দেশকে বাঁচাতে হলে আদি তিস্তাকে নিয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে বলে জানিয়েছে পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এস আই খান। আজ শনিবার (১৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি, নিউ ইয়র্কের আয়োজিত ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চাই’ শীর্ষক সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আদি তিস্তা ২৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ। এই পুরো তিস্তা ভারত ও বাংলাদেশ হয়ে বঙ্গেপোসাগরে গিয়ে মিলিত হয়েছে। ভারত তাদের দেশের ভেতরে বাঁধ দিয়ে এই নদীর ন্যায্য পানি বাংলাদেশকে দিচ্ছে না। যার কারণে দেশের একটি অঞ্চল পানি শূণ্য হয়ে পরছে। আবার অতি বন্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাই অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
এস আই খান আরো বলেন, ভারত হয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ৫৪টি নদী বহমান আছে। যেগুলোর ৫২টিতেই ভারত নিজের অংশে বাঁধ দিয়েছে। যার কারণে আমাদের নদীগুলো প্রায় মৃত। এসব বাঁধ তাদের তুলে নিতে হবে। অথবা আমাদের ন্যায্য হিস্যার পানি দিয়ে দিতে হবে। আর তারা যদি আমাদের ন্যায্য হিস্যার পানি না দেয় তাহলে আন্তর্জাতিক মহল বা তৃতীয় পক্ষের সাহায্য নিতে পারে বাংলাদেশ। যেমন করে আমরা সমুদ্র জয় করলাম ঠিক সেভাবেই পানির ন্যায্য হিস্যাও আমরা পেতে পারি।
আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি, নিউ ইয়র্কের সিনিয়র সহ-সভাপতি আরো বলেন, বাংলাদেশে পানির জন্য ৫০ লাখের বেশি নলকূপ রয়েছে। যা দিয়ে আমরা পানি তুলে খাই ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করি। কিন্তু নদীর পানি স্বাভাবিক প্রবাহে না থাকায় মাটির নিচে পানির লেয়ার ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। বৃষ্টিও সময় মতো হচ্ছে না। আর স্বাভাবিক বন্যাও নেই দেশে। যার কারণে মাটির নিচে পানির লেয়ার প্রতি বছর যতটুকু রিফিল হওয়ার কথা তা হচ্ছে না। এদিকে, প্রতি বছর পানির লেয়ার পাঁচ ফুট করে নেমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় ২৮ ফুট পানির লেয়ার নেমে গেলে আর নলকূপ দিয়ে পানি উত্তলন করা যাবে না। দেশের মানুষ পানির জন্য হাহাকার করবে। ইতিমধ্যে উত্তরাঞ্চলে পানির জন্য হাহাকার চলছে।
ডা. এস আই খান বলেন, ভারত যদি আমাদের ন্যায্য হিস্যা না দেয় তাহলে আমাদের তৃতীয় পক্ষের সাহায্য নিতেই হবে। তারা তিস্তার পানি না দিলে আমাদের নিজেদের দেশের মানুষের চিন্তা করতে হবে। সেই চিন্তা করে চীনকে আমাদের সহযোগী হিসেবে নিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে আমাদের দেশের মানুষ অন্তত বাঁচবে। এর পাশাপাশি সেখানে অনেক কর্মসংস্থানও হবে।
আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি, নিউ ইয়র্কের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান সালু লিখিত বক্তব্যে বলেন, সিলেট অঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যা মেঘালয় ও আসাম এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অপরিণামদর্শি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে হয়েছে। বেসিন ভিত্তিক সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা থাকলে এ বিপর্যয় অনেক খানি এড়ানো যেত। ভারত থেকে যেভাবে নদীগুলোর উৎস থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করার হচ্ছে তাতে দেশের সবুজ শ্যামল পরিবেশ দিনদিন ধংস হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি, দেশী মাছের অভয়ারণ্য ও শিল্প। মানুষ হারাচ্ছে জীবিকা ও বাসস্থান।
আতিকুর রহমান সালু বলেন, এই সমস্যার সমাধানের জন্য তিস্তায় একটি পানি ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। তাই চীনের প্রস্তাবে তিস্তা নিয়ে ভাবতেই পারে সরকার। এর সঙ্গে তিস্তার পুরোনো মূল অববাহিকায় অবস্থিত আত্রাই, করতোয়া এবং পুনর্ভবা নদী এই মহাপরিকল্পনার আওতায় আনা গেলে দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- ফারাক্কা কমিটির বাংলাদেশ চাপটার প্রধান সমন্বয়কারী মোস্তফা কামাল মজুমদার, কেন্দ্রীয় সাংবঠকি সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, সিনিয়র সাংবাদিক আবুল কারাম আজাদসহ আরো অনেকে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট