ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। গত বৃহস্পতিবার কমিশনের সভার আলোচ্যসূচিতে বিষয়টি রাখা ছিল, কিন্তু সভাটি স্থগিত হয়ে যায়। এ সপ্তাহে বৈঠকটি হতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ৩১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সমর্থন পেয়েছি।
বেশির ভাগ দল ইভিএম বিশ্বাস করছে না। তাদের সন্দেহ, এর ভেতরে কী জানি একটা আছে!’ তিনি আরো বলেন, ‘ইভিএমে ৭১ শতাংশ পর্যন্ত ভোট কাস্ট হয়েছে, কিন্তু অনেককেই আস্থায় আনতে পারছি না। পুরোপুরি ঐকমত্য নেই। তবে ইভিএম বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব স্বাধীনভাবে। ’
গত ৯ জুন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সংলাপে সিইসি ইভিএম সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘নির্বাচন কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁদের জন্য এটি খুব সুবিধাজনক। ইভিএম ব্যবহারের সমর্থন যদি পাই, যদি সন্দেহ দূর করতে পারি, তাহলে এটি যুক্তিসংগত পরিমাণে ব্যবহার করে নির্বাচনকে আমরা অহিংস করে তুলতে পারি। ’
ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, কমিশন ২০১৮ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন এবং স্থানীয় সরকারের যেসব নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে, সেসব নির্বাচনের সব তথ্য চাওয়া হয়েছে। ইভিএম ব্যবহার করা কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি, ব্যয়, সহিংসতার পরিমাণ, কারচুপি, ভোট ব্যবস্থাপনা, ফলাফল ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি তথ্যই মূলত চাওয়া হয়েছে। এসব তথ্যের সঙ্গে তুলনা করা হবে ব্যালট পেপারের ভোটের সঙ্গে। কমিশন এসব তথ্য মূল্যায়ন করেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, বর্তমানে কমিশনের কাছে এক লাখ ৫৪ হাজারের মতো ইভিএম রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ইভিএম মেরামত করতে হবে। কমিশন ৩০০ আসনেই ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিলে আরো তিন লাখের মতো ইভিএম কিনতে হবে। ইভিএমের বর্তমান প্রকল্পটি শেষের পথে। এ ক্ষেত্রে নতুন করে আরেকটি প্রকল্প নিতে হবে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ইভিএম কেনার জন্য।
ইভিএম নিয়ে কমিশনের অবস্থান জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা গত শুক্রবার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের বাইরেও আমরা অতীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর ইভিএমের সমস্যা, সফলতা মূল্যায়ন করেছি। সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান (অব.) গতকাল সোমবার এই প্রতিবেদককে বলেন, গত বৃহস্পতিবারই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা ছিল। এ সিদ্ধান্ত দ্রুতই নিতে হবে। কারণ ইভিএম ব্যবহার করতে হলে, বিশেষ করে বেশি আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে প্রয়োজনীয় কিছু পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে।
জানতে চাইলে কমিশনের অতিরিক্তি সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি থাকায় সভাটি স্থগিত করা হয়। এ সপ্তাহে স্থগিত সভাটি হতে পারে।
ইভিএমের পক্ষ-বিপক্ষ : নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া ২৬টি দলের মধ্যে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ১৬টি দল সরাসরি ইভিএমের বিপক্ষে মত দেয়। সংলাপের যে ৯টি দল যোগ দেয়নি তারাও ইভিএমের বিপক্ষে। কয়েকটি দল ইভিএম ব্যবহার করলে এতে পেপার ট্রেইল সংযুক্ত করার প্রস্তাব দেয়। নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কমিশনের সংলাপেও ইভিএমের বিপক্ষে মত আসে।
আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্রী পার্টি, বিকল্পধারা, তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ও ইসলামী ঐক্যজোটসহ কয়েকটি দল ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দেয়। সংস্কার সাপেক্ষে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তাব রাখে ওয়ার্কার্স পার্টি।
ইসির সংলাপে আওয়ামী লীগ বলেছে, ভোট ডাকাতি ও কারচুপি বন্ধ করতে ইভিএমের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এখন যে পরিমাণ ইভিএম আছে, তা দিয়ে ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩ হাজার কেন্দ্রে অর্থাৎ ৩১ শতাংশ কেন্দ্রে ভোট নেওয়া সম্ভব। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনে ইভিএমের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে হবে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট