1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৪ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :

প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি

সেলিনা আখতার
  • প্রকাশিত: সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২
ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ গত ৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যু বরন করেছেন। অনেকেই অনুযোগ করে বলছেন বৃটিশ আমাদের শোষণ করেছেন। বৃটিশের দুইশো বছরের শাসনের দড়ি ছিড়ে তাদের কাছ থেকে ১৯৪৭ এ স্বাধীনতা পেলাম। মাত্র ২৪ বছর যেতে না যেতে একই সমস্যা, মানে সেই শোষণ বঞ্চনার জন্য আবারও রক্ত ক্ষয় করে বাংলাদেশ নামে একটা দেশের জন্ম হলো। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ২০২২, দেশের বয়স ৫১ বছর।
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌলা। তিনি কি বাংঙ্গালীর কেউ ছিলেন? আমার মনে হয় তিনি স্বাধীনও ছিলেননা। এটা যারা ইতিহাসের বিশ্লেষণ করেন তারাই ভালো বলবেন। তবে যদি বেঁচে থাকি আর সুস্থ থাকি তবে একবার মুর্শিদাবাদ যাবো।
যাহোক খুব ছোটবেলা থেকে ইতিহাস আমাকে টানে। ইতিহাসের বিষয় আছে এমন বই হাতের কাছে যা পেয়েছি মোটামুটি সব পড়েছি। (ইতিহাস নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু আম্মা রাজি ছিলেননা)। লাল ইটের ভাঙ্গা বাড়ি দেখলে এখনো তাকিয়ে থাকি। দীঘির ভাঙ্গা ঘাট, দেয়াল সব কিছু আমাকে হারানো মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের কাছাকাছি নিয়ে যায়। আমার পড়াশোনার পছন্দ ছিলো অংক আর ইতিহাস, বাংলা। ভূগোল বোঝার চেষ্টাও করিনি। কতো যে ইচ্ছে ছিলো ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখবো। কিন্তু কোথাও যাওয়া হয়নি। ছাত্রী অবস্থায় বিয়ে তাই সংসার সন্তান আর পড়াশোনা নিয়ে প্রতি মুহূর্তে হাবুডুবু খেতে হয়েছিল। হিসাব বিজ্ঞান না পড়লে হয়তো অনার্স মাস্টার্স পাশ করতাম না। এই বিষয়টা অল্পতেই বুঝতে পেরেছি, তাই এর সাথে আমার ভালোবাসা ছিলো। সারারাত অংক করে ভোরবেলা অনায়াসে রান্না ঘরে ঢুকে গেছি। পাশ করার পরপরই সরকারি চাকরিতে ঢুকে গেলাম। ঐতিহাসিক স্থান দেখার ইচ্ছে গুলো শিকেয় তুলে সময় পার করলাম। তবে চাকরি সূত্রে দুই বছর ফরিদপুর ছিলাম। সেখানে কড়িবর্গার বানানো পুরনো একটা সরকারি রিকুইজিশন বাসায় ছেলে আর আমি একটা কাজের মেয়ে নিয়ে ছিলাম। তখন আমার ছেলেটা বেশ ছোট। বাসার সবার আপত্তি ছিলো কিন্তু আমি সেটা না মেনে সেই পুরনো বাড়িতে ছিলাম। যখন চলে আসি তখন মনে হচ্ছিল কিছু ফেলে যাচ্ছি। যাহোক আমার কাছে এই পুরনো বাড়িতে থাকার সময়টা এখনো তোলা রয়েছে। মনে জমা রয়েছে অনেক অনুভূতি।
২০১৯ এর সেপ্টেম্বরে একটা প্রশিক্ষণে দুই সপ্তাহের জন্য দিল্লি যাবার সুযোগ হলো। যেহেতু সরকারি আদেশ তাই সব টান ফেলে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানেই মোঘল আমলের কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখার সুযোগ হলো। বিদেশি অতিথি হিসাবে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে লালকেল্লা, তাজমহল, ফতেহপুর সিক্রি দেখার সৌভাগ্য হলো। আমাদের সাথে অংশ নেয়া একজন কর্মকর্তার পাসপোর্ট আগ্রায় হারিয়ে যায়। সেটার সমাধান করার জন্য মথুরায় যাওয়া হলোনা।
লাল কেল্লা বিশাল এরিয়া নিয়ে বিশাল স্থাপনা, ফতেহপুর সিক্রি রাজ মহিষী যোধাবাঈ এর বাস স্থান। এখনো চোখ ধাঁধিয়ে যায় এসব প্রাসাদের সৌন্দর্যে। কি বিলাসিতা নিয়ে বাদশাহ নামদারেরা তাদের জীবন কাটিয়েছেন। ধন্য ধন্য করে সকলে, আমিও করলাম। হীরা মতি জহরতে মুড়িয়ে থাকতেন। মোটামোটা পাথরের উঁচু দেয়াল, আর অসহায় প্রজাদের শাসন আর হাতির পায়ে পিষ্ট করে হত্যা করার ইতিহাস এখনো জাগ্রত আছে।
আর তাজমহল দেখে বিরক্ত হয়েছি। সারা পৃথিবীর মানুষ যে স্থাপনা দেখে প্রেমের নিদর্শন বলেন আমার তেমন কিছু মনে হয়নি। আমার মনে হয়েছে একজন ভোগী বাদশাহ তার প্রজাদের অনাহারে রেখে নিজের ভোগ বিলাশ আর আনন্দের জন্য অজস্র অর্থ ব্যয় করেছেন। বাদশাহ শাহজাহান তাজমহলে নিজেও আছেন। মমতাজের জন্য তিনি একা থাকেননি, বহু বিবাহ করেছেন। তারপরও এই তাজমহল নাকি শ্রেষ্ঠ প্রেমের নিদর্শন। তাজমহলের অর্থ দিয়ে এদেশের প্রজাদের মঙ্গলের জন্য অক্সফোর্ড, কেম্ব্রিজ বানানো সম্ভব ছিলো। এদেশের প্রজাদের পরণে যখন নেংটি তখন বাদশার নিজের, পারিশদের, আর পরিবারের সকলে হীরা মতি জহরতে নিজেদের মুড়িয়ে রাখতেন।
অত্যাচারী বাদশাদের পরাজয় হয় বৃটিশদের কাছে। সিরাজদৌলার পরাজয় ছিলো সময়ের অংশ। আত্মকেন্দ্রিক আর স্বার্থপর এই উপমহাদেশের মানুষ নিজেরাই কাজটি করেছিলেন। তবে সাধারণ মানুষ তেমন ভালো কখনোই ছিলোনা।
বৃটিশের কাছে অনেক নির্যাতন সয়েছি আমরা। তবে নারী হিসেবে এই যে দুকলম লিখতে পারি তা বৃটিশদের জন্য। মুসলিম জনগোষ্ঠী ইংরেজি শিক্ষা, নারী শিক্ষা গ্রহণে সময় নিয়েছে। সে তুলনায় হিন্দু সম্প্রদায় অনেক এগিয়ে ছিলেন। বৃটিশরা আমাদের শোষণ করেছেন এ কথাও আমরা শিক্ষা থেকে বুঝতে পেরেছি। কই বাদশাহ নামদারদের বিবিধ অত্যাচার ভোগবিলাস এর বিরোধিতা করার সাহস কোনো সাধারণ মানুষের ছিলোনা। বৃটিশদের দু’শ বছরের অত্যাচার, এবং সম্পদ হারানোর তালিকা অনেক বড়ো। তবে তারা আমাদের কবর কেন্দ্রীয় বিলাসিতার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে শিখিয়েছিলো। আর তা থেকেই এখন অনেক পরিনত। যদি বাদশাহদের শাসনের পরম্পরায় এখনো রইতাম তাহলে কতোটা ভালো থাকতাম জানিনা। কাজের স্বাধীনতা, মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকা উপভোগ করি। কোনো বাদশার অজস্র হীরা মতি স্বাধীন মানুষ হিসেবে সময় যাপনের চেয়ে মূল্যবান নয়। এই উপমহাদেশের মানুষ বৃটিশদের কাছ থেকেই তাদের উচ্ছেদের মন্ত্র শিখে তাদের তাড়িয়েছে। কিন্তু শোষণ কি থেমেছে?
৯/৯/২০২২(ঢাকা)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews