আমাদের সমাজে মেয়েরা অর্থনৈতিকভাবে যত স্বাবলম্বী হবে, ততোটাই তারা আত্মমর্যাদার ব্যাপারে সচেতন হবে। বিয়ে হয়ে গেছে মানে জীবন শেষ হয়ে গেছে, এরকম করেই ভাবেন বেশিরভাগ নারী।
তবে, ভুল তো ভুলই। সেটা অবশ্যই শুধরানো যায়। অমোঘ বলে আর কিছুই নেই। এখনকার মেয়েরা এভাবেই ভাবতে শিখছে। তাই তালাক নিয়ে চিন্তাভাবনা করার সাহস এখন একজন আত্মপ্রত্যয়ী ও দৃঢ়চেতা মেয়েই রাখতে পারে।
নিয়ত অসম্মান ও মিথ্যা- ঠগবাজের সাথে বসবাস করে ভণ্ডামির চোরাবালিতে ডুবে যাওয়ার কী মানে থাকতে পারে! যুগের পর যুগ দাসত্ব মেনে সমঝোতা করতে করতে নারী এখন “আত্মসম্মানবোধ” শব্দটির মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারছে। তাই নারীরা আগের তুলনায় এখন তালাকের শরণাপন্ন হচ্ছেন বেশি। নারীরা বুঝে গেছেন, পুরুষতন্ত্রের লেবাসে সোনার খাঁচায় বন্দী থাকার চেয়ে মাটির পৃথিবী ঢের ভালো।
প্রায় ৭০% মেয়েরা তালাক দিচ্ছে, কারণটা বুঝতে কষ্ট হয় না। মেয়েরা আর পীড়ন- সম্মানের বলি দিয়ে জীবন কাটানোর পক্ষপাতী নন। তারা এখন নিজের ইচ্ছে- অনিচ্ছের গুরুত্ব দিচ্ছে। বিগত ১০ বছরের পরিসংখ্যানের হিসেবে তালাক দেয়ার চিত্রটা পাল্টে দিয়েছে মেয়েরা।পুরুষের বিপরীতে ৭০ শতাংশ মেয়েরা তালাক দিচ্ছে। অর্থাৎ মেয়েরা এখন ঘুরে দাঁড়াতে শিখেছে। আত্মসম্মান কথাটার সদ্বব্যবহার করতে পারছে।
পাশাপাশি এটাও ঠিক, কোনো বিচ্ছেদ কখনোই সুখের নয়। এটি অবশ্যই কষ্টের, বেদনার। কোন মেয়ে নিরুপায় না হয়ে তালাকের দোরগোড়া সহজে মাড়ায় না। তাই কেউ অপ্রয়োজনে তালাকের চিন্তাও করেনা। কারণ আমাদের সমাজ এখনো ডিভোর্সি মেয়েদের জন্য রণক্ষেত্র। বহু মেয়ে স্বামী, শাশুড়ির শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার সহ্য করেও সংসার করে যাচ্ছে। তাদের কাছে বিয়ের পর বাপের বাড়িও খুব সম্মানের জায়গা নয়। বেশিরভাগ দম্পতিই জোর করে একই ছাদের নীচে জীবন কাটিয়ে সুখী হওয়ার নাটক করে যায়।
আমাদের সমাজে ডিভোর্স হলে তার সব দায় মেয়েদের উপরই এসে পড়ে। সমাজ এখনো নারীবান্ধব হয়ে উঠেনি। সমাজ থেকে বলা হয়, “তোমার উচিত ছিলো আর একটু মানিয়ে চলা। বিবাহিত জীবনে এরকম হতেই পারে। ছেলেদের এক-আধটু আলুর দোষ থাকেই, মেনে নাও।”
অর্থাৎ মেয়েটাকে অনেক বেশী দোষারোপ করা হয়। অথচ একটি মেয়ের যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখনই তাকে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটিই বাস্তব চিত্র।
ডিভোর্স – এর পর, সমাজ কী পরিবারে মেয়েটির গ্রহণযোগ্যতা আগের অবস্থানে থাকে না। আত্মীয় স্বজন কেউ তাকে সহজভাবে নেয় না। তারা যেহেতু জানে মেয়েটি আর তার স্বামীর সাথে নেই। তখন জেনে শুনে, বুঝে মেয়েটিকে প্রশ্ন করেন অপ্রস্তুত করার মানসে।
অনেক সময় ডিভোর্স করার প্রশ্নে মেয়েরা দ্বন্দ্বে ভোগেন। বর্তমান সমাজে খুব কম মেয়ে ডিভোর্স -এর পর সমাজে সাহস করে চলতে পারছেন। বিবাহ বিচ্ছেদের পর নিজের প্রতি ভালো একটা অনুভূতি আছে বা আত্মসম্মান নিয়ে চলতে পারছেন…. এমন মেয়ে খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না। অবশ্য এমনটা যে একেবারেই নেই তাও বলা যাবে না। এমনই মতামত পোষণ করেন, অনেক সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও মুক্তমনা সুধীমহল।