প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস চতুর্থ ঢেউয়ের চূড়ান্ত পর্যায় পেরিয়ে এখন সংক্রমণ নিম্নগামী। গত ২৭ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ছিল ১৬ শতাংশের কাছাকাছি। বর্তমানে ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ আর নেই। হাসপাতালেও করোনা রোগী ভর্তির সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ৬২০ জন। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তেরহার ছিল ৮.৩৬ শতাংশ। তবে এ সময় মৃত্যু হয়েছে দুজনের। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয় ৮৮৪ জন। শনাক্তের হার ছিল ৯.৮১ শতাংশ এবং মৃত্যু হয় ছয়জনের। বর্তমানে প্রতিদিন যে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে তা ঈদের আগের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের ফল বলেই মনে করছেন রোগ বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা ঈদের আগে ও পরের কয়েক দিন করোনা সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউয়ের পিক সময়টি পেরিয়ে এসেছি। বর্তমানে মৃত্যুর যেসব ঘটনা ঘটছে তা ওই পিক সময়ের সংক্রমণের ফল। সাধারণত করোনা সংক্রমণের তিন সপ্তাহ পর কারো কারো ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সে হিসেবে আরো কয়েক দিন মৃত্যুর দুঃসংবাদ পাওয়া যেতে পারে। ’
তিনি বলেন, ‘চতুর্থ ঢেউ শেষ হয়ে আসছে—এমনটি ভেবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করাও যাবে না। কারণ আবারও করোনার নতুন কোনো ধরন, উপধরন সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। সে জন্য আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যারা টিকা নেয়নি তাদের টিকা নিতে হবে। দেশে করোনা টিকার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ নেওয়ার সংখ্যা কম। এটা উদ্বেগের। আবার টিকা যারা নিয়েছে তাদেরও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ’
রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক লে. কর্নেল ডা. নাজমুল হুদা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা করোনা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। ঈদের আগে-পরে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ জন করোনার উপসর্গ নিয়ে আমাদের এখানে আসত। গত কয়েক দিন আসছে গড়ে ১০০ জনের মতো। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ছিল ৩৪ শতাংশের কাছাকাছি। এখন তা ১৩-১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তির সংখ্যাও কমেছে। গতকাল শুক্রবার করোনা রোগী ভর্তি ছিল ৩৪ জন। আইসিইউতে ভর্তি ছিল সাতজন। সাধারণত বেশি বয়সী এবং নানা ধরনের জটিলতা রয়েছে এমন রোগীদের জন্য আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে। অন্য হাসপাতাল থেকে এ ধরনের রোগী আমাদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। ’
এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে সর্বশেষ মারা যাওয়া দুজনই পুরুষ। তাঁদের বয়স ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে। দুজনই মারা গেছেন ঢাকার বাইরে। বরিশাল বিভাগে একজন এবং সিলেট বিভাগে একজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, দেশে গতকাল পর্যন্ত করোনায় মোট শনাক্তের সংখ্যা ছিল ২০ লাখ ৮৯৯। এর মধ্যে মারা গেছে ২৯ হাজার ২৫৮ জন। সর্বশেষ হাসপাতাল ও বাসায় সুস্থ হয়েছে এক হাজার ৭৬৫ জন। এ নিয়ে ১৯ লাখ ৩৩ হাজার ২৫৯ জন সুস্থ হয়েছে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট