সরকার ডিজেল ও চালের আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। ফলে দু-এক দিনের মধ্যে ডিজেলের মূল্য সমন্বয় হতে পারে। এ পর্যায়ে লিটারে পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমতে পারে বলে গতকাল রবিবার রাতে জ্বালানি বিভাগ ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা গেছে।
চালের আমদানি শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চাল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ডিজেল আমদানিতে অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং পাশাপাশি ডিজেলের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এ সিদ্ধান্ত আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। এর আগে চালে শুল্ক ও কর মিলিয়ে ২৫.৭৫ শতাংশ কর প্রযোজ্য ছিল, যা কমে ১৫.২৫ শতাংশ করা হলো। ফলে সব মিলিয়ে চালে শুল্ক কমল ১০ শতাংশের কিছু বেশি।
নতুন আদেশ অনুযায়ী, চাল আমদানিতে এখন রেগুলেটরি ডিউটি বা আবগারি শুল্ক ৫ শতাংশ, আগাম আয়কর ৫ শতাংশ, অগ্রিম কর ৫ শতাংশসহ মোট ১৫.২৫ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হবে। আর এই আদেশ সুগন্ধি চাল ছাড়া সব ধরনের চাল আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। একই সঙ্গে আমদানির আগে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে।
গত ৩০ মে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এক মতবিনিময়সভায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, প্রয়োজনে ট্যাক্স কমিয়ে চাল আমদানি করে ভোক্তাকে স্বস্তিতে রাখা হবে। গতকাল সরকার শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিল।
ভর্তুকি কমাতে চলতি মাসের শুরুতে জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায় সরকার। এতে প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও পেট্রলের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর আগে ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা ও পেট্রলের দাম ছিল ৮৬ টাকা।
জ্বালানি তেলের এই মূল্যবৃদ্ধির পর শুল্ক কমানোর দাবি ওঠে। গতকাল এনবিআর শুল্ক ও কর কমানোর পদক্ষেপ নিল।
গতকাল রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজেলের দাম এখন কতটুকু কমানো যায়, সেই বিষয়ে আগামীকাল (আজ) হিসাব-নিকাশ করার পর বোঝা যাবে। তবে বিশ্ববাজারে আবার ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন দাম বেশি কমানোর সুযোগ নেই। ’
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পাশের দেশে তেল পাচার ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লোকসান কমানোর কারণ দেখিয়ে গত ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি করেছিল। এতে প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন, কৃষি, শিল্পসহ সব ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে। একসঙ্গে তেলের দাম এত বাড়ানোর ফলে জীবনযাত্রায় বেড়ে যায় অসহনীয় চাপ। বাড়তি এ আর্থিক চাপের ফলে শিল্প উৎপাদনে বেড়েছে অতিরিক্ত খরচ। এ ছাড়া পরিবহন খরচ বৃদ্ধির ফলে কাঁচামাল ও অন্যান্য দ্রব্যের মূল্য লাগামছাড়া। প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষিকাজে অতিরিক্ত ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে জ্বালানি তেলের মধ্যে ৭৪ শতাংশই ব্যবহার হয় ডিজেল। এখন ডিজেলের দাম কমলে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে মানুষ। বিশেষ করে পরিবহন ও সেচে কিছুটা স্বস্তি আসবে।
বিপিসির সূত্রে জানা যায়, দেশে বছরে এখন জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৭৪ শতাংশই ব্যবহৃত হয় ডিজেল। মোট জ্বালানি তেলের ব্যবহার প্রতিবছর কিছুটা বৃদ্ধি পায়।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট