1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২০ অপরাহ্ন

নদী পর্বঃ সুতাং নদী

জামিল জাহাঙ্গীর
  • প্রকাশিত: রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০২২
সুতাং নদী। ছবি- সংগৃহীত
ঢাকা সিলেট মহাসড়কের সুতাং সেতু চোখের পলকেই পার হয়ে যায়। ভৈরবে মেঘনা সেতু এরপর শাহবাজপুর সেতু পেরুনো মানুষেরা সুতাং নদীর অস্তিত্ব টের পায় না। নালার উপরে নির্মিত সেতুকে কালভার্টের মতো মনে হয়।কিন্তু তলদেশে কালো স্রোত দেখে বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই দম বন্ধ করা পঁচা একটা দুর্গন্ধ নাকে ঢুকে পড়ে। নাক মুখ বন্ধ করে এ পথ পাড়ি দেয় পথিক। এ পথ দিয়ে প্রায়ই আমাকে যেতে হয়। অনেক নদীর হাতছানি আমাকে ঘোরতর তন্দ্রার ভেতরে ঘুমুতে দেয় না সুতাং সে দলেরই।
অথচ এ এক পাহাড়ী নদী ষার রূপবিভায় মুগ্ধ হয়েছে লোকালয়ের তাবৎ মানুষ। স্ফটিক জলের বিস্তৃত ঢল নিয়ে সুতাং অল্প কদিন আগেও ছিল ভয় জাগানিয়া দুর্দান্ত নদী। মাধবপুরের সোনাই আর শায়েস্তাগঞ্জের খোয়াই এর মাঝখানে সুতাং এখন মূলত কোন নদীই নয় কালো কারখানার পাপ বয়ে চলা ইশ্বরের ড্রেন এর সঙ্গে সরাসরি নরকের সংযোগ রয়েছে।
চুনারুঘাটের আমু চা বাগানের পাহাড়ি এলাকা থেকে সুতাং নদীর জন্ম। পরবর্তীতে চা বাগান ও পাহাড়ি টিলা হয়ে নদীটি চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ সদর ও লাখাই উপজেলা হয়ে কালনী নদীতে মিশেছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ৮৫ কি.মি. এবং প্রস্থ ৮০ মিটার। চা বাগান, অরণ্য, টিলাভূমি ও সমতল গ্রাম নিয়ে সুতাং নদী প্রায় ৪০০ বর্গ কি.মি. অববাহিকা তৈরি করেছে। চাঁন্দপুর চা বাগানে কিছু চিকন নালা আর পাহাড়ি ছড়া থাকলেও এই নদীটি বয়ে গেছে চাঁন্দপুর বাগানের ভেতর দিয়ে। সুতাং পাড়ের জেলেরা এই নদী থেকেই মাছ ধরেন। সুতাং নদীর লাটি মাছ ও গুতুম খুব বিখ্যাত ছিলো একসময়। এখনও মাগুর, কই, টেংরা, কুইচ্যা জাতীয় মাছ ধরা যায়। শামুক, কাঁকড়া সংগ্রহ করা যায়। তবে চা বাগানের বিষের কারণে জলজ বাস্তুসংস্থান আজ বিপন্ন।
বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩ অনুযায়ী আইন লঙ্ঘনের শাস্তি অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড। পাশাপাশি জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন আইন ২০১৩ অনুযায়ী শিল্পকারখানা কর্তৃক কোনো নদী দূষণ ও নদীর অবৈধ দখল আইনত দণ্ডনীয়। আর এইসব আইন লঙ্ঘন করেই সুতাং তীরে চাঁন্দপুর চা বাগানে তৈরি হয়েছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
অগুনতি কল কারখানার কারোরই নাই নদী কিংবা জলাশয়ের পরিবেশ রক্ষার প্রতি নুন্যতম বিবেচনাবোধ। কারখানার বর্জ্য বিরামহীন নদীগর্ভে এসে নরে গেছে সুতাং। এখানে কোন রাষ্ট্র নেই, নেই গ্রহনযোগ্য সরকার। কারখানার মালিকেরা এখন পৃথিবীর মালিক। নদীরা বেতনভুক্ত শ্রমিক। মালিকের পছন্দমতো না হলে ছাঁটাই।
এ নদীর পানি দিয়েই আবাদ হতো চুনারুঘাট, শায়েস্তাগঞ্জ ও লাখাই উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। নদী থেকে মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করত কয়েক হাজার জেলে পরিবার। এক সময় নদী দিয়ে বাঁশ আনা-নেয়া হতো। এর ওপর নির্ভর করেই শায়েস্তাগঞ্জের সুতাং বাজারে বাঁশের বিশাল হাট বসে। এখন এর সবই প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে।
জেলার মাধবপুর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত পুরো এলাকা শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠে। এসব শিল্প কারখানার অনেকেরই বর্জ্য শোধনাগার নেই। বড় কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অনেকেই বর্জ্য শোধন না করেই ছেড়ে দিচ্ছেন। খাল, নালা দিয়ে এসব বর্জ্য নদীতে ছাড়া হচ্ছে। ফলে নদীর পানি নষ্ট হয়ে কালো আকার ধারণ করেছে। স্থানীয়রা জানান, নদীর পানির তীব্র দুর্গন্ধের মধ্যেই তাদের বসবাস করতে হচ্ছে। অন্যদিকে পানি না পাওয়ার কারণে জমিতে ফসল উৎপাদন কমে গেছে। কৃষি কাজের জন্য সুতাং নদীর পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দিন দিন মানুষের রোগবালাই বাড়ছে। শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ নানা অসুখবিসুখ দেখা দিচ্ছে। নদীর বিষাক্ত পানিতে নেমে হাঁস, মোরগ, গবাদি পশু মারা যাচ্ছে। এলাকার মানুষের শরীর চুলকানি রোগ মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে।
চুনারুঘাট, লাখাই আর আর হবিগঞ্জ সদরের বিচিত্র প্রকৃতি বাংলাদেশের এক অন্যতম সম্পদশালী জনপদ। এর নিয়ামক অবাধ জলের প্রবাহ। সুতাং নদী হাজার বছর ধরে রেমা কালেঙ্গা ও চান্দপুরের প্রকৃতির নিয়ন্ত্রক ছিল। বুনো শুকর আর বিচিত্র সব প্রাণী বুকে নিয়ে এই অঞ্চল ছিল সমতল ও পাহাড়ি ভুমির এক অনন্য সমাহার। আজ দূষণে দখলে সব এলোমেলো। নদীখেকো মানুষেরা পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে চায় না। তাদের মুখোশ না খুললে সুতাং নদীর ঘুরে দাঁড়ানো সূদুর পরাহত।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews