পর্ব-৫৩
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মন স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে। ক্রমাগতই নষ্টালজিক হয়ে পড়ছি। ঘুম কমে গেছে। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকি।ঘন ঘন সিগারেট খাই। সিগারেটের গন্ধে ঘরের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। শেষ রাতের দিকে ঘুমুতে গিয়ে বিচিত্র সব স্বপ্ন দেখে জেগে উঠি। আজ কাল খুব গ্রামে যেতে ইচ্ছে করে অহনাকে নিয়ে। ইচ্ছে করে সন্ধ্যে বেলায় আমাদের দীঘির শান বাঁধানো ঘাটে বসে জোনাকি পোকার আলো জ্বালা দেখি। পাশে অহনা আমার হাতটা ধরে বসে আছ। পরনে তোমার নীল শাড়ী। কপালে নীল টিপ । অল্প ক’দিন আমরা বাঁচি তবু এই সময়ে কত সুখ-দুঃখ আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে। কত গ্লানি, কত আনন্দ আমাদের চারপাশে নেচে বেড়ায়। কত শূন্যতা বুকের ভেতরে হা হা করে। সারাক্ষণ একটা বিষন্নতা চার পাশ থেকে ঘিরে আছে আমাকে । এই যে বিষন্নতার কথা বলছি সেটা যে কেমন , সেটা যে কেন তা আমার কাছে স্পষ্ট নয় । পৃথিবীতে মানুষ নানা রকম দুঃখ ভোগ করে , আলস্যবশতঃ তার কারণ অনুসন্ধান করে না । এই যে আমিও করি না । ছোট বেলায় খালার বাড়ী বেড়াতে গেলে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে খালুর একা জেগে থাকার শব্দ শুনতাম , তাঁর কাশি , তার সিগারেটের তামাক পোড়া গন্ধ , সে বয়সে খালুর সেই একাকীত্ব একটা অদ্ভূত রোমাঞ্চের মতো আমার বুক খামচে ধরত । খালুর একটু ধর্ম বৈরাগ্যতা ছিলো , সে কারণে ধর্মপরায়ন আমার খালা তাঁর ব্যাপারে ছিলেন কিছুটা উদাসীন । কেন জানিনা খালু পাগলের মতো আমায় ভালোবাসতেন । ডাকাতিয়ার একটা শাখা খাল বয়ে চলতো খালাদের গাঁয়ের পাশ দিয়ে , সেখানে খালু সাথে করে মাছ ধরতেন । সন্ধ্যায় গাঁয়ের হাঁট কাকৈরতলা বাজার থেকে নিয়ে আসতেন ঠোঙায় করে বাতাসা । পাঞ্জাবীর পকেট থেকে বের করে সে বাতাসা যখন দিতেন তাতে ভীষণ বাবা বাবা গন্ধ থাকত । খালার বাড়ীর উঠোনে দাঁড়িয়ে কখনও কখনও আমি আমার চারপাশে এক নিস্তব্দ অলৌকিককে অনুভব করতাম । সেই সব অনুভূতি ছিল আমার একার । কাউকে কখনো তা বলতাম না । তখন আমার সারা গায়ে শিউরনো রোমকূপ শাঁসওয়ালা ব্রণের মতো কাঁটা দিত ।
আমার একটি প্রিয় কাজ হচ্ছে বইয়ের ভেতর ডুবে থাকা । খুব বেশী বইয়ে ডুবে থাকার একটা সুবিধা হচ্ছে অভিনিবেশের দরুন নিজেকে ভূলে থাকা যায় । অনেকের মনে হতে পারে , নিজেকে ভুলে থাকা কেন ? নিজেকে ভুলে থাকার কি দরকার আমার ? কিন্তু কথাটা সত্য , নিজেকে ভুলে থাকা আমার একটু দরকার । যদিও আমি এমনিতে শান্ত , তবু আমার মাঝে মাঝে কেন যেন মনে হয় , আমি লোকটা বিপজ্জনক । ধীরে সুস্থে এককাপ কফি খেলাম । অহনার রন্ধনশালায় কাজ করার ভারী সুবিধে , সব কিছুই সুবিন্যস্ত রাখার কী নিখুঁত বন্দোবস্ত । বাড়ি ফিরে দৈনন্দিন খুঁটিনাটিগুলো সারে অহনা । বিকেলে একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে পারলে আমি দেখি কি মমতায় নিজের সংসার গুছানোর কাজে লেগে যায় । ফিল্টারে জল তোলা থেকে শুরু করে , কিচেনের কাঁচের গ্যাসস্টোভ মোছা সবই নিখুঁত ।ইউটিউবে নিমেশে দুনিয়ার সব দেশের মুভি জীবনমান সবই ঘুরে আসা যায় । লাইফ এখন সুপার ফাস্ট , আজ যা দেখে এনচান্টেড হই কালই তা অবসোলিট । ফেসবুক চালাতে আগে মোবাইল , কম্পিউটার বা ল্যাপটপ লাগত আর এখন টিভিতেই তা সম্ভব । টিভি এখন মাল্টিপারপাস গ্যাজেট । নতুন নতুন থ্রিলের জন্য নতুন নতুন মডেল । শাড়ী পরলে এত ভালো মানায় অহনাকে , তবু যে কেন পরতেই চায় না ! একটা বিয়ের দাওয়াত পেয়েছি ।যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুমের ছোট ভাইয়ের বিয়ে । অহনা কখনোই বেশী সাজে না , মানে পার্লারে গিয়ে সাজা যাকে বলে । হালকা প্রসাধনেই ওকে অপূর্ব লাগে । আমি বিছানায় শুয়ে ওর তৈরী হওয়া দেখছি । আমার চোখে চোখ পড়তেই একটা হাসি ।
নগরবাস তো অনেক দিন হলো । আর বছর পাঁচ সাতেক তারপর বাকী জীবনটা প্রকৃতির কাছে কাটাবো । ছোট একটা বাড়ী বানাব । সামনে টানা বারান্দা থাকবে , সে বারান্দায় একটা ঝুল দোলনা থাকবে । ঝমঝমিয়ে বর্ষা নামলে সেখানে বসে বৃষ্টির মাটিতে লুটিয়ে পড়া দেখব । পাশে ছোট একটা খামার করব । হাঁস আর ছাগলের । বাড়ীর পাশে বেড দেওয়া সবজীর খেত করব । পটল , ঝিঙ্গে , শসা , কাঁচালঙ্কা ……। নিম -শিমুল- আম -কাঁঠালের ডালে আঁধার ঘনিয়ে এলে লেখা লেখির টেবিলে লিখে যাব সমাজের অসংগতি । একটা দাতব্য চিকিৎসালয় করব , গাঁয়ের গরীব দুঃখী মানুষের চিকিৎসার জন্য । বাল্য বিবাহ বন্ধে কাজ করব । গাঁয়ের নারীদের স্বনির্ভরতা নিয়ে কাজ করব । কি হবে এই শহরে অট্রালিকায় থেকে ? যতই গভীর ভাবে কাজে ডুবছি ততই ক্লান্তিতে গেঁথে যাচ্ছি । একটা সময় ভেবছি কাজে ডুবে থাকলে মনের ক্লান্তি কাটবে , অথচ কাজই যেন বোঝার মতো চেপে বসেছে । অহনার বিশেষ কোন ও চাহিদা নেই । ভদ্রোচিত জীবন যাপন হলেই বরং ও খুশী । ঘুম থেকে ওঠার পর একটা বাজে ক্ষিদে টের পাচ্ছি । টোস্টারে দু’পিচ পাউরুটি টোস্ট করে নসিলা মাখিয়ে খেলাম । গতকাল একজন কয়েক প্যাকেট রেডি কফি দিল , তারই একটা মগে ঢেলে গরম পানিতে গুলে নিলাম । কি বিস্বাদ খেতে ! কফি খাওয়ার ইচ্ছেটাই উবে গেল । বসে থাকতে থাকতে অধৈর্য্য বোধ করছি । মারফতি গান শুনছি , ও তোর চর্ম চক্ষু বন্ধ না হইলে / ফুটবে কি তোর জ্ঞানের তারা । বাইরে কুয়াশার মিহি চাদর । ফাঁকফোকর গলে আসা রোদ্দুরের তেজও যেন অনেকটা কম । গাছ-গাছালি রং হারাচ্ছে । বাথরুমে টপ টপ করে জল গড়াচ্ছে । কাজের খালা হয়তো জলের কলটা ভালো ভাবে বন্ধ করেনি । মৃদু একটা ধ্বনি জাগছে ।
গাঁয়ে চলে যাওয়ার নাম করলেই লোক আঁতকে উঠছে , কি বলেন মশায় ! এতো পড়াশোনা করে গাঁয়ে যাবেন ? যুক্তিবুদ্ধির বাইরে গিয়ে একটা শ্বাস ফেলি আমি । উচিত আর অনুচিতের দ্বন্দ্ব কি আমাকে শোভা পায় ? ক্লাস নাইনে পড়ার সময় চে গুয়েভারার জীবনটা পড়ার সময়ই কি আমার বাকী জীবনটা কোন পথে গড়াবে , স্থির হয়ে যায় নি ? সে সময় থেকেই তো উচিত অনুচিতের বোধ একটা মাত্র নির্দ্দিষ্ট অভিমুখে গড়িয়েছে । অর্থনৈতিক ভাবে অতটা স্বাবলম্বী না হলেও আমার মনে পাতিবুর্জোয়াসুলভ পাপবোধও নেই । তাই আমার মধ্যে কোন দোলাচল ও নেই । লোকের এসব জোলো অনুভুতিকে বেশি প্রশ্রয় দেয়া ঠিক নয় । মিছি মিছি মনকে দুর্বল করে লাভ আছে কোনও ? বরং এই ইট কাঁঠের জঙ্গলে যে কয়েক বছর আছি ছকে নেয়া দরকার , আগামী দিনে কি হবে আমার কর্মপন্থা । চীনের সে মহান বিপ্লবীর কথা মনে পড়ল , মাটির সঙ্গে যাদের নিবিড় যোগ , তাদের আগে চেনো জানো , তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে তৈরী করো বিপ্লবী চেতনা ।
চলে আসা সিস্টেমটার সর্বাঙ্গে ঘুণ ধরেছে , গরীব মানুষের রক্ত চুষছে বুর্জোয়া প্রতিক্রিয়াশীল দলগুলো , তবু দেশের মানুষগুলোর কোন হেলদোল নেই । এদের জাগাতে হবে । কেবল সরকার বদল যে মানুষের ভাগ্য বদল নয় , বুর্জোয়াদের রকম তো একই , যেমন নরেন তেমনই হরেন , দাদা গেলে দিদি আসবে । জনগনের তাতে বাড়তি কী সুসার ? সিস্টেম বদলাতে হবে । ভেঙ্গে চারখার করতে হবে এসব রক্তচোষা সিস্টেম । বার বার মনিব বদলালে কি গরিবের কপাল বদলায় ? গরীব মেহনতি মানুষের রক্তে মিশে যাওয়া শোধনবাদী শ্রেণীসমন্বয়ের ধারনার অবসান ঘটানো প্রয়োজন । তত্ত্ব দিয়ে কিছু হয়না , তত্ত্বের পেছনে ছোটা মানে কল্পদুনিয়ার দিকে অন্ধের মতো ছোটা । মানুষ কোনও তত্ত্বেরই দাস নয় । অতীতেও ছিলনা । ভবিষ্যতে ও হবে না । সবাই নিজেদের প্ল্যান অফ অ্যাকশন নিয়ে প্রচুর সময় করে কিন্তু সাধারন মানুষের মনোভাব কেউই খেয়াল করে না । একটা গরম শ্বাস আমার পাঁজর ঠেলে উঠে এল । এই মুহুর্তে নিজেকেই নিজের কাছে অচেনা লাগছে ।
অহনার প্রমোশন হয়েছে , প্রমোশন না ছাই ! কেবল কাজ বেড়েছে । মাইনে বাড়েনি একটাকাও । কি বলব মাইরি ,কর্পোরেট ব্যবসায়ীগুলো ভুলিয়ে ভালিয়ে কাজ আদায় করে নেয়ার ফন্দি জানে বটে । ওর ডেস্কে কম্পিউটার জুড়ে দিয়েছে । দুপুরে খেতে এসে হাঁফাতে হাঁফাতেই বলল এখন থেকে ছুটির এপ্লিকেশন , ছুটির অনুমোদনের সব ব্যবস্থা ওকেই করতে হবে । বেতন কিন্তু আগেরটাই ! হা হা করে হেসে গড়াগড়ি খেল দু’চার মিনিট । ভেবে পাচ্ছে না তার কি করা উচিত । তারপরেই বাস্তববোধে ফিরেছে । নরম হেসে বলল , যেটাই হোক মাইনে টা তো সময় মত দিচ্ছে । অহনা বড় করে একটা শ্বাস টানল ফুসফুসে । মিনিট খানেক ঘর নিস্তব্দ । এতই শব্দহীন , কিচেনের ভাত ফোটার শব্দও উচ্চকিত লাগছে । সকাল থেকেই মন আজ ভারী উচাটন হয়ে আছে । কেন যে হঠাৎ হঠাৎ ঘড়াস করে উঠছে বুকটা । তেমন কোন বিশেষ কারণ ছাড়াই । এ কি কোনও বিপদের সংকেত ? অনেক সময় মন নাকি আসন্ন সংকটের পুর্বাভাস পায় । ধুৎ , এ ধরনের আধিভৌতিক কিংবা দৈব ব্যাপারস্যাপারে কণামাত্র বিশ্বাস নেই আমার । আর্থিক কষ্ট চলছে বলেই কি ভেতরে ভেতরে একটা অস্বস্থি চলছে আমার ? মনোরম একটা বাতাস আসছে বারান্দার ওপাশ থেকে । ভিজি ভিজে । ঠান্ডা ঠান্ডা । উদাসীন প্রকৃতি মানুষের বিপদ আপদের হদিশ রাখে না । ভারী মায়াময় আলোয় সেজে আছে চারপাশ । হৃদয়ে ঢেউ উঠেছে অহনাকে দেখে । সালোয়ার কামিজ , শুকনো শুকনো মুখখানায় সুষমা এনেছে প্রসাধনে । মাপসই ওষ্ঠরঞ্জনী , কপালে ছোট টিপ আর লম্বা বিনুনিতে সে যেন অন্য মানবী । যে বাতাস অহনাকে ছুঁয়ে আমার গায়ে এসে লাগছে , তার ও রস গন্ধ যেন আলাদা রকমের । নারীর স্পর্শ পেয়ে বাতাসও কি আপনা আপনি বদলে যায় ? অহনা কিচেনে চলে গেল । আবার যেন টিপটিপ দুশ্চিন্তাটা ফিরে আসছে । হৃদয়ের কোনও এক গোপন কোণে মেঘ জমেছে । শুধু মেঘের উৎসটা বুঝতে পারছি না ।
এলোমেলো ভাবনার মাঝে চোখ দুটো কখন জড়িয়ে এসেছিল । একটা ছেঁড়া ছেঁড়া স্বপ্নও ভেসে আসছিল চোখে । গ্ল্যাসগোর হাসপাতালের বিশাল ডরমেটরী , ঝুল বারান্দা সামনে অবারিত দিগন্ত । কালো পাহাড়ের চূড়াঁয় জমাট তুষার । দুর থেকে ভেড়ার পাল কে পোকার মতো লাগছে । আজকাল আমার নিদ্রা তেমন গাঢ় হয় না । পাতলা ঘুমে আজব আজব সব স্বপ্ন দেখি । আমাদের বিয়ের পরের ছোট বাসা অহনা কত কী রান্না করছে , সার সার বাটি সাজানো । হাতায় করে আমার প্লেটে তুলে দিচ্ছে প্লেটে , আমি অহনার হাত চেপে ধরছি , আর দিও না । চোখ খুলে গেল । ঝাপসা চোখে দেখছি দেয়ালে বাঁধানো অহনার ছবি মুখ টিপে হাসছে । চোখটাও যেন কেমন কেমন! দৃষ্টিতে কৌতুক ? না আমন্ত্রণ । ঘুম ভেঙে গেল । বাইরে কে যেন চেঁচাচ্ছে । পলকের জন্য আমার হৃদপিন্ড নিশ্চল যেন । স্নায়ু শিথিল সহসা । কাঁপছি , নিজের অজান্তেই । আবার আলো । আবার শব্দ । কলরব । আজ শীতটা একটু কম । বাতাস বইছে অল্প অল্প । চুলায় জল বসিয়েছি কফি খাব বলে । খেয়ালই নেই । চারদিকে কত অসংগতি । ছেলে মেয়েরা বখে যাচ্ছে । ময়মণসিংহের কোথায় যেন এক আদিবাসি মেয়ে দলবদ্ধ ধর্ষনের শিকার হয়েছে । পত্রিকা ধর্ষকদের ছবি দিয়েছে । হাতে হ্যান্ডকাপ লাগানো ছেলেগুলোর বয়স বিশ বাইশের বেশী নয় । আশ্চর্য্য ছেলেগুলোর চোখে মুখে প্রায়শ্চিত্তের কোন নমুনাই নেই । আজ কালকার বাবা মা রা কি করছে ? মনে আছে আমার স্কুলে নাজনীন নামে শিক্ষিকা ছিলেন । আমাদের একদিন রচনা লিখতে দিলেন , আমরা লিখলাম , কেউ ডাক্তার হব , কেউ ইঞ্জিনিয়ার , কেউ পাইলট , কেউ শিক্ষক । সবার খাতা দেখে উনি বলেছিলেন আশ্চর্য্য , তোমরা এত কিছু হতে চাও , একজনও কেউ আদর্শ বাবা কিংবা মা হতে চাও না ? সেদিন আমরা হেসেছিলাম । কিন্তু আজ এতোকাল পরে এসে মনে হচ্ছে সেদিন তিনি একটা খাঁটি প্রশ্নই করেছিলেন । সন্তানের মধ্যে সঠিক বোধ চারিয়ে দিতে তো একমাত্র আদর্শ বাবা মা ই পারেন । এর ফলেই তৈরী হয় সুস্থ পরিবার । সেখান থেকেই গড়ে ওঠে আদর্শ সমাজ । সেখানেই নির্মিত হয় আগামী যুগের বুনিয়াদ । তাদের থেকেই নির্মিত হন আরেকজন মা , বাবা ।
সুখের মুহুর্তগুলি বড় তাড়াতাড়ি হারিয়ে যায় । কেন যে পৃথিবীতে এত মায়া , প্রেম-বন্ধন ! দুপুরে একা ঘরে শুয়ে ঘুম এলো না । বারান্দার টবে অজানা নাকের নোলকের মতো হলুদ ফুল ফুটেছে । অদ্ভুত শূন্যতা , নিঃসীম এক আকুতি ভেতরে জেগে উঠতে চাইছে বার বার । আজকাল দিনে কাজ নেই বলেই কি নিজেকে এত নিঃসঙ্গ মনে হয় ? এই মুহুর্তে অহনা থাকলে অহনার বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকলে একটু হয়তো ভালো লাগত । অহনা বিলি কেটে দিত চুলে । ও বলে চাষ । চুলে আঙ্গুল দিয়ে মাথার জমিনে চাষ । পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজনের বুকে শুয়ে নিজেকে যে কী সুখী মনে হয় । কী পরিপূর্ণ ! সময়ের পলিতে সংসার আর ভালবাসা একটু চাপা পড়ে কি ? সত্যিকারের ভালবাসা কি কোনদিন ফুরিয়ে যায় ? ভালবাসা , সুখ তৃপ্তি সবই ফিরে ফিরে আসে নতুন ভাবে । কখনও তা উদ্দাম , উচ্ছল , আবার কখনও গাঢ় গভীর তন্ময়তায় আচ্ছন্ন ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট