1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
মামলায় নাম থাকলেই গ্রেপ্তার নয় : আইজিপি যৌথ বাহিনীর অভিযানে সোনাতলার সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা নান্নু আটক আজ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৬১তম মৃত্যুবার্ষিকী এক্সপ্রেস বাস চালু হওয়ায় যাত্রীরা খুশিঃ স্থায়ী টার্মিনাল নির্মানের দাবি নাগরিক কমিটির চিন্ময় দাসের জামিন শুনানি পেছাল এক মাস বিমানে শিডিউল বিপর্যয় আবারও যেন ‘নিয়মে’ পরিণত হয়েছে জলমহাল নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগে বাঁওড় ইজারা বাতিলে সোচ্চার বলুহরসহ ভুক্তভোগী বাঁওড় জেলেরা বোয়ালখালীতে সানশাইন একাডেমীর পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান বগুড়ায় শীত থেকে বাচতে হাটের পোশাকে ঝুকছে নিন্ম আয়ের মানুষ সোনাতলা সদরে দিনের বেলা মোটরসাইকেল চুরি

ডা. মোজাহিদুল হকের ধারাবাহিক গল্প ৪৯

সাহিত্য ডেস্ক
  • প্রকাশিত: সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২

জীবনের গল্প

-ডা.মোজাহিদুল হক

পর্ব-৪৯

আমাদের বাসার এ দিকটায় দিনের বেলাতেও নির্জনতা থাকে, আর রাতের দিকে আরও।শব্দ যেন কড়া শাসনে বাঁধা।অল্প চওড়া কংক্রিটের রাস্তার দু’পাশে সুদৃশ্য বাড়ি। এক একটা এক এক ডিজাইনের, কোনওটায় গেট আছে, কোনওটায় কোলাপসিবল টানা নিরাপত্তা। নিঃশব্দ চারদিক। বাঁকের মুখে রাস্তার ধারে জঞ্জাল শুঁকছে একটা কুকুর। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছে আমার দিকে। রাতে বৃষ্টি হয়েছে। তারই জেরে রাস্তা কোথাও কোথাও ভিজে আছে এখনও। সূর্যের আলোয় সে অপরিচ্ছন্ন জলে কেমন একটা সোনালী আভা লেপে দিয়েছে। হাওয়া নেই, গুমোটও নেই বরং একটা ভিজে ভাব চারদিকে। সকালে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা নিয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে গেছে অহনা। ভোরে ঘুম থেকে জাগিয়ে বলল ওর মাথা ব্যাথার কথা। ঈষৎ আচ্ছন্ন লাগছিল অহনাকে। ঔষধ তুলে দিয়েছি ওর হাতে। খেয়েছে কিনা কে জানে??  ঔষধ খাওয়ায় এতো অনীহা ওর, কেন কি জানি?  অহনা অফিসের জন্য বেরিয়ে যেতেই আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। জানালা দিয়ে রোদ এসে পড়ছে মুখে। ঘাড়ের পেছনে হাল্কা ব্যাথা অনুভব করছি। ভার লাগছে মাথাও। কাল রাতে বৃষ্টি হচ্ছিল থেকে থেকে। আকাশের অবস্থা দেখে একবারও মনে হয়নি সকালেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। নিজেকে ছায়ায় সরিয়ে নিতে নিতে বিছানাটা বড় অদ্ভুত লাগলো আমার। হাত বাড়িয়ে অহনার বালিশটা টেনে নিলাম। বালিশে অহনার চুলের গন্ধ। আলস্যের মধ্যে এপাশ ওপাশ করছি। ঘর শুন্য। রোদ বাড়ছে। চা খেতে খুব ইচ্ছে করছে। চা -টা আস্তে আস্তে শেষ করলাম। টিভি অন করলাম। আজও শিরোনাম আফগানিস্থান , পরী মনি , ডেঙ্গু আর শোক দিবস । ধ্যেত। বাইরে এলোমেলো শব্দ। রাস্তার ব্যস্ততাই সঞ্চারিত হয় এলোমেলো শব্দে। এক ধরনের বিমুঢ়তা এখনও ঘিরে আছে আমাকে। অস্পষ্ট একটা কাঁপুনি ছড়িয়ে পড়ছে শরীরে। হঠাৎ কানে এলো চিলের চিৎকার। চিলটা ঠিক কোনখানে তা দেখতে গিয়ে ওপরে তাকালাম, রোদের তীব্রতায় চোখ নামিয়ে নিতে হল সঙ্গে সঙ্গেই। মাথাটা আগেই ভার হয়ে ছিল। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকার কারনেই সম্ববত এখন আরও ভারী লাগছে। নিজেই টের পাচ্ছি চিন্তা একদিক থেকে আসছে না, আসছে সহস্রমুখ হয়ে। স্থির হতে পারছি না। ঘুম হচ্ছে না। চাপা, অবর্ণনীয় কিন্তু অসহ্য নয়, একটা যন্ত্রনা হচ্ছে মাথায়। স্মৃতিতে আচ্ছন্নতা আর চারপাশের আলোতেও। মাথা জুড়ে দাপাদাপি করছে নিঃশব্দ শব্দ। টিভি বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম। আমার হিসাব বলে মাঝে মাঝে মস্তিষ্কের ও বিশ্রাম প্রয়োজন। টিভির চিন্তাশুন্য নির্বোধ ফিল্মিক দৃশ্যগুলোর চেয়ে ভালো বিশ্রাম কী হতে পারে!  এতে মস্তিষ্কের কোষগুলো আবার তরতাজা হয়ে ওঠে।

কোনটা মানুষ আর কোনটা মুখোশ আলাদা করতে পারছি না । কত রকমের মানুষের সাথেই তো মিশলাম কত জনের সাথেই তো পথ চললাম । কিছুদুর হাঁটার পর মুখোশ খসে পড়ে , বেরিয়ে পড়ে আসল রুপ । বাসার গ্যাস ফুরিয়ে গেছে , গ্যাসের প্রিপেইড মিটার খুজে পাচ্ছিলাম না । আঁতিপাতি করে চারদিক হাতড়াতে গিয়েই আমার নিজেরই ছোট বোনকে লেখা অসমাপ্ত একটা চিঠি হাতে পড়ল ,ষোল সালে লেখা পুরো চিঠিটা হয়তো তখন লেখা হয়নি , তাই হয়তো পোস্ট করা হয়নি । “আদরের মুক্তা , তোর বরকে নিয়ে বাচ্ছাদের নিয় একবারও এলি না  আমার ঢাকার বাসায় । এলি না কেন ? আমি সংসারী নই বলে ? কিভাবে ভালোবাসতে হয় জানি না বলে ? তবু তোদের দেখতে খুব ইচ্ছে করে । অনুর শরীর খারাপ শুনলাম , ওর যত্ন নিস । “

এতটুকোই লিখেছিলাম । আজ এতকাল পরে মনে করতে পারলাম না সেলফোনের যুগ থাকতে ও কেন চিঠি লিখেছিলাম ? হয়তো কোন অব্যক্ত কথা বলতে চেয়েছিলাম , যা মুখে বলতে পারতাম না । আজিজ কে পাঠিয়ে গ্যাসের রিচার্জ করা হলো । বারান্দায় ফিরে এলাম । ইদানিং লোকের টিপ্পনি শুনতে হয় । এতো বড় ডাক্তার নিজের বাড়ী নেই ? দামী গাড়ী নেই ? অমুকের এটা আছে তমুকের ওটা আছে । আরে বাবা আমি তো এতটুকুতেই সন্তুষ্ট । সকাল বিকাল রোগী দেখছি । ইচ্ছে হলে ভিজিট নিচ্ছি , ইচ্ছে হলে নিচ্ছি না । মাস শেষে নিজের সংসার চালিয়ে একটা স্মার্ট এ্যামাউন্ট আমার থাকে । তাতেই আমি সন্তুষ্ট । টিপ্পনি কাটা লোক গুলো এত নীচ হয় কেন ? আচ্ছা ধরুন যদি আমার ঝাঁ চকচক একটা বাড়ী কিংবা চকাচক দামী একটা গাড়ী থাকত তাহলে কি লোক টিপ্পনি কাটত না ? কাটত তখন বলতো , বুঝলেন ভাই সব মানুষের রক্ত চোষা টাকা । না হলে একজন ডাক্তারের এত টাকা আসে কোথা থেকে ? সব কোম্পানি মাল দিচ্ছে আর তাই দিয়ে ফুটানি ফুটাচ্ছে । তখন হিংসায় জ্বলুনি হতো এখন অম্বল হচ্ছে । মন মানুষিকতা এত ছোট । চুপচাপ মানুষের মন্তব্য শুনি । আরে ভাই একটা দেশীয় কোম্পানিতে চাকরি করে শহরে বাড়ী করেছেন , চুরি করা ছাড়া এত টাকা কই পেলেন ? নিজে চুরি করে বাড়ী গাড়ী করছেন বলে আরেকজনকে ও চোর ভাবা বন্ধ করেন । আমি নিকুচি করি আপনাদের অমন টিপ্পনির।।

ঘুম ভাঙার পর অনেকক্ষণ বিছানায় চুপচাপ শুয়ে থাকা অভ্যেস আমার । ঠিক অভ্যেস নয় এ সময়টা আমার ধ্যানের সময় । প্রতিদিন সকালে এভাবেই চোখ বুজে শুয়ে নিজেকে খনন করার চেষ্টা করি । একেক সময় নিজের মনকে ও অচেনা লাগে এ সময় । চোখ নির্জন ঘরে পাক খায় কয়েকবার । ঘরজুড়ে , ওয়াড্রোবের গায়ে , দেয়ালে , দরজায় সর্বত্র । এ্যাটাচট্ বাথরুমের পাশে মসকিউটো রিপেলেন্টের লাল চোখ স্থির জ্বলে । পশ্চিমের জানালার পেলমেট থেকে ঝোলা ভারী পর্দার গায়ে ,বন্ধ কাচের শার্সিতে প্রভাতী আলোর আভাস । মন কেমন করা স্মৃতির মতো । মনোরম কিন্তু বিষন্ন । আবছা আলো , পর্দা সব মিলিয়ে পুরো দৃশ্যটায় কেমন একটা আলাদা আকর্ষন আছে । আজ সে ধ্যানে বাধ সেধেছে পাশের বাড়ীর চিৎকার । কী তুমুল চিৎকার , তর্জনগর্জন ! এমন চেঁচামেচি যে বাইরে লোক দাঁড়িয়ে গেছে দুএকজন ।এম্নিতে এ পাড়ায় অন্যের বাড়ীতে সচরাচর উঁকি দেয়না কেউ । আধুনিক সভ্যতার নিয়ম মেনে প্রতিটি বাড়ী পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকে উদাসীন স্ট্রীট লাইটের মতো । কখনও কখনও একটা বাতি নিভু নিভু হলে অন্যের আলো এসে পড়ে তার ওপর । সৌজন্যের । তার বেশী করা এসব পাড়ায় প্রাচীন গ্রাম্যতা বলে মনে করা হয় । কৌতুহল এখানে ভীষন চাপা । চাকরবাহী । তবে কলহের মাত্রা বস্তির পর্যায়ে নামলে একটু চাঞ্চল্য জাগে বৈকি । আমি ব্যলকনিতে আলসেতে ভর দিয়ে আচ্ছন্নের মতো তাকিয়ে দেখছি , শুনছি । খিস্তি খেউড়। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের কি এই পরিণতি ?? ইদানিং লেখায় মন বসছে না । কাজে কর্মে উদ্দমতা পাচ্ছি না । মনে হয় ফিলিংস গুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে । অনুভুতি হুম অনুভুতি , লেখার জন্য দরকার অনুভুতি । তুমি কিভাবে তোমার চারদিককে দেখছ , সেই দেখার রং কিরকম , রুপ কি রকম , দিনে রাতে , প্রতি মুহুর্তে আলোর সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি জিনিসের , মানুষের জীবজন্তুর চেহারা বদলে যায় । তখন তুমি তাকে কিভাবে দেখছ ,তোমার দেখার আনন্দ , তোমার দেখার যন্ত্রণা সব মিলিয়েই তো লেখার উপকরণ তৈরী হয় । তৈরী হয় গল্প ।

ইদানিং অহনাকে নিয়ে দুরে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে । পাহাড়ে । লালচে মেঠো পথে অহনার হাত ধরে অনন্তকাল ধরে হাঁটতে ইচ্ছে করে । লোকবসতির থেকে দুরে কোন আদিবাসীর মাচাং ঘরে থাকব আমরা , চারদিকে ইউক্যালিপটাসের হাল্কা গন্ধ ছড়িয়ে থাকবে । পাহাড়ের নীচে লেক । লেকের জলে রোদ্দুরে ঝিকমিক । যখন তখন বৃষ্টি হবে । মাচাংয়ের চাল বেয়ে পানির ধারা গড়িয়ে পড়বে । রাতে আকাশ তারায় ঝকঝক । ফিনফিনে মসলিনের মতো চাঁদের কিরণ ছড়িয়ে পড়বে আমাদের গায়ে । জঙ্গলে গাছেদের মাথায় রুপোলি সরের মতো থাকবে জ্যোৎস্নার ঢেউ । নীচে আমাদের ভালোবাসাবাসি । সব দুঃখ ছাপিয়ে কেবল ভালো লাগা । একটা অসম্ভব ভালো লাগা । সমস্ত পার্থিব অস্তিত্ব তুচ্ছ হয়ে যাবে এই ভালো লাগার কাছে । মিজান বেশ কিছুদিন ধরেই রামগড় যাবার কথা বলছে । মৃদু বাতাস বইছে । ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালাম একটা । আশে পাশের ছাদে ছেলেপুলেদের জটলা ।পাশের বিল্ডিংয়ে ছাদের ওপর লাল নীল বাতি জ্বলছে আর নিভছে । আকাশ আজ আবার লাল হয়েছে । বাতাস বইছে । মৃদু , অতি মৃদু , প্রায় না বওয়ারই মতো । রাত্রে আবার ঢালবে নাকি ! তখনি অহনা এলো অফিস থেকে । ওর হাতের কফি খাওয়া হয়না বেশ কিছুদিন । তমালের বউ আঁখি আসার পর থেকে সে দায়িত্বটুকু আঁখিই পালন করছে । তিন চার দিন ধরে রাতে ঘুমাতে বেশ দেরী হচ্ছে আবার সকাল সকালই চট করে ভেঙ্গে যাচ্ছে ঘুমটা । চারদিক থেকে কেবল চিন্তা আসছে । একদিক থেকে আসছে না , আসছে সহস্রমুখ হয়ে । স্থির হতে পারছিনা কিছুতেই । কাল রাতে ঘুম আসেনি চোখে । চাপা , অবর্ণনীয় কিন্তু অসহ্য নয় , একটা যন্ত্রণা হচ্ছিল মাথায় । উঠে একটা সেডিটিভ খেলাম । ট্যাবলেট খাওয়ার পর একটু ঝিমুনির মতো এলেও সেটাকে কিছুতেই ঘুম বলা যাবে না । শরীর ক্লান্ত হলো বটে , তবু টের পাচ্ছিলাম চোখ দুটি পুরো পুরি জেগে আছে ।স্বাভাবিকতার মাঝেও নিজেকে অস্বাভাবিক লাগে ।

কী যে ছাই হচ্ছে,আবহাওয়ার কোনও ছিরিছাঁদ নেই। কাল মাঝরাতে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হলো অনেক্ক্ষণ ধরে। অথচ সকাল থেকেই দুপদাপিয়ে পড়ছে গরম। এই এখন দুপুরবেলাটায় গা জ্বালিয়ে দিচ্ছে। গোটা পৃথিবীরই নাকি উষ্ণতা বাড়ছে। নানান হাবিজাবি গ্যাসের দাপটে নাকি বায়ুমন্ডলের কী সব স্তর নাকি ফেটে ফুটে গেছে। এই জন্যই নাকি এতো গরম। আর আমি তো আছি কংক্রিটের জঙ্গলে। রোদ্দুরের আজ বড্ড তেজ। ছেঁড়া ছেঁড়া ভাবনা নিয়ে কাটছে সকাল থেকে। আমি আবার যার তার সাথে হৈ হুল্লোড় কিংবা মস্তি করে কাটাতে পারিনা। নৈতিকতা ফৈতিকতা ঠিক নয় তবু কোথায় যেন বাধে। সংস্কার?  উহু তাও নয়। হয়তো রুচি। আঠারো সালের সেপ্টেম্বরের পর আমার গায়ের চামড়া অনেক মোটা হয়ে গেছে। হ্যা আমার সব গেছে, তাই বলে জীবন তো আর মরুভূমি হয়ে যায়নি।অহনা আমার জীবনে এখন মরুদ্দানের মতো। ওর মুখ পানে তাকালেই দুঃচিন্তা গুলো কর্পুরের মতো উধাও হয়ে যায়। ঝকঝকে দিন। কর্মব্যস্ত শহর ছুটছে নিজের গতিতে। হলুদ রোদ আর নরম বাতাস মেখে। অলস কল্পনার অলিগলি চষে বেড়াচ্ছে আমার মন। কোনও কোনও টার কানাগলি অব্দি গিয়ে আবসর ফিরে আসছে আরেকটায়। সব স্মৃতির  জোনাকী। এই আবছা আবছা। চোখের লেন্সদুটো মাঝে মাঝে ঝাপসা হয়। ফোঁস করে নিঃশ্বাস বের হয়ে বুকটা খালি খালি লাগে। বাসার দিকে হাঁটছি আর ভাবছি একটা দম দেয়া ঘড়ির মধ্যে জীবনটা আটকে রইলো। পায়ের তলায় শুকনো পাতা ভাঙ্গছে মড় মড় করে। আমি নিজেও তো একটা শুকনো পাতা। খসে পড়িনি এই যা।আমার দীর্ঘশ্বাসের খবর কে রাখে?  শহরের ত্বকে কটকটে অপরাহ্নের রোদ। এ রোদের  আলোয় যতটা না আবেশ তার চেয়েও বেশী বিষাদ। আলোটুকু মুখে মেখে আমি বাসায় ফিরলাম।ঘরে ঢুকেই দেয়ালে ঝোলানো অহনার ছবিটার দিকে তাকিয়ে আমি থমকে দাঁড়াই কয়েকটা পলক। বুকটা যেন চলকে উঠেছে সহসা। ছবিতে অহনার মুখে অপ্রতিভ একটা হাসি,সে হাসিতে কি যেন একটা সংকেত। যে সংকেতের আশায় একদা আকুল হয়ে থাকতাম সারাবেলা আমি।মানুষ যেভাবে থাকতে চায় সেভাবেই  তো গড়ে নেয় নিজেকে কিংবা যা শুনতে চায় সে ভাবেই গড়ে নেয় কথা গুলোকে। অহনার আঁজলা ভরা সুখটুকু নিয়ে আমি চলছি, ফিরছি আর বেঁচেও আছি। অহনার আহবানে ও কেমন যেন একটা মাদকতা আছে। নীরব উপেক্ষা দিয়ে প্রতিহত করতে পারিনা আমি সে মাদকতা। আমি মাতাল হয়ে যাই সে আহবানে। এ এক আশ্চর্য না শুধু আশ্চর্য নয় তার চেয়েও বেশী কিছু। এক ধরনের মুগ্ধতা। ভাল লাগা।

আমার আর অহনার নিজস্ব দিন হচ্ছে শুক্রবার, বন্ধের দিন। নিজেরাই একান্ত করে কাটাই গোটা দিনটা।

অহনা না থাকলে চোখ বুজলেই স্মৃতির মিছিল। মুম্বাই, দিল্লী, কলকাতার , দেশ -বিদেশের কত স্মৃতি, কত কথা। চোখ বুজলেই দেখতে পাই। ইচ্ছে করেই আজকাল ঝাপ ফেলে দেই মনের দরজায়। আগের জীবনের কিছু কিছু ছোট ঘটনা, না, ও গুলোর প্রতি আমার কোন দূর্বলতা নেই। ও জীবন আমার পুরনো জীবনের একটা চ্যাপ্টার মাত্র, তার বেশী কিচ্ছু নয়। আসলে ওই চ্যাপ্টারটাই আমার জীবনের জন্য পরোক্ষভাবে উপকারই করেছে। জীবনে তো কোন লক্ষ্যই স্থির ছিল না। অভিমান আর আত্মধিক্কার আমাকে একটা মিশন তো দিয়েছে। তা না হলে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হত নিরুদ্বেগ নিস্তরঙ্গ একটা ভ্যাদভেদে লাইফে। জীবনে লাভ ক্ষতির হিসেব বড়ই জটিল। ষোলো আনা লাভ ও কেউ দিতে পারেনা। আবার অবিমিশ্র ক্ষতি ও বোধহয় করতে পারেনা কেউ। এই যে এতোকাল পর ভালোবাসার যে তীব্র উত্তেজনা আমি পেয়েছি তার জন্য অহনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আজও গরম পড়েছে খুব। এত গুমোট যে পাখার হাওয়াও গায়ে লাগে না। ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরম। এক-আধ দিন মেঘ উঁকি দেয় বটে, মিলিয়েও যায় হুশ করে। তারপর আকাশ আবার খটখটে, নিষ্করুণ। বৃষ্টিহীন পৃথিবীতে তাপ চড়ছে ক্রমশ। গা জ্বালা জ্বালা করছে আমার। তেষ্টা পেয়েছে। ফ্রিজ খুলে ঢকঢক করে ঠান্ডা জল খেলাম। দুপুরে খেতে এসে অহনা বলল ওর অফিসে কে যেন বলল সমুদ্র থেকে ঘুরে আসতে আমাকে নিয়ে।

নাকি অহনার নিজেরই আমাকে নিয়ে কোথাও একটু ঘুরতে মন চাইছে?  বেশ ক’দিন দেখছি আমি চেম্বারের জন্য বেরিয়ে যাবার সময় অহনার মুখটা কেমন ভারী ভারী। দুপুরে খেতে এলে ওর মধ্যে সব সময়ের মতো একটা সহজ ভাব থাকে, আর আমি চেম্বারের জন্য  বেরুতে গেলে সে সহজ ভাবটা পলকে উধাও হয়ে যায়। ওর ভারী মুখটা দেখলে আমার ভীষণ অস্বস্তি লাগে। সমুদ্রের মতো অহনার গাঢ়  চোখে মেঘের ছায়া পড়ে। সে ছায়া এড়িয়ে আমি বেরিয়ে যাই। নারীর চোখের সে ছায়া সবাই এড়াতে পাড়েনা। হোক না সে নারী নিজের স্ত্রী কিংবা অন্য কেউ। কিন্তু আমি পারি। আসলে নারীর মুগ্ধ চোখের সামনে বসে থাকতে পুরুষের খারাপ লাগেনা। নারীর চোখ পুরুষের আসল আয়না আর পুরুষের চোখ নারীর আয়না।

আয়নার সামনে স্থানুবৎ হয়ে কতক্ষণ আর বসে থাকতে পারা যায়। আমি তা পারি না। আচ্ছা আমার এ সমুদ্র ছায়া এড়িয়ে যাওয়া কি অহনার মনে ঘৃণার জন্ম দিচ্ছে??  ঘৃণা আর ভালোবাসায় কতটুকুই বা ব্যবধান!

সিগারেট ফুরিয়ে গেছে। আমি বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তার কোন ধরে হাঁটছি আমি। এই রাস্তাটায় হাঁটতে আমার বেশ ভালো লাগে। যেন খানিকটা মায়া ছড়িয়ে আছে এ রাস্তাটায়। বুঝি কিছু অতীত ও। হ্যা, আঠারো সালে জীবনটা তছনছ হবার পর এই পথটা দিয়েই আবীর নিয়ে তুলেছিল তার বাসায়। নিরাশ্রয় আমার তখন আর কোন আশ্রয় ছিল না । রাস্তা দিয়ে লোকজন এপাশ ওপাশে কেউ উত্তরে কেউ দক্ষিণে ছুটে যাচ্ছে। হয়তো একেক জনের জীবনের কাহিনী একেক রকম। এর মাঝে এই রাস্তার কত বদল। শুধু আমারই কোন বদল ঘটল না। আমি অহনার সাথে দেখা করতে আসার প্রথমদিন যে দোকানটায় চা খেয়েছিলাম ওকে নিয়ে ,তার পাশেই ছিদ্দিক ভাইয়ের দোকান ,সেখান থেকেই সিগারেট কিনে নিলাম।

জীবনের এই সময়ে এসে মনে হয় মাঝদরিয়ায় বসে আছি ফুটো নৌকায়, পালানোর রাস্তা নেই। অহরহ চিন্তা, এই বুঝি ডুবলো ফুটো নৌকো। তারপর কি করবো আমি?

আচমকা নিজের এতো দিনের সততার সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলতে পারছি না। আবার অসৎ পথে হাঁটা সেও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাহলে?  খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে জীবনযাপনের সর্বক্ষেত্রে একটা মান তৈরী হয়ে গেছে, তার থেকেই বা আচমকা নামা যায় কী করে??  নাহ উন্নতি অবনতি নিয়ে আমার আফশোস নেই। চিন্তা কেবল অহনা কে নিয়ে। আই বিলিভ ইন ডেসটিনি বাট হোয়াট এ্যাবাউট অহনা?  এই প্রশ্নটা যেমন সরল তেমন জটিলও বটে। নতুন করে জীবনের অভিমুখ বদলানোর তো প্রচন্ড চেষ্টা করে যাচ্ছি। ঢাকায় আমার খুব প্রিয় একটা জায়গা আছে আঠারো সালের সেপ্টেম্বরের ছাব্বিস তারিখ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন ভোরেই আমি যেতাম আমার পছন্দের জায়গায়। দিগন্ত জুড়ে খোলা আকাশ, কাশবন, আর কুলকুল করে বয়ে চলা মেঘনার শাখা। ইদানিং খুব ইচ্ছে করে খুব ভোরে হুড খোলা রিকশায় অহনার হাতে হাত রেখে সেখানে ঘুরে আসি। কী করব সে আশায় গুড়ে বালি। শুক্রবার যাও একটা বন্ধ পাই তাতেই দুজনে ঘুমিয়েই কুল-কিনারা পাইনা। ফজরের ঠিক পরে ওখানে না গেলে আর যেয়ে লাভই নেই। গত বছর আমি এ সময়টায় রোজ ওখানে যেতাম আর খুব মুগ্ধ হতাম। খুব মুগ্ধ ভাবে শুরু হতো আমার সকালটা। অহনা ইদানিং আমাকে নিয়ে মাঝে মাঝে কনফিউজড হয়ে পড়ে। কেন?  ও আমার জীবনে প্রথম প্রেম কিনা তাই নিয়ে। আমি সহজ গলায় বলি – দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম প্রেম বলে কিছু নেই। মানুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম। ”

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews