
মজিব রহমান
আমার বাল্যকালে জুম্মার সময় এক হুজুর নামাজীদের জানাল, ‘মান্দ্রা গ্রামের কবিরাজ বাড়িতে এক নারীকে জোর করে হিন্দু বানানো হয়েছে৷ মেয়েটিকে উদ্ধার করতে হবে৷ আমরা একসাথে যাবো’৷
ফরজ নামাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমাদের মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদের শতশত মুছল্লী ওই বাড়ির দিকে লাঠি-চলা নিয়ে গিয়ে হামলা চালালো৷ আমি যাইনি৷
পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম, ওই বাড়ির এক ছেলে এক মুসলিম মেয়ের সাথে প্রেম করে মুসলিম হয়ে বিয়ে করেছে৷ ওই ছেলের এক ঘণিষ্ঠ বন্ধুর বিয়ের নিমন্ত্রণে সস্ত্রীক গ্রামে এসেছে এবং বউ নিয়ে বাড়িতে এসেছে৷
মুসলমানদের পবিত্র জুম্মার দিন শুক্রবারকে মৌলবাদীরা সংখ্যালঘু হিন্দু ও প্রগতিশীল মানুষের জন্য আতঙ্কের দিন বানিয়ে ফেলেছে৷ কদিন আগেই প্রগতিশীল শিক্ষাবিদ ড. রতন সিদ্দিকীর বাসভবনে হামলা চালালো শুক্রবারে৷ এমন বহু হামলা ওরা জুম্মার নামাজের পরে চালাচ্ছে৷ এসব করতে গিয়ে ওরা মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে, সামান্য বিষয়কে বড় করে উপস্থাপন করছে৷
মৌলবাদীদের বিশ্বাস কি খুবই ঠুনকো? কারো একটা ফেসবুক মন্তব্যেই তা ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়! নাকি তারা এতোটাই প্রতিক্রিয়াশীল যে, কোন কিছুই সহ্য করতে পারে না৷ অন্ধ বিশ্বাস তাদের ভিতর থেকে মানবিক গুণাবলী সরিয়ে দিয়েছে৷
গতকাল নড়াইলে এক কিশোর ছাত্রের ফেসবুক মন্তব্য বা স্ট্যাটাসের প্রতিবাদে জুম্মার নামাজ পড়ে প্রথমে বাজারের হিন্দুদের দোকানে হামলা চালায়, সাহা পাড়ার হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে আগুন ধরায় এবং যথারীতি মন্দির ভাঙচুর করে৷ মানুষ আরাধনা করবে স্রষ্টার সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য৷ তারা অবনত থাকবে এবং মনকে পবিত্র রাকবে৷ কিন্তু আমরা দেখছি তারা আরাধনায় যাচ্ছে বুকভরা ঘৃণা নিয়ে আর সময়টা কোনরকম পার করছে হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে এবং সবাই উদ্ধত, দুর্বিনীত ও উগ্র হয়ে হামলা চালাচ্ছে৷
মূর্খ মৌলবাদীরা একবারও ভাবে না স্রষ্টা যদি মুসলিমদের সৃষ্টি করে তবে সে হিন্দুদেরও সৃষ্টি করেছে৷ তারাতো মানে স্রষ্টা অসীম ক্ষমতাবান৷ তাহলে তিনি চাইলে এক সেকেণ্ডের মধ্যেই অপরাধীদের শেষ করে দিতে পারেন৷ কিন্তু মৌলবাদীদের মধ্যে স্রষ্টার ক্ষমতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বলেই আইন হাতে তুলে নিচ্ছে৷
সষ্ট্রা যদি সবাইকে সৃষ্টি করে তবে তার সব সন্তানইতো সমান৷ মেথরের ঘরে যার জন্ম সেতো সাধারণত মেথরই থাকছে এবং এখন মুসলমান ঘরে জন্ম নেয়ারাই মুসলমান থাকছে৷ কারো কোন ধর্মের বা জাতির বা দলের বিরুদ্ধে আপত্তি থাকলে তা প্রকাশ করতে পারাই গণতন্ত্র৷ যদি কেউ ভুল বলে তখন সত্যটা সামনে আনাই বড় কথা৷ কে কোথায় ফেসবুকে মন্তব্য করলো আর বাজারের দশটি দোকান ভাঙচুর করলো বিপরীত পক্ষ! এটা কেমন অন্ধ বিশ্বাস?
যারা সৃষ্টিবাদে বিশ্বাস করে তাদের কাছে একটা প্রশ্ন, ‘একজন যৌনকর্মীর গর্ভে যে কন্যা শিশুটির জন্ম হল তাকে কে সৃষ্টি করেছে? একজন মেথর বা ডোমের সন্তানদের স্রষ্টা কে? তাদের ইমান ও আমল করার হেদায়েত দেয়ার মালিক কে? আপনিতো বলবেন, ‘স্রষ্টা’! তাহলে সে কন্যা শিশুটি যদি যৌনকর্মী হয়, মেথর হয়, ডোম হয় তাহলে আপনি কেন তাদের অভিযুক্ত করবেন৷ আপনার চোখে ৪২৯৯ টি ধর্মই ভুল! অন্যের চোখেওতো আপনার ধর্ম ভুল৷ আপনি যদি অন্যের ধর্মকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতে পারেন তবে অন্যকেও সে অধিকার দিন৷ আপনার ধর্মটি শ্রেষ্ঠ ও সত্য হলে আলোচনা ও বিতর্কের পরেই না দলে দলে লোক আপনার ধর্মে আসবে৷
কিন্তু মৌলবাদীরা কেবলই ঘৃণা পোষণ করে, প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ করে৷ আর তাতে সভ্য মানুষের ঘৃণার পাত্র হয়৷
সরকার যদি মৌলবাদী মূর্খদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিত তবে এসব বন্ধ হতো৷ নড়াইলের ডিসি এসপিকে আগের ব্যর্থতার জন্য প্রত্যাহার করার দাবি ছিল৷ ধর্মালয় থেকে সংঘবদ্ধভাবে বের হলে এর দায় চাপাতে হবে৷ ছাড় দিতে থাকলেতো বাংলাদেশ আফগানিস্তানই হয়ে উঠবে৷