রাশিয়ার কাছ থেকে কোন উপায়ে সরাসরি জ্বালানি তেল কেনা যায়, সে ব্যাপারে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত এবং অন্যান্য রাষ্ট্র রাশিয়ার কাছ থেকে সরাসরি তেল কিনছে; তাহলে আমরা কিনতে পারি কি না সেটা দেখতে হবে। এর জন্য রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলে উপায় খুঁজে বের করতে হবে। ’
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশের পর এ ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
একনেকের বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়ার কাছ থেকে সরাসরি জ্বালানি তেল কেনার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী উপায় খুঁজতে বলেছেন। রাশিয়া বলেছে, তারা কারেন্সি সোয়াপে যাবে। আমাদের হয়তো রাশিয়ার সঙ্গে কথাবার্তা বলে একটা পদ্ধতি বের করতে হবে। ’
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে নির্দেশনা এসেছে। আমরা অন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্ব্বয় করে যে সম্ভাব্যতা আছে, সেগুলো অবশ্যই অনুসন্ধান করব। ’
রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘ভারতের সক্ষমতা আছে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করার, সেই সক্ষমতা যদি আমরা করে নিতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমরা আনতে পারব। তবে সেটি হয়তো সময়সাপেক্ষ। ’ ভারত থেকে তৃতীয় দেশ হিসেবে রাশিয়ার তেল আমদানির সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রণালয়ের (পররাষ্ট্র) পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে এটি বলা হয়নি। জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলেছে কি না, আমি জানি না। ’
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকির কারণে রাশিয়ার তেল আমদানিতে সমস্যা হতে পারে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘অনেকে নিচ্ছে। তৃতীয় দেশ হিসেবে অনেকে নেয়। ’ এ ক্ষেত্রে কিভাবে অর্থায়ন হবে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় ঠিক করবে। ’
রাশিয়ার বাইরে অন্য কোন কোন দেশ থেকে তেল আনা যাবে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে। সম্প্রতি সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ওরাও (সৌদি আরব) দিতে প্রস্তুত আছে। কাতারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো আছে। আমরা এলএনজি আমদানি করি। সুতরাং আমাদের বিকল্প অনেক আছে। ’ তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য থেকে এখন পর্যন্ত আমরা তেল আমদানি করি। যেটা হাতে আছে সেটাই আমাদের সংহত করা উচিত। সেটি যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয়। ’
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে একনেকের ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকার নিম্নবিত্ত ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে যে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, তা সহনীয় পর্যায়ে কিভাবে নিয়ে আসতে পারি সেই ব্যবস্থা আমাদের নেওয়া একান্তভাবে জরুরি বলে আমি মনে করি। কারণ মানুষের জন্যই তো রাজনীতি করি। মানুষ কষ্ট পেলে আমারও কষ্ট হয়। ’ তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আরো বলেন, “তেলের দাম বাড়ানোর ফলে আমাদের নিত্যপণ্যের দামও বেড়ে গেছে। মানুষের কষ্ট হচ্ছে। যারা নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা নির্দিষ্ট আয়ে যাদের চলতে হয়, তাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। এটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। ‘বিশেষ পারিবারিক কার্ড’ দিয়ে ন্যায্য মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, সাধারণ মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে, যাতে তারা কষ্ট না পায়। ”
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট