আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) মহাসচিব পদে আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। ওই নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রার্থী ডরিন বগডান-মার্টিনের পক্ষে বাংলাদেশের সমর্থন চাইতে গত শনিবার থেকে তিন দিনের ঢাকা সফর শুরু করেছেন দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিশেল জে সিসন।
গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে মিশেল জে সিসন আইটিইউ নির্বাচনে বাংলাদেশের সমর্থন চান।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে ভোট দিচ্ছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এখনো সময় আছে।
বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেয়নি। কে ভালো প্রার্থী সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর ‘টেনিপোটেনশিয়ারি সম্মেলনে’ আইটিইউ মহাসচিব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রার্থী ডরিন বগডান-মার্টিন নির্বাচিত হলে তিনিই হবেন আইটিইউর ১৫৬ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী মহাসচিব। ওই নির্বাচনে মহাসচিব পদে রাশিয়া তার টেলিযোগাযোগ ও গণযোগাযোগ উপমন্ত্রী রশিদ ইসমাইলভকে মনোনয়ন দিয়েছে।
এদিকে মিশেল জে সিসনের সঙ্গে আলোচনায় র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাসহ দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য বিষয় তুলেছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ঢাকা-ওয়াশিংটনের বিভিন্ন বৈঠকের আলোকে ওই আলোচনা হয়েছে। সেখানে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, জলবায়ু ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরেছে। বাংলাদেশও জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে সদস্য পদে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চেয়েছে।
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বিষয়ক প্রশ্নে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা) বলেছে, এটা একটা আইনি প্রক্রিয়া। এ বিষয়ে মূলত মার্কিন অর্থ বিভাগ ও বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক দপ্তর কাজ করে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সরাসরি এ বিষয়ে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা বলেছি, আমরা তাদের প্রক্রিয়া অনুযায়ী কাজ করতে চাই। এ জন্য তাদের আইনি পরামর্শক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। ওদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছি। ’
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, মিশেল জে সিসনের সঙ্গে তাঁর বহুপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়, যেমন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সহযোগিতা, কভিড, খাদ্য নিরাপত্তা, টেকসই কৃষিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি তাইওয়ান ও চীনের নাম উল্লেখ না করেও সুশৃঙ্খল বিশ্বব্যবস্থা মেনে চলার ক্ষেত্রে সমর্থন চেয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরে জাতিসংঘের নীতি ও সিদ্ধান্ত মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে কভিড নিয়ে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চায়। সেখানেও তারা আমাদের পাশে চায়। ’
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) বিচারিক উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চেয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, পররাষ্ট্রসচিব ও মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ অগ্রাধিকারমূলক বিভিন্ন বিষয়, বিশেষ করে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা সম্পর্কিত বিষয়াবলি, যেমন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা, জলবায়ু সহনশীলতা, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্পর্কে আলোচনা করেন।
মিশেল সিসন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রতি বাংলাদেশের মানবিক পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ মেয়াদে রাখার কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে অবিলম্বে নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে জোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
মিশেল সিসন দেশব্যাপী কভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শান্তি রক্ষা মিশনগুলোতে বাংলাদেশের অবদান, বিশেষ করে নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন। তাঁরা বহুপক্ষীয় ফোরামগুলোতে নির্বাচন নিয়েও আলোচনা করেন।
মিশেল জে সিসন তাঁর সম্মানে পররাষ্ট্রসচিব আয়োজিত এক মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। তিনি তাঁর প্রতিনিধিদলকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মতবিনিময়সভায় অংশ নেন। সভায় শান্তি রক্ষা মিশন, খাদ্য নিরাপত্তা, বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা সংকট ও তাদের প্রত্যাবর্তন, জি-৭৭, জাতিসংঘের এসকাপে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট