চাল, ডাল, তেল ও ডিমের মতো চিনিও দাম বেড়ে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। বাজারে এখন খোলা চিনি ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি করা হয় ৯৫ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর আগে কখনো চিনির দাম ১০০ টাকার বেশি ওঠেনি।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ, আটা ও ময়দার দাম কেজিতে পাঁচ টাকা করে বেড়েছে। তবে চালের বাজার গত সপ্তাহের মতোই রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশান, কালাচাঁদপুর, জোয়ারসাহারা ও রামপুরা বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে সরকার গত ৬ অক্টোবর কেজিতে দাম ছয় টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনি ৯০ টাকা বেঁধে দেয়। তবে বাজারে এই দরে চিনি মিলছে না। খোলা চিনিই বিক্রি করা হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি দরে। আর প্যাকেট চিনি প্রতি কেজি ৯৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ার পর বাজারে এই চিনি সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাজার ঘুরে কোথাও সরকারি প্রতিষ্ঠানের চিনি দেখা যায়নি। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের প্রধান (বিপণন) মো. মাযহার উল হক খান জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে কোনো চিনি মজুদ নেই। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বছর চিনির উৎপাদন খুবই কম হওয়ায় আমাদের সংগ্রহে অন্যান্য বছরের তুলনায় মজুদ কম ছিল। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বাজারে নতুন চিনি আসবে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি চিনি উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। গত অর্থবছরে উৎপাদন ছিল সাড়ে ২৪ হাজার টন। তার আগের বছর ছিল ৪৮ হাজার মেট্রিক টনের বেশি। ’
দেশের বাজারে চিনির চাহিদার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ সরবরাহ করে সিটি গ্রুপ। সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্যাসসংকটের কারণে কারখানা চালাতে পারছি না, যার কারণে চিনি, আটা ও ময়দার উৎপাদন কমে গেছে। ফলে বাজারেও সরবরাহ কমে গেছে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘আগে কারখানাগুলো সার্বক্ষণিক চালু রাখা হতো। এখন গ্যাসসংকটের কারণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছয়-সাত ঘণ্টা কারখানা চালাতে পারছি না। ’
সরকারি বাজার মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। প্রতিষ্ঠানটির গতকালের বাজারদরের তথ্য বলছে, রাজধানীতে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি করা হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়।
এদিকে বাজারে খোলা আটা প্রতি কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ টাকায়, গত সপ্তাহে যা ছিল ৫৫ টাকা। খোলা ময়দা বিক্রি করা হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে, গত সপ্তাহে এই ময়দা বিক্রি হয় ৬০ টাকায়। পেঁয়াজ কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫ টাকায়।
গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে চাল। চিকন চাল (মিনিকেট) কেজিপ্রতি ৭৫ টাকায়, ব্রি-২৮ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় এবং নাজিরশাইল বিক্রি করা হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। আমদানি করা আদা প্রতি কেজি ১৬০ টাকা এবং দেশি আদা ১৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর আমদানি করা রসুন বিক্রি করা হচ্ছে ১২০ টাকা এবং দেশি রসুন ৮০ টাকা কেজি দরে। ডিম প্রতি ডজন ১৪৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
মাছের বাজারেও ক্রেতাদের কিছুটা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। প্রতি কেজি তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। পাঙ্গাশ প্রতি কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। দেড় কেজি ওজনের রুই প্রতি কেজি ২৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, বড় রুই প্রতি কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ৪০০ টাকায়। বড় আকারের কাতল মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। কাঁচকি মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের কই মাছ ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, পাবদা আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
শীতের আগাম সবজি বাজারে এসেছে আগেই। সরবরাহও স্বাভাবিক। কিন্তু দাম বাড়তি। বলতে গেলে কোনো সবজিই প্রতি কেজি ৬০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। গোল বেগুন প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা; পটোল, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা; শিম ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, পাকা টমেটো ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, কাঁচা টমেটো ১০০ টাকা, গাজর ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ছোট আকারের ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ৫০ টাকা, লাউ আকারভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট