1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০৮ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
ঢাকা ও আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে সভা শনিবার আরো ৩৪ জেলায় নতুন ডিসি বৃষ্টি নিয়ে যে বার্তা দিল আবহাওয়া অধিদপ্তর খাগড়াছড়িতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ এর ৩৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন কেশবপুরে চালককে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার-১, ইজিবাইক উদ্ধার জাককানইবি’তে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পেলেন অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের একমাস পূর্ণ হওয়ায় শহীদদের স্মরণে শহীদ মার্চ পালন  সুনামগঞ্জে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের গণসমাবেশ রাজশাহীতে নাশকতা মামলায় দুই ইউপি চেয়ারম্যান আটক

ডা. মোজাহিদুল হকের ধারাবাহিক গল্প ৫০

সাহিত্য ডেস্ক
  • প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২

জীবনের গল্প

-ডা.মোজাহিদুল হক

পর্ব-৫০

রোদে থির থির করে বাতাস কঁপছে। দুরে একটা গ্রাম খাঁ খাঁ করছে। চারদিকের মাঠে সবুজ রঙ দেখাই যাচ্ছেনা। চষা মাটির ডেলা রোদে শুকিয়ে খটখটে। আমি আল ধরে হাঁটছি। বাতাসে থর থর করে শুকনো শব্দ উড়ছে দুরের টেকো গাছটার।গাছটার দিকে তাকাই।রোদে চোখে ধাঁ ধাঁ লাগে। পাকা রাস্তা ছেড়ে অনেকটা দুর চলে এসেছি। একটা সজনে গাছ। তার ডালে একটা কাক ঝিম মেরে বসে আছে।

বাঁক ঘুরতেই একটা পুরনো দীঘি। তার জলে বহুকালের শ্যাওলা জমে আছে। জঙ্গলে রাস্তা। হাঁটতে গেলেই চারপাশের লতা গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়। জঙ্গল পেরিয়ে হঠাৎ রেলের রাস্তাকে পাহাড়ের মতে উঁচু মনে হয়। পতিত জমিতে কিছু আগাছা।মাটির ডেলায় পা হড়কে যায়। রেল রাস্তায় উঠতে উঠতে দম বন্ধ হয়ে আসে। ওপরে দাঁড়াতেই হুস হাস করে বাতাস ছুটে যায়।দুখানা ইস্পাত রোদে পড়ে আছে। ওটার ওপর দিয়ে রেলগাড়ী যায়। তেষ্টায় বুক কাঠ হয়ে আছে। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। সাপ ব্যাঙ ধরলে যেমন হাসফাঁস করে আমি তেমন করছি।

ধড়মড়িয়ে বসি আমি, কোথায় শুকনো জমি?  কোথায় রেল লাইন?  হালকা আলোয় আমার শয়নকক্ষের চারদিকে চোখ বুলাই। অহনা শুয়ে আছে। আমি ভাবতে থাকি তবে কি স্বপ্ন দেখছিলাম। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি। রাতে শোওয়ার সময় ফুড এ্যালার্জীতে আমার মরে যাওয়ার জোগাড় হয়ে ছিল। আজ অহনা না থাকলে হয়তো মরেই যেতাম। এ্যালার্জিক রিএ্যাকশনে মুখখানা যা হয়েছিল? নব্বই বছরের বৃদ্ধের মতো। আমি আস্তে করে চোখে মুখে জল দিয়ে আসি।

অহনার দুনিয়া উল্টে গেলেও ওর অফিসে যেতে হবে। বেচারী রাত দুটো পর্যন্ত আমার জন্য জেগে ছিল। আহ কি নিশ্চিতে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি আস্তে করে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই। বাতাস দিচ্ছে হালকা। সে বাতাসে বেলফুলের গন্ধ আসে কোথা থেকে। অন্ধকার রাত্রির ঢাকা শহর তার বুকে চেপে ধরে আছে আমাকে। দুটো বিড়াল ঝগড়া লাগে হঠাৎ করেই, আমি চমকে যায়। হঠাৎ নাকে ধূপকাঠির গন্ধ। আমি কেমন হয়ে যাই। পৃথিবীতে বহুকাল বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে।পরিচিত মানুষ গুলো কেমন ছিটকে যাচ্ছে এদিক সেদিক। ইচ্ছে করে যারা আছে তাদের বেঁধে রাখি মোয়ার মতো।

দুরে মনে হয় কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। রেলিঙে ঝুঁকে চেয়ে দেখি। কেউ নেই। শ্বাস ফেলি। আমার আর অহনার মাঝে অন্তহীন শুন্যতার ব্যবধান। বাইরে ঝিঁঝি ডাকে। তার পর হঠাৎ থেমে যায়।শহরটাকে জনহীন নিস্তব্ধ মনে হয়।সামনে এক মহা পৃথিবী।খুব ভোর। আলো ফোটেনি। কুয়াশার মতো একটা ভাঁপ চারদিকে। আবছা ঢাকা শহরের আকাশ-রেখায় একটা তারা জ্বলে। ঠান্ডা বাতাস বয়। স্বর্গের হাওয়া?  কত লোক এখনো ঘুমিয়ে আছে। পৃথিবী কী শান্ত!  নিরালা। মানুষে মানুষে কত রকমের সম্পর্ক তৈরী হয়। ভালোবাসার, ঘেন্নার, প্রতিশোধের। এ সবের বাইরেও কি কোন সম্পর্ক থাকে?  মনে হয় থাকে। সেটা কেমন সম্পর্ক  তা হয়তো  স্পষ্ট বোঝা যায়না। কিন্তু আছে। ক’দিন ধরে ঝেঁপে বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ কালো করে আসে আর ঝরে। বৃষ্টি ঝরছে আচমকা। বারান্দার বাইরে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ বৃষ্টির ফোঁটা তাতে পড়ে ডুগডুগির মতো বাজছে। নীচে জলে আর মাটিতে ভীষণ ভালোবাসার শব্দ। ঠান্ডা হয়ে  আসে মাটি। আমার শীত করে। হু হু হাওয়া দিচ্ছে। আমি শুতে আসি। জীবন কত রকম হয়। নানা রকম। এইযে আমি আমার টা যাপন করছি।

ইদানিং বিকেল হলেই প্রচন্ড মাথা ব্যাথা শুরু হয়। বাইরের আলো যতো কমে, চেতনাও বধির হয়ে আসতে থাকে ক্রমশ। চর্তুদিক এক গাঢ় কুয়াশায় ছেয়ে যায়,এক পাল মৌমাছির চাক ভেঙে বেরিয়ে এসে মাথার ভেতর ঘুরতে থাকে,ঘুরতে থাকে, ঘুরতেই থাকে অবিরল । কখনও কখনও এলোপাথাড়ি দংশন ও করে চলে তারা। সে যে কী অসহ্য যন্ত্রণা!  যন্ত্রণা মাথায় নিয়েই চেম্বারের জন্য বেরিয়ে যাই।

মাথা ব্যাথার সময় নদীতে ডুব দিলে আশেপাশের কলরোল যেমন দূরাগত ধ্বনি মনে হয়, ঠিক তেমনটিই শুনি আমি। অস্পষ্ট। জড়ানো। অসাড় চৈতন্যের ঘোরে ওই ধ্বনি, মানুষের ঘোরাফেরার ওই চলচ্ছবি। সবই বড় অলীক মনে হয় আমার কাছে। মনে হয় যা দেখছি তা সত্যি নয়, এই

বুদবুদ এক্ষুনি মিলিয়ে যাবে। একজন পেশেন্ট এসেছে। লোয়ার এবডোমেনে পেইন নিয়ে। পুরনো আল্ট্রাসাউন্ড নিয়ে এসেছে। ইউটেরাসে ফাইব্রয়েড। সাইজও মনে হলো ভালই। আউটার ওয়ালে ফর্ম করেছে। নতুন একটা আল্ট্রা করানো দরকার। গাইনীর কাউকে রেফার করা দরকার।

গত বছর এই সময়টাতে ও আমি খুব অসুস্থ ছিলাম। মাথার ভেতর কোথা দিয়ে যেন এক নদী বয়ে চলছে কুল কুল। এক

নিরুদ্ধ কষ্টের পাষানে আছড়ে পড়ছে। আবার ঘোর নামছে চোখে। আবার ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছড়িয়ে যাচ্ছে মাথায়। গা-টাও কেমন গুলোচ্ছে। শরীর শির শির। আমার ঘুম ভেঙে গেল। ঘামে জবজব হয়ে গেছে শরীর। বিছানা ও ভিজে সপসপ। রাতের স্বল্পস্থায়ী নাগরিক নির্জনতাকে ফালা ফালা করে ডেকে উঠলো একটা নিশাচর নাম না জানা পাখি। ইট পাথরের জঙ্গলে প্রতিধ্বনি আর্তনাদ হয়ে ফিরে আসছে বার বার। শুক্লপক্ষের রাত ভরে আছে এক মলিন জোস্নায়। মিহিন মেঘের চাদরে ঢেকে আছে পঞ্চমীর চাঁদ। বড় পান্ডুর, কৃশ দেখাচ্ছে চাঁদকে। একটু একটু হিম ভাব ও এসে গেছে বাতাসে। গত তিন বছর আগে এই সময়টায় খুব ভোরে শীতলক্ষ্যা খুব টানতো আমায়। টানতে থাকতো। নদীর পুব পাড়ে ছেয়ে যেত এক অলৌকিক আলোয়। লাল নয়, হলুদ ও নয়, ঠিক কী যে রঙ!  ওই বিভা মেখে দুরের কারখানার চিমনি গুলো কেমন অপার্থিব দেখাতো। ইট বালির কাঠামোরা যেন স্বর্ণ রেনু মাখা। উজান স্রোতে ভেসে যেত খড়কুটো, কচুরিপানা। তির তির কাঁপতো সোনার কুচির মতো ঢেউ। আমিও ভেসে যেতাম যেন তাদের সাথে। স্রোত বেয়ে পাড়ি দিতাম বহুদুর। অজস্র জনপদ দুধারে ফেলে, ভাসমান লঞ্চ নৌকাদের কাটাতে কাটাতে কল্পনায় পৌছে যেতাম মোহনায়। বঙ্গোপসাগর থেকে ভারত মহাসাগরে। ভারত মহাসাগর থেকে লোহিত সাগরে, সেখান থেকে সুয়েজ, সুয়েজের সুরঙ্গ ভেদ করে ভূমধ্যসাগর, অাটলান্টিক…….. । নদী একটা আঁশটে গন্ধ ছড়াতো, আশ্চর্য এক বাষ্প উঠতো নদীর জল  থেকে। বাষ্প, না নদীর দীর্ঘশ্বাস? অদ্ভুত এক তৃপ্তি আর অতৃপ্তির ঘোরে তলাতে তলাতে আমার সকাল গুলো কাটতো।

এখন চারপাশ আমার মুক্ত। আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ ভাসছে। ওই মেঘ বলে দেয় আকাশের কান্না নেই।

বুকের মধ্যে রাগ বিরক্তি দুঃখ জমাট বেঁধে গেলে মানুষ তা একা বয়ে বেড়াতে পারে, আমিও পারছি।সকাল থেকে উড়ো মেঘে বৃষ্টি হচ্ছিল মাঝে মাঝে। আজ তেমন গরম ও নেই। বাসা থেকে অহনাকে নিয়ে যখন বেরিয়েছি তখন অহনা অনাবিল হাসছিল। ওর মধ্যে একধরনের শিশু সূলভ সারল্য আছে। পৃথিবীর সমস্ত ক্ষোভ বেদনা নৈরাজ্য ঢেকে যায় ওর এই সারল্য মাখা মুখ দেখলেই। একবুক যন্ত্রণা লুকিয়ে আমি ও রোজ হাসি। আমার হাসি মাখা মুখটার পিছনে কত কান্না লূকানো কেউ দেখে না? কেন কেউ দেখতে পায় না? অবলম্বন করে বাঁচতে চাওয়া মানুষগুলো কেন মাঝ পথে হাত ছেড়ে দেয়?  নিজের প্রয়োজনের কথা ভেবে, নিজের সুখ সমৃদ্ধি চাহিদার কথা মাথায় রেখে দলবদ্ধ হয়েছে মানুষ।গড়েছে সমাজ, নির্মান করেছে পরিবার, অসংখ্য ধরা-অধরা সম্পর্কের সূতোয় জড়িয়ে নিয়েছে নিজেকে। চিরকাল মানুষ বিশ্বাস করতে চেয়েছে সে পরিবারের মধ্যে, দলের মধ্যে, সমাজের মধ্যে বেঁচে থাকতে চায়, সঙ্গীহীন জীবন যেন বৃথা।অথচ কী আশ্চর্য, প্রতিটি মানুষই কিন্তু মূলত একা। একাই। আজীবন। জীবনের প্রতিটি স্তরে তার ভিন্ন ভিন্ন নামের সহযাত্রী জোটে বটে কিন্তু তাতে হৃদয়ের নির্জনতা ঘোচে না। নাকি আবহমান কাল ধরে চিরন্তন ষড়রিপু মানুষের মনে বুনে চলেছে একাকীত্বের বীজ?? জীবনের নানা হিসেব নিকেষ, টুকি টাকি চাওয়া পাওয়া, মিলাতে পারছি না কোন হিসেব নিকেষ। যোগ বিয়োগে লাভের খাতাটায় কেবল শূন্য । মানুষের জীবন ভীষন বিচিত্র, ভীষণ অদ্ভূদ। ইদানিং প্রায়ই এক ভরভরতি ঝিম ভাবে ছেয়ে যায় আমার শরীর। ফোঁটা ফোঁটা আলস্যের তৃপ্তি স্ফটিকের দানা হয়ে গড়াতে থাকে বুকের অন্দর মহলে। এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত। যৌবনের শুরু থেকেই আমার গভীর বিশ্বাস আমারই আশে পাশে কোন এক জায়গায় লুকিয়ে আছে আমার সাফল্যের চাবিকাঠি। সাফল্য মানে সুখ। চাবিটা খুঁজে পেলেই অতি সহজে রাশি রাশি সুখ এসে যাবে আমার জীবনে। আমি চাবিটারই সন্ধান করছি আজীবন। কখনও আধো তন্দ্রায় কখনও বা জেগে জেগেই। অসংখ্য গোপন শুঁড়িপথ চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায় আমার। যে কোন একটা ধরে এগুতে ইচ্ছে করে আমার, এগোই। কিন্তু কিছুটা গিয়েই পথের মুখ রুদ্ধ হয়ে যায়। তখন আর একটা পথ খোঁজা। আবার হোঁচট খেয়ে রন্ধ্রপথে ফিরে আসা। নিত্যদিন ক্ষুদ্রতা নীচতার সঙ্গে আপোস করতে করতে মানুষের মন কি ছোট হয়ে যায়??? সংসারের মালিন্য, বেঁচে থাকার জটিলতা, প্রাপ্তি -অপ্রাপ্তির হাহুতাশের সাথে কত আর আপোষ করা যায়। সময় জিনিসটাও বড় নিষ্করুণ। সঙ্গেই ছুটছে, কিন্তু পিছন ফিরে তাকাতে জানে না। ভালো লাগার তাজা মুহুর্ত গুলোও নিমেষে বাসি হয়ে যায়।মৃত্যু কি কারুর ইচ্ছা পুরণের আশায় বসে থাকে??

রোজ দু’একবার করে ফেসবুকে ঢুঁ মারি। প্রযুক্তির কী মহিমা, হারিয়ে যাওয়া বন্ধুরাও কেমন জড়ো হতে পারে এক জায়গায়। হোক না এক কাল্পনিক পরিসর, যোগাযোগ একটা হচ্ছে তো। স্কুলের বন্ধু, কলেজ- ইউনিভার্সিটির সহপাঠী…  কত হারিয়ে যাওয়া চেনা জানাকে খুঁজে পেলাম এখানে। ফেসবুকের দেওয়াল-লিখন পড়তে পড়তে রোজ হাসি। কত রকমের লিখা, কত রকমের অনুভূতি।

কত মানুষের মৃত্যু সংবাদ, কিছু কিছু খবরে তো হতবুদ্ধির মতো বসে থাকি। বাইরে আকাশের আজও মুখ ভার। শরৎ চলছে। রোজই এখন ঢালছে দু-চার পশলা, তবে তেমন জোরদার বারিধারার দর্শন মিলছে না। শুধু মেঘই সার, ভ্যাপসা গুমোটে বৃষ্টি যেন উবে যায়।মাথা দপদপ করে। জীবনের সমীকরণ বড্ড জটিল মনে হয়, ধাঁধার মতো লাগে। লোক কি ভাবে?  ভাবে ডাক্তার মানেই টাকা, ডাক্তার মানেই পয়সাওয়ালা লোক। আদৌ কি তাই???  পোস্ট গ্রেজুয়েশন শেষ করতেই তো চল্লিশ শেষ হয়ে গেল। মানুষ বাঁচে ক’দিন? তারপর প্রাইভেট প্রাকটিস জমানো সে তো বিশ্বযুদ্ধের মতো ভীষন ক্যাচালে। ওদিকে স্ত্রী সংসার ছেলপুলে, বাঁচার আর উপায় থাকে না।

সিনিয়রদের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রাকটিস সে ভারী ভজকট ব্যাপার। একটা জায়গায় থিতু হতেই তো লেগে যায় বছর ছ’মাস। সে পর্যন্ত হাওয়া গিলে তো আর থাকা যায় না। অকোয়ার্ড সিচুয়েশনে পড়ে যায় ।প্রতিদিন নিজের মনের সাথে নিজের অসংখ্যা কাটাকুটি। হিসাবের খাতায় গোল্লা।

জীবনের এতো পরীক্ষায় বসেছি, এত পরীক্ষা দিয়েছি কখনো কম মার্কস পাইনি। কিন্তু সংসারের পরীক্ষা এযে বড় কঠিন। সংসার ভারী আজব জায়গা। এ চেরাপুঞ্জি নয়, যে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে থাকবে সর্বক্ষন। আবার গোবি সাহারাও নয়, যে এখানে মেঘের আর্বিভাব অপ্রত্যাশিত। এ মরুপ্রদেশ ও নয়, নিরক্ষীয় অঞ্চল ও নয়। অন্তত শৈত্য বা ধরাবাঁধা বৃষ্টির আবর্ত্যে আটকে থাকে না চিরকাল। সংসারে বুঝি ছয় ঋতুই বাস করে একত্রে। গ্রীষ্ম বর্ষা শীত বসন্ত, কে যে কখন দখল নেবে সংসারে আগাম ঠাহর করা দায়। অবশ্য কোনটারই সংসারে পুরোপুরি গেঁড়ে বসে থাকা হয়না। তবে প্রত্যেকেরই ছাপ রয়ে যায় সংসারে। কোথাও না কোথাও। এইযে ইদানিং নিজের সমস্যার ঝাল মেটাচ্ছি লোকের ওপর। অকারনে ফোলে নাকের পাটা। দপদপ করে কপালের শিরা। কেন বশে রাখতে পারছি না নিজের স্নায়ু??  খারাপ, খারাপ।খুব খারাপ। শরীর কেমন ছেড়ে ছেড়ে যাচ্ছে। যেন লম্বা একটা দূর্গম পথ ধরে হাঁটছি আর গন্তব্যেই পৌছুতে পারছি না। কোন ও আনন্দ নেই, বুক ভরে বাতাস ভরার স্বস্তি নেই, এ যেন সহসা এক শূন্যতার গহ্বরে পতন। ঝিমিয়ে পড়ছে স্নায়ু। জন্মানো মানেই এক পা এক পা করে মৃত্যুর দিকে হেঁটে চলা। জীবন একটা রাসায়নিক বিক্রিয়া।

সময় কত কিছু নিয়ে চলে যায়। শুধু কি নিয়েই যায়?  কোথায় যেন পড়েছিলাম, মানুষ নিজেকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসেনা। তাহলে অন্যকে ভালোবাসা কি শুধুই ভ্রান্তি?? প্রতিটি মানুষই কোন এক নির্দ্দিষ্ট বিন্দুতে এসে নিজের কাছেই অসহায়। খারাপ সময় যখন আসে তখন তখন আশে পাশে কাউকে আর দেখতে পাওয়া যায়না। আসবাব ভরা ঘরটাকেও মনে হয় জনহীন প্রান্তর।

জন্মের পর এতগুলো বছর কি অ্যাচিভ করেছি? সংসার? স্বাচ্ছন্দ্য? নিরাপত্তা?  কী?  নাকি একটু একটু করে একা হয়ে যাওয়া? এক ভাঙা ভাঙা নিঃসঙ্গতা?  কী? নদীর এক জলে কি দ্বিতীয়বার স্নান করতে পারে মানুষ??হলুদ শৈশব,  গোলাপী কৈশোর, নীলচে যৌবন কোথাও কি পুনরায় ফিরতে পারে মানুষ?? গত ক’দিন মনের ভেতর ভীষণ কাটাকুটি খেলা চলছে । আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ি, ঘুম আসে না। জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকি, ঘুম আসে না। ক্লান্তিতে চোখ জড়িয়ে আসছে, ঘুম আসেনা। নীল অন্ধকারে জেগে আছি। মস্তিষ্ক অদৃশ্য আঁকিবুঁকি কেটে চলে শুন্যে। কী হবে জীবনের শেষটুকু?  কী হবে??

সকাল থেকেই জোর বৃষ্টি নেমেছে। আকাশ এখনও সীসে

বরণ,মেঘের ভারে নেমে এসেছে নীচে। এখন বৃষ্টি নেই। ফ্ল্যাট ময় ফিরে বেড়াচ্ছে এক স্যাঁতস্যাঁতে বাতাস। হালকা একটু রোদের হল্কা। একটু জিরিয়ে নিচ্ছে আকাশ। তবে মেঘ এখনো পুরোপুরি কাটেনি, ভারী শরীর নিয়ে অলস মেজাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে আকাশময়। তার ফাঁকে হঠাৎ হঠাৎ সূর্য চোখ খুলছে। তার লাজুক আলোয় দুপুরের আকাশ যেন জলরঙে আঁকা ছবি। আমার ঘরে এক মায়াবী আলোছায়া। রোজ দু’একবার করে ফেসবুকে ঢুঁ মারি। প্রযুক্তির কী মহিমা, হারিয়ে যাওয়া বন্ধুরাও কেমন জড়ো হতে পারে এক জায়গায়। হোক না এক কাল্পনিক পরিসর, যোগাযোগ একটা হচ্ছে তো। স্কুলের বন্ধু, কলেজ- ইউনিভার্সিটির সহপাঠী…  কত হারিয়ে যাওয়া চেনা জানাকে খুঁজে পেলাম এখানে। ফেসবুকের দেওয়াল-লিখন পড়তে পড়তে রোজ হাসি। কত রকমের লিখা, কত রকমের অনুভূতি। কত মানুষের মৃত্যু সংবাদ, কিছু কিছু খবরে তো হতবুদ্ধির মতো বসে থাকি। বাইরে আকাশের আজও মুখ ভার। শরৎ চলছে। রোজই এখন ঢালছে দু-চার পশলা, তবে তেমন জোরদার বারিধারার দর্শন মিলছে না। শুধু মেঘই সার, ভ্যাপসা গুমোটে বৃষ্টি যেন উবে যায়। ইদানিং বিকেল হলেই প্রচন্ড মাথা ব্যাথা শুরু হয়। বাইরের আলো যতো কমে, চেতনাও বধির হয়ে আসতে থাকে ক্রমশ। চর্তুদিক এক গাঢ় কুয়াশায় ছেয়ে যায়,এক পাল মৌমাছির চাক ভেঙে বেরিয়ে এসে মাথার ভেতর ঘুরতে থাকে,ঘুরতে থাকে, ঘুরতেই থাকে অবিরল । কখনও কখনও এলোপাথাড়ি দংশন ও করে চলে তারা। সে যে কী অসহ্য যন্ত্রণা!  যন্ত্রণা মাথায় নিয়েই চেম্বারের জন্য বেরিয়ে যাই।

মাথা ব্যাথার সময় নদীতে ডুব দিলে আশেপাশের কলরোল যেমন দূরাগত ধ্বনি মনে হয়, ঠিক তেমনটিই শুনি আমি। অস্পষ্ট। জড়ানো। অসাড় চৈতন্যের ঘোরে ওই ধ্বনি, মানুষের ঘোরাফেরার ওই চলচ্ছবি। সবই বড় অলীক মনে হয় আমার কাছে। মনে হয় যা দেখছি তা সত্যি নয়, এই বুদবুদ এক্ষুনি মিলিয়ে যাবে।

আবার ঘোর নামছে চোখে। আবার ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছড়িয়ে যাচ্ছে মাথায়। গা-টাও কেমন গুলোচ্ছে। শরীর শির শির। আমার ঘুম ভেঙে গেল। ঘামে জবজব হয়ে গেছে শরীর। বিছানা ও ভিজে সপসপ। রাতের স্বল্পস্থায়ী নাগরিক নির্জনতাকে ফালা ফালা করে ডেকে উঠলো একটা নিশাচর নাম না জানা পাখি। ইট পাথরের জঙ্গলে প্রতিধ্বনি আর্তনাদ হয়ে ফিরে আসছে বার বার। শুক্লপক্ষের রাত ভরে আছে এক মলিন জোস্নায়। মিহিন মেঘের চাদরে ঢেকে আছে পঞ্চমীর চাঁদ। বড় পান্ডুর, কৃশ দেখাচ্ছে চাঁদকে। একটু একটু হিম ভাব ও এসে গেছে বাতাসে। গত দুই সপ্তাহ আমি , আকরাম ভাই , মাসুম , শরীফ ভাই , রবীন , যুবরাজ , শাকিল , আরিফ , সেতু , সংগীতা , সজীব মিলে রংপুরের পীরগঞ্জ , কুমিল্লা , নোয়াখালিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুঃখ শুনতে গিয়েছি । ঘর পুড়েছে , মন পুড়েছে । আচ্ছা অন্য ধর্মের মানুষকে কষ্ট দিয়ে কি ধার্মিক হওয়া যায় ? ধর্ম কি পিচাশ হতে শিক্ষা দেয় ? আমাদের দেখে ভীতসন্ত্রস্থ ক্লাশ থ্রিতে পড়া অন্তর এবং ক্লাস ওয়ানে পড়া পল্লব ছুটে আসে । তারা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে ,মনে হচ্ছিল যেন আর বাঁচার কোন আশাই আর নেই । পরে বাড়ীর পাশের ধান ক্ষেতে পুরো রাত বাবার কোলে শুয়ে ছিলাম । চারপাশে কেবল আগুন আর আগুন । দাউ দাউ করে জ্বলা সে আগুন দেখে মনে হচ্ছিল যুদ্ধ লেগেছে দেশে । বাচ্ছা দুটোর মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না । নোয়াখালিতে মন্দিরে হামলার সময় সিন্দুক ভাঙার যন্ত্রপাতি নিয়ে হামলাকারীরা এসেছিল । অন্যের উপাসনালয়ের জিনিস লুট করা কোন ধর্মে আছে ? এটা কি জুলুম নয় ? ধর্ম কি জুলুম সমর্থন করে ? সেখান থকে আসার পর থেকে ঘুমাতে পারছি না । চোখ বুজলেই , ঘর পোড়া মানুষ গুলোর আর্ত মুখ আদ্র চোখ কেবল ভেসে উঠছে । পিশাচরা পীরগঞ্জের নিরঞ্জনের ফুলকপির জমিতে কুপিয়ে , উপড়ে ফেলে দিয়েছে তার সব ফসল , জমির আলে বসে উদাস গালে হাত দেয়া নিরঞ্জনের মুখটা ভাসে চোখ বুজলেই ।

ধন যে দস্যুতা এটা বাংলাদেশের সরকারপন্হী ধনীরা যেভাবে প্রমাণ করে যাচ্ছে, তা এদেশের ইতিহাসে আর কেউই পারে নি। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। কোথায় ঘুষ নেই? সাব-রেজিষ্ট্রি থেকে বিআরটিএ, শিক্ষা থেকে মেগা প্রকল্প, শিক্ষক থেকে চিকিৎসক-সর্বত্র দুর্নীতি, ঘুষ, লুটপাট সংক্রমিত হয়ে পড়েছে। এ দিকে, বিদ্যুৎ খাত থেকে সরকারী কর্মচারী- সব ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নীতির মাধ্যমে সরকারী  কর্মচারীদের ঘুষ দুর্নীতির বিষয়ে ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে। এক সেক্টরে যখন ঘুষ দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে, তখন খুব সঙ্গতভাবেই অন্যান্য সেক্টরেও ঘুষ দুর্নীতি জেঁকে বসেছে। এদিকে ঘুষ দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছে সরকার। সেখানে হাত দিয়ে দেখা গেলো গেল, কেঁচো খুঁড়তে বড় বড় অ্যানাকোন্ডা সাপ বেরিয়ে আসছে। তারপর যেন সরকার খামোশ হয়ে গেছে। এখন অভিযান স্তিমিত। আটক করার সবুজ সংকেত যে আর আসে না। আর সবুজ সংকেত ছাড়া আর কাউকে ধরতেও পারছে না আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।

এখন এ-দেশে বেশীরভাগ টাকার মালিকই দুর্নীতিতে আসক্ত। দুর্নীতি ছাড়া এখানে ধন অসম্ভব। কোটি কোটি টাকা হয়েছে অনেকের; ওই টাকা সৎপথে হয়নি, হয়েছে দুর্নীতির কালো পথে। বড়ো ধনীরা সরকারী সহযোগিতায় লুট করেছে ব্যাংক; তারা ধার নিয়েছে, ফেরত দেয় নি; কারন, ফেরত চাওয়ার মতো অবস্থা রাষ্ট্রচালকের নয়। ওই ধারের বড়ো টাকার অংশ তারাই পেয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হলেও রাস্তা, কালভার্ট, ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় এখানে অন্য সব দেশের তুলনায় ৩ থেকে ৪ গুন। মেগা প্রজেক্টে হচ্ছে মেগা লুটপাট।  সরকারী কর্মচারীদের জন্য হয়ে উঠেছে বর্তমান সময়টা সোনালী কাল। কোটি কোটি টাকা প্রতিদিন লুট করছে কয়েক হাজার শক্তিমান। দেশে শেষ নেই ঘুষ আর চোরাচালানির। পিয়ন ঘুষ খাচ্ছে, কেরানি ঘুষ খাচ্ছে, কর্মকর্তা খাচ্ছে, পরিচালক খাচ্ছে, মহাপরিচালক ঘুষ খাচ্ছে; ব্যবস্থাপক খাচ্ছে, কোষাধ্যক্ষ খাচ্ছে; পুলিশ খাচ্ছে; দারোগা খাচ্ছে, তাদের কর্তারা খাচ্ছে; সবাই ঘুষ খাচ্ছে। ঘুষই হয়ে উঠেছে গরম ভাত। অস্থিরতা এবং সংবিধান লঙ্ঘনের চরম অবমূল্যায়নের মুহূর্তে আন্দোলনের বিকল্প কিছু হতেই পারেনা। ঘরে – বাইরে আন্দোলনের মাধ্যমে সকল অনিয়মের অবসান অবশ্যম্ভাবী জরুরী হয়ে পড়েছে। এমুহূর্তে দেশের সকল প্রগতিশীল মানুষকে একজোট হয়ে সংগ্রাম করা উচিত। এ চরম দম বন্ধ করা পরিস্থিতিতে দেশের পেশাজীবিদের রাজপথে নামা উচিত বলে আমার মনে হয়।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews