বর্তমানে দেশের এক কোটি ৭০ লাখ বিবাহিত নারী অপুষ্টিজনিত দ্বৈত স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। এটা মোট বিবাহিত নারীর ৪৪.৭৩ শতাংশ। তাঁদের বড় একটি অংশের উচ্চতার তুলনায় ওজন বেশি। অন্য অংশের উচ্চতার তুলনায় ওজন কম।
গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ‘বাংলাদেশি নারীদের অপুষ্টির দ্বৈত বোঝা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। আইসিডিডিআরবি, যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি এবং ডাটা ফর ইমপ্যাক্ট এ অনুষ্ঠানের আয়োজক। তারা গবেষণাটিতেও সহায়তা করেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, গত ১০ বছরে উচ্চতার তুলনায় ওজন কম বিবাহিত নারীর সংখ্যা কমলেও উচ্চতার তুলনায় ওজন বেশি বিবাহিত নারীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এসব নারী প্রতিবছর ১৪ লাখ শিশুর জন্ম দিচ্ছেন। অর্থাৎ অপুষ্টির ঝুঁকি নিয়ে জন্ম হচ্ছে এসব শিশুর।
গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডাটা ফর ইমপ্যাক্টের নলেজ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স স্পেশালিস্ট সুস্মিতা খান ও আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী মঈনুদ্দিন হায়দার।
মঈনুদ্দিন হায়দার বলেন, দেশে ২০০৭ সাল থেকে অপুষ্টিতে ভোগা নারীদের পুষ্টি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। শেষ ২০১৭-১৮ সালে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের পুষ্টি পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা চালানো হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে বর্তমানে বিবাহিত নারী তিন কোটি ৮০ লাখ। এই নারীদের মধ্যে কিছু বিবাহিত নারী পুষ্টিহীনতার দ্বৈত অপুষ্টিতে ভুগছেন। এর মধ্যে পুষ্টিহীনতায় ৫০ লাখ নারীর ওজন প্রয়োজনের তুলনায় কম। অন্যদিকে পুষ্টিহীনতায় এক কোটি ২০ লাখ নারীর ওজন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি। এই অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সালে দেশে ৪৬ শতাংশ বিবাহিত নারী স্থূলকায় হবে। এতে বলা হয়, ২০১৭ সালের মধ্যে মানুষের উন্নয়ন বিভিন্ন সূচকে ভালো হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পুষ্টির স্বল্পতার হার ৩০ থেকে ১২ শতাংশে নেমে এসেছে। আবার অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার প্রবণতা ১২ থেকে ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নারীদের মধ্যে সুপুষ্টির হার ২০০৭ সালে ছিল ৫৮ শতাংশ, যা ২০১৭-১৮ সালে ৫৬ শতাংশ হয়েছে। সুপুষ্টি আরো ২ শতাংশ কমেছে।
২০০৭ থেকে ২০১৭ সালের জনমিতি, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির তথ্য বিশ্লেষণ করে সুস্মিতা খান জানান, আগের তুলনায় বিবাহিত নারীদের ওজন স্বল্পতাজনিত অপুষ্টি অনেকটা কমেছে। ২০০৭ সালে শহর ও গ্রামাঞ্চলে উচ্চতার চেয়ে কম ওজনের নারী ছিল ২৬ শতাংশ। এক দশক পর ২০১৭ সালে এসে তা ১১ শতাংশে নেমেছে। অন্যদিকে ২০০৭ সালে উচ্চতার চেয়ে স্থূলতার নারীর সংখ্যা ১৭ শতাংশ থাকলেও সেটি বেড়ে ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত ১০ বছরে উচ্চতার তুলনায় ওজন কম এমন নারী কমলেও অস্বাভাবিকভাবে উচ্চতার তুলনায় ওজন বেশি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
নিউজট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর সাইকা সিরাজ বলেন, স্থূলতা যত বাড়বে, তত অসংক্রামক রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যাসহ অন্যান্য রোগের সংক্রমণ বাড়বে। আর বাচ্চারাও মায়ের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ নিয়ে জন্মাবে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট