচরা পাখিরা ডাকছে নিয়মিত বিরতিতে । ক্রমশ বিলীয়মান তাদের আওয়াজ দীর্ঘক্ষন রেশ রেখে দিল ঘরের বাতাসে।

অহনা অঘোরে ঘুমাচ্ছে। গুটিসুটি মেরে। প্রথম দিন থেকেই দেখছি অহনার এরকম কুঁকড়ে শোওয়ার অভ্যেস। যেন ঘুমের মধ্যেও অরক্ষিত। যেন আত্মরক্ষা করছে।

আমি জগ থেকে ঢেলে জল খেলাম। ঘড়িতে চারটা ছুঁই ছুঁই। প্রচন্ড মাথায় যন্ত্রনা হচ্ছে । যেন কেউ মাথার মগজে হাতুড়ি ঠুকছে । তিনটের দিকে শীত শীত লেগে কাঁপুনি মতো হয়েছে একবার , অহনা উঠে কাঁথা জড়িয়ে দিলে গায়ে । তিনদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে , তাছাড়া গাঁয়ে শেষ রাতের দিকে শীতল হয়ে যায় ধরণী । সন্তর্পনে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। অহনা পাশ ফিরেই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো আমার বুক। ওমা! ওকি জেগে ছিল নাকি?  না, ঘুমের ভেতরই স্বভাব বশত জড়িয়ে শুয়েছে আমায়। আলতো করে মাথাটা রাখলো আমার বুকের বাঁ পাশটায়।

আহারে! কী প্রশান্তি নিয়ে ঘুমাচ্ছে ও। ঢাকায় থাকলে সকাল সকাল উঠেই আবার ছুটে অফিসে। ঢাকায় ছুটির দিন মানে ওর জন্য ঈদের মতো। আমরা ঈদের ছুটিতে এসেছি হিসনা নদীর পাড় ঘেষা তাজপুরে। ছবির মতো সুন্দর গ্রাম । ফ্যানের বাতাসে উড়ছে অহনার চুল। আমার চোখে মুখে ছড়িয়ে পড়ছে তার কয়েকটা। আহারে ঘুমাক , ঢাকায় এই ঘুমটাই ঠিকমতো হয় না বেচারীর ।

আমি আবেশে তাকিয়ে আছি ওর মুখের দিকে। আমার চোখের পাতা যেন লক্ষ টন পাথরের মতো ওজনদার হয়ে আসছে। কিন্তু মাথার যন্ত্রণায় ঘুমুতে পারছিনে ।

অহনার ঠোঁটের স্পর্শে ঘুম ভাঙ্গলো।বিদ্যুৎ নেই। গিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। এখন হালকা কমেছে মাথার যন্ত্রণা । কি এক আজব রোগ হয়েছে আমার বাসায় আমার বালিশ ছাড়া অন্য যে কোন বালিশে ঘুমুলেই মাথায় একটা অস্বস্তিকর যন্ত্রণা শুরু হয় , আর তাতে শিকেয় ওঠে ঘুম । কী এক আজব রোগ রে বাবা ! শেষে কি বালিশ নিয়ে নিয়ে ঘুরতে হবে নাকি ?

ছোট্র একটা শ্বাস পড়ল । কেন যে পড়ল ? অহনার বড় দাদী কোমায় আছে গত বেশ ক’দিন ধরে । আশি পঁচাশি বছর ধরে যে জগৎটার সাথে জড়িয়ে ছিল , তা ছিন্ন করে পড়ে আছেন নিথর । অহনা দুপুরে এসেই ছুটে গিয়েছিল , উদভ্রান্তের মতো দাদী আমি এসেছি , আমি এসেছি বলে কান্না জুড়ে দিল । আশ্চর্য্য বুড়ো মানুষটার হাত , ঠোঁট আর চোখের পাতা ঈষৎ কেঁপে কেঁপে উঠল । কারো মৃত্যু কি কারো প্রতীক্ষায় থেমে থাকে ? অহনা আসার দিন রাত এগারোটায় চিরতরে নিথর হয়ে গেল দাদীর দেহ । পাড়ি জমালেন অনন্ত নক্ষত্র বিথীর পথে । তবে কি কেবল অহনাকে দেখবে বলে তার গলার স্বর শুনবে বলে অপেক্ষায় ছিলেন ? আর কোনদিন দেখা হবে না দাদুর সাথে , দেখা হলে বলবেন না ,দাদু ভাই কেমন আছ ? পরদিন ভোরে দাদুর ক্রিয়াকর্ম চুকবার পর হাউমাউ করে কেঁদেছি । দু’দিন পর কুরবানির ঈদ ।পৃথিবী কি কারো জন্য থেমে থাকে ? না থাকেনা । সারাদিনের ধকল শেষে শরীর ছেড়ে দিল , বেশ ক্লান্ত লাগছে । গরমে চ্যাট চ্যাট করছে গা । বড্ড বেশী খাওয়া হয়ে গেছে আজ , পেট এখনও দম মেরে আছে ।

বাইরে এখনও বিকেল। রোদ মরে গেছে,তবে তার সোনালী আভা পুরোপুরি মিলোয়নি।আমরা এসেছি পদ্মার পাড়ে দল বেঁধে । রুবেল ভাই শান্তা ভাবী ,তাদের মেয়ে রক্তিমা , ছেলে রাফিদ , আকাশ আর তার বউ সুরাইয়া সাথে তাদের পুঁচকে মেয়ে অথৈ । তমাল আর তমালের বউ আঁখি । আর আমার ছোট গিন্নি কুসুম । আমি আর অহনা বেড়াতে এলেই কুসুমের মুখখানা সারাক্ষণ আনন্দে চকচক করতে থাকে । অহনার জগতের বেশীর ভাগ অংশই মনে হয় কুসুম । কুসুমকে নিয়ে অহনার আলাদা একটা ভালোবাসার জগত আছে । সে জগতে কারো প্রবেশাধিকার নেই । এমন কি আমারও সে জগতে প্রবেশাধিকার নেই । আচমকাই সিদ্ধান্ত হলো তমালের শ্বশুরবাড়ী যাওয়া হবে । দুপুরের পর হই হই করতে করতে তমাল , আঁখি , কুসুম , আমি আর অহনা তমালের শ্বশুরবাড়ী গিয়ে হাজির । আঁখির আব্বা আম্মা দু’জনেই স্কুল শিক্ষক , চমৎকার মানুষ । তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে ওদের সংসার । নিজ ছেলে মেয়ে আর উনারা দু’জন ছাড়া নিজেদের আলাদা কোন জগত নেই । একরকম নিভৃতে মানুষ করেছেন ছেলে সন্তানদের । এই নিয়ে দ্বিতীয়বার তমালের শ্বশুরবাড়ী আসা হলো । আমি আর অহনা আসাতে তমাল আর আঁখি খুব খুশী । আনন্দে চক চক করছে ওদের চোখ । আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি । দুপুরের খাবারের পর সিদ্ধান্ত হলো তমালের শ্বশুরবাড়ী থেকে মাইল পাঁচেক দুরে আবেদের ঘাট না কি যেন জায়গা আছে পদ্মার পাড় যাওয়া হবে , হৈ হৈ করে পদ্মায় ইন্জিনের নৌকায় ঘুরে বেড়ানো হবে । সংসারে আকন্ঠ ডুবে থাকা অহনা আর আমার চাকুরী চেম্বার আর হাসপাতাল নিয়ে নিস্তরঙ্গ একটা ভ্যাদভেদে ঢাকার জীবনের বাইরে ক’দিনের উম্মাতাল একটা জীবন । জীবনে লাভ- ক্ষতির হিসেব বড়ই জটিল । ষোলো আনা লাভও কেউ করতে পারেনা । আবার অবিমিশ্র ক্ষতি ও বোধহয় কারো হয় না । অল্প কিছু দিনের জন্য হলেও , ভালোবাসার যে তীব্র উত্তেজনা অহনা আর আমি পাচ্ছি সে তো জমার অঙ্কেই আছে ।

ঘুম আসছিল না । রাতে আজকাল ঘুম এমনিই কমে গেছে তার ওপর বালিশে শুলেই মাথায় যন্ত্রণা , সারা রাতই অনিদ্রা । আজ গরমও পড়েছে খুব । এত গুমোট , যে পাখার হাওয়াও গায়ে লাগছে না । শ্রাবন মাস চলছে ।দিনের বেলায় মেঘ উঁকি দেয় , এক আধ পশলা ঝরে তবুও তাপ কমে না । তেষ্টা পাচ্ছে । ঘরে রাত বাতি না থাকায় সবই কেমন আবছা আবছা । রাতে শোয়ার আগে আঁখি জলের জগ আর মগ রেখে গেছে টেবিলে । হাতড়ে হাতড়ে নামছি বিছানা থেকে । মনে হলো বাথরুম চাপছে । এ এক জঞ্ঝাট । অহনাদের বাথরুম বাইরে কলতলায় । উঠোন পেরিয়ে যেতে হবে । বাইরে ঝকঝকে চাঁদের আলো । বাসায় থাকলে অমন চাঁদের আলোয় ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে , এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি বেশ আয়েশ করে খাওয়া যেত । অহনা খুব ঘুম কাতুরে ওকে নিয়ে জোস্না দেখা বাকি রইলো এখনো । মৌজ করে অহনাদের বারান্দায় একটা সিগারেট ধরালাম , ধোঁয়া পাক খাচ্ছে । আমি জ্যোৎস্না  দেখছি মাতালের মতো । আনমনা চোখে দেখছি রাতের আকাশ । স্বপ্ন স্বপ্ন বাতাস খেলে বেড়াচ্ছে উঠোন জুড়ে । মনে মনে কল্পনা করছি জ্যোৎস্না হিসনা নদীতে পড়ে কি সখ্যতাই না করছে । উঠোনে মোটর সাইকেল রাখা আছে বলেই গেটে দু দুখানা তালা ঝুলছে । দেখা হলোনা হিসনা আর জ্যোৎস্নার সখ্যতা । বয়ে যাচ্ছে এক মৌন মুহুর্ত । রাত এখন বড় মায়াময় । চাঁদের বুড়ি রুপোলি সুতো কেটে চলেছে চরকায় । সেই সুতোয় বোনা মসলিন এখন ভাসছে চরাচরে । রুপোলি সর মেখে দাঁড়িয়ে আছে গাছপালা , মাঠ, নদী । রুগ্ন পৃথিবী ছুটছে জ্যোৎস্না মেখে । ঠাস করে চড় কষার মতো শব্দ হলো । দরজা খোলা পেয়ে ঘরে ঢুকেছে মশা , তার একটা হয়তো হুল ফোটালো অহনার গালে । উঠে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়লাম । বাচ্চা মেয়ের মতো জড়িয়ে ধরল অহনা । অন্ধকারে অহনার মুখের দিকে তাকালাম চিনেও চিনতে পারলাম না ।

সারা সকাল ঝরে ঝরে এখন একটু জিরিয়ে নিচ্ছে আকাশ । আকাশ জুড়ে একরাশ মেঘ । ঘণঘোর আকাশ । ভরাট শরীর নিয়ে ঢলে পড়ছে গায়ের ওপর । আহ্লাদি বাতাস ছুটছে টালমাটাল । ভেজা ধরিত্রীর বুকে সরস যুবতী গন্ধ ।এমন সব দিনে কার না মন আনচান করে । অহনা কি বুঝেনা ? বাপের বাড়ী এলে অহনা সন্নাসীনি হয়ে যায় । আরে বাবা সুন্দরী বউ ছাড়া এমন দিনে কি করে থাকা যায় , নিজের হাবভাবে নিজেই হাসি আমি । জাত কাঙালির রথের শখ , আমার হয়েছে তাই । জানি এখন সারাদিন চেঁচালেও আমার বুকের ওমে অহনার শরীর গলাতে আসবে না । তাজপুর এলেই আমার আর অহনার চরকি নাচন শুরু হয়ে যায় ।অবিরাম আত্মীয় স্বজনের আনাগোনা , অহনা তার পুরনো বৃত্তে আড্ডা মেরে কুল পায় না । এবার ব্যাপারটা ভিন্ন বাইরে লক ডাউন চলছে , তাজপুরের মত অজ গ্রামে পর্যন্ত পুলিশ আসছে রোজ । তবু লোক সমানে দাওয়াত করছে , কাছে কিনারে যেতে মন্দ লাগছে না তবে দুরের কথা শুনলেই বিরক্ত হচ্ছি । বিকেলে আমি অহনা আর সবাই মিলে হিসনার ওপর যে ব্রীজ তৈরী হয়েছে তার ওপর গিয়ে বসি । নদীর জলে কাছিম ঘুরে বেড়ায় । বহু বছর পর সে সব কাছিম দেখি আমি আনমনা হয়ে । নদীর জলে পাট জাগ দেয়া সেখান থেকে পঁচা পঁচা গন্ধ বের হয় । সন্ধ্যা হলেই তিরতির করে হাল্কা বাতাস বয় সে ব্রীজের ওপর । বাদামি মখমলের মত একটা নরম অন্ধকার ছড়িয়ে থাকে চারদিকে । আশে পাশের বাড়ী গুলো থেকে আলোর রশ্মি গড়িয়ে এসেও থমকে যায় অদুরে । দুপুরে রোজ জব্বর খাওয়া হচ্ছে তারপর খেয়ে দেয়ে খানিকটা ভাতঘুম । তারপর টুকিটাকি এটা সেটা করতে করতে সন্ধ্যা গড়ায় । আকাশের মেয়ে অথৈ কে বাবা বলা শিখাচ্ছি আর মেয়ে দু’দিনেই বাবা বাবা করতে লাগলো ।

সত্যি হিউমিডিটির মাত্রাটাও যেন ঝপ করে চড়ে গেল আজ । ঝুলবর্ণ আকাশখানা এখন স্কাইস্ক্র্যাপার ছুঁই-ছুঁই । রুপোলি ঝিলিক হানছে ঘনঘন । ঈষৎ তেরচা চোখে মেঘেদের সাজগোজ দেখতে দেখতে আমরা চলেছি শ্যামলি আপার বাড়ী কিশোরীনগর । রুবেল ভাই – ভাবী ছানা পোনা , তমাল আর তার বউ আর আমি আর অহনা । যাচ্ছি মোটর বাইকে । রাস্তা বেশ ভালো । রাস্তায় গাড়ী-ঘোড়া নেই একদম , তবে এইদিকটায় প্রচুর মোটর বাইক ঘরে ঘরে দু’চারটা আছেই । রাস্তায় আলো আঁধারের খেলা । মাঝে একটু ভাঙাচোরা রাস্তা পেরিয়ে আমরা পৌছেছি অম্নি চরাচর মসিবর্ণ । ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে । একটু -একটু করে বাড়ছে বৃষ্টি , বড় হচ্ছে দানা , ঝিমঝিম ঝরে চলল অবিরাম । বৃষ্টি ধারার ওপারে শ্যামলী আপার উঠোনটাকে মুহুর্তে অচিন লাগছে । স্বপ্ন স্বপ্ন । গাছপালা ঘর-দোর সব আবছা । যেন ঘষা কাচের ঘেরাটোপে অন্য এক অলীক অজানা কোথাও এসেছি । লেবুর রসের আঁখের গুড়ের শরবত দু গ্লাস ঢকঢক করে গিলতেই হঠাৎ কোত্থেকে রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করছে শরীরে । ঘরের কোণে শ্যামলী আপা আর কালাম ভাইয়ের বিয়ের দিনের ছবি ,ফুল পাতা দিয়ে কারুকাজ করে ফ্রেমে বাধা বিয়ের ক্ষণ দিন মাস বছর । ইদানিং এসব দেখাই যায় না । ছোট বেলায় আমাদের বাড়ীতে ছিল , তবে সে সব অবশ্য আমাদের জন্মতিথি , ক্ষণ , দিন । কালাম ভাই বড্ড শান্ত মানুষ , নিজের ছোট্র জগতে তন্ময় হয়ে থাকে দিনরাত । সে জগত শুধু শ্যামলি আপা ময়  । খাওয়া দাওয়ার পর বিকেলে পাশের বিলে যাওয়ার জন্য বের হয়েছি দল বেঁধে । আকাশ এখন নীল । ঝকঝকে । বড় রাস্তা ফেলে বাঁ দিকে কাঁচা রাস্তা । অনভ্যস্ত পথে চমকে চমকে চলছি । নির্জন জায়গাটার দুধারে জলাশয়ে মাছের চাষ হচ্ছে ।  আমি নিঃশব্দে বুক ভরে নিচ্ছি প্রকান্ড আকাশটাকে । অহনা বাচ্চা মেয়েদের মত উল্লসিত হয়ে উঠল । আকাশের দিকে মুখ তুলল , বাহ , জায়গাটা দারুন তো । ঘন ঘাস মাড়িয়ে দুটো জলাশয়ের মাঝের উঁচু জায়গায় দাঁড়াল । চোখে মুখে গাঢ় মুগ্ধতা । এবড়ো থেবড়ো পথে সাবধানে পা ফেলে ফেলে চারদিকটা দেখছে ও । ছোট মতন একটা ডোবার ধারে এসে অহনা দাঁড়িয়ে পড়ল দুম করে । ডোবার গা বেয়ে ঘুরে গেছে সরু পায়ে চলা পথ । রাস্তাটা গিয়ে মিশেছে একটা ভাঙা চাতালে । সেখানে বসে আছে বুড়োবুড়ি , মাছ পাহারা দিচ্ছে মনে হয় । দুধারে ঝোপঝাড় , আগাছা । ছোট-বড় ইট ছড়িয়ে ছিটিয়ে এখানে সেখানে । বড় নিশুত , নিঝুম চারদিক । এত নিঝুম যে গা ছমছম করে । উজ্জ্বল রোদে আরও উজ্জ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অহনা । সুন্দর নিসর্গের মতো ।ডোবার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা মহীরুহের ডাল বেয়ে নিঃসঙ্গ রোদের টুকরো গুলো জাফরি কাটছে অহনার মুখে , শরীরে । শ্রাবণের বাতাসে উড়ছে তার ওড়না । আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি , হাত রাখলাম অহনার কাঁধে । এমন অসম্ভব সুন্দর মুহুর্তগুলোকে ছুঁয়ে ফেলার পর অহনাকে নিয়ে অনন্ত কাল বেঁচে থাকা ছাড়া আর কী চাওয়ার থাকে ? আমার ?

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews