1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৯:২৩ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
সোনাতলা পৌর বিএনপির ৩ নং ওয়ার্ড শাখার ইফতার মাহফিল মির্জাপুরের ধর্ষককে ধরিয়ে দিতে সাবেক এমপি কালামের নির্দেশ ও পুরস্কার ঘোষণা সোনাতলার পাকুল্লায় বিএনপির ইফতার মাহফিল ৩১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে সকল মানুষের দাবি-দাওয়া পূরণ হবে-ভিপি সাইফুল সোনাতলা উপজেলা হাসপাতালে ফিল্ম সংকটে এক্স-রে বন্ধ টাঙ্গাইলে এমপির বাড়ি দখল করে আশ্রম চালু করা সেই নারী ‘সমন্বয়ক’ গ্রেপ্তার বনানীতে দুর্ঘটনায় পোশাক শ্রমিক নিহত, সহকর্মীদের সড়ক অবরোধ আজ যেমন থাকবে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার আবহাওয়া আইফা ডিজিটাল অ্যাওয়ার্ডসে সেরা অভিনেত্রী কৃতি শ্যানন অর্থনীতিতে সম্প্রসারণের গতি কমেছে ফেব্রুয়ারিতে

ডা. মোজাহিদুল হকের ধারাবাহিক গল্প ৫৭

সাহিত্য ডেস্ক
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২

জীবনের গল্প

-ডা. মোজাহিদুল হক

পর্ব ৫৭

ইদানিং মন খুব টানছে গ্রামের পথ । গ্রামের মেঠো পথ । পথের ধারে গেহস্থের ঘরের পাশের গাছে বাঁধা গরু , জলে রোদে ভিজে পুড়ে কালছে হয়ে যাওয়া খড়ের ভাঙ্গাচোরা গাদা । পাশে গোবরের স্তুপ । কলা গাছের ঝাড় । শুকনো কলাপাতা দিয়ে বাড়ীর আব্রু করতে দেয়া বেড়া । গোয়াল ঘরের সাথে ঠেস দিয়ে রাখা লাঙল , জোয়াল , মই । হারিয়ে গেছে সব । সব হারিয়ে গেছে । সন্ধ্যা হলেই জমিতে জমা জলে ব্যাঙের ডাক শুনিনি কত বছর । এখন আর গাঁয়ের বাড়ীতে এসব দেখা যায় না । এসব এখন সেই কোন কালের কথা । অহনা ও ইদানিং খুব ঘুরতে চায় ।কিন্তু অফিসের ছুটি জোগাড় হয় না বলেই যেতে পারে না । বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মন স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে। ক্রমাগতই নষ্টালজিক হয়ে পড়ছি। ঘুম কমে গেছে। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকি।ঘন ঘন সিগারেট খাই। সিগারেটের গন্ধে ঘরের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। শেষ রাতের দিকে ঘুমুতে গিয়ে বিচিত্র সব স্বপ্ন দেখে জেগে উঠি। কত কী মনে হয়। কত সুখ -স্মৃতি, কত দুঃখ জাগানিয়া ব্যাথা। আহ! কষ্ট হয়। ভালোবাসার কষ্ট !ভালোবাসার কষ্ট আমার চেয়ে বেশী কে আর জানবে বল?  অল্প ক’দিন আমরা বাঁচি তবু এই সময়ে কত সুখ-দুঃখ আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে। কত গ্লানি, কত আনন্দ আমাদের চারপাশে নেচে বেড়ায়। কত শূন্যতা বুকের ভেতরে হা হা করে। পায়ে পায়ে লাগোয়া ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম । এই ভাল , এখানে খানিক দাঁড়িয়ে থাকলে মনটা তাও অন্যরকম হয়ে যায় । ছ’তলা থেকে নীচের রোদ ঝলমলে পৃথিবীটা ভারি মায়াবী লাগে । নিজেকে নিজের চেনা সত্যিই বড় কঠিন । সারা দেশে তেল নিয়ে তেলেসমাতি চলছে । মজুতদার তেল মজুত করে একটা কৃত্রিম তেলের সংকট তৈরী করেছে , সরকারের সে দিকে কোন খেয়ালই নেই । জিনিস পত্রের দাম জনতার নাগালের বাইরে । আয় রোজগার বাড়েনি কিন্তু হু হু করে বাড়ছে জিনিস পত্রের দাম ।আজ কয়েকদিন ধরে সকালের দিকে আকাশে মেঘ করে বটে তবে বৃষ্টির নামগন্ধও নেই । সবে সোওয়া ন’টা বাজে , এরই মধ্যে মেঘের আড়াল থেকে বিশ্রী তাপ ছড়াচ্ছে সূর্য । চিটচিটে গরমে গা জ্বালা করছে।

রোজা এসে গেল । গত কয়েক বছর ধরে আমার একটা বিচ্ছিরি সমস্যা হচ্ছে , রোজা করতে গেলে দুপুর অব্দি কোন সমস্যা হবে না কিন্তু যেই না দুটো বাজবে ব্যস বিচ্ছিরি অসহ্য মাথা যন্ত্রণা মাথার ভেতর শুরু হয়ে যাবে , বমি বমি ভাব হয়ে এমন অবস্থা হবে বলে বোঝানো সম্ভব নয় । আজ ও হচ্ছে তবে হালকা । কিছুক্ষণ বই পত্র ঘেঁটে মোচামুটি একটা পছন্দসই বই নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম । বারান্দার টবে নতুন কয়েকটা ফুল ধরেছে । ঝাঁকিয়ে কলি ধরেছে এ্যারোমেটিক জেসমিন গাছে । বাইরে রোদে ঝলমল । আকাশ একেবারে খটখটে শুকনো হয়ে আছে । গত পরশু দুপুরের পর আমি আর অহনা বেরিয়েছিলাম । বিজয় স্মরণী পার হচ্ছি অম্নি বরুনদেব তার মেঘবাহিনী নিয়ে হাজির । এমন ঢাললেন , দুজনেই ভিজে একাকার । মোটরবাইকটা রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে একটা এটিএম বুথের সামনে দাঁড়িয়ে আছি । একটানা ঝরে যাওয়া বৃষ্টিটাকে দেখছিল অহনা । ঘ্রাণ নিচ্ছিল ভিজে ভিজে হাওয়ার । গুলিস্থান থেকে যখন ফিরছি তখন বৃষ্টি থেমেছে । একটু একটু করে সরছে মেঘ , তবে সন্ধ্যে ঘনিয়ে এসেছে । বিকেলের আলো যতটুকু বেড়েছিল , আবার পড়েও এল । বন্ধু মহসিনের বোন শাহনাজের বাসায় ইফতারির দাওয়াত ছিল । শাহনাজ আর তার হাজবেন্ড কামাল এত চমৎকার মানুষ । পৌনে ছ’টা নাগাদ ওর বাসায় পৌছলাম ভেজা কাপড়-চোপড় নিয়েই । কামাল ওর লুঙ্গি গামছা নিয়ে ছুটোছুটি শুরু করেছে । ওরা মহসিনকে যতটা ভালোবাসে আমাকেও ভাইয়ার বন্ধু হিসাবে ঠিক ততটাই ভালোবাসে । দুনিয়ার সব ইফতারের আয়োজন । ইফতারের পর সে আড্ডায় যোগ হলো মহসিনের আরেক বোন সানজিদা আর তার বর হাবিব । হাবিবের পোস্টিং কক্সবাজারে । দুটো জামাই ই খুবই মাইডিয়ার ।

গত কয়েকদিন ঢাকায় নিউমার্কেটে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনা নিয়ে খুব কথা হচ্ছে । সামান্য ঘটনায় দু দুটো তাজা প্রাণ ঝরে গেল । সরকার পাবলিকের কাছ থেকে ট্যাক্স নেয় । সুতরাং বিপদ আপদ থেকে তাদের রক্ষা করা সরকারেরই ডিউটি । সে জায়গায় কি হলো ? দিনে দুপুরে দুজন তরুন কে কুপিয়ে মারা হলো পৈশাচিক কায়দায় । সিটিজেন হিসাবে সরকারী সব সুযোগ সুবিধা যেন তার অধিকার তেমনি তার উল্টো পিঠে কর্তব্য বলে ও একটা কথা আছে । আমরা কি নাগরিক হিসাবে সে কর্তব্য পালন করছি ? এখনকার ছাত্ররা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যায় নাকি কুপিয়ে মানুষ মারতে যায় আমি বুঝে উঠতে পারছিনা । মিডিয়ার কল্যানে সে দৃশ্য গত কয়েকদিন ধরে ইউটিউবে ভেসে বেড়াচ্ছে । শুনতে পাচ্ছি নাহিদ নামের ছেলেটাকে যে কুপিয়েছে সে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র । কি পড়লো এই ছেলে ? আকাশে সাদা সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে । পথে ঘাটে ভিড় এখন চর্তুগুণ । সবাই ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত । আলোময় দুপুরটা কেমন বিবর্ণ লাগছে হঠাৎ । টপ টু বটম সবাই চুরি চামারি আর আখের গোছাতে ব্যস্ত । সত্যি , পুরো দেশটাই যেন পচে গলে নষ্ট হয়ে গেছে । কোথাও একটু আলো নেই । সিস্টেমটা এমন , কাউকে ভাল থাকতে দেয় না । চোখে কত আদর্শ নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলাম বিদেশের অ্যাফ্লুয়েন্ট লাইফ ফেলে । চারদিকে অনিয়ম কিচকিচ করছে । বিবেক কুট কুট কামড়ায় , তাইতো ক্ষোভে ফেটে পড়ি অহরহ শাহবাগে । ওই রাগ ঘেন্নার বেশ খানিকটা তো নিজের ওপরেও রয়েছে ।

আজ সকাল থেকে আজব কিছু খাবার খেতে মন চাইছে । পুঁইডাঁটা দিয়ে চিংড়ী আর ঝিঙেপোস্ত । বয়সের সাথে সাথে উদ্ভট খাবার ও বুঝি মন চায় ? অহনার বাবা মায়ের বিবাহ বার্ষিকী সাইত্রিশ বছরে পড়ল । এত একটা লম্বা সময় … দুজনের গায়ের গন্ধ নিশ্চয়ই একরকম হয়ে গেছে ! আজ গরম পড়েছে খুব । এত গুমোট যে পাখার হাওয়া ও গায়ে লাগছে না । বৈশাখ গড়িয়ে যাচ্ছে এখনও ভালো করে সেভাবে বৃষ্টি হলো না । এক-আধ  দিন মেঘ উঁকি দেয় বটে , মিলিয়েও যায় হুশ করে । তারপর আকাশ আবার খটখটে নিষ্করুণ । বৃষ্টিহীন পৃথিবীতে তাপ বাড়ছে । অহনার জন্য রাতে এসি চালাতে পারি না , ওর নাকি শীত শীত করে । কি আর করা । ফ্যানের বাতাসেও আমার গা জ্বালা করে । তেষ্টা পায় । সেহেরীর পর ঘুমুতে যাই ঘুম হয় না । পঁচিশ রোজা পার হলো । লোকজন বাড়ী যাবার আর ঈদ শপিং নিয়ে ব্যস্ত । এবার ঈদের লম্বা ছুটি । প্রায় আটদিন । সাত দিনের জন্য বেড়াতে যাওয়া , ব্যাগ ব্যাগেজ সব আমাকেই গোছাতে হচ্ছে । কাল প্রায় সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে । কাল পৃথিবীটা একরকম ছিল আজ অন্যরকম । দিনভর এক ফোঁটাও বৃষ্টি নেই । ভ্যাপসা গরম থমকে আছে । ফ্যাকাসে চাঁদের মুখে কোঁকড়ানো কালো মেঘ । টুপ টুপে তারা গুলো দেখা যায় কি যায়না । এ মেঘ ঝরবার নয় , এ উড়ে যাবে দুরে অন্য কোথাও । গুমোট আঁধার চিরে আলতো বাতাস বইছে । অহনা অফিসে , সোফায় হেলান দিয়ে পত্রিকা দেখছি । পত্রিকায় ইদানিং সংবাদ কম বিজ্ঞাপন বেশী । ঈদ আসছে তাই মেয়েদের জন্য ফ্যাশনের কাগজ । দারুন রংচঙে । পাতায় পাতায় অজস্র রুপটানের বিজ্ঞাপন । হরেক রকম বিউটি টিপস । কী মাখলে ত্বক ফর্সা হবে , দিনে রাতে কখন কি রং এর লিপস্টিক লাগানো উচিত , রান্নার পাতায় সেমাই কোর্মার বিভিন্ন পদের রেসিপি ।

দুপুরের এই সময়টায় আমার অখন্ড অবসর । আমাদের দুজনের সংসার । সুন্দর ফ্ল্যাটটাকে অসম্ভব সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে অহনা । ইদানিং লেখার টেবিলে বসাই হচ্ছে না । সামনের বইমেলার আগে অন্তত দুইটা লেখা শেষ করতে হবে । মন বসছে না । মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল । মাথা তুলে জানালায় চোখ রাখলাম । ঘোর কালো অন্ধকার । ব্যালকনির লাইট অফ করে শুয়েছিল নাকি অহনা । ঘর জুড়ে শীতলতা এসির । কাঁথা জড়িয়ে শুয়ে আছে অহনা । ধীর পায়ে নামলাম বিছানা ছেড়ে । শিথিল মেজাজে জল খেলাম । অভ্যেস । রাতে ঘুম ভাঙলে খাই । চোখ খুলে যতটা অন্ধকার মনে হয়েছে আসলে ততটা অন্ধকার নেই । পরদার ফাঁক দিয়ে ব্যালকনির নীল আলোর চিলতে এসে পড়ছে অন্দরে । অহনার মুখ দৃশ্যমান । পরদার ওপারে চেনা শহরটাকে এই মুহুর্তে অচিন লাগছে । স্বপ্ন স্বপ্ন । ঘরবাড়ী গাছপালা সবই আবছা । যেন ঘষা কাচের ঘেরাটোপে অন্য এক অলীক নগরীর পথ চেয়ে অজানা কোথাও আমি আর অহনা । ঘোর ঘোর লাগছে । আবার জল খেলাম । চোখ বুজে শুয়ে পড়লাম । হঠাৎ কোত্থেকে রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করেছে শরীরে ।

বেশ চড়া রোদ উঠেছে আজ । সুর্যটা যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছে । এলোমেলো হাওয়া উঠছে হঠাৎ হঠাৎ । আবার ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে । একশো টাকার সয়াবিন তেল দুশো টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছে কোন টুঁ শব্দটি নেই । নয়শো টাকার গ্যাস তেরশো টাকায় কিনে অভ্যস্ত হয়েছি এখন বিদ্যুতের দামও পঁয়ত্রিশ পার্সেন্ট বাড়ানোর প্রস্তাব হয়েছে । কোন বিকার নেই এই জাতির । কি হবে এদের দিয়ে ?? কয়েকদিন ধরে সংবাদ মাধ্যমগুলো খুব দেখাচ্ছে প্রশান্ত কুমার হালদার নামের এক লোক দশ হাজার কোটি টাকা লুট করে বিভিন্ন দেশে নিয়ে গেছে । আরে ভাই টাকাটা নিশ্চয়ই একদিনে সরায়নি , দিনে দিনে সরিয়েছি । সহযোগিতা করেছে যারা তাদের কি গ্রেপ্তার করা হবে ?? নাকি সব কিছু ধামাচাপা দেয়া হবে ? শত শত প্রশান্ত কুমার তো দিব্যি চেটেপুটে লুটে খাচ্ছে দেশ । এই যে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে কাদের পকেট ভারী করছেন আপনারা ? জবাব দেয়ার ওকেউ নেই নেয়ার ও কেউ নেই ।

অনেক দিন বাজারে যাই না । বাজার যা টুটকাট লাগে সেটা অহনাই করে । মোটামুটি মাছ মাংস যা লাগে আমি আর অহনা মিলে সুপার সপ থেকে একবারেই নিয়ে আসি । পরশু বড় ভাইয়ের দুই ছেলে তৌকির- তৌসিফ কে নিয়ে বাজারে গিয়ে চড়া দাম শুনে মেজাজই চড়ে গেল । মানুষের কোন বিকার নেই । ছোট চাল কুমড়ো ষাট টাকা দাম শুনেই তো পিত্তি জ্বলে গেল। কি জোচ্চুরি ! মধ্যবিত্তের বেঁচে থাকাটাই তো দায় হয়ে গেল । সিলেটে বন্যায় ভেসে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম । ভেসে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধান । কৃষকের মাথায় হাত । সেদিকে নজর দেবার কেউ নেই । নতুন করে মাথা চাড়া দিয়েছে মৌলবাদী গোষ্টী । এ মুহুর্তে এদের রুখতে না পারলে পুরো দেশ হুমকীতে পড়বে । পোষাক আশাক নিয়ে নারীদের হেনস্থা করছে যত্রতত্র । ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সুযোগ পেলেই নিগৃহিত করছে নানা ছুতায় । আমার মতের সঙ্গে অন্য অনেকের মতের মিল না হওয়াই স্বাভাবিক। আমরা শংকর বা মিশ্র জাতি। আমাদের পূর্বপুরুষরা অমুসলিম ছিলো। বঙ্গীয় তটে তথা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার আজকের মুসলমানরা ৯৯ ভাগই কনভারটেড মুসলমান। আমাদের মধ্যে আরব বণিকদের বংশধররাও আছে। এক সময়ের সংখ্যালঘু এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান আমরা। আজ থেকে ৫০ বছর বা ২০ বছর আগের একই বিষয়ে ইসলাম ধর্মের ব্যখ্যা একই জায়গায় নেই। হাদিস প্রণেতারা তাদের সুবিধামতো বদলে নিয়েছে। আবার ইসলাম সংস্কার, যুক্তি এবং মানব কল্যাণের ধর্ম বলে সারা পৃথিবীতে সমাদৃত এবং অনুকরণীয়। সেই ধর্মের অনুসারী হয়ে যে অন্যের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস বা সম্মান করতে জানে না সে কোন ধর্মের অনুসারী হতে পারে, তা বোধকরি বলার অপেক্ষা  রাখে না।ইসলাম ধর্মে কোনো পোষাক নির্ধারিত নেই। তবে শালীনতাকে ( পর্দা)  গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এবং নারী- পুরুষের পোষাকের শ্রেণিবিন্যাসও করা হয়নি, কিন্তু শালীন পোষাককে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ধূলিঝড়ের দেশ আরব আফগান বা মরু অঞ্চলের আপাদমস্তক আবৃত পোষাক কোনো ধর্মের পোষাক নয়। পরিধেয় বস্ত্র অঞ্চলভেদে স্বাছ্যন্দের। এটা ভৌগলিক ও আবহাওয়াগত পরিবেশের সংগে সম্পৃক্ত। আমরা ধর্মের নাম আর দোহাই দিয়ে দেশের অধিকাংশ নারীকে শালীনতার অজুহাতে পোষাকের নামে বস্তাবন্দি করে রেখেছি। আমরা আরব, আফগান বা মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমান নয়। আমরা বাঙালি মুসলমান। আমাদের কৃষ্টি সংস্কৃতি মধ্যপ্রাচ্যের  চার দেয়ালের দোজখের চেয়ে অনেক উত্তম। চিন্তার দৈন্য ভারত বাংলাদেশের  বেশিরভাগ ধর্মান্ধ মানুষের।

ঘুম ভাঙলো বেলা সাড়ে বারোটার দিকে । চারদিকে ঝলমলে আলো । চেনা পরিবেশ টাও অচেনা লাগছে । বারান্দার রেলিঙে কিচির মিচির করছে এক জোড়া চড়ুই । খুব চা খেতে ইচ্ছে করছে । নানা বাড়ীর শিবাইচন্ডী স্টেশনের প্লাটফর্মের মাটির ভাড়ের চা । এলাচ গুড়ো দেয়া । চায়ের এক চুমুক আর কলকাতার পাতার বিড়ির এক টান । আহ ! ধনেখালি বাজারের ঘোষের তৈরী পানতোয়া খুব খেতে ইচ্ছে করছে । মেজ মামার হাত ধরে এ্যাসপ্লেনেডে ঘুরতে খুব মন চাইছে । কালি ঘাটে বসে হুগলি নদীর বয়ে যাওয়া ঘোলাটে জলের ভেসে যাওয়া দেখতে মন হু হু করছে । অহনা কে কলকাতা দেখানোই হলো না । ইদানিং অহনা চা টা খুব ভালোই বানায় । লাঞ্চের সময় অহনা আসে ঘন্টা খানেকের জন্য । আসার সময় হয়ে গেছে । আজ কলাপাতা রংয়ের আড়ংয়ের কামিজের সাথে সাদা সালোয়ার পড়ে যখন অফিস যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছিল তখন পলকের জন্য ঘুম ভেঙেছিল আমার । কি যে অসাধারন লাগছিল অহনাকে । কখন আবার চোখ লেগে গেল টেরই পেলাম না । তারপর তো চোখ খুলল সাড়ে বারোটায় । অহনার আসার সময় হয়েছে । খুট করে দরজার নব ঘুরিয়ে এক্ষুনি বুঝি ঢুকবে আমার লক্ষীটি । কলাপাতা রং গায়ে জড়ানো এক অপ্সরি । জৈষ্ঠের দুপুর । আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ । একটা মলিন রোদ বিছিয়ে আছে শহরের গায়ে । বাতাসে সামান্য শিরশিরে ভাব । কুঁড়ি এসেছে লাল দোপাটি গাছে । নীল অপরাজিতা ফুটেছে বেশ কয়েকটা । মাধবী লতার ডগায় ডগায় হাসছে ফুল । অনেকক্ষণ উদাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছি বারান্দায় । পশ্চিমমুখো এক ফালি বারান্দা । সকালের রোদ বারান্দায় থাকেনা তবে বিকেলের রোদ বারান্দাতেই থমকে থাকে । সুর্য পশ্চিমে হাঁটতে শুরু করেছে । প্রখর উত্তাপে ঝলসে যাচ্ছে পৃথিবী । বৃষ্টি নেই এক ফোঁটাও । শুধু থমথমে মেঘ জমে আছে আকাশে । হঠাৎই একটা কাক ডেকে উঠল রুক্ষ স্বরে ।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews