আলোচিত শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার হত্যার প্রধান আসামি আশরাফুল আহসান জিতুকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য উৎপল কুমার সরকার হত্যাকাণ্ড মামলার প্রধান আসামি জিতুকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনার পরই আমরা তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করি। এ ঘটনায় আমরা জিতুর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।’
এদিকে শিক্ষক উৎপল কুমার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বন্ধ থাকা আশুলিয়ার সেই হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে পুলিশ পাহারায় শনিবার থেকে ক্লাস শুরু হচ্ছে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় আশুলিয়ার চিত্রশাইলে হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা জেলা পুলিশের মতবিনিময় সভা শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার।
সভায় শিক্ষক উৎপল কুমারের হত্যাকারী জিতুকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ জানায় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিহতের পরিবারের ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি করে তারা। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বখাটেদের উপদ্রবসহ নানা সমস্যার কথা পুলিশের সামনে তুলে ধরেন এবং স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরার কথা জানান তারা।
এ সময় পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ওই এলাকায় নিয়মিত পুলিশ টহলের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি নিহত পরিবারের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার কথাও জানান।
এলাকায় রয়ে গেছে জিতুর কিশোর গ্যাং
আশুলিয়ায় শিক্ষক হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার প্রধান আসামি স্কুলছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতুর বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। স্থানীয়রা জানায়, প্রভাবশালী পরিবারের এই ছেলে ‘জিতু দাদা‘ নামে একটি কিশোর গ্যাং তৈরি করেছিলো। বিভিন্ন সময় মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঘুরত, মানুষকে হেনস্তা করত জিতু। তার বিরুদ্ধে বিচার দেওয়া হলে উল্টো ভয়-ভীতি দেখাত এবং বিচারপ্রার্থীর বাড়ির সামনে দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন দিত। এজন্য তাকে কিছু বলার সাহস পেতেন না কেউই।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, এছাড়া জিতু স্কুল প্রাঙ্গণে ধূমপান করত, অদ্ভুত স্টাইলে চুল রাখত। বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেলে কলেজে প্রবেশ করত। এসব না করার জন্য জিতুকে অনেকবার নিষেধ করেছিলেন উৎপল। এসব কারণে শিক্ষক উৎপলের উপর ক্ষোভ ছিল জিতুর। আর সর্বশেষ যোগ হয় বান্ধবীর সাথে অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখে ফেলার ঘটনা।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে প্রকাশ্যে শিক্ষক উৎপলকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (২৭ জুন) মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহত শিক্ষকের ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় মামলা করলে ২৮ জুন রাতে কুষ্টিয়া থেকে জিতুর বাবা উজ্জ্বল হাজীকে এবং ২৯ জুন গাজীপুর থেকে জিতুকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে আশুলিয়া থানা পুলিশ তাদেরকে আলাদা করে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।