মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে নানামুখী তৎপরতা চলছে বলে সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আজ বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। সংসদীয় কমিটির আগের বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানোর জন্য বলা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উত্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সর্বদা তৎপর রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সর্বদাই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে, আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারলে বাংলাদেশের এবং ১৯৭১ সালে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া ৩০ লাখ শহীদের, সম্ভ্রমহানি হওয়া লাখো মা-বোনের প্রাণের দাবি মেটাতে সক্ষম হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সর্বদাই সব দেশকে তার প্রাপ্য সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডাও তার ব্যতিক্রম নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে দায়িত্বরত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং সব ফোরামে ও সভায় বিষয়টি যুক্তিসঙ্গতভাবে উপস্থাপন করে থাকেন। এটা যে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রাণের দাবি তা-ও বোঝাতে সচেষ্ট থাকেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সভায় এ প্রসঙ্গে আলোচনা করে থাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো সরকারি সফরে রাজনৈতিক নেতাদেরকে সম্পৃক্ত করে এবং তাদের মাধ্যমেও এই দাবির ব্যাপারে মার্কিন সরকারকে অবহিত করা হয়।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক সংলাপ, অষ্টম বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারি সংলাপ, অষ্টম বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিংকেনের চলতি বছরের ৪ এপ্রিল দ্বিপক্ষীয় সংলাপে এ বিষয়টি উঠে আসে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই বিষয়টির গুরুত্ব মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেলকে বোঝানোর জন্য সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিংকেনকেও অনুরোধ করেন।
এ ছাড়া সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে যে সফর করে, সেখানেও সংসদীয় প্রতিনিধিদল সিনেটর টেড ক্রুজ (রিপাবলিকান-টেক্সাস), কংগ্রেসম্যান স্টিভশ্যাবট (রিপাবলিকান-ওহাইও) এবং কংগ্রেসম্যান ডোয়াইটইভান্সের (ডেমোক্র্যাট-পেনসিলভানিয়া) সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট ডোনাল্ড লুর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। ওই সব বৈঠকেই ঘৃণিত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সংসদ সদস্যরা আলোচনা করেছেন। ওই বৈঠকে সিনেটর টেড ক্রুজ (রিপাবলিকান-টেক্সাস) এই মামলার বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বিশদ তথ্যাদি সরবরাহ করার অনুরোধ করেন। ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সব তথ্য সরবরাহ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয়, মধ্য-এশিয়া এবং নন-প্রলিফারেশন বিষয়ক ফরেন অ্যাফেয়ার্স সাব-কমিটির র্যাংকিং সদস্য কংগ্রেসম্যান স্টিভ শ্যাবট (রিপাবলিকান-ওহাইও) জানান, তিনি বিচার বিভাগের হাউস কমিটিরও সদস্য এবং কমিটিতে তিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে দেশে পাঠানোর বিষয়টি উত্থাপন করবেন। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব টেস্ট অ্যাম্বাসাডর ডোনাল্ড লু বলেছিলেন, তিনি এ বিষয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে কথা বলবেন।
কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিতে আনতে তৎপরতা আরো জোরদারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলো ও তা উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা হয়। প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশকেও বিকল্প হিসেবে রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া বৈঠকে সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন দেশের ভিসাপ্রাপ্তিতে জটিলতা নিয়ে আলোচনা হয় এবং দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্রপ্রাপ্তি সহজ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, মো. হাবিবে মিল্লাত, নাহিম রাজ্জাক ও নিজাম উদ্দিন জলিল (জন) এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট